
ব্যাবিলনীয় সভ্যতাকে প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয় সভ্যতার পরে বিশেষ করে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে এবং একটি সমন্বিত সভ্যতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করেছিল। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগে পূর্ববর্তী সভ্যতাগুলির বড় ভূমিকা ছিল, পূর্ববর্তী সভ্যতাগুলি থেকে ব্যাবিলনীয়রা কিউনিফর্ম লিখন, গাণিতিক এবং জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান নিয়েছিল, তা ছাড়াও শহর, বাঁধ, রাস্তা নির্মান, জলাধার নির্মান পদ্ধতিতে তারা উন্নতি সাধন করেছিল। জ্ঞানের বিকাশ ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা অব্যাহত ছিল। ব্যাবলিয়নরা বর্তমান ইরাকের টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর তীরে নিজেদের জন্য একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।
"প্রথম আমুরিয়াহিয়ান পরিবার ব্যাবিলনের উপর শাসন করেছে (১৮৩০-১৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), তখন ব্যাবিলন একটি ক্ষুদ্র-রাষ্ট্র ছিল।" তারপর ব্যাবিলনের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হাম্মুরাবি খ্রিস্টপূর্ব সপ্তদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হন। হাম্মুরাবি প্রথম আনুষ্ঠানিক লিখিত আইন তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। এই আইনগুলি একটি আঙুলের আকৃতির ৬ ফুট লম্বা পাথরে শ্লেটে লেখা ছিল। তিনিসবচেয়ে বিখ্যাত নিয়মটি স্থাপন করেছিলেন তা এখন চোখের জন্য চোখ হিসাবে পরিচিত। এই নিয়মে বলা হয়েছে যে আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি তাদের অপরাধের মতোই হবে। সুতরাং একজন অপরাধী যদি একজন ব্যক্তির চোখে ছুরিকাঘাত করে তবে অপরাধীর চোখেও ছুরিকাঘাত করা হবে। তিনি যে আইনগুলি তৈরি করেছিলেন তা "হাম্মুরাবি কোড" নামে পরিচিত। এই আইনি ব্যবস্থা এশিয়া ও ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। হাম্মুরাবির কোডটিও আকর্ষণীয় কারণ এটি ছিল প্রথম আইনের সেট যা অনুমান করে যে লোকেরা নির্দোষ ছিল, যার অর্থ একজন ব্যক্তিকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়ার আগে অবশ্যই দোষী প্রমাণিত হতে হবে।
দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার এর কথা বাইবেলে (খ্রিস্টানদের পবিত্র গ্রন্থ), তাওরাত (ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ) এবং কোরানে (ইসলামী পবিত্র গ্রন্থ) উল্লেখ আছে।
এছাড়াও তিনি ছিলেন সেই রাজা যিনি এই ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে একত্রিত করেছিলেন এবং ব্যাবিলন শহরেকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
ইশতার গেট ছিল ব্যাবিলন শহরের আটটি দরজার একটি। দেবী ইশতারকে উসর্গকৃত গেটটি নীল চকচকে টাইলস দিয়ে নির্মিত হয়েছিল যাতে ত্রাতা ড্রাগন এবং ষাঁড়ে চিত্রায়িত ছিল । ফটকের ছাদ ও দরজা ছিল এরস কাঠের। গেটের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রার পথ যার দেয়ালের চকচকে ইটগুলি সিংহ দিয়ে আচ্ছাদিত ও সারিবদ্ধ ছিল।
একটি ziggurat টাওয়ারের মতো একটি পিরামিড ছিল যা তারা তাদের দেবতাদের জন্য তৈরি করেছিল। Etemenanki ছিল সাত তলা, বা ৯১ মিটার উঁচু, এবং এর উপরে মারদুকের একটি মন্দির ছিল।
ইশতার গেট বর্তমানে বার্লিনের পারগামন মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্যে রক্ষিত আছে। এটেমেনাঙ্কি জিগুরাতের কেবল ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে।

ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগ। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলে সাহায্যে। ৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

ব্যাবিলনীয়রা তরমুজ, বরই এবং খেজুর খেত। বার্লি ছিল তাদের প্রধান ফসল যা দিয়ে তারা চ্যাপ্টা রুটি তৈরি করত। মাংসের জন্য তারা শুয়োরের মাংস, মুরগি, গরুর মাংস, মাছ এবং মাটন (ভেড়ার মাংস) খেত। পেঁয়াজ এবং রসুন তাদের খাবারের জন্য সাধারণ মশলা ছিল। ব্যাবিলনীয়রা মদ পান করত না, তারা বার্লি দিয়ে তৈরি বিয়ার পান করত।
ব্যাবিলনীয়রা এমন একটি পোশাক পরত যা আমাদের দিনে লম্বা টি-শার্টের মতো দেখাবে। কৃষকদের জন্য এই পোশাকগুলি বেশ সাধারণ ছিল কিন্তু ধনীদের জন্য এগুলি ট্যাসেল, এমব্রয়ডারি, কোমর এবং স্যাশ দিয়ে সজ্জিত ছিল। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা লম্বা পোশাক এবং স্কার্ফ পরতেন যার দৈর্ঘ্যের দ্বারা তাদের র্যাঙ্কের নির্দেশ করত।
টুপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন অনুষঙ্গী ছিল. বিভিন্ন পেশাদাররা তাদের চরিত্রগত হেডড্রেস ব্যাবহার করত। মহিলারা তাদের চুলে ফিতা, ওড়না বা অন্যান্য সজ্জা পরিধান করত।
ব্যাবিলনীয়রা আক্কাদিয়ান নামক একটি প্রাচীন ভাষায় কথা বলত। তারা লেখার জন্য কিউনিফর্ম লিপি ব্যবহার করত। ব্যাবিলনীয় লেখা যা এখনও বিদ্যমান তা সবই মাটির ট্যাবলেটে। তাদের লিপির প্রতীকগুলি শুকনো খাগড়ার টুকরো দিয়ে ভেজা কাদামাটিতে চাপা ছিল।
কিউনিফর্ম লেখার প্রাচীন পদ্ধতি। প্রায় ২০০-৪০০টি সাধারণ অক্ষর ছিল যা বিভিন্ন সিলেবলের প্রতিনিধিত্ব করত।
ব্যাবিলন শহরের ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান যদিও শহরটি ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত হয়েছে।
ব্যাবিলনীয়দের অনেক আবিষ্কার আজও গুরুত্বপূর্ণ। তারা ধাতুর কাজ, তামার কাজ, কাচ তৈরি, বাতি তৈরি, বস্ত্র বয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জল সঞ্চয়, সেইসাথে সেচ উদ্ভাবন করেছিল। মজার বিষয় হল, তাদের নাম্বার সিস্টেম থেকে আমরা আমাদের ধারণা পাই যে এক ঘন্টায় ৬০ মিনিট এবং এক মিনিটে ৬০ সেকেন্ড।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




