somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইয়ের গপ্পো : আবুল হাসান রচনাসমগ্র

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন কারমাইকেলে পড়ি। থাকি চকবাজার মেসে। ডিপার্টমেন্টে পরিচিত বন্ধুবান্ধব তেমন নেই। ‌ কারণ- ক্লাস করা হয় কম। দু'একজন সমমনা মেসমেট আর স্কুল লাইফের এক বন্ধু- যাদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয় প্রায়ই। অর্থাৎ উঠা-বসা ওই তিন-চারজনের মধ্যেই। বিকেলের আড্ডায় ওরা কেউ না থাকলে আমার বড় নিঃসঙ্গ বোধ হয়। ‌বিশেষত সন্ধ্যার সময়। কই যাবো, কি করবো- ভীষণ একটা অস্বস্তিকর সময় কাটতে থাকে তখন। পকেটে টাকা-পয়সা থাকলে কাউকে নিয়ে চলে যেতাম পৌর মার্কেটে। পুরাতন বইয়ের লাইব্রেরীগুলো ঘুরে ফিরে দেখতাম। পরিচিত বইয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াতাম এ দোকান থেকে ও দোকানে। ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়েছিলাম নির্মলেন্দু গুণের আমার কণ্ঠস্বর। সেখান থেকেই কবি আবুল হাসানের প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। লাইব্রেরীগুলোতে ঢুঁ মারার সময় প্রায়ই তার বই খুঁজি। পাই না। একদিন একা একা বের হয়েছি।‌ পকেটের অবস্থা যদিও ভালো নয় তবুও খুঁজে ফিরছি প্রিয় কোন মুখ। ‌কয়লার খনিতে হঠাৎ এক খন্ড হীরক আমার চোখ ধাঁধিয়ে ফেলল। অনেক বইয়ের ভিড়ে আবুল হাসান নিঃসঙ্গ বসে আছে! মুহূর্তেই আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আবুল হাসান রচনাসমগ্র! বইটা চেয়ে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছি। ‌আমার হাত কাঁপছে! ভাবছি পকেটে তো বেশি টাকা নেই। যদি বইয়ের দাম আমার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে হয়? কারো কাছে টাকা ধার করব- সে সুযোগও তো নেই। আজ এসেছি একা। ভয়ে ভয়ে দাম জিজ্ঞাসা করলাম। দোকানি বইটা দেখে দাম চাইলেন ৬০ টাকা। ভাবলাম ভুল শুনেছি। আবার জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি ওই একই উত্তর দিলেন। কাঁপা কাঁপা হাতে পকেট থেকে টাকা বের করে দোকানির হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। দোকানের বাইরে এসে ভোঁ দৌড়! কারণ দোকানি যদি এরপর আমাকে ডেকে বলে বই বিক্রি করব না। কিংবা দাম ৬০০ টাকা। তখন? দৌড়ে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট পার হয়ে এসেছি। পেছনে ফিরে তাকালাম। কেউ ডাকছে কিনা? নাহ্ কেউ নেই। যাক বাবা, বাঁচলাম। বইটা বগলদাবা করে এরপর আমি ধীরেসুস্থে রিকশার খোঁজ করতে থাকলাম।

রচনাসমগ্র থেকে একটি কবিতা পড়া যাক-

পাখি হয়ে যায় প্রাণ

অবশেষে জেনেছি মানুষ একা!

জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।

ফাতিমা ফুফুর প্রভাতকালীন কোরানের
মর্মায়িত গানের স্মরণে তাই কেন যেন আমি

চলে যাই আজও সেই বর্নির বাওড়ের বৈকালিক ভ্রমণের পথে,
যেখানে নদীর ভরা কান্না শোনা যেত মাঝে মাঝে
জনপদবালাদের স্ফুরিত সিনানের অন্তর্লীন শব্দে মেদুর!

মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষ্মী চাঁদ তারা
নরম যুঁইয়ের গন্ধ মেলার মতো চোখের মাথুর ভাষা আর
হরিকীর্তনের নদীভূত বোল!
বড় ভাই আসতেন মাঝরাতে মহকুমা শহরের যাত্রাগান শুনে,
সাইকেল বেজে উঠত ফেলে আসা শব্দে যখন,
নিদ্রার নেশায় উবু হয়ে শুনতাম, যেন শব্দে কান পেতে রেখে :
কেউ বলে যাচ্ছে যেন,
বাবলু তোমার নীল চোখের ভিতর এক সামুদ্রিক ঝড় কেন?
পিঠে অই সারসের মতো কী বেঁধে রেখেছ?

আসতেন পাখি শিকারের সূক্ষ্ম চোখ নিয়ে দুলাভাই!
ছোটবোন ঘরে বসে কেন যেন তখন কেমন
পানের পাতার মতো নমনীয় হতো ক্রমে ক্রমে!

আর অন্ধ লোকটাও সন্ধ্যায়, পাখিহীন দৃশ্য চোখে ভরে!
দিঘিতে ভাসত ঘনমেঘ, জল নিতে এসে
মেঘ হয়ে যেত লীলা বৌদি সেই গোধূলিবেলায়,
পাতা ঝরবার মতো শব্দ হতো জলে, ভাবতুম
এমন দিনে কি ওরে বলা যায়—?

স্মরণপ্রদেশ থেকে এক একটি নিবাস উঠে গেছে
সরজু দিদিরা ঐ বাংলায়, বড়ভাই নিরুদ্দিষ্ট,
সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি সাথে করে নিয়ে গেছে গাঁয়ের হালট!

একে একে নদীর ধারার মতো তারা বহুদূরে গত!
বদলপ্রয়াসী এই জীবনের জোয়ারে কেবল অন্তঃশীল একটি দ্বীপের মতো

সবার গোচরহীন আছি আজও সুদূরসন্ধানী!

দূরে বসে প্রবাহের অন্তর্গত আমি, তাই নিজেরই অচেনা নিজে
কেবল দিব্যতাদুষ্ট শোনিতের ভারা ভারা স্বপ্ন বোঝাই মাঠে দেখি,
সেখানেও বসে আছে বৃক্ষের মতন একা একজন লোক,
যাকে ঘিরে বিশজন দেবদূত গাইছে কেবলি
শতজীবনের শত কুহেলি ও কুয়াশার গান!

পাখি হয়ে যায় এ প্রাণ ঐ কুহেলি মাঠের প্রান্তরে হে দেবদূত!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×