“কি খোকা কি নাম তোমার? কোন স্কুল থেকে এসেছো?” শিক্ষিকার প্রশ্ন। ছোটোবেলা প্রায় এরকম প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হত। বাবার সরকারি চাকরি, প্রায় বদলি হতেন,আমারও স্কুল বদল হত। নতুন নতুন স্কুল এ পড়তে ভালই লাগতো।নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ।এইভাবে চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত স্থির হই কুমিল্লা জিলা স্কুল এ। আব্বুর অবসরে পর কুমিল্লাতে থাকা শুরু করি। জিলা স্কুলে আমার জীবনের সব মধুর সময় ছিল।সব জিগরি দস্তো গুলার সাথে পরিচয় হয় এইখানে। মহিবুল ওরফে মহিলা, সালাউদ্দিন ওরফে সালাবস্তা, ইমতিয়ায(নামের শুরু ই র পরের আয বাদ দিয়া মতি), রানা ওরফে কানা,আর কত জনের কত নাম বানাইসি এখন মনে পরতেসে নাহ।(বন্ধুরা যাদের নাম বাদ পরসে তারা মাইন্ড খাইয়ো নাহ)। আমার জন্যও স্পেচিয়াল নাম বরাধ্য ছিলো। গোলাম আজম, আজম খান, পেটলা আজম, লাল্টু আজম ...শুরু করলে লেইখা শেষ করতে পারব নাহ। তো এবার আসি মূল গল্পে। স্কুল লাইফ এর সব মজার কাহিনি মনে হই কেউ কোনো দিন ভুলে নাহ। আমাদের স্কুল টা ছিল একদম শহরের মাঝখানে। আর আমার বাসা ছিলো মেডিকেল এর পাশে হাউজিং এসটেটে, তাই স্কুল এ যাইতে হইলে একজন রিকশা পার্টনার দরকার। অনেক জনের সাথে শেয়ার করসি(বড় ভাই/ ছোট ভাই) তবে সবচেয়ে মজার পার্টনার ছিলো অমিত। আমরা একই ক্লাস এ ছিলাম আর ও ছিলো কিঞ্ছিত লূল টাইপ এর। স্কুল এ আসা যাওয়ার সময় রিকশায় থেকে মেয়েদের স্কুলে এ ফুচকি দেয়া ছিল তার কাজ। মেয়েদের স্কুল এর বাউন্ডারি ছিলো উঁচু, কিন্তু অমিতের লুলামির দেখলে নিশ্চিত স্কুল কর্তৃপক্ষ বাউন্ডারি আরও উঁচু বানাইতো। চলন্ত রিকশায় সিট উপর দারায় লুলামি করা, আর তার ব্যাগ খানি আমার বহন করা ছিল নিত্য নৈমতিক ঘটনা।কিন্তু ওস্তাদরা ভুল্ভ্রান্তির উরধে নন, তো অমিত বাবাজিও একদিন ধরা খাইলেন। কোনো কারনে ওইদিন মেয়েদের স্কুল আগে ছুটি দিসে, তাই অমিত কে ওইদিন কষ্ট করে শারিরিক কসরত করতে হয় নাই, দুই জন মিলে একসাথে দৃশ্য অবলকন করতে করতে যাচ্ছিলাম। (অমিতের সাথে থেকে আমিও কিঞ্ছিত লুল হওয়ার চেষ্টা করসি)।আর ওইদিন আমাদের রিকশাওলা ছিলো যুবক বয়সের, আর এই সব রিকশাওলারা মেয়ে দেখলেই শরীরে অসুর এর শক্তি নিয়া রিকশায় টান দেয় (রহস্য টা কি???) রিকশাওলা দিসে টান, অমিত ঘাড় ঘুরাইয়া মেয়ে দেখতেসে, এই টানের মধ্যে রিকশাওলা পুরা ৯০ ডিগ্রি আঙ্গেলে বাক ঘুরাইলো, আর আমি আবিষ্কার করলাম অমিত নাই, ডাইরেক্ট ড্রেনে। বেচারা অমিত এর পর থেকে মেয়ে দেখার সময় সাবধানে দেখতো। অমিত এর সাথে আরও মজার মজার অনেক ঘটনা আসে। এই রিকশা যাইবা জিলা স্কুল... কয় জন? ......দুই জন......দুইজন দশ টাকা...দুইজন দশ টাকা তো একজন পাঁচ টাকা যাইবা...কেউ রাজি হইত নাহ তবে আমি একবার একজন কে পাইসিলাম যে ৫ টাকাই রাজি হইসিলো (বলাবাহুল্য, তখন জিলা স্কুল থেকে হাউজিং এর ভাড়া ছিল ৮ টাকা)
স্কুলের স্যার/মাড্যাম দের কথা খুব মনে পরে। স্কুল এ ক্লাস সিক্স এ সবচেয়ে ভয় পাইতাম বাইট্টা হুযুর কে (নাম টা যে কে দিসিলো ????) । স্যার ছিলেন ছোটখাটো একটা মানুষ কিন্তু আমরা সবাই ভয়ে অস্থির থাকতাম । টিফিন পিরিয়ড এর পর স্যার এর ক্লাস থাকলেই সারতো!! সবাই খেলাধুলা বাদ দিয়া মসজিদে। ওইদিন আমাদের টিফিন পিরিয়ড টাই মাটি হইতো। ক্লাস এর শুরু তে স্যার জিগাইতো আজকে কেডা কেডা নামায পর নাই?। যারা পাপিবান্দা ছিলো তাদের দেখাইয়া স্যার বলতো “দেইকছস্নি তাগো শইতানে দইচ্ছে।’’ বইলাই শুরু হইতো মাইর, মাইর একটাও মাটিতে পরতো নাহ। কথিত আসে স্যার কোনো এক ছাত্রকে পিটাই অজ্ঞান করসে। এইসব শুইনা আমদের ভয় আরও বাইরা যাইত।
আমাদের আরেক প্রিয় স্যার ছিলো খগেন্দ্রনাথ স্যার। পোলাপাইন আড়ালে ‘খগাবাবু’ বইলা ডাকতো। স্যার এর বদ অভ্যাস ছিলো আমাদের নাম ভুইলা যাইতেন। প্রতিদিন ক্লাস দার করে জিজ্ঞেস করতেন তোমার নামটা যেনো কি। পরে এমন এক অব্স্থা হইসিলো যে একদিন ক্লাস এ আমাকে দার করাই জিজ্ঞেস করলো ‘এই শামসুল আজম চৈধুরি ...তোমার নাম টা যেন কি?’।আর স্যার ক্লাস এ পোলাপাইন কথা বললে বা গণ্ডগোল করলে দার করাইয়া জারন বিজারন এর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করতেন। ক্লাস এইট থেকে টেন পর্যন্ত আমরা জারন বিজারন এর সংজ্ঞা বলেই গেসি। ক্লাস টেন এর শেষের দিকে কাউকে দার করাইলে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে সে জারন বিজারন এর সংজ্ঞা বলে দিতো। আর স্যার এর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ছিলো মহিবুল হাসান আর জাকারিয়া। ক্লাস এইট এ কোনো এর দুষ্ট বালক স্যার কে বলসিলো , ‘স্যার মহিবুল হাসান আর জাকারিয়া আপনাকে Tease করসে’। এরপর থেকে প্রতি ক্লাস এ এসে শুরুতে স্যার মহিব আর জাকারিয়ায়কে মাইর দিতো, মাইর শেষ হইলে বলত ‘শুনলাম তোমরা বলে আমাকে Tease করসো’ বইলা আবার মাইর। অনেকদিন এই দুইজন স্যার এর হাতে মাইর খাইসে। তবে আমাদের মহিবুল হাসান ও কম দুষ্ট ছিল নাহ। কাচনল বাকানোর জন্য স্যার যখন মোমবাতির উপর দুই হাতে নল টা ধরতেন, পিছন থেকে মহিবুল এর হোন্ডার সাউন্ড শোনা যাইতো।ব্রুম ব্রুম ব্রুম......।
চলবে.................


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




