somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনি বাবা না, তিনি আমার " আব্বু "

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মায়ের আদর আর বাবার কড়া শাসন; এই নিয়মটি চলে আসছে বহুদিন ধরে। আমার বাসাতেও বড় ভাইয়াদের জন্য তাই। ব্যাতিক্রমটা কেবল আমার বেলাতেই। কিছু একটা নষ্ট করলে তা মায়ের চোখে পড়তেই দৌঁড়ে বাবার পিছে গিয়ে লুকিয়ে যেতাম। আব্বুই বাঁচাতো আম্মুর বকুনি থেকে।

কোন কিছু চাওয়ার হলে আব্বু বের হওয়ার আগে বলে দিতাম। আব্বু ফিরতো রাত করে। ঘুমিয়ে যেতাম। পরদিন সকালে উঠে দেখতাম আমার আবদারের জিনিস টা মাথার কাছে থাকতো। আবদারের জিনিসগুলো খুব বড় হয়ত হতনা, তবে খুব শখের হতো। আব্বুর কাছে আবদারের শেষ নাই। এখনও পিছে পিছে দৌঁড়ে মুখে তুলে খাইয়ে দেয় আব্বু। তবে, এতটা আহ্লাদ আম্মুর কাছে নেই। :P

তখন বয়স ৭ কি ৮ বছর হবে। প্রতিদিন ভোরে আব্বুর কেনে আঙ্গুল ধরে আব্বুর সাথে মর্নিং ওয়াকে বের হতাম। আমার তো আর হাঁটা না, আব্বুর বড় বড় কদমের সাথে পাল্লা দিয়ে রীতিমতন দৌঁড়ানো। আর তারপরে ফেরার পথে রমনার অরুণোদয়ের গেইটে ডাব খাওয়া আর আব্বুর ছোটোবেলার গপ্পো...
- বুঝলি মা, গাড়ি ছিলো তখন স্বপ্নের মতন। স্কুলের সামনে রাস্তায় কদাচিৎ দু'একটা ট্রাক যেত, আর পলক পড়তেই মিলিয়ে যেত অচিনপুরের সেই স্বপ্ন। তাই চোখের পাতা না ফেলে যতদূর পারতাম দৌঁড়াতাম। আর দম ফুরিয়ে গেলে তাকিয়ে থাকতাম অচিনপুরের যান না মিলানো পর্যন্ত। সেই গাড়ি দিয়েই ঢাকায় আসা। আর দেখ, আজ আমি গাড়ি নিয়ে চলি।
তখন আব্বুর চোখের ঝলকানি বুঝার মতন বড় আমি ছিলাম না। শুধু জানতাম, আব্বু তো কখনোও গাড়ি নেয় না। বেচারা গাড়ি, তার চার পা আমাদের তিন ভাই-বোনের পিছে ছুটিয়েই ক্লান্ত। আর আব্বু তাতেই খুশি।
আমিও খুব শখ করে অধীর আগ্রহে শুনতাম আব্বুর কষ্টে অর্জিত এই সফলতার গল্প।

কিন্তু হঠাৎ করে কি যে হয়ে গেল বুঝিনা। আব্বু আর আমি কেমন যেন দূরে দূরে হয়ে গেলাম, এখন আর আব্বুর পিছে লুকানো, তাঁর কেনে-আঙ্গুল ধরে হাঁটা আর সেই গল্প শোনা হয়ে উঠেনা।
এর মাঝেই অনেক পরিবর্তন এসে গেছে। আব্বু সেইদিন নামাযে যাচ্ছিলেন। যেই আমি, আব্বুকে কিছু বলতে দ্বিধা করতাম না, সেই আমি-ই, ১০ বার ভেবে-চিন্তে শেষে লজ্জা লজ্জা মুখ করে আব্বুকে গিয়ে বললাম,
- আব্বু, সম্পাপড়ি খাবো।
বলেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আব্বু একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আর আমি মনে মনে ভাবছি, "কি জানি, আব্বু আনবেন কি-না। ইশ! না বললেই পারতাম। দিনদিন কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে গাধায় পরিণত হচ্ছি?" আবার ভাবছি, "এইভাবে ভাবার কি আছে? আব্বু ই তো।"
পরে ছোটদার সাথে গল্প করার সময় বললাম,
- আব্বু আনবে তো?
ছোটদা বলল,
- জানিস পোটকু, তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটা স্বচ্ছল ছিলোনা জানিস-ই তো। আব্বু তখন সরকারি চাকরি করত। একদিন আমি আব্বুকে তিন চাকার একটা রিকশা এনে দিতে বলেছিলাম।
- এনে দিয়েছিলো?
- আব্বু একটা হাসি দিয়ে চলে গিয়েছিলো। রিকশা এনে দেয়নি।
আমার মুখ আরোও কালো হয়ে গেল কথাটা শুনে।
ছোটদা আবার শুরু করলো,
- তখন ছিলো মাসের মাঝখান। আমি তো আর এত কিছু বুঝতাম না। কিন্তু এতটুকু বিশ্বাস ছিল, আব্বু আনবে। জানিস, আমার বিশ্বাস রেখেছিলো আব্বু। পরের মাসেই আব্বু আমার রিকশা এনে দিয়েছিলো। সংসারের এত চাপের মাঝেও আব্বু আমার আবদারটুকু ভুলেনি। তখন কি হয়েছিলো জানিস?
- কি??
- সেইদিন থেকে আব্বুর উপর আমার বিশ্বাস আরোও বেড়ে গিয়েছিলো।

আমি হলাম খুব আবেগপ্রবণ। ছলোছলো চোখ হয়ে গিয়েছিলো আমার। ততক্ষনে আব্বুও চলে এসেছে। এইবার আর কাচুমাচু না করে আব্বুর সামনে গেলাম। আব্বু আমাকে বড় একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
- নে, মন ভরে খা। আর একটু কাছে আয় মা, তোকে আদর করে দেই।
আমি কাছে এগিয়ে যাই আদর নিতে। আম্মু ঝেঁকে বলল,
- উফফ! তোমাদের বাপ-বেটির নাটক শেষ হলে টেবিলে আসো, নাস্তা করবো সবাই একসঙ্গে।
আব্বু আমাকে বলে,
- তুই যা মা, আমি আসছি।

আমি খুশি মনে গালে এত্তবড় এক টুকড়া হাঁসি আর হাতে সম্পাপড়ির প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে যাই। ছোটদাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে হবে। :D
আম্মু কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
- এইভাবেই হাসি-খুশি থাকিস। এই হাসিটার জন্যই তো মানুষটা দিন-রাত খাটে।
" ওরে! তোর এই হাসিটাই যে মানুষটার সবচেয়ে বড় পাওয়া..."
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×