somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জংগি আছে, জংগি নেই- এই টানাটানি কি আমাদেরকে বাঁচাতে পারবে?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে জংগি আছে কি নেই সেটা একটা তর্কের বিষয়। তর্কের বিষয় এই জন্য যে. এতদিন সরকারে থাকা বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সূত্রে বলে আসছেন যে বাংলাদে জংগি উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশে জংগি ছিল সেটা জেএমবির উত্থানের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড এখন অনেকটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তবে উর্বর পরিবেশ পেলে তারা যে কোন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অপরদিকে সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার জংগি জুজুর ভয় দেখিয়ে বাইরের রাষ্ট্রগুলোকে বোঝাতে চায় যে জংগি দমন করতে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারকে থাকতেই হবে। এ ব্যপারে সরকারের বক্তব্য হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিপক্ষে যারা আছে অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এল জংগিদের তোয়াজ ও পৃষ্ঠপোষণ করে থাকে। সুতরাং পাশ্চাত্যের উচিত এই সরকারকেই ক্ষমতায় রাখা।

এখন কথা হচ্ছে যদি ধরে নেওয়াও হয় যে, ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই জংগি ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে (যদিও দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা উপেক্ষা করা ঠিক হবে না), দেশে প্রকৃত অর্থে জংগি নেই তবুও কি আমরা জংগি সমস্যা উপেক্ষা করে থাকতে পারব? প্রথম কথা হচ্ছে অতীতে এদেশে জংগি ছিল, তারা বিভিন্ন নাশকতা ঘটিয়েছে, অনেকে গ্রেফতার হয়েছে, অনেকে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে কিংবা অনেকেই বিচারাধীন আছে এবং ইতোমধ্যে অনেকের ফাঁসিও হয়ে গেছে। প্রশাসন যে সবাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে কিংবা বিচারের সম্মুখীন করতে পেরেছে তা নয়। অনেকেই এখন ঘাপটি মেরে বসে আছে। উপযুক্ত সময় পেলেই তারা স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হবে। এখন কথা হচ্ছে সেই উপযুক্ত সময় কোনটা? বৈশ্বিক পরিবেশ কি দ্রুতই জংগিদের সেই কাক্সিক্ষত সুযোগের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে না? আফগানিস্তানে তালেবানদের পুনরায় জয়-জয়কারের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে আইএস গজিয়েছে। তারা সংখ্যায়, আয়তনে, সম্পদে এবং অস্ত্রে এখন এতটাই শক্তিশালী যে মধ্যপ্রাচ্যের একক কোন দেশই তাদেরকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। আইএস কোন জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল নয়। এরা ইসলামের যে আদর্শবাদী ভাবধারা রয়েছে সেটা বিশ্বাস করে। অর্থাৎ তারা নির্ধারিত একটি ভূ-খন্ড নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তারা অবশ্যই অন্যান্য দেশের সমমনাদেরকে ফুসলানী দিয়ে সে সব দেশেও এই আদর্শের বিস্তার ঘটাতে চাইবে। সেটার নমুনা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। আইএস মারফত জানা গেছে উপমহাদেশেও তাদের শাখা গঠিত হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের কূটনৈতিক জোনে ইতালির যে কূটনীতিক খুন হয়েছেন তার দায়িত্ব্ও নিয়েছে আইএস।

ইতালীয় কূটনীতিক খুনের সাথে আইএস জড়িত না থাকলেও অর্থাৎ তাদের দায় স্বীকারের ঘটনা বানোয়াট হয়ে থাকলেও কি আমরা বেঁচে যাব? কিংবা আমাদেরকে কি শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে? তাই ফিরে আসি প্রথম কথায়, বাংলাদেশে জংগি থাক বা না থাক, এখানে জংগিদের উত্থান ঘটানো হবে। বাংলাদেশের শত্র“রাই সেটা করবে। বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমের আসা বিলম্বিত করা, পশ্চিমা দেশেগুলোর হাতে জংগি নাশকতার সম্ভাব্য তথ্য থাকা, ইতালির কূটনীতিক হত্যা, অনেক দেশের নাগরিকদেরকে সতর্ক হয়ে চলাচল করা তার একটা অংশবিশেষও হতে পারে।

সুতরাং বাংলাদেশে আইএস নেই এবং আইএস আসার সম্ভাবনাও নেই এই চিন্তা করে যদি আমরা কানে তুলো দিয়ে গভীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে থাকি, স্বীকার অস্বীকার নিয়ে টালবাহানা করতে থাকি তাহলে আমরা বাঁচতে পারব না। ঘুমন্ত অবস্থায়ই একদিন দেখব আমাদের পরিণতি হয় গেছে একটি সিরিয়ার মত কিংবা একটি ইরাকের মত দেশে। সুতরাং এখন উপায় কী? অস্ত্রব্যবসায়ী সাম্রাজ্যবাদী ও শত্র“স্থানীয় শক্তিশালী দেশগুলো যদি বাংলাদেশকে জংগিদের অভয়ারণ্য হিসেবে প্রমাণ করতে তৎপর হয় তবে আমরা তাদেরকে কি দিয়ে তাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারি? এর একমাত্র উপায় হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। আমরা দেশের ষোলো কোটি মানুষ যদি জংগিবাদকে ঘৃণা করি, জংগিবাদকে যদি প্রতিহত করার চেষ্টা করি, প্রচার-প্রচারণা চালাই তবে গুটিকয়েক ঘাপটি মেরে থাকা মানুষ এদেশে বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। জনগণই তাদেরকে প্রতিহত করবে। পাশাপাশি আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের সকল অপচেষ্টাকে রুখেও দিতে পারব ইনশাল্লাহ। সুতরাং সরকারি দল, বিরোধী দল সবাইকে এই একটি ব্যাপারে এক হয়ে সম্ভাব্য এই ঝুঁকিকে মোকাবেলা করতে হবে। না হলে এদেশে কে সরকারী দল, কে বিরোধী দল, কে সংসদ সদস্য, কে বুদ্ধিজীবী, কে আইনজ্ঞ, কে বিচারক, কে ডাক্তার, কে সাংবাদিক তা দেখা হবে না। সবার পরিণতিই হবে এক। সবার পরিচয় হবে রিফিউজি। তবে রিফিউজি হতে পারাটাও হবে সৌভাগ্যের বিষয়। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে অধিকাংশই বেঘোরে প্রাণ হারাবে। লাখে লাখে মারা পড়বে মুহূর্তের হামলায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×