somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটোবেলা- পর্ব ১ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“কি খোকা কি নাম তোমার? কোন স্কুল থেকে এসেছো?” শিক্ষিকার প্রশ্ন। ছোটোবেলা প্রায় এরকম প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হত। বাবার সরকারি চাকরি, প্রায় বদলি হতেন,আমারও স্কুল বদল হত। নতুন নতুন স্কুল এ পড়তে ভালই লাগতো।নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ।এইভাবে চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত স্থির হই কুমিল্লা জিলা স্কুল এ। আব্বুর অবসরে পর কুমিল্লাতে থাকা শুরু করি। জিলা স্কুলে আমার জীবনের সব মধুর সময় ছিল।সব জিগরি দস্তো গুলার সাথে পরিচয় হয় এইখানে। মহিবুল ওরফে মহিলা, সালাউদ্দিন ওরফে সালাবস্তা, ইমতিয়ায(নামের শুরু ই র পরের আয বাদ দিয়া মতি), রানা ওরফে কানা,আর কত জনের কত নাম বানাইসি এখন মনে পরতেসে নাহ।(বন্ধুরা যাদের নাম বাদ পরসে তারা মাইন্ড খাইয়ো নাহ)। আমার জন্যও স্পেচিয়াল নাম বরাধ্য ছিলো। গোলাম আজম, আজম খান, পেটলা আজম, লাল্টু আজম ...শুরু করলে লেইখা শেষ করতে পারব নাহ। তো এবার আসি মূল গল্পে। স্কুল লাইফ এর সব মজার কাহিনি মনে হই কেউ কোনো দিন ভুলে নাহ। আমাদের স্কুল টা ছিল একদম শহরের মাঝখানে। আর আমার বাসা ছিলো মেডিকেল এর পাশে হাউজিং এসটেটে, তাই স্কুল এ যাইতে হইলে একজন রিকশা পার্টনার দরকার। অনেক জনের সাথে শেয়ার করসি(বড় ভাই/ ছোট ভাই) তবে সবচেয়ে মজার পার্টনার ছিলো অমিত। আমরা একই ক্লাস এ ছিলাম আর ও ছিলো কিঞ্ছিত লূল টাইপ এর। স্কুল এ আসা যাওয়ার সময় রিকশায় থেকে মেয়েদের স্কুলে এ ফুচকি দেয়া ছিল তার কাজ। মেয়েদের স্কুল এর বাউন্ডারি ছিলো উঁচু, কিন্তু অমিতের লুলামির দেখলে নিশ্চিত স্কুল কর্তৃপক্ষ বাউন্ডারি আরও উঁচু বানাইতো। চলন্ত রিকশায় সিট উপর দারায় লুলামি করা, আর তার ব্যাগ খানি আমার বহন করা ছিল নিত্য নৈমতিক ঘটনা।কিন্তু ওস্তাদরা ভুল্ভ্রান্তির উরধে নন, তো অমিত বাবাজিও একদিন ধরা খাইলেন। কোনো কারনে ওইদিন মেয়েদের স্কুল আগে ছুটি দিসে, তাই অমিত কে ওইদিন কষ্ট করে শারিরিক কসরত করতে হয় নাই, দুই জন মিলে একসাথে দৃশ্য অবলকন করতে করতে যাচ্ছিলাম। (অমিতের সাথে থেকে আমিও কিঞ্ছিত লুল হওয়ার চেষ্টা করসি)।আর ওইদিন আমাদের রিকশাওলা ছিলো যুবক বয়সের, আর এই সব রিকশাওলারা মেয়ে দেখলেই শরীরে অসুর এর শক্তি নিয়া রিকশায় টান দেয় (রহস্য টা কি???) রিকশাওলা দিসে টান, অমিত ঘাড় ঘুরাইয়া মেয়ে দেখতেসে, এই টানের মধ্যে রিকশাওলা পুরা ৯০ ডিগ্রি আঙ্গেলে বাক ঘুরাইলো, আর আমি আবিষ্কার করলাম অমিত নাই, ডাইরেক্ট ড্রেনে। বেচারা অমিত এর পর থেকে মেয়ে দেখার সময় সাবধানে দেখতো। অমিত এর সাথে আরও মজার মজার অনেক ঘটনা আসে। এই রিকশা যাইবা জিলা স্কুল... কয় জন? ......দুই জন......দুইজন দশ টাকা...দুইজন দশ টাকা তো একজন পাঁচ টাকা যাইবা...কেউ রাজি হইত নাহ তবে আমি একবার একজন কে পাইসিলাম যে ৫ টাকাই রাজি হইসিলো (বলাবাহুল্য, তখন জিলা স্কুল থেকে হাউজিং এর ভাড়া ছিল ৮ টাকা)
স্কুলের স্যার/মাড্যাম দের কথা খুব মনে পরে। স্কুল এ ক্লাস সিক্স এ সবচেয়ে ভয় পাইতাম বাইট্টা হুযুর কে (নাম টা যে কে দিসিলো ????) । স্যার ছিলেন ছোটখাটো একটা মানুষ কিন্তু আমরা সবাই ভয়ে অস্থির থাকতাম । টিফিন পিরিয়ড এর পর স্যার এর ক্লাস থাকলেই সারতো!! সবাই খেলাধুলা বাদ দিয়া মসজিদে। ওইদিন আমাদের টিফিন পিরিয়ড টাই মাটি হইতো। ক্লাস এর শুরু তে স্যার জিগাইতো আজকে কেডা কেডা নামায পর নাই?। যারা পাপিবান্দা ছিলো তাদের দেখাইয়া স্যার বলতো “দেইকছস্নি তাগো শইতানে দইচ্ছে।’’ বইলাই শুরু হইতো মাইর, মাইর একটাও মাটিতে পরতো নাহ। কথিত আসে স্যার কোনো এক ছাত্রকে পিটাই অজ্ঞান করসে। এইসব শুইনা আমদের ভয় আরও বাইরা যাইত।
আমাদের আরেক প্রিয় স্যার ছিলো খগেন্দ্রনাথ স্যার। পোলাপাইন আড়ালে ‘খগাবাবু’ বইলা ডাকতো। স্যার এর বদ অভ্যাস ছিলো আমাদের নাম ভুইলা যাইতেন। প্রতিদিন ক্লাস দার করে জিজ্ঞেস করতেন তোমার নামটা যেনো কি। পরে এমন এক অব্স্থা হইসিলো যে একদিন ক্লাস এ আমাকে দার করাই জিজ্ঞেস করলো ‘এই শামসুল আজম চৈধুরি ...তোমার নাম টা যেন কি?’।আর স্যার ক্লাস এ পোলাপাইন কথা বললে বা গণ্ডগোল করলে দার করাইয়া জারন বিজারন এর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করতেন। ক্লাস এইট থেকে টেন পর্যন্ত আমরা জারন বিজারন এর সংজ্ঞা বলেই গেসি। ক্লাস টেন এর শেষের দিকে কাউকে দার করাইলে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে সে জারন বিজারন এর সংজ্ঞা বলে দিতো। আর স্যার এর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ছিলো মহিবুল হাসান আর জাকারিয়া। ক্লাস এইট এ কোনো এর দুষ্ট বালক স্যার কে বলসিলো , ‘স্যার মহিবুল হাসান আর জাকারিয়া আপনাকে Tease করসে’। এরপর থেকে প্রতি ক্লাস এ এসে শুরুতে স্যার মহিব আর জাকারিয়ায়কে মাইর দিতো, মাইর শেষ হইলে বলত ‘শুনলাম তোমরা বলে আমাকে Tease করসো’ বইলা আবার মাইর। অনেকদিন এই দুইজন স্যার এর হাতে মাইর খাইসে। তবে আমাদের মহিবুল হাসান ও কম দুষ্ট ছিল নাহ। কাচনল বাকানোর জন্য স্যার যখন মোমবাতির উপর দুই হাতে নল টা ধরতেন, পিছন থেকে মহিবুল এর হোন্ডার সাউন্ড শোনা যাইতো।ব্রুম ব্রুম ব্রুম......।


চলবে.................




৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×