somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ব্যাপকতা পূর্ণ "ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা ভায়া বান্দরবান" ভ্রমন ( পর্ব-২ বান্দরবান পর্ব )

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আগের পর্ব-যাত্রা পর্ব]

বাস বান্দরবান শহরে থামার পর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংক্ষেপে এক্সেন) আঙ্কেলের পাঠানো প্রাডো গাড়ীতে আমরা গেস্ট হাউসে পৌছাই। তড়িৎ গতিতে মোবাইল ও ক্যামেরায় চার্জ প্রদান পূর্বক আমরা বেড়িয়ে পড়ি। তার আগে এক্সেন আংকেলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করলাম। আঙ্কেল বেশ হাসি-খুশী মানুষ। অযথা "এই করবা না ওই করবা না" এমন বৃথা জ্ঞান দেন নাই- ভাল লাগসে ব্যাপারটা। আচ্ছা উনিও বুয়েটিয়ান- বের হয়েছেন '৮৬ এ। যাই হোক সময় আর নষ্ট না করে আঙ্কেলের প্রাডো নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। আমাদের আজকের প্ল্যান নীলগিরি- চিম্বুক- শৈলপ্রপাত- স্বর্ণ মন্দির (সময় পেলে)- নীলাচল।

প্রথমেই আমরা নীলগিরির পথে। এই রাস্তার নাম পীক-৬৯. এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাস্তা। চিম্বুক পাহাড়ের গা জুড়ে এটি এগিয়েছে। দুইপাশে মনজুড়ানো দৃশ্য। বিশেষ করে একটু পর পর পাহাড়ের চূড়ার এই রাস্তা থেকে পুরো বান্দরবান যখন দেখা যাচ্ছিল- পুরাই যা তা রকমের সুন্দর। যাই হোক বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তীব্রতাও বাড়ে।

বেলা ১টার দিকে আমরা পৌছে যাই নীলগিরি তে। ওই যে বললাম রোদ বাড়ছে- নীলগিরিতে গিয়ে ভ্যাপসা গরমে অবস্থা টাইট হয়ে যায় সবাই। তার উপর আবার ওই দিন নাকি বনমন্ত্রী আসবে- তাই হ্যালিপ্যাডে যাওয়া যাবে না। সো হ্যালিপ্যাডে লম্ফ-ঝম্ফ দিয়ে ক্লিশে ছবি তোলার দুর্নাম আমরা অর্জন করিনি। তারপরেও নীলগিরি থেকে দূরের সাঙ্গু (নাকি শঙ্খ?) নদীর রূপ দেখে আমি গভীর প্রেমে পড়ে গেলাম। যাই হোক আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা আর বেশীক্ষন থাকলাম না নীলগিরিতে। ফিরে চললাম আগের পথে। পথে চিম্বুকে নামলাম- হাওয়া বাতাস খেয়ে শৈলপ্রপাতে গিয়ে আমরা সোজা হাজির।

শৈলপ্রপাত ব্যাপারটা আসলে বোঝানো মুশকিল। দেখে প্রথমে কিছুই বোঝা যায় না- কিন্তু পানি সেইরকমের ফ্রেশনেস এনে দেয় শরীরে। ফার্স্টেই সিয়াম আধা নাংগু বাবা হয়ে ঝপাৎ করে পানিতে নেমে পড়ল এবং নেমেই চিৎকার! না- ভয় পাবেন না, সিয়াম কোন ব্যাথা পায় নাই। তার চিৎকার এর কারণ- পানি এত ঠান্ডা কেরে?? যাই হোক একটু পর একে একে ফাহমিন আমি শোয়েব নেমে পড়লাম। নামল না শুধু শামিম। বেচারা ভয়েই কাৎ। পানিতে আমরা ব্যাপক ফটোসেশন করলাম। সেই ফটোসেশন এতটাই ব্যাপক ছিল যে বেশ কিছু ছবি জনসম্মুখ্যে প্রকাশোপযোগী না। প্রায় ঘন্টা দেড়েক এর মত সময় ধরে চার তরুণ জলকেলী করে উঠে আসলাম ডাঙ্গায়। উঠেই শোয়েব পিছলে পড়ে গেল। যাই হোক আরেক দফা ফটোসেশনের পর আমরা ছুটে চললাম শহরের দিকে। দিন ফুরিয়ে আসছে- পেট পূজাটা সেরে ফেলতে হবে।

পেট পূজা করতে আমরা গেলাম রী সং সং রেস্টুরেন্টে। আমরা পৌছে দেখি যে ওইখানে ওইখানকার জনপ্রিয় ও শোয়েবের প্রিয় গায়িকা "ম্যা হ্লা প্রু" এর মারমা সংগীতের এলবামের মোড়ক উন্মোচন প্রোগ্রাম হবে বলে পুরো রেস্টুরেন্ট বুকিং দিয়ে রাখা আছে। তারপরেও আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা হল এবং ঝড়ের বেগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা আবার নীলাচলের পথে।

নীলাচল- যায়গাটা আসলেই অপূর্ব! পাহাড়ের চূড়ায় এমন একটা জায়গা যেখান থেকে পুরো শহর দেখা যায়। বিশেষ করে সাঙ্গু নদীটা আর শহরের লাইটগুলা অপূর্ব লাগে! আর নীলাচলের পাহাড়ের উপরে একেবারে সাইডে কয়েকটা বেঞ্চ আছে। যেখানে বসলে যাদের উচ্চতাভীতি আছে তাদের হার্ট এটাক করবে। যাই হোক নীলাচলে কোপায়া ছবি তুলে তারপর আমরা বেড়ানো ওইদিনের মত ওইখানেই খ্যান্ত দেই।

রেস্ট হাউসে ফিরে রেস্ট না নিলে তো হাউসের নামের প্রতিই অবিচার করা হয়! তাই রেস্ট নিয়ে আমরা বেরুলাম শহর দেখতে। সাঙ্গু ব্রিজ পেরিয়ে আমরা ওইপাড়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। এবার শুরু হল জগতের এপিকেস্ট আড্ডা এভার। এসব টপিক নিয়েও যে আড্ডা দেওয়া যায় তা কল্পনার বাইরে। টপিকগুলার ব্যাপারে বলতে গেলে এতটুকু বলতে পারি- শামিম বেচারা কানে আঙ্গুল দিয়ে রাখসিল কিন্তু পরে আঙ্গুল সরিয়ে ফেলায় তার কান বারবার লজ্জায় রক্তিম হয়ে যাচ্ছিল। আড্ডায় আড্ডায় রাত বেশ হল। আমরা দুপুরের সেই রী সং সং রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি খাওয়া শেষ। এবার যাই কই! খুঁজে পেতে আরেকটা পেলাম- হোটেল রূপসী বাংলা। ভর্তা- মুরগী- গরু দিয়ে ব্যাপক এর উপরে ব্যাপক কোপ দিয়ে দেখি বিল সেই রকম হয় নাই। আমাদের আর খুশী দেখে কে! তার সাথে ওয়েটারগুলার আচরণ বেশ ভাল। গলা পর্যন্ত খেয়ে রাস্তায় নেমে হাটতে হাটতে বান্দরবান শহর ফাটায়া গান ধরলাম সবাই। এই রাস্তা ওই রাস্তা ঘুরে শেষ পর্যন্ত রেস্ট হাউসে পৌছালাম। তারপর কি ভাবছেন বিছানায় সবাই ঘুমে এলিয়ে পড়েছে? না, আপনি ভুল ধরেছেন। তারপর শুরু হল জাতীয় খেলা ২৯ এর আসর। কয়েকদান খেলে খেলোয়াড়েরা এবার কয়েকজন কার্ড হাতেই ঘুমে ঢলতে লাগল। তো কি আর করা? ওইদিনের মত কাহিনি শেষ।


[পরের পর্ব- বান্দরবান টু কক্সবাজার ভায়া স্বর্ণ মন্দির পর্ব]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×