somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিমানি অপরাজিতা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.



-- হ্যালো! ফোন দিয়েছিলা?
-- হুম।
-- কেন? তাড়াতাড়ি বলো। খুব জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি।
-- ও আচ্ছা।
-- এইবার তাড়াতাড়ি বলো।
-- নাহ, এমনি। তোমার খোঁজ নিতে...
-- তোমাকে না বলসি শুধু শুধু ফোন দিবা না?
-- সরি...
-- আরে জান! বোঝো না কেন? তোমাকে না বলসি বসের নজরে আছি- যে কোন সময় প্রমোশন হয়ে যাবে? তখন সারাদিন গল্প করবো। রাগ করো না। আমাদের জন্যই তো।
-- রাগ করিনি। আচ্ছা রাখি। বাই।

ফোন রেখে দিলো তিন্নি। তপুকে আর বলা হলো না রজনীগন্ধা আনবার কথা। মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো হঠাৎ করে। ভেবেছিল বিয়ের পরে হয়তো অপরিচিত মানুষটা তার খুব আপন হয়ে উঠবে। সব ব্যথা মুছে তার জীবনটা ভালোবাসায় মুড়ে দেবে। তাকে এত ভালোবাসবে যে, তিন্নি শুধু তাকেই দেখবে। কিন্তু সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগে তার। কোন হিসেবই মিলতে চায় না।

চোখে পানি আসতে চেয়েও আসছে না। শুধু দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাসে টান পড়ে গেছে। দৌড়ে গিয়েটেবিলের ড্রয়ার থেকে ইনহেলারটা বের করে পাফ নিল।
উফ! এত দুঃখবিলাসী ভাবটা কার কাছ থেকে পেয়েছে কে জানে...

ভাইব্রেশন বেজে উঠলো। ম্যাসেজ এসেছে তপুর- "Love You"
ম্যাসেজ দেখে রেখে দিলো ফোনটা। জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না।

শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ রেস্ট করে বিকেলে সে নিজেই বের হবে। রজনীগন্ধা ফুল কিনবে। কিছুক্ষণ বকুলতলায় ঘুরবে। তারপর বাসায় এসে লেকচার শীট বানাতে বসবে।


২.



তপুর আজ বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ন'টা বেজে গেলো। ঘরে ঢুকতেই তাজা রজনীগন্ধার গন্ধে মনটাই ভাল হয়ে গেলো তার। প্রতিদিনের মত গোসলের পানি, কাপড় রেডি আছে। তপু গোসল করতে করতে তিন্নি খাবার বেড়ে ফেলল। খাওয়া-দাওয়ার তপু জাফরান দেওয়া পানের খিলিটাও তিন্নি এগিয়ে দিলো। শুতে এসে তার পেপারটাও জায়গা মত পেলো।

মেয়েটা অফিস করে বাসায় আসে। ঘর গোছায়, রান্না করে, আবার পরের দিনের জন্য তার ক্লাসের লেকচার শীটটাও বানায়। তবুও না সে কোনদিন ক্লান্তি প্রকাশ করেছে, না অন্য কিছু।


-- তিন্নি, একটু আসবে আমার কাছে?
-- তোমার কিছু লাগবে? (এটা অন্য ধরণের ইঙ্গীত)
তপু খানিকটা বিব্রতবোধ করল। কিন্তু তিন্নি সেই সুযোগ না দিয়েই শাড়ির আঁচল ছাড়াতে ছাড়াতে বিছানায় উঠে এলো। গভীর কামনা ভরে তপু তাকে আলিঙ্গন করল...


তিন্নি ঘুমুচ্ছে। তপু তাকে দেখছে। প্রথম যেদিন চারুকলার বকুলতলায় এই মেয়েটাকে দেখেছিল, সেদিনই তিন্নিকে খুব পছন্দ করে ফেলেছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মেয়েটা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের। ঢাবিতে এপ্লাইড ফিজিক্সে মাস্টার্স করছে। তারপর বিয়ে। এখন লেকচারার হিসেবে ঢাকা ভার্সিটিতে আছে। বিয়ের পর আজ প্রায় একবছর। দুজনের পরিবার। কিন্তু এই নয়াবাসেও সব সামলে নিয়েছে সে। বিয়ের পর সবসময় শাড়িই পরে তিন্নি। কখনও সে তপুর কাছে কিছু চায়নি। কিন্তু তপুর কোন আহ্বানে সে না'ও করেনি। তপু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বুয়েট থেকে পাশ করে চাকরীতে ঢুকেছে প্রায় পাঁচ-ছ' বছর। তার তুলনায় তিন্নি মেয়েটা ছোটই। তবুও মেয়েটার কোন মত-অমত নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, সে মেয়েটার ভেতরেই ঢুকতে পারেনি।


৩.



সকালে উঠে আজ সে তিন্নিকে পায়নি পাশে। হরতালের জন্য আজ ছুটির দিনেও নাকি এক্সট্রা ক্লাস নিতে হবে। তাই সকাল সাতটার দিকেই বেরিয়ে গেছে সে। তপুও বের হলো। সে ভাবছিলো, আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে তিন্নিকে নিয়ে বের হবে কোথাও। কিন্তু ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেলো। ঘরের দরজা খুললো আকলিমা খালা। তিন্নির মায়ের বাড়িতে কাজ করে। কিন্তু ঘরে তিন্নি নেই।

-- খালা, তিন্নি কোথায়?
-- জামাই বাবু, আফা আফনেকে এই চিঠিটা দিতে বলেসে।

তপুর বুকটা ধক করে উঠলো। সে চিঠি নিয়ে পড়তে বসলো।


তপু,
খুব অবাক লাগছে, তাই না? হঠাৎ এভাবে না বলে চলে যাচ্ছি।

আমি ছোটবেলা থেকে খুব কঠোর নিয়মের মাঝ দিয়ে বড়ো হয়েছি। ভেবেছিলাম, আমার জীবনে এমন কেউ আসবে, যে আমাকে রাঙিয়ে দিবে। আমাকে এত তীব্রভাবে ভালোবাসবে যে, আমি অবাক হয়ে শুধু তাকেই দেখবো। এমন কারো জন্য অপেক্ষা করেই গেছি। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে গেছি নিজের স্বপ্নের জন্য। আমার অন্ধকার জীবনে একমাত্র ফিজিক্সই ছিল, যে আমাকে খুব ভালোবেসেছে। তারপর তুমি এলে আমার জীবনে। চাতকের মতন তোমার চোখে ভালোবাসা খুঁজেছি; পেয়েছিও সুপ্ত কিছু একটা, যা শুধু বিছানায় গেলেই পেতাম আমি। কিন্তু আমি তো এভাবে চাইনি। তোমাকে বলার সুযোগও পাইনি। তখন আবার আমার প্রথম ভালোবাসা আমাকে ডেকেছে। কমন ওয়েলথ- এ প.এই.ডি'র জন্য এপ্লাই করেছিলাম, হয়ে গেছে।

আমি যাচ্ছি তপু, সঙ্গে আমার ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি ছোট তপু বা তিন্নিকে। আমি জানি, তুমি কখনো আসবে না তোমার দেশ বা পরিবার ছেড়ে। তাই আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি।

আকলিমা খালাকে বুঝিয়ে সব বুঝিয়ে দিয়েছি। তোমার কোন অসুবিধা হবে না। তুমি বিয়ে করে নতুন জীবন করে নিও। এমন একজনকে বিয়ে করো, যে সবসময় ছায়া হয়ে তোমার পাশে থাকবে। আমি পারিনি। পারলে ক্ষমা করে দিও...

পুনশ্চঃ কখনো বলা হয়ে ওঠেনি। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি তপু।

ইতি
তোমার তিন্নি।




মাঝে মাঝে ভেতরের তীব্র কষ্টটা জমাট বাঁধা মেঘ হয়ে নিজেকে ঘিরে ফেলে। সবকিছু তখন ঘোলাটা হয়ে যায়। তপু এখন সেই জমাট বাঁধা মেঘের ছায়ায় কিছু দেখতে পাচ্ছে না। তিন্নিরও কি সবসময় এমনই হতো?
চিঠিটা বুকে চেপে ধরে থাকতে থাকতে তপুর কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে...
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×