মাজারের নামে মানত করা; গাছে সুতো বেঁধে দেয়া; কুমিরকে খাওয়ানো; কচ্ছপের শরীরের ছোঁয়া লাগানো পানি পান করা; আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইতে কাউকে দালাল হিসেবে মধ্যখানে নিয়ে আসা উচিৎ নয়। ইসলামে এর কোন বৈধতা নেই। তবে রেফারেন্স হিসেবে কারো কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কেউ যদি প্রার্থনা করেন, হে আল্লাহ শেষ নবীর উম্মত হিসেবে আমাকে মাফ করে দাও। তবে তা বৈধ। এখানে রেফারেন্স এবং মিডলম্যানের পার্থক্যকটা বুঝতে হবে। আল্লাহর কথা,
‘‘জেনে রাখো, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদত এজন্যই করি যেনো তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদের মধ্যে তাদের পারষ্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দিবেন। আল্লাহ্ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’’ (সূরা আয্-যুমার ৩৯, আয়াত ৩)
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। সরকারী অফিসে আপনার একটা জরুরী ডকুমেন্টে সাইন লাগবে। আপনি কোন এক পিয়ন বা ব্যক্তির নিকট ডকুমেন্টটা দিলেন বসকে দেয়ার জন্য। সেই ব্যক্তি হয়তো আপনার কাজ করবে। তবে সেটাতে সময় বেশি লাগার বা ভূলে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়। এছাড়াও আপনি যদি সরাসরি বসের কাছে কাজটা নিয়ে যান এতে যে রকম গূরুত্ব পাবে অন্য কেউ নিয়ে গেলে এতো গূরুত্ব না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনিভাবে নিজেই আল্লাহর কাছে চাওয়াটা কি বেশি যুক্তিপূর্ণ নয়?
মূল কথা হলো আল্লাহ সার্বজনীন। সবার কথাই শুনতে পারেন। সুতরাং মধ্যস্ততাকারী হিসেবে এই বাবা সেই বাবার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। বিশ্বাসও করি না। আমি বিশ্বাস করি, আমার কথা আমার আল্লাহ সরাসরি শুনতে পারেন। আমার মনের আকুতি বুঝতে পারেন। তো মিডলম্যান হিসেবে গাছ, কুমির, গজার মাছকে নিয়ে আসার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। আল্লাহর বাণী,
‘‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্ত্তর উপাসনা করে, যা তাদের না করতে পারে কোনো ক্ষতি, না করতে পারে কোনো উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করতে চাও, যে সম্পর্কে তিনি আসমান ও জমীনের মাঝে অবহিত নন? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত জিনিস থেকে, যে গুলোকে তোমরা শরীক করছো।’’ (সূরা ইউনুছ ১০, আয়াত ১৮)
আমরা বুঝে না বুঝে অনেক ধরনের শিরক করে থাকি। কাফের হয়ে যাই। ইসলাম খুব কঠিন বা সহজ নয়। পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মেনে চললে সহজ; না মানলে কঠিন। এ ব্যপারে কোরআনের আয়াতের সরল অনুবাদ,
‘‘আল্লাহ কেবল শিরকের গুনাহই মাফ করেন না; উহা ব্যতিত আর যত গুনাহ আছে তা যার জন্য ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে লোক আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করল; সে তো বড় মিথ্যা রচনা করল, এবং বড় কঠিন গুনাহের কাজ করল।’’ (সূরা আন-নিসা ৪, আয়াত ৪৮)