somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেনে নিন ‘চিকুনগুনিয়া’, লক্ষণ ও করণীয়

০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বর্তমান সময়ে চিকুনগুনিয়া নিয়ে অনেকেই ভয়ে আছেন। এই রোগটি নিয়ে ভয়ের তেমন কিছুই নেই। সাধারণ জ্বরের মতোই এটি এক প্রকার ভাইরাস জ্বর। আমাদের পরিচিত এডিস মশাই এর বাহক। প্রথম আফ্রিকার তানজানিয়ায় ১৯৫৩ সালে এর মহামারী সম্পর্কে জানা যায়। এর আঞ্চলিক একটি মজার নাম হচ্ছে ‘ল্যাংড়া জ্বর’।

যেভাবে ছড়ায়:
এই জ্বরের কারণ চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। এটি এক প্রকার RNA ভাইরাস। বাহক এডিস মশা। এটার চক্র হলো, মানুষ >মশা> মানুষ। আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে সন্তানে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না। তাই মায়ের দুধ খাওয়াতে সমস্যা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে চলাফেরা বা কোনো সম্পর্ক স্থাপন করলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র মশার মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়।


চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ। ছবি: সংগৃহীত
লক্ষণ:

এ রোগে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়:

(১) হাই গ্রেড জ্বর। জ্বর 102° থেকে 104°F পর্যন্ত হতে পারে। এই জ্বরে সাধারণত কাঁপুনি থাকে আবার নাও থাকতে পারে। জ্বর অন্য সাধারণ জ্বরের মতো ঘাম দিয়ে ছাড়বে না। পাঁচ থেকে সাতদিন পর্যন্ত এই জ্বর থাকে। আবার দুইদিন পর হঠাৎ করে জ্বর ভালো হয়ে যেতে পারে।

(২) হাড় এবং জয়েন্টে ব্যথা:চিকুনগুনিয়াতে খুবই বেশি জয়েন্টে ব্যথা হয়। সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, হাত, ঘাড় এইসব জায়গায় ব্যথা হয় বেশি। এমনকি জ্বর ছেড়ে যাওয়ার এক মাস পর্যন্তও জয়েন্টে ব্যথা থাকতে পারে।

(৩) দুর্বলতা: এই জ্বরে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে যায়।

(৪) র‍্যাশ: এ রোগে র‍্যাশ দেখা দেয় জ্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় দিনের মধ্যেই। সাধারণত মুখ, ঘাড় এবং পিঠে র‍্যাশ ওঠে। তবে পায়ে বা শরীরের অন্য অংশেও এই র‌্যাশ হতে পারে। ডেঙ্গুতে র‌্যাশ দেখা দেয় ষষ্ঠ দিনে। র‍্যাশ এর সাথে চুলকানিও থাকতে পারে।

(৫) বমি বমি ভাব, খাদ্যে অরুচি, মাংসপেশীতে ব্যথা।

(৬) মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা ইত্যাদি।

এছাড়া বিরল ক্ষেত্রে মুখে ঘা, বমি, ডায়রিয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, মেন্টাল কনফিউশন ইত্যাদি হতে পারে।

রোগ নির্ণয়:
এর জন্য ডাক্তারের সাহায্য জরুরি।

প্রথমত, লক্ষণ দেখে।

দ্বিতীয়ত, রোগীর চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণের ইতিহাস দেখে।

তৃতীয়ত, একদম কনফার্ম হবার জন্য ডাক্তার আপনার কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করবেন যেন অন্যকোনো রোগকে চিকুনগুনিয়া না ভাবা হয়। রক্ত পরীক্ষাসহ, ভাইরাল RNA, এন্টিবডি ইত্যাদি পরীক্ষা। তবে অনেকক্ষেত্রেই ফলস পজিটিভ না ফলস নেগেটিভ আসতে পারে।

চিকিৎসা:
সাধারণ সমস্যায় বাসায়ই রোগীর চিকিৎসা হয়। যদি অবস্থা বেশি খারাপ হয় তখন হাসপাতালে নিতে হবে। তবে এই জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে।


চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ। ছবি: সংগৃহীত
বাসায় চিকিৎসা:
– প্রচুর পানি এবং তরল খাদ্য খেতে হবে। সাথে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাদ্যও খেতে হবে।

– পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

– জয়েন্ট পেইনের স্থানে ঠাণ্ডা সেক নিতে পারেন। ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে জয়েন্ট এবং হাড় ব্যথা স্থানে ধরে রাখুন। তবে এক্ষেত্রে গরম সেক দেবেন না।

– জ্বর ও ব্যথার জন্য শুধু প্যারাসিটামল গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডোজ ১০০০ মিগ্রা ৬ ঘণ্টা পরপর বা চারবেলা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ মিগ্রা/ প্রতি কেজি ওজন/ প্রতিদিন এই হিসেবে ভেঙে দিতে হবে ৬ ঘণ্টা পরপর। অবশ্য সর্বোচ্চ ডোজ লাগে না। মনে রাখবেন সিরাপের ক্ষেত্রে ১ চামচে প্রায় ১২৫ মি.গ্রা ওষুধ থাকে। সে অনুযায়ী ভাগ করে নেবেন। এটা সর্বোচ্চ ডোজ। এত সাধারণত লাগে না। তাই ডোজের জন্য চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।

– নিজে নিজে এসপিরিন বা NSAID (ডাইক্লোফেনাক, কিটোরোলাক, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি) জাতীয় ওষুধ খাবেন না। প্যারাসিটামল বাদে অন্য ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত নিন।

– চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় চুলকানির ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

কখন হাসপাতালে ভর্তি হবেন:
– যদি রোগীর হিমোডায়নামিক অবস্থা ঠিক না থাকে। প্রেসার উপরে ৯০ এর কম এবং নিচে ৪০ এর কম হয়ে গেলে। অজ্ঞান হয়ে গেলে।

– যদি প্রস্রাব অনেক কমে যায়। ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ মিলি এর কম হলে।

– শরীরের কোথাও রক্তপাত শুরু হলে।

– চিকিৎসা দেওয়ার পরও দীর্ঘ সময়েও প্রচণ্ড ব্যথা এবং জ্বরের কোনো উন্নতি না হলে।

– এক বছরের নিচের বাচ্চা, গর্ভবতী মা এবং ৬০ বছরের উপরের বৃদ্ধের এই রোগ হলে।

– হাই রিস্ক গ্রুপের ক্ষেত্রে।

হাই রিস্ক কারা:
– যাদের ডায়েবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানি, হার্টের সমস্যা, গর্ভবতী, এক বছরের নিচের শিশু, বেশি বয়েসি বৃদ্ধ, ডেঙ্গু, টিবি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড,এইডস, নিউমনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাই রিস্কে আছেন।


চিকুনগুনিয়া জ্বর থেকে বাঁচার উপায়। ছবি: সংগৃহীত
জেনে রাখুন:
– এই রোগের লক্ষণ এবং সমস্যাগুলো ৭-১০ দিনে ভাল হয়ে যায়।

– রোগ ভালো হবার পরেও শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। এমনকি একমাস পরেও ব্যথা হতে পারে।

– রোগ ভালো হবার পরেও আবার এ রোগ কিছুদিন পর হতে পারে ( খুবই কম ক্ষেত্রে)।

– এ রোগে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে।

– NSAID জাতীয় ওষুধ শুধু তখনই দেওয়া যাবে যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে শুধুমাত্র চিকুনগুনিয়াতেই আক্রান্ত। ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্দেহ থাকলে সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত কখনোই প্যারাসিটামল ছাড়া কিছু খাওয়া যাবে না। এজন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাঁচার উপায়:
এই রোগ যেহেতু মশাবাহিত রোগ তাই মশা থেকে বাঁচাই এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। এজন্য এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশে পাশের ঝোপ-ঝাড় নষ্ট করতে হবে। পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।

নিজেদের সেফটির জন্য মশারি ব্যবহার করুন। এছাড়া মশা তাড়ানোর জন্য স্প্রে, কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করুন।

পরামর্শ দিয়েছেন:

ডাঃ তৌহিদ হোসেন রোমেল

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×