অধ্যায় একঃ
‘তুই পটকা ফুটাতে পারিস?’ পনেরো ষোল বছরের টোকাইকে জিজ্ঞেস করলেন জনৈক ব্যক্তি। তার জহুরী চোখে চকচকে উজ্জলতা। টোকাই নির্ভয়ে তাকালো। বললো, ‘ছোডো বেলায় বুড়িমা বোম কতো ফুডাইছি। একবার তো হাতেই ফুডতে নিছিলো!’ লোকটা হো হো করে হাসলেন। এরকম ভয়ংকর কাহিনীতে হাসির কি থাকতে পারে বোঝা গেলো না। মগবাজার রেললাইনের এই বস্তিটার চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে নিলেন তিনি। তারপর যা বললেন তা অস্পষ্ট। তবে আন্তঃনগর মেইলের ঝকঝক শব্দ ছাপিয়ে স্পষ্ট দেখা গেলো, টোকাইর হাতে কিছু টাকা এবং পলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা দিয়ে সাবধানে সটকে পড়লেন তিনি।
অধ্যায় দুইঃ
মাগরিবের আজান হচ্ছে। চারদিকে হালকা কুয়াশার চাদর। নাবিস্কো মোড়ে লা রিভের সাদা এক শপিং ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে টোকাইটা। চারদিকে ঘরে ফেরা মানুষের ব্যস্ততা। আচমকা কি এক অদ্ভুত কারণে খুবই ক্ষিপ্র হয়ে উঠলো টোকাইটার হাত। সাদা ব্যাগের ভিতর থেকে পেপসির একটা বোতল বের করে ছুড়ে মারলো বাসের ভিতরে। তারপর বিকট শব্দ। হৈ-হুল্লোড় চেঁচামেচি। ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলো চারপাশ। সাদা শপিং ব্যাগ হাতের টোকাইটাকে আর কোথাও দেখা গেলো না।
অধ্যায় তিনঃ
ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের সামনে আবার দেখা মিললো সেই জনৈক ব্যক্তির। খুবই চিন্তিত মুখে ডাক্তারদের পিছনে ছোটাছুটি করছেন। গত তিন ঘন্টার পেরেশানিতে তার বয়স প্রায় পাঁচ বছর বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। আজ সন্ধায় নাবিস্কো মোড়ে বাসের মধ্যে কে জানি পেট্রোল বোমা মেরেছিল। সে বোমায় দগ্ধ হয়েছে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলেটা। ছেলেটার মা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। অভিশাপ দিচ্ছেন যারা তার ছেলের গায়ে বোমা ছুড়ে মেরেছে তাদের প্রতি। জনৈক লোকটা ছেলেকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তবু কেন যে ছেলেটা বাইরে গিয়েছিলো? লোকটার মাথার ভেতর পুরোটা ফাঁকা লাগছে। বউয়ের সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। মেডিকেলের মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন তিনি।
আনপ্লাগড ব্রেকিং নিউজঃ অভিশাপ কখনো কখনো দেয়ার আগেই ফুলফিল হয়ে যায়!