somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-বুক কি বইয়ের প্রতিদ্বন্ধী নাকি প্রতিনিধি?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানব সভ্যতা সর্বদাই উন্নত প্রযুক্তির দিকে ধাবমান। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমও তাই উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। আর তাতে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ সহজ, শৌখিন এবং আধুনিক হয়ে উঠেছে

এক সময় কাদামাটির বুকে পাথরের আঁচড় কেটে মনের ভাব প্রকাশ করতো মানুষ। তারপর অনেক চেষ্টা ও সাধনায় উদ্ভাবিত হয় কাগজ। একইভাবে মুদ্রণযন্ত্রও আবিষ্কৃত হয়। যেগুলো মানব সভ্যতায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছিল বলেই ধরা হতো। কাগজের বুকে মুদ্রিত অক্ষর সাজিয়ে মানুষ তৈরি করলো বই। অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ বইয়ের জগতে খুঁজে ফেরে নিজের পরিচয়।
কিন্তু কম্পিউটারের জন্মের পর অনেকের মনেই বইয়ের টিকে থাকা নিয়ে নানারকম প্রশ্ন দেখা দেয়। অনেকেই আবার মনে করেন কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে বইয়ের সাথে একটা প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় কম্পিউটার একধাপ এগিয়ে থাকলেও সবাই স্ব স্ব অবস্খানে রয়েছে। অনেক জায়গা থেকেই মুদ্রিত সামগ্রীকে হটিয়ে দিয়েছে কম্পিউটার। এরপর ইন্টারনেটের আবির্ভাবের ফলে কম্পিউটারের ক্ষমতা বেড়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটি বই বা কাগজকে হটিয়ে পুরোপুরি আমাদের জীবনের দখল নিয়েছে তা বলা যাবে না। বরং কম্পিউটার প্রযুুক্তির ব্যাপক প্রাধান্যের এই সময়েও বইয়ের বিক্রি বা প্রচলন কোনটাই কিন্তু কমেনি।
বই এবং কম্পিউটারের মধ্যকার যুদ্ধে উভয়েই সমান তালে লড়লেও বইকে রদ করার জন্য এক সময় এলো ই-বুক বা ইলেকট্রনিক বই। এটি এক ধরনের কম্পিউটিং ডিভাইস সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি একই সঙ্গে দেখতে শুনতে বইয়ের মতও। বইয়ের মত আকার, তার বুকে কালো কালো অক্ষরগুলো সাজানো। তবে কিনা সে অক্ষর দেখা যাচ্ছে কম্পিউটারের মত দেখতে একটা স্ক্রিনে। তারপরও কেন যেন জমে উঠছে না ই-বুকের বাজার। এই অবস্খায় ই-বুক নিয়ে নতুন উদ্যোগে এগিয়ে এলো ই-কমার্সের ভুবনে সবচেয়ে নামকরা কোম্পানিগুলোর একটি ‘আমাজন' জেফ বেজোস-এর হিসেবী মস্তিষ্কের নতুন অবদান ‘কিন্ডল' নামের নতুন এই ই-বুক।
২০০৭ সালের ১৯ নবেম্বর আমাজন-এর উদ্যোগে বাজারে ছাড়া হয় নতুন ই-বুক কিন্ডল। এর আগে সনি কোম্পানি ই-বুক বাজারে ছেড়েছিল। কিন্তু তাদের সেই ই-বুক পাঠক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।


এদিক দিয়ে বলা যায় আমাজন-এর ভাগ্য অত্যন্ত ভাল। গত দেড় বছরে কিন্ড্ল অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথম দফায় আমাজন যতলো কিন্ডল বাজারে ছেড়েছিল মুহূর্তের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই ই-বুকটির এমন সাফল্য নতুন করে পুরোনো সেই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসছে : তবে কি এখানেই সাঙ্গ হবে বইয়ের যাত্রা? প্রশ্নটি খুবই যৌক্তিক কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা যদি কানাডা, নিউইয়র্কে মত দেশগুলোর দিকে তাকাই যেখানে ই-বুকের সয়লাব, তবে দেখতে পাব ই-বুক ‘কিন্ডল' বইয়ের বাজারে এক বিন্দুও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। বরং সারা বিশ্বে বইয়ের ব্যবসা কেবলই বেড়ে চলেছে। আসলেই বই বনাম ই-বুকের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার ব্যবধানেই এগিয়ে রয়েছে বই-ই। তারপরও কে জানে এর শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

ইলেকট্রনিক্স-বুক (ই-বুক) কিন্ডল-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমাজন। তারা চেয়েছে কিন্ডলকে যতটা সম্ভব বইয়ের আকারে গড়ে তুলতে। কিন্ডল-এর মুখপাত্র এন্ড্রু হার্ডেনার বলেন, ‘আপনি যখই বই পড়েন তখন কিন্তু ভুলে যান যে, এটা কাগজ, আঠা, সুতা, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি নানা রকম জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি করা একটা বাক্স বা পাত্র। কিন্তু আপনি সরাসরি হারিয়ে যান বইয়ের রাজ্যে। এটির মাধ্যমে লেখক আপনার কাছে কোন বার্তাটি পৌঁছে দিতে চাইছে সেটি জানার জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়েন আপনি। কিন্ডল-এর ক্ষেত্রেও আমরা ঠিক তাই করতে চাইছি। বইয়ের চেহারা বা চরিত্রটিকেই ফুটিয়ে তুলতে চাইছি কিন্ডল-এ। যাতে করে আপনার মনে না হয় যে, ‘আপনি একটি কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র চোখের সামনে ধরে আছেন।' তারপরও যেহেতু এটি আসলেই একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস, সেহেতু এতে এমন সব সুবিধা পাওয়া যাবে যেটি সাধারণ একটি বই আপনাকে দিতে পারবে না। যেমন ধরুন, এটির ফন্ট-এর আকার আপনি বাড়াতে পারবেন আবার কমাতেও পারবেন। আবার এতে থাকবে একটি বিল্ট-ইন-ডিকশনারি, ফলে বইয়ের কোন শব্দের মানে না বুঝলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে এর মানে জেনে নিতে পারবেন। একই সঙ্গে এতে থাকছে ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সুবিধা এবং একটি টেক্সট অনলি ওয়েব ব্রাউজার। যার ফলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্রাউজও করতে পারবেন। যেহেতু টেক্সট অনলি, সেহেতু এতে ছবি দেখতে পারবেন না, ওয়েব থেকে কেবল টেক্সটই পড়তে পারবেন।

ই-বুক কিন্ডল-এর ইন্টারনাল মেমোরিতে ২০০-র অধিক ডিজিটাল বইকে ধারণ করে রাখা যায়। আমাজন-এর প্রোপাইটরি কিন্ডল ফরম্যাটে ইন্টারনেট থেকে বই ডাউনলোড করা যায়। এছাড়াও এতে এমপি থ্রি ফরম্যাটও সাপোর্ট করে। বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে এমপি থ্রি মিউজিক বাজানোর ব্যবস্খা রয়েছে।
ই-বুক কিন্ডল লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে চলে। সাধারণভাবে একটি কিন্ডল-এ থাকে ৬৪ মেগাবাইট র‌্যাম, ২৫৬ মেগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, এসডি এক্সপানশন þöট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কিন্ডলকে বিক্রি করা হয় না, কারণ এটির সাহায্যে বই ডাউনলোড করার জন্য আমাজন-এর চুক্তি আছে উইসপারনেট নামক একটি নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে উইসপারনেট-এর নেটওয়ার্ক না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে আমেরিকার বাইরের ই-বুক পাঠকরা কিন্ডল ব্যবহার করতে পারবেন না। ভবিষ্যতে অবশ্য এ সুবিধাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এ মুহূর্তে কিন্ডল-এর বড় কয়েকটি সমস্যাও আছে যা কিন্ডল-এর সারা বিশ্বে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এর মধ্যে প্রধান বাধা হচ্ছে কিন্ডল-এর সঙ্গে মার্কিন কোম্পানি স্প্রিন্ট-এর অংশীদারিত্ব চুক্তি। যার কারণে এটি এ মুহূর্তে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহার করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এটিকে মূলত টেক্সট বা লেখা প্রদর্শনের উপরই অধিক জোর দেয়া হয়েছে সেহেতু ওয়েবের রঙিন বিভিন্ন ছবি বা লেখা এটাতে দেখা যাচ্ছে না। আর তৃতীয়ত, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে যত ই-বুক আছে তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশই বেকল কিন্ডল-এর মাধ্যমে পড়া যাচ্ছে।
আমাজন যদিও বারবার জোর দিয়ে বলছে যে, তাদের ই-লাইব্রেরিতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ই-বুক আছে, তারপরও অনেক পাঠকই অভিযোগ করছেন, তারা যেসব ই-বুক পড়তে চাইছেন তার অনেক কিছুই নাকি আমাজন-এর সংগ্রহে নেই। অবশ্য তারপরও দিনদিনই আরও নতুন ই-বুক আমাজন-এর সংগ্রহে যুক্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাজন-এর তৈরি কিন্ডল-এর ভবিষ্যৎকে বেশ উজ্জ্বলই মনে হচ্ছে।
বই এবং যন্ত্রের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয় তা বলা কঠিন হলেও ই-বুক যে অত সহজে বইয়ের কাছে হার মানবে না তা বলা যায়। যেহেতু সনির মতো বৃহৎ কোম্পানিরও এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে; তবে বোঝাই যায় যে, ই-বুক-এর ব্যাপকতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরাও চাই ই-বুক ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বময়। তবে বইয়ের প্রতিদ্বন্দবী হিসেবে নয়, বইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে।

৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×