somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন জেনে নিই অমর একুশে বইমেলা সম্পর্কিত কিছু তথ্য

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাদের মাঝে উপস্থিত হতে যাচ্ছে। তাই আসুন জেনে নিইি অমর একুশে গ্রন্থামেলা সম্পর্কিত কিছু তথ্য।


বইমেলা, বাঙালির প্রাণের মেলা, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের মেলা। প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত বই বিক্রির মহৎসবকে আমরা বইমেলা হিসেবে জানি।

‘বইমেলা’ কিংবা ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দ দুটি যেন বাঙালির প্রাণের স্পন্দে স্পন্দে রন্ধিত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি আসলেই প্রতিটি বাঙালির নিশ্বাসে নিশ্বাসে ধ্বনিত হয় এই বইমেলা। ‘বইমেলা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। বইমেলা বইপ্রেমী মানুষের প্রাণে দোলা দেয়; জাতিসত্তার শক্তিবলে লাখ লাখ মানুষকে টেনে আনে একাডেমির বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে। আশপাশ ঘিরে জমে ওঠে লেখকদের জমজমাট আড্ডা; কাটে লেখক ও প্রকাশকদের নির্ঘুম রাত। প্রকাশিত হয় হাজার হাজার বই। নতুন বইয়ের মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয় মেলায় আসা পাটক ও দর্শনার্থীরা। কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই জানি না এই বইমেলার ইতিহাস। কিভাবে শুরু হলো এই বইমেলা? কে বাঙালির এই প্রাণের মেলার প্রারম্ভক?

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বিক্রি শুরু করেন শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা। তিনিই আমাদের প্রাণের এই বইমেলার প্রারম্ভক। তার আনা ৩২টি বই ছিল তার নিজ প্রতিষ্ঠিত স¦াধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থী সাহিত্যিকদের লেখা বই।

১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি বই মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। বাংলা একাডেমির পাশাপাশি মুক্তধারা প্রকাশনী, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং আরও কয়েকজন বাংলা একাডেমির মাঠে নিজেদের প্রকাশিত বই বিক্রি শুরু করে।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি তার নিজস¦ প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মদ হবীবুল্লাহ। তখন একাডেমি প্রাঙ্গণ সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তাই ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমি প্রাঙ্গনে নিজেদের পছন্দ মতো জায়গায় যে যার স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে করে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। তাই পরবর্তি বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য কিছুটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলা একাডেমি। সেই নির্দিষ্ট স্থানে প্রকাশকেরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই আয়োজনের কোনো স¦ীকৃতি দেয়নি বাংলা একাডেমি। এমনকি কোনো নামও দেয়নি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এমনকি এই সময়ে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানসূচিতেও এর কোন উল্লেখ নেয়।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী। তিনি বইমেলার গুরুত্ব কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন। তার স¦উদ্যোগে বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। শুরু হয় বইমেলার গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের। তারপর ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উপর লক্ষ রেখে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি এবং বইমেলার নামকরণ করে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’ ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই নিয়মেই ‘একুশে গ্রন্থমেলা’ পালিত হয়। আবার ১৯৮১ সালে ‘একুশে গ্রন্থমেলায় পরিবর্তন আনে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন ধার্য করে বাংলা একাডেমি। কিন্তু প্রকাশকরা বাংলা একাডেমির এ সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলা একাডেমির এ সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের দাবি তুলে ধরে। প্রকাশকদের এ দাবির মুখে ১৯৮২ সালে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়ে পূণরায় মেলার মেয়াদ করা হয় ২১ দিন করে এবং মেলার উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলা একাডেমি সে মেলার আয়োজন করে। ১৯৮২ সালের ঐ মেলায় সহযোগি হিসেবে ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কাজী মনজুরে মওলা। তিনি বিশেষ কারণে সহযোগি প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাংলা একাডেমি বাদ দিয়ে দেয়। কি কারণে বাদ দিয়ে দেয় সে তথ্য বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেনি। বরং বাংলা একাডেমি সে সময় প্রচার করে ‘একুশে বইমেলা’কে নতুন আঙ্গিকে প্রসার করার কারণেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ধুমধাম করে বাংলা একাডেমি ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন শেষ করে কিন্তু সৈ¦রশাসক এরশাদ-এর সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি আবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র পুণ আয়োজন করে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে শহিদদের উপর আরও গভীর শ্রদ্ধা দেখাতে ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র পরিবর্তে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামকরণ ১৯৮৩ সালে করলেও ১৯৮৪ সালে তার কার্যকারিতা সফল করে বাংলা একাডেমি। সেই সাথে প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্টলের সংখ্যা বাড়ানো হয়, সেই সাথে মেলার পরিসরও বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র বিভিন্ন ফিচার সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র সে মেলাটি কালানুক্রমে বাঙালির প্রাণের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলাতে পরিণত হতে শুরু করে। পাঠকের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ার মতো হতে তাকে। এক সময় পাঠক এবং প্রকাশকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সালেই বইমেলার সময়কাল বাড়িয়ে পুরো মাস ব্যাপি করার সিধান্তও গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। ২০০৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ায়ি সন্ধায় বাঙলা একাডেমির বইমেলা থেকে ফেরার সময় আততায়ীদের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে কয়েকতিন মৃত্যুর মধ্যে বাস করে তিনি জীবনে ফিরে আসেন ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদ। তার জন্য এমনভাবে উদ্বেলিত হয়ে হয়ে উঠেছিল, যা আর কখনো ঘটেনি। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টলগুলোতে দূবৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পরে ২০১৪ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় স্টলের সংখ্যা বাড়িয়ে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত করে।

বইমেলা চলাকালীন প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর, লেখক আড্ডাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজ করে থাকে বাংলা একাডেমি। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মনমুগ্ধকরতা শ্রোতাদেরকে মুহিতকরে। এছাড়া লেখককুঞ্জে লেখকদের সাথে পাঠকদের মন বিনিময়ের আয়োজনও করে থাকে বাংলা একাডেমি। পাঠকেরা লেখকদের বইয়ের ব্যপারে আলোচনা সমালোচনা করে থাকে এই লেখককুঞ্জে।

বইমেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রতিদিন প্রকাশিত বই, লেখক ও প্রকাশকের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক শ্রোতাদের অবহিত করে। ২০১৫ সালের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ পারস্পারিক সহযোগিতায় সফল হোক এই প্রত্যাশা করি।
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×