somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৪ এর জে.এস.সি. ব্যাচ সহ সকল শিক্ষার্থী আর তাদের মা-বাবার জন্য কিছু কথা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি গটবাঁধা কথা বলে যেতে পারিনা। তাই নিজের কিছু কথা দিয়ে গল্পের মত করেই শুরু করছি __

আমার চাচাতো ভাই আর খালাতো ভাই এইবার জে.এস.সি. দিয়েছে। তারা শুরুতে কনফিডেন্ট ছিল, তবে এখন হঠাৎ করে ভড়কে গেছে রেজাল্টের সময় এসে। একজনের জ্বর ১০৩ এর নিচে নামছেনা আর অন্যজন পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যানে আছে। হাহা ...
হুম হাসছি, তবে ব্যপারটা হাসির না। আমিও পার করেছি সময়টা। এখনের ভয় রেজাল্ট খারাপের না, খারাপের পরে আম্মু-আব্বু খুন করবে নাহয় ঘর থেকে বের করে দেবে, এর ভয় . . .
আমার ভাইয়ারা আর ভাবী বীষন ব্রিলিয়ান্ট, আমি মনেহয় অতটা না, আবার হতেও পারি, জানিনা। তবে ফ্যামিলি থেকে ইন্সপারেশাঙ্গুলো ছিলো এমন,
" জি.পি.এ. ৫.০০ না পেলে বড় ভাইয়ের বাসন মাজবি, ভাবীর লাত্থি খাবি... " আরও কত কি ...
তবে আমি জানতাম আমি পারবো।

সাল ২০১৩, ডিসেম্বর ২৯.......
আমি সিন্দুকের তালা চাবি খুলে বান্ধবীদের টেনশান নেওয়া বন্ধ করে এনিম দেখছিলাম__" ONE PIECE "। ভাবছিলাম রবিন কেন এমন করল লুফিদের সাথে(এনিমে সংক্রান্ত কথা) . . .
তারপর দেখলাম ছোট্ট রবিনের মা সহ সব স্কলাররা কিভাবে মারা যায়, কিভাবে ও একা সারভাইভ করে...
রাত্রে আব্বু বকা দিয়ে শুইয়ে দিলেন আর মনে করিয়ে দিলেন আগামীকাল রেজাল্ট। রাত্রে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখলাম আমিও রবিনের মতন পনিগ্লিফ পড়ছি।

ডিসেম্বর ৩০...
ঘুম আম্মু উঠিয়ে দিয়ে বল্ল আজকে রেজাল্ট। সারা বছর তো পড়লানা, দেখ A- আসে কিনা . . .
হাতমুখ ধুয়ে ৯টার দিকে আবার বসলাম। রবিনের চ্যাপ্টার শেষ করার জন্য অস্থির হয়ে আছি . . .
জোহরের আজানের সময় আব্বু ডাক দিলেন। কলিজা টা ধ্বক করে উঠলো এইবার! এতক্ষনে টনক নড়েছে _আজকে রেজাল্ট। কোন কারন ছাড়াই মনে হল সমাজের জন্য ছুটে গেছে . . .
আব্বু বল্লেন, " নাজিয়াত A+ পাইসে। "
কান ভন ভন করছে। দি-ভাইয়ের কথা আগে আসলো কেন? আমি মিস করলাম নাকি . .
আব্বু ফোন এগিয়ে দিয়ে বল্ল " তোর আম্মুকে তোর রেজাল্ট জানা। "
- "রেজাল্ট তো জনিনা আব্বু "
- " কেন?A+ পাবি বলসিলি না?এখন জানসনা কেন? জানিনা মানে কি? "
সারা বছরের কনফিডেন্ট মনেহয় আমাকে ধোকা দিলো। পায়ের নিচে মাটি নাই। আম্মুকে ফোন দিলাম।
- " আম্মু, গোল্ডেন A+ পাইসি মনেহয়। আব্বুর সাথে কথা বল।"
- " কথা বলা লাগবেনা। আমি জানি। "

আব্বুর রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রবিনের চ্যাপ্টার শেষ করতে হবে . . . . . . . . .
দি-ভাইয়ের ফোন আসলো, " জানিস, আম্মু আমার পছন্দের রস কদম মিস্টি আনসে, এই হহইসে,ওই হইসে . . ."
আনিকাকে ফোন দিলাম রেজাল্ট জানতে। ও বলল ওর আম্মু খুব খুশি। আর ও না পেলে ওর আম্মু কিছু বলতোনা, তখন বেশী খারাপ লাগতো। কিন্তু ওর আম্মু নাকি জানতো ও পাবে। শুনে কেমন যেন লাগলো, আমার আম্মু কি জানতো??
( ধুর!! এইসব আজাইরা কথায় কান দেয় কে আর ভাবে কে ?? )

রাত্রে রবিনের " I WANT TO LIVE " এর সাথে এনিম দেখা বন্ধ করলাম। শুয়ে পড়লাম।
হঠাত মনে হল, গোল্ডেন পেয়েছি? বাসার কাউকে দেখে তো মনেই হচ্ছেনা, ফ্রেন্ডরা কেউ ও তো নিজে থেকে ফোন দিলোনা . . . উফফ, মনটা এত খারাপ লাগে কেন? কান্না করবনা করবনা করেও কেঁদে দিলাম। মুখের উপরে বালিশ দিয়ে দিলাম যেন কেউ না শুনে . . .
কান্না থামতেই চাচ্ছিলনা। হঠাত মনে হল লুফি এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে, " BE MY NAKAMA " . . .
এই হল আমার বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের কাহিনী, আমার নতুন শুরুর কাহিনী . . . . .

২০১৪ এর জে.এস.সি. ব্যাচ, আমি কোন ফাঁস প্রশ্নের সাহায্য নেইনি, আমি চেস্টা করেছিলাম সবাইকে দেখিয়ে দিতে, আমি পেরেছি। তোমরাও পারবে।
অবশ্যুই তোমাদের কাহিনী আমার মতন হবেনা ইনশাল্লাহ। তোমাদের নতুন শুরুর জন্য অবাস্তব কিছুকে আঁকড়ে ধরতে হবেনা। চিন্তা কোরোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে, শুধু নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেস্টা কর, তুমি-ই জানবে তুমি কি। জি.পি.এ. ৫.০০ না, তোমার সর্বোচ্চ দিয়ে যেটুকু করবে, সেটাই তোমার অর্জন, তমাদের মা-বাবার গর্ব।

আমি সব মা-বাবা কে রিকয়েস্ট করছি, প্লীজ আপনারা ছেলেমেয়েদের মনটা একটু বুঝুন, দেখবেন, তাদের সঙ্গ দিলে, তাদের বুঝতে চেস্টা করলে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ করবে। কিন্তু চাপিয়ে দিলে তারা ঠেলে-ঠুলে জি.পি.এ. ৫.০০ তো পাবে, কিন্তু তারা কিছু শিখবেনা। আপনারা জোর করে আমাদের মেশিন বানিয়ে দিয়েন না, আমাদের শিখতে দিন, আমরাই পারবো। তখন আর সরকারের ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে আমাদের আগাতে হবেনা।
প্রত্যেক ঘর থেকে স্কলার বের হতে পারে, আমি জানি, সবার জানা উচিত। আর, খালি রেজাল্ট ভালো করলেই ভালো, এই চিন্তা মন থেকে দূর করুন, আপনাদের ছেলেমেয়েদের দক্ষতা খুঁজে দেখেন, মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না ...
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×