সুরেস্যর দয়াল বাবা নামে পরিচিত কতিথ এক পীরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ এক প্রতারনা চক্র পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে । শুধু প্রতারনা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ই নয়, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে ক্যাডার লালন করা ও নারীদের দেহ ব্যাবসায় বাধ্য করার অভিযোগও আছে কথিত এই পীরের বিরুদ্ধে । তার কাছে যাওয়া নারীদের মধ্যে অনেকেই তার লালসার শিকার হয়েছেন। এই সিন্ডিকেট পরিচালনার জন্য তিনি দেশের ক্ষমতাশালী অনেক মানুষকে নানান ভাবে খুশি রাখেন । এসব ক্ষমতাশালীদের মধ্যে সিনিয়র কিছু পুলিশ অফিসার , সরকার দলীয় নেতা ও কথিত পীরের বিত্তশালী অনেক ভক্ত রয়েছেন। তদন্তে জানা যায়, মানুষকে চাকরী দেয়া থেকে শুরু করে নানান ধরনের সমস্যা এই পীর টাকা নিয়ে সমাধান করে থাকেন । এগুলো কোনো বুজরুকী নয়, বরং টাকা নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে তিনি কাজ করিয়ে দেন ।
অনেকেই নারীর লোভে ও ঘুষ বানিজ্যে লাভবান হওয়ার জন্য পীরের সহায়তা করে থাকেন । জানা যায় , প্রভাবশালী বেশ কিছু মানুষ পীরের এই কর্মকান্ডে তাকে সহায়তা করে যাচ্ছেন । কথিত এই পীর তার প্রায় চারটি আস্তানায় এসব ভয়াবহ কর্মকান্ডের জাল বিস্তার করে রেখেছে ।
অভিযোগ উঠেছে ঢাকা শহরের অভিজাত্য এলাকায় তার বেশ অনেকগুলি বিউটি পার্লার আছে। ধানমন্ডি ,বনানী,গুলশান,বারিধারার এ সমস্ত বিউটি পার্লার গুলি মিনি পতিতালয় বল্লে কম হবে না। খদ্দেরের পছন্দ অনুযায়ী মেয়ে সাপ্লাই দেয়া হয় বিভিন্ন হোটেল ও বাসায়।
সম্প্রতি পারভিন নামে এক অভিযোগকারী কথিত এই পীরের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেন । তিনি বলেন , তিনি ঢাকা থেকে মেয়ে প্রিয়াসাকে চিকিৎসার জন্য পীরের শরীয়তপুরের দরবারে নিয়ে যান । তখন তার মেয়ের উপর পীরের কু-নজর পরে । পীর প্রিয়াসাকে চিকিৎসার নামে আটকে রাখে। শত চেষ্ঠা করেও মেয়েটি বাসায় নিয়ে যেতে পারেনি । মেয়েটিকে পীর ও তার লোকেরা ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে পীরের সাথে থাকতে ।
অনেক কষ্টে তারা মেয়েটিকে একবার বাসায় নিতে সক্ষম হলেও , পরে পীরের লোকজন তাকে পুনরায় ধরে নিয়ে যায়। পীর তখন তার কাছ থেকে মেয়েকে ফেরত দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা দাবি করে । পরের দিন ৫ লাখ টাকা নিয়েও মেয়েটিকে ফেরত দেয়নি। বরং গুলজারবাগের একটি বাসায় মেয়েটিকে রেখে পীর ও এমএস চৌধুরি প্রায় তিন মাস মেয়েটির সাথে রাত কাটায়।
এরপর গত বছরের ২৭ এপ্রিল ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় । তখন অভিযোগকারীর কাছ থেকে পীর ও এমএস চৌধুরী ( পীরের সহচর) স্ট্যাম্পে নানা কথা লিখে স্বাক্ষর নেন। এ সময় প্রিয়াসার বাবা প্রতিবাদ করলে পীর তাকে বান দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং বলে তোর মেয়ে প্রিয়াসা আমার কাছে থাকবে বেশি কথা বলে এক মাসের মধ্য মেরে ফেলবো। পরবর্তীতে , প্রিয়াসার বাবা হঠাৎ করেই হৃদক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। এরপর তার ছেলে জামিল জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গুলশান থানায় জিডি করেন । জিডি নং ২৪৭, তাং-০৪.০২.১৬ এছাড়া এমএস চৌধুরির বিরুদ্ধেও ভাটারা থানায় সাধারন ডাইরি করা হয়।
পীর তার লোকজন দিয়ে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে উল্টো গুলশান থানায় মামালা দায়ের করে । সেই মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ভন্ড পীর । পীরের লোক , মীরপুরে বসবাসকারী ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মেদ এই টাকা গ্রহণ করেন। অভিযোগকারী জানান, তিনি তার স্বামীর পেনশনসহ জমানো সকল টাকা হারিয়ে আজ নিঃস্ব।
ভন্ড এই সুরেশ্বর পীর (দয়াল বাবা) পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বহুদিন যাবত কাজ করে আসছে বলে তার পাশের মানুষদের ধারনা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক মুরীদ বলেন, পীরের লেবাস নিয়ে সে পাকিস্তানের চর হিসাবে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এটি একটি কাভার মাত্র। এছাড়া তার লোক মনিরুল হক চোধুরী ওরফে এমএইচ চৌধুরী (৪২/১ পুরাণ পল্টন, ৩য় তলা) ও দীর্ঘ দিন যাবৎ পাকিস্তান সরকারের বিশ্বস্ত হয়ে কাজ করছেন। বোনাজি ঔষধের ব্যবসা তার কাভার মাত্র। পীর সুরেশ্বরের বিভিন্ন আস্তানা গোলাবারুদ রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের উঁচু পর্যায়ের অনেকে পীরের কাছ থেকে এসব কর্মকান্ডে সুবিধা নিয়ে থাকে । ফলে এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে কথিত এই পীর । অবিলম্বে ভন্ড এই পীরের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের ব্যাবস্থা করার আবেদন জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।