somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণঃ চলনবিল

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা দুর্নাম আছে। দুর্নামটা হলো আমি কম কথা বলি। এছাড়া আরো একটা দুর্নাম আছে যে আমি বেড়াই কম।

তো সেই আমাকেই বলা হলো যে, চলো চলনবিল থেকে ঘুরে আসি।

ঘটনাটা ছিল গত ঈদের দ্বিতীয় দিন। তো আমার স্বভাব অনুযায়ী প্রথমেই বোল্লাম যাবোনা। শুধু তাই না, পেটের মধ্যে হালকা ভুটুশ-ভাটুশকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে বোল্লাম পেটে ব্যাপক সমস্যা। পেটের এই অবস্থা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
কিন্তু ঐ যে কথা আছে না পড়েছো মোঘলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে। আমিও পড়েছিলাম মেজ (মামা)র হাতে। অত সহজে কি আর ছাড়া পাই!! পেটের সমস্যা শুনে মেজ টপাটপ আমাকে একবারে ডাবল ডেজের ওষুধ খাওয়ায় দিলো। এরপর তো আর কোনো কথা চলে না (বলা যায় না, কিছু বল্লে যদি এবার ট্রিপল ডোজের ওষুধ খাইতে হয়:-P)।

শুরু হলো যাত্রা। লোকসংখ্যায় ছিলাম আমি, মেজ (মামা), মামী, ছোটো (মামা), আলী ভাই, জয়নাল মামা, মামী, পিচ্চি মামাতো বোন, ফারুক ভাই, রুস্তম মামা, মিঠু মামা, মনি ভাই, জামিল ভাই আর শিমুল। আসলে শিমুলদের বাড়িতেই যাওয়া হচ্ছিলো। অদের বাড়িটাই চলনবিলে।
ব্.ষ্টি ভেজা দুপুরে ছোটোখাটো ট্রেন ভ্রমণ শেষে পৌছালাম স্টেশনে। সেখানথেকে ভ্যানে চলন বিল। তারপর শুরু হলো নৌকা ভ্রমণ, প্রথম নৌকা ভ্রমণ!!

সময়টা ছিল শেষ বিকেল। ডুবন্ত সূর্যকে পেছনে ফেলে নৌকা এগিয়ে চলছিল বিলের পানি কেটে। অস্সাধারণ!! এতদিন দূর থেকে ট্রেনের জানালা দিয়েই দেখেছি চলন বিল। আর আজ তার বুকের মধ্যদিয়ে চলেছি!! চারপাশে শুধু পানি আর পানি। শুধু দূরে দূরে ছড়ানি ছিটানো দ্বীপের মত গ্রাম-দু'একটা বাড়ি।

চারপাশের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিবো না। কারণ সেটা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবো না। শুধু বলবো একবার নৌকায় ঘুরে আসেন চলন বিল, সৌন্দর্য নিজের চোখেই দেখতে পারবেন।

যাইহোক, মোটামুটি ঘন্টাখানের পরে সন্ধ্যার একটু পরে পৌছালাম শিমুলদের গ্রামে। গ্রাম না বলে দ্বীপ বলাই ভালো। গাছপালায় ভরা আর অনেক পুকুর, মাঝে মাঝে বাড়ি এইনিয়ে দ্বীপ বা গ্রাম যা বলা যায়।
তো পৌছে ফ্রেশ হয়ে সবাই বাড়ির পেছনে বারান্দায় বসে কিছুক্ষণ আড্ডা চললো। সঙ্গে ছিল মুড়ি, চলনবিলের বাতাস আর, ঢেউয়ের শব্দ। আমেজটাই অন্যরকম। এরপরে রাতের খাবার শেষ করে আবার বারান্দায় বসে আড্ডা। আড্ডার মাঝখানে ঝোঁক উঠলো যে গান হবে। ডাক্তার আঙ্কেলের (যাদের বাড়িতে গেছি) গান। প্রথমে একটু গাইগুঁই করার পর আনা হলো হারমোনিয়াম আর কলসি। তারপর শুরু হলো হারমোনিয়াম আর কলসি বাজিয়ে গান! ওহ সে কি গান!! প্রায় দুইটা পর্যন্ত চললো সেই গান। গাছপালায় ঘেরা বাড়ি, রাতের হালকা বাতাস, কয়েকহাত দূরেই দিগন্ত জোড়া চলন বিল, ঢেউয়ের শব্দ আর তার মাঝখানে এই গান। ওহ, ফিলিংসই আলাদা!! বিশেষকরে "দয়াল এসে থাকো যদি" গানটাতো মুরা মাতিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। ঘুমাতে ইচ্ছা করছিলোনা সেই রাতে। কিন্তু তাও জোরকরে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো।
এরপর সকাল। সকালের নাস্তা শেষে যাওয়া হলো এক পুরানো জমিদার বাড়িতে। সেইখানে যাওয়ার সময় আবার আরেক কাহিণী। প্রায় পনেরো ষোল জনের দল রওনা দিয়েছিলাম। সেইখানেও যেতে হবে নৌকায়। কিন্তু দেখাগেল নৌকা কালকের চাইতে ছোটো, দল কালকের চাইতে বড়! কেমন কেমন যেন লাগছিল। কিন্তু তাও ডাক্তার আঙ্কেল বললো আরে কোনো সমস্যা হবে না। এই নৌকাই যথেষ্ট। কিন্তু ওমা, একটু দূরে যেতেই নৌকা পুরা দুলতে লাগলো। প্রাই পানি উঠি উঠি ভাব। নৌকাতে আবার কয়েকটা পিচ্চিও আছে (তাছাড়া আমি নিজে সাঁতার জানি কি জানিনা সেই ব্যাপারে একটু কনফিউশন আছে:-P)। অবস্থা এমন যে আর একটু গেলেই ডুববে! ডাক্তার আঙ্কেলও ভয় পেয়ে গেছে। মাঝিকে বলছে নৌকা ঘুরা, আরে নৌকা তারাতাড়ি ঘুরা। অবশেষে প্রায় ডুবি ডুবি ভাব করে নৌকা পাড়ে ভিড়লো। তারপর অবশ্য আরেকটা বড় নৌকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জমিদার বাড়িতে। এই যাওয়া আসাতে ভালোই ঘুরা হলো চলনবিল। তারপর দূপুরে নৌকাবাইচ দেখে বিকালের দিকে আবার বাড়ির পথে যাত্রা শুরু। শেষবারের মত চলনবিলের পানি কেটে যাওয়া। এরপর আবার সেই ভ্যান, তারপর ট্রেন। অবশ্য এবার লোকাল ট্রেনের অভিজ্ঞতাটাও হয়ে গেল। সেইটা নাহয় পরে একদিন বলবো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×