অবশেষে আমরা নাটকের আপাত একখানা চূড়ান্ত রূপ দেখিয়া ফেলিলাম। মনমোহন আসিলেন, লালগালিচার সাথে তোপধনি। নিরাপত্তারও অভাব নেই। সবই ঠিকঠাক চলিতেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, তিনি আমাদের দেশনেত্রীর সাথে আধাঘন্টা একান্তে আলাপ করিয়া এখন সৈন্য সামন্তদের নিয়ে বসিয়াছেন। বলা বাহুল্য, এপার বাংলায় যাদের নিয়ে দেশনেত্রী বসিয়াছেন, উহাদের অধিক সংখ্যকই হিজড়া। এখানে হিজড়াদের অপমান করে কথাটা বলা হয়নি। বলিয়াছি, ওই দ্বিপদীগুলোর কাজ করার ক্ষমতাহীনতার কথা।
বৈঠকেরও ঘন্টা দুয়েক আগে আমাদের সরকারের তরফ হইতে অবশেষে স্বীকার করিয়া নেয়া হইল যে, তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হইতেছে না। তাহারা দাদাদের হাইকমিশনারকে ডাকিয়া আনিয়া ইহার ব্যাখ্যা চাহিয়াছেন, আমি তাহাদের সাহসের তারিফ না করিয়া পারিতেছি না। ব্যাখ্যা চাইতেও জানে দীপু মনি রা !!
তাহারও কিছু আগে এয়ার ইন্ডিয়ার স্পেশাল একখানি ফ্লাইট হইতে একে একে সবাই নামিয়া আসিলেও ভারতের পানি মন্ত্রী বানসালের দেখা মিলিল না। এমতাবস্থায় আমাদের রমেশ বাবুদের কপালের চামড়ায় কিছুটা ভাজ ফুটিয়া উঠিল। বেহায়া রিজভী তবুও হাসিয়া বলিলেন পানি বন্টন চুক্তি হবে। এই রমেশ বাবুর টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একখানা কথা এই মুহূর্তে কর্ণ গহ্বরে বাজিতেছে, তিনি বলিয়াছিলেন - "আগে বাঁধ হোক, তারপর দেখা যাবে"। জি বাবু, আমরা দেখিয়াছি, দেখিয়াছিলাম এবং দেখেই যাব।
একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি "বাফার স্টেট" শব্দের অর্থ জানেন না, তিনি পররাষ্টমন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা রাখেন কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার এই অধমের আছে কিনা তা 'গোবিন্দ বাবু এবং শামসুদ্দিন' সাহেবের নিকট হইতে জানিয়া লওয়া কর্তব্য মনে করিতেছি। কিন্তু আমি আম জনতা, উনাদের নিকট পৌছানোর হ্যাপাতো কম নয়। জোড় হস্তে টুপি খুলিয়া আগেই মাফ চাহিয়া নিলাম। তো এই ম্যাডাম গত রাতে মিডিয়ার সামনে নির্লজ্জ এক মিথ্যাচার কেন করিলেন বুঝিলাম না। মমতা দিদি সেখানকার নাটক সমাপ্ত করিলেন, কেন্দ্রকে সব কিছু জানাইয়া দিলেন। এমনকি সেখানকার মিডিয়াগুলোও বলিতে লাগিল, এই চুক্তি হবে না। তবুও দীপু-রিজভী গং টানিয়া টানিয়া বলিতে লাগিলেন, "নাঁ হওয়াঁর তোঁ কিছুঁ দেঁখছিঁ নাঁ, চুঁক্তি হবে"।
হ্যা, চুক্তি তো হবেই, লেটার অব এক্সচেঞ্জও হবে, সম্মতিপত্রের দেখাও মিলিবে, প্রটোকলও সই হবে। কিন্তু উহাতে দেবার পাল্লাই যে ভারী থাকিবে, তাহা অতীত পর্যালোচনায় নিশ্চিত করিয়াই বলা যাইতে পারে। হায়রে বাংলাদেশীরা, তোদের কপালখানা এত খারাপ কেন? মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হইয়াছিল ৫০/৫০ অথবা ৪৮/৫২ % হিসেবে পানি বন্টিত হইবে। সেই চুক্তির কি হাল হইল জাতির আর জানিবার বাকি নেই। শুনিয়াছি ঢাকা নাকি দাদাদের উপর চটিয়াছে, ট্রানজিট (ট্রানজিট বলতে আমার ভীষণ আপত্তি আছে, আদতে করিডোর। তবে পুরোপুরি করিডোরও নয়, একখানা মিশেল) নিয়ে নাকি তারা আলোচনা করিবে না এমনটি হইলে। কি ভয়ানক কথা ? ঢাকার সাহসের কি ছিরি ! এমনটি বলতে নেই যে !
খুব আশান্বিত হইয়াছিলাম। যাক ওপারের মালকিনরা এইবার অন্তত কিছু পাওনা আমাদের দিবার জন্য প্রস্তুত, যদিও উহার বিনিময় অনেক বেশিই। তবুও আমরা ছোট, একটু বেশিই নাহয় নিল। কিন্তু সেখানেও গুড়েবালি। এই অধমরা শীলার ক্ষেমটা নাচ যতখানি শিখার জন্য অধীর হইয়া থাকি, মমতা-মনমোহনের দেশপ্রেম শিখার জন্য তার কানাকড়িও যদি হইত, তবে এটুকু বলা যাইতেই পারে, দাদাদের নিকট হইতে প্রাপ্যগুলো কিছুটা হইলেও আদায় করিতে পারিতাম।
শুধু উড়োজাহাজে করিয়া এই দেশ হইতে ওই দেশ সফর করিলেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া যায় না। কিছু আদায় করার কৌশল জানতে হয়। দাদারা যখন সব হোমওয়ার্ক করিয়া এই দেশে পা দিলেন, তখন দীপু মনিদের হোম ওয়ার্কের কি অবস্থা তাহা জানিতে বড্ড মন চায়।
ইহা নেন, উহা নেন। পাতিয়া দিলাম খুশি হইয়া মারিয়া যান। কিচ্ছুটি কব না। মাইরী বলছি দাদা..........
অপেক্ষায় থাকিলাম, কি হয় তাহা দেখার জন্য। বাকিটা না হয়, তখনই বলা যাবে।
আপডেট : ঢাকা-দিল্লি শীর্ষ বৈঠক সমাপ্ত। তিস্তাসহ কোন নদীরই পানিবন্টন চুক্তি সই হয়নি। ১ চুক্তি, ৮ সমঝোতা স্বারক ও প্রটোকল সই
"" বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যে রেলযোগাযোগ বিষয়ে ট্রানজিট দিতে সমঝোতা স্বারক সই
"" বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে সম্মত ভারত
"" বাংলাদেশ-ভারত উন্নয়ন সহযোগিতা রূপরেখা সই
"" বাংলাদেশ ও ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে চুক্তি সই
"" বাংলাদেশ-ভারত ভূমি সীমানা চুক্তি সই
"" দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষ ২৪ ঘন্টা যাতায়াত সুবিধা পাবে
"" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্বারক সই
"" সুন্দরবন,রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় দুটি আলাদা সমঝোতা স্বারক সই
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৭