somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কুতুবীয় কিছিম উদ্ভাবন এবং অতঃপর

১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুতুব আলীকে দেখেনি বা তার নাম শোনেনি, এমন লোক এই তল্লাটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । আপনারাও তাকে কম বেশি চেনেন সবাই । এই কদিন আগেইতো কুতুবরে নিয়ে রসায়ন রচিত হল । ইতিমধ্যেই তার নাম ভোলার কথা নয় কারো । কুতুব আলী কেমন মানুষ তার কিঞ্চিৎ ধারণা সবারই আছে । যাই হোক, এক কথায় কুতুব আলী বিশেষ কেউ নয়, মানুষ । মানুষ হলেও অন্যদের তুলনায় সে অন্য কিছিমের মানুষ । এই মানুষ নিয়েও তার নিজস্ব সংজ্ঞা আছে, আছে মতামত । ফুরসৎ পেলে সেসব অন্য সময় বয়ান করা যাবে । আজ বরং তার অন্য রকম কিছিম নিয়ে স্বল্প বিস্তর গল্প করা যাক ।


সিলেবাসের পড়া কুতুব আলীর বরাবরই অপছন্দের । তার মতে দেশের পাঠ্য পুস্তক অযৌক্তিক ও অদরকারি বিষয়ে ঠাঁসা । অনেকটা ফিকশন বইয়ের মত । ননফিকশন বইয়ের মত জ্ঞান অর্জনের জন্য অতুলনীয় তার কাছে দ্বিতীয়টি নেই । পাশা পাশি বাছাই করা কবির কবিতা আর দৈনিক সংবাদ পত্র তার নিত্য দিনের খোরাক । কিন্তু তাই বলে পরীক্ষায় তো আর ফেল করা যাবে না ! বাধ্য হয়ে তাকে ওই ফিকশনের কিছুটা পড়তেই হত । কিন্তু সময় কোথায় ? মাথায় বড় বড় চিন্তা আর ননফিকশনের জ্ঞান আহরণ করতেই তো দিন সাবাড় ! তার উপর বন্ধুদের আড্ডা-উৎপীড়ন উপেক্ষা করে পাশের পড়ায় মনযোগী হওয়া তো চারট্টিখানি কথা নয় ! কিন্তু ফেল করা যাবে না, এই চিন্তা তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করতো । একদিনের ঘটনা বলি, কুতুব আলী মেসের একটা অব্যবহৃত কিচেনে একাই থাকতো । সেখানে ফ্লোরে বিছানা পাতা, পাশেই ছোট টেবিল মত একটা আসবাবে কিছু ফিকশন বই, ডায়রি আর কলম রাখা ।

কিচেনের উপর দিকে চার পাশের দেয়ালের সাথে পাকা তাক । তার উপরে বিছানো কাঁথার উপরে একটা বালিশের উপর সিলেবাসের ফিকশন বই রেখে কুতুব পড়ায় মগ্ন । পিছনে ছোট্ট একটা টেবিল ফ্যানও চালু আছে । নিচে দরজা খোলা । সোহেল এসে কুতুব কুতুব করে কয়েকবার ডাক দিলেও কুতুব চুপ । তার এই গোপন আস্তানার কথা ফাঁশ করা যাবে না । এরপর এলো সুজন, ডাকাডাকি করে রুমে ঢুকে বিছানায় পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেট পরোখ করে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেও চলে গেল, শালা গেল কই, বলে সগক্তি করতে করতে । এর পর পলাশ, পূর্ব পাশের গেট দিয়ে ঢুকে মামা মামা বলে চিল্লাতে চিল্লাতে রুমে এসে উঁকি দিয়ে কুতুবের দেখা পেল না । মানিক এসে উঁকি দিয়েই ছুটল আওয়ালের রুমের দিকে । এসব দেখে কুতুব মজা নিচ্ছে উপড় থেকে কিন্তু সাড়া শব্দ নেই । পাগল নাকি ? এই আস্তানার কথা কাউরে জানানো যাবে না । এমনি ভাবে কয়েকদিন চলার পর, টিকটিকি মামুন আস্তানার সন্ধান পেয়ে গেল । কুতুব আর যায় কোথায়, এককান, দুকান করে পাঁচ কান হয়ে গেলে একে একে কুতুবরে সবাই তুলো ধুনা করে ছাড়ল ।

এরই মধ্যে কুতুব উদ্ভাবন করে ফেললো যে, পড়া মনে রাখার জন্য মাঝে মাঝে পড়ার স্থান পরিবর্তন করা হলে পড়া মনে থাকে ভাল । এরপর পরীক্ষার সময় গুলোতে মেসের সবাই কুতুবের পড়ার নানান কিছিমের স্থানের আবিস্কার লক্ষ্য করল । একদিন তাকে দেখা গেল, টেবিলের উপর বসে চেয়ারে বই রেখে পড়তে । একদিন দেখা গেল, বিছানার উপর পা দিয়ে মেঝেতে শুয়ে কুতুব পড়ছে । আরেক দিন, দেখা গেল বাইরে দেয়াল রং করার মইয়ের উপরে উঠে সে পড়ছে । আন্ডার ওয়্যার পরে ব্যালকনিতে কাঠের চেয়ারে বসেও তাকে পড়তে দেখা গেল ।

সবাই ভাবল, এর মাথা একেবারেই গেছে ! অন্যের কথায় কুতুবের কিচ্ছু যায় আসে না । কারন কুতুব জানে, তার এই উদ্ভাবিত নানা কিছিমের পড়া সামনের পরীক্ষায় অভাবনীয় ফল দেবেই দেবে । যেই কথা সেই কাজ । সত্যি সত্যি কুতুব সেইবার পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিল ! রেজাল্টের পর নানান জনের নানা মত । পলাশ বলল, মামা তুমি যে রেগুলার পত্রিকা পড়, এই রেজাল্ট কিন্তু তারই ফল ! মোহাম্মদ বলল, না না, ভায়রা যে রেগুলার ক্লাস করত তার ফল ! মামুন বলল, নারে বাল, তুই ওরে চেনস ? এটা বিয়াইয়ের চুপে চুপে পড়ার ফল ! কুতুব মনে মনে হাসে, কিন্তু তার উদ্ভাবনের কথা কাউরে বলে না ।


কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
বিষয় শ্রেণীঃ রম্য ও যাপিত কার্টুন
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ২:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×