somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পতিতারা কি এলিয়েন নাকি মানুষ?

০১ লা মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? এই প্রশ্নের জবাবে নিশ্চয় কোন মেয়ে বলে না আমি পতিতা হতে চাই। দেহ বিক্রি করে বাঁচতে চাই। কারণ সামাজিক মর্যাদা সবাই চায়। সবাই চায় জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে। কোন মা; কোন বোন; কোন বাবা; কোন ভাই কেউ চায় না মেয়েটাকে ছিড়ে খাক মানুষের ভিতরের অচিন মানুষ। কিছু সামাজিক কীটের কারণে বোঝা হয়ে উঠুক সমাজের। তবুও কিছু মেয়ে পতিতা, বেশ্যা, মাল, নিশিকন্যা, প্রোস্টিটিউট, মাগী, গণিকা, রক্ষিতা, দেহপসারনী, কলগার্ল নামে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোন এক বইয়ে লিখেছেন- 'এক মেয়ে তার দেহের বিনিময়ে ভালবাসা চাইবে না টাকা নিবে তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত'। তবে প্রশ্ন হলো, মেয়েটা কি সত্যিই এই পেশাটা চেয়েছিলো? যদি সেটা পেশাই হবে তাহলে সমাজে মূল্যায়ণ কতোটুকু?

পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই পেশা। খ্রীস্টপূর্ব ১৮ শতকে মেসোপটেমীয় সভ্যতায় হাম্বুরাবি আইনে প্রথম মেয়েদেরকে যেকোন পেশায় কাজ করার অধিকার দেয়া হয়; এমনকি পতিতাবৃত্তিও। সুমেরীয়, ব্যবিলনীয় সভ্যতাসহ বিভিন্ন সভ্যতায় “হাউজ অফ হেভেন” নামে ধর্মীয় পতিতাবৃত্তি চালু ছিলো। আমরা এখন যে পর্ণ শব্দটার সাথে পরিচিত তা এসেছে গ্রীক হতে। যার অর্থই হলো বিক্রির জন্য! প্রাচীন গ্রীসে মেয়ে এবং ছেলে উভয় ধরনের প্রোস্টিটিউশন প্রচলিত ছিলো। তাদেরকে নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করতে হতো এবং যৌনকর্ম ব্যতিত অতিরিক্ত কাজের জন্য আলাদা চার্জ নির্ধারিত থাকতো। পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রাচীন গ্রিক কবি সোলোন খ্রিষ্টপূর্ব ছয় শতকে এথেন্সে প্রথম পতিতালয় স্থাপন করেন। এই পতিতালয়ের উপার্জন দিয়ে আফ্রোদিতিকে নিবেদন করে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। মধ্যযুগে ইউরোপে ব্যাপকভাবে পতিতাবৃত্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং পৌরসভার মাধ্যমে পতিতালয়সমূহ পরিচালিত হতে থাকে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে পতিতা সংক্রান্ত ভারতবর্ষীয় চিত্র পাওয়া যায়। তাঁর রচিত বিখ্যাত অর্থশাস্ত্রের মতে, দেহব্যবসা একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। পুরোপুরি ঘৃণিত বা গোপন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এর অনুমোদন করে এবং সংগঠকের ভূমিকা নেয়। ঋগ্বেদ এবং জাতকেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন পণ্ডিতরা। এমনকি কৌটিল্যের সময় দেহব্যবসা শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয় বলে জানা যায়, যে শিল্পের নাম ছিল বৈশিক কলা। তখন দেহব্যবসা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রীক। নগরজীবনের আবশ্যকীয় ছিল এটি।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশ পর্যটন শিল্প নির্ভর। সেসব দেশে এখনো সরকারি তত্ত্বাবধানেই দেহব্যবসা পরিচালিত হয়। এমনকি বাংলাদেশেও এ প্রথাকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে; পতিতাবৃত্তিতে আগ্রহী যেকোনো আঠারো বছর বয়সোত্তীর্ণ নারীকে দেহব্যবসা চালাবার জন্য এফিডেফিট দেয়া হয়। বাংলাদেশে ১৪টি পতিতালয় রয়েছে এবং সেখান থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তদারকি করা হয় না ঠিকমতো। আঠারো বছরের নিচে পতিতাবৃত্তি; পতিতালয়গুলোতে অপরিশুদ্ধ পানি এবং ড্রেনেজ সিস্টেম; আবাসন সংকট; চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত অষুধ সেবন; জোরপূর্বক পতিতা বৃত্তিতে নিয়োগ; মানবাধিকার হরণসহ বিভিন্ন ধরনের অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা-আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, যৌন রোগ বৃদ্ধি, সামাজিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে। তবে যৌন অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পেছনে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই মূল কারণ। আর পতিতাবৃত্তি বাড়ছে দারিদ্রতার কারণে।

মনে করা হয় আদিম যুগে নারীরা স্বাধীন সত্ত্বা ছিলো। যখন থেকে সম্পত্তিতে ‘আমার’ প্রত্যয়টা যুক্ত হয়েছে তখন থেকেই তাঁরা পুরুষের অধীনস্ত হয়ে পরেছে। পুরুষ এবং নারী উভয় মিলে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বর্তমানে সময়েও আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো মডেল বা শরীর সর্বস্ব নায়িকা হওয়ার জন্য মেয়েরা কিভাবে নিজেদের বিকিয়ে দেয়; পণ্য বানায়। যা এক দিক দিয়ে পতিতা শব্দটারই নামান্তর মাত্র। অবশ্য এসব বলাটাও অনেকটা চুলকানির মতো; না বললে শান্তি পাই না আর বললে আমি নারীর অধিকার দিতে জানি না; কাপুরুষ হয়ে যাই। শুধু শুধু বিশ্বায়নের উপর দোষ চাপিয়ে কোনক্রমেই পার পাওয়া যাবে না। পতিতা বা নারীকে তার মর্যাদা দিতে হবে; পণ্যের মর্যাদা দিয়ে লাভ নাই।

এঙ্গেলস বলেছেন, ‘বেশ্যাদের থেকে সেই স্ত্রীর পার্থক্য কেবল এই যে, সে সাধারণ বেশ্যাদের মতো রোজই নিজের দেহকে দিন-মজুরের মতো ভাড়া খাটায় না; কিন্তু তার দেহকে সে একেবারেই চিরকালের দাসত্বে বিক্রি করে দেয়।’ আমরা যদি বউকে ভালোবাসতে না পারি; নারীকে নারীর মর্যাদা দিতে না শিখি; সমাজের পতিতাদেরকে শুধু যৌন যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করি; তাহলে নিজেদেরকে আর মানুষ বলার দরকার কি? পতিতা মেয়েটা যদি অন্য কোন প্রাণী হয় তবে আমরাও কি সেটাই নই? কারণ সমাজটাই তো তাদেরকে পতিতা বানিয়েছে! আর সমাজ কে জানেন তো? আপনি এবং আমি। আসুন, আরো একবার মানুষ হই।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×