ক্লাস শুরু ৮টায়। বাস আসে ৭টায়। তাই উঠতে হলে ৬টার আগেই উঠতে হয়। এদিকে ফজরের শেষ সময় ৫টায়। তাই পোনে ৪টা থেকে উঠে বসে থাকতে হয়। এদিকে রাত্রে ২টার আগে ঘুমানোই হয় না। জীবনটা এই পর্যায়ে এসে বড়ই পেইন পেইন লাগে...
এলার্ম ঘড়িটা নিয়ে আরেকটা পেইন। পুড়ানো বিকট শব্দ করা একটা মোবাইল ফোনকে এলার্ম ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। সুবিধা হল, ৩টি ভিন্ন সময়ে এলার্ম দেয়া যায়। আর পেইন হল, যখন লাগে, তখন সেই বিকট শব্দে ঘুম ভাঙ্গে না, ভাঙ্গে শুধুই ছুটির দিনগুলাতে, যখন কিনা ঠিক সময়ে ঘুম না ভাঙ্গাটাই বেশি জরুরি...
ক্লাসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে গেলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। দেখতে তুলনামূলক ভাল কাপড়গুলার সবগুলা থাকে আধোয়া। ওগুলা ১ কি ২ বার পড়লেই একদম ময়লা হয়ে যায়। কিন্তু যেগুলা খুবএকটা পছন্দের না, সেই কাপড়গুলা কেমন করে জানি একদমই ময়লা হয় না...
রাস্তাঘাটে চলা, পেইন। ফুটপাথ দিয়ে হাটতে গেলে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের তখনই ঝাড়ু দেওয়া লাগে সেই জায়গাটাতে। মেইন রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে তো কথাই নাই, বাস-গাড়ি রিক্সা দূরে থাক, মানুষগুলাই যেন একেকটা টেম্পো হয়ে উঠে!!! বলা নাই কওয়া নাই, হঠাৎ সামনে পড়ে যায়। যেখান থেকেই চলতে চেষ্টা করা হোক না কেন, সেখান থেকেই দুনিয়ার সব মানুষের হাটাচলা...
বাসের কথা তো আর বলা লাগে না। একটা দিনও যদি বাসে বসে যাওয়া যায়। এই আধো ঘুম চোখে বাসে ঝুলে ঝুলে যাওয়া, পেইন...
ক্লাসে টিচারদের একটানা লেকচার দেওয়া, আর ঘুমের সাথে ওয়ার্ল্ড-ওয়্যার লড়তে লড়তে ঘুমের ঘোড়ে হেড-ব্যাং দেওয়া, প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে...
মাঝে মাঝে কানাকানিতে যখন শুনা যায় পিছনে পিছনে মানুষ ইচ্ছামত বদনাম করেই যাচ্ছে, মিথ্যা গল্প ফেঁদে যাচ্ছে, শুধুমাত্র অন্যের চোখে হেয় করার জন্য, জীবনটা পেইনময় মনে হয়। উঠেপড়ে ঝগড়া করতে ভাল লাগে না। তাই তাদের কিছু বলতেও ইচ্ছা করে না। শুধু আড়ালে আড়ালে একটু হেঁসে নেয়া হয়। অন্তত নিজের কাছে তো সৎ থাকা গেলো!
ল্যাব! টানা আড়াই ঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এলোপাতারি হাত চালানো – পুরাই বিভীষিকা... তবে প্রতিদিনের ভাইভার সময় টিচারদের ইচ্ছামত অপমান কেন জানি এখন গায়ে সয়ে গিয়েছে। যত বেশি বকা দেয়, তত বেশি হাসি আসে...
বাসায় ফিরতে গেলে বাসে চড়তে হয়। আবার সেই লক্কর-ঝক্কর ঝাকুনি... পেইন... তবে আরেকটা বাজে দিন তো শেষ হল, এটা ভেবে মনে মনে একটু হেঁসে নেয়া যায়...
বাসায় ফেরত আসলে একের পর এক পেইন... এত্ত এত্ত পড়া বাকি, বাসার কাজ বাকি, রেজাল্টের চিন্তা, ওদিকে অল্প একটু পড়তে না পড়তেই ১টার মত বেজে যায়... তাও ঠাণ্ডা আর নিস্তব্ধ রাত্রিবেলা দেখে মনটা শান্ত হয়ে যায়...
১টা বাজতে না বাজতেই এক ফ্রেন্ডের ফোন। গুড ফ্রেন্ড। শুধুই ফ্রেন্ড। সারাদিন কেমন কাটলো, কোন কোন মানুষ কেমন কেমন পেইন দিল, পড়া কেমন হল, কত শত গল্প! দেখতে দেখতেই ১ ঘন্টা কেটে গেলো...
তারপর ঘুম।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হল, অন্তত একজন ভাল ফ্রেন্ড তো আছে যার কাছে মনের কথাগুলা খুলে বলা যায়! যার কাছে অল্প কিছু কথা বললেই মনের পুরোটাই শান্ত হয়ে যায়!
আশে পাশে কিছু মানুষ অন্তত এখনও আছে, যারা সত্যি সত্যি ভাল চায়, হোক সে খুবই অল্প কিছু মানুষ। আছে তো!
নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেওয়ার মত বাবা-মা তো আছে অন্তত!
সব শেষে, নিজের কাছে নিজেকে তো সৎ বলে দাবি করা যায় যেকোনো কিছুতেই!
নিজের অজান্তেই একটা মৃদু হাসি দিল ছেলেটা। আজকে রাত্রে একটা ভাল ঘুম হবে...
[আরেকটি ছোট গল্প লিখলাম। আমার নিজের বাস্তব কোন কাহিনী না। তবে আমার জীবনের কিছু কিছু দিক, আর কল্পনা থেকে এনে নেয়া কিছু কিছু অংশ ব্যবহার করলাম ]