somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প-গল্প

৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মতিঝিল-হিরাঝিল

০১

সেদিন গেলাম ক্যাফে ঝিলে ঢাকা শহরের অনেক ক্যাফেতেই চা, কফি খেয়েছি ক্যাফে ঝিলের চিত্র বিরল। মানুষ হুমড়ি খেয়ে আসে মনে হল, হরেক পেশার মানুষ। যেহেতু অভিজাত রেস্টুরেন্ট বড়লোক দের সংখ্যাই বেশি। আমার সাথে ছিল খোকন ও এসেছিল ট্রেনিং করতে। ন্যাশনাল ব্যাংকে ওর চাকুরী হয়েছে। খোকন আশ্চর্য হল একটা রিক্সাঅলা কে এক ফুল চিকেন গ্রিল অর্ডার দিতে দেখে। আমি মোটেও আশ্চর্য হইনি কারণ আমরা যদি কলেজে পড়া অবস্থায় ত্রিশ টকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে বার টাকা দামের চা খেতে মতিঝিল আসতে পারি। ঐ রিক্সাঅলা সারাদিন রোজগার করে কেন একশ আশি টাকা দামের গ্রিল খেতে পারবেনা। আমি খুশি হলাম একটি দৃশ্য দেখে যে, একটু পরে একটি খুব অল্প বয়স্ক সুন্দরী মেয়ে এসে বসল যখন বসে পড়ল বালিকাটি তখনও মোবাইলে কারো সাথে ফোনালাপ করছে। খোকন ভেবেছিল এটি অন্য কেউ একা এসেছে বলেই লুঙ্গি পরা রিক্সাঅলার সামনে একই টেবিলে হয়ত বসেছে। কিন্তু আশ্চর্য হতে ওর দেরি হলনা যখন দেখল কাঁটা চামচ ছুরি নিয়ে ওরা একসাথে খেতে শুরু করেছে। ও বলল মেয়েটি হয়তবা লোকটির মেয়ে সম্পর্কীয় নিকটাত্নীয়। সে শেষ বারের মত আশ্চর্য হল। যখন মেয়েটি অসংখ্য প্রেমালাপের ফাঁকে লোকটির কাছে কিছু টাকা চাইল।
টাকা কিন্তু সে ধার হিসেবে চেয়েছে বলা যায়না কারণ ও বলছে সামনে পরীক্ষা তাই টাকাটা দরকার।

আমরা বসেছি ওদের টেবিলের ঠিক পেছনে আমার চেয়ারের পিঠের অংশটি মেয়েটির চেয়ারের সাথে লাগানো। ওর মুখটা ঢুকতে যেই দেখেছি আর দেখিনি। আমি কিন্তু মনোযোগি শ্রোতার মত সব শুনে যাচ্ছি। খোকন আমার বিপরীত দিক থেকে মেয়েটির পিঠের অনাবৃত অংশ দেখে কিছুটা ইতস্তত।

বিশ্বাস কর আমি মেয়েটির কথা কিংবা আচরণ কোনটা দেখেই আশ্চর্য হইনি। কারন এমন দৃশ্য কল্পনায় আমি প্রতিনিয়ত দেখি। এবং মানুষ কে আমরা খোলা চোখে দেখি মানুষ যে প্রয়োজনে সব করতে পারে এমনটাও আমরা বিশ্বাস করি।

সেদিনের পর আর একবার লোকটিকে দেখলাম কমলাপুর রেল স্টেশানের কন্টেইনার ডিপোর পাশে অনেক গুলো লোকের সাথে ভলিবল খেলছে। সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি একা বিকেলে ঘুরতে বেরিয়েছি। ইচ্ছে করেই অনেকক্ষন দেরি করলাম। ইচ্ছে লোকটার গল্প শোনা। ভাগ্য ভাল একা পেয়েও গেলাম। আমার ভাব দেখে সে নিজেই দাঁড়াল। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম চেনা মনে হয় কি? উত্তর দিল ক্যাফে ঝিলে দেখেছিলাম, বাকী জন কোথায় আমি বললাম রিয়াদ চলে গেছে লোকটি অবিশ্বাসের স্বরে বলল মাত্র ১০-১২ দিনে রিয়াদ যাওয়া যায়। এই প্রথমবার আমি আশ্চর্য হলাম রিয়াদ শব্দটা সে চিনেগেল বলে। ভ্রম হল ও রিক্সাঅলা?
গল্প শুরু করে দিলাম ভাই সেদিনের মেয়েটি কে?
ও আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো সেদিনের কথা শুনে কিছুই অনুভব করতে পারেন নি।
আসলে ধাঁধাঁ ময় মানুষ কে আমি ভয় এবং শ্রদ্ধা করি তাই কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক আগে থেকে বলার চেষ্টা করিনা। আপনি কি পত্রিকার লোক?
এই কথাটা শুনে আমি হাসলাম এবং নিশ্চিত হলাম লোকটা আসলেই রিক্সাঅলা তবে একটু তো আলাদা বটে। সে তার গল্প বলা শুরু করল আর,কে, মিশন রোড়ে মেয়েদের বাড়ি। ইডেন কলেজে পড়ে। পরীক্ষার নাম করে আমার কাছে টাকা চায় অথচ ওদের টাকার অভাব নেই। আমি ও যখন যা চায় দেই। ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় আরো ৫ বছর আগে তখন সে স্কুলের ছাত্রী নিয়মিত রিক্সায় করে মা, মেয়ে কে স্কুলে নেয়া, বাসায় আনা আমার সাথে চুক্তি ছিল। মাস শেষে বেতন দিত। টানা তিন বছর পার্ট টাইম ওদের চাকুরি করেছি। ধীরে ধীরে ওদের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করলাম কর্তা ও আমাকে বেশ আদর করত। প্রতিটি সকালে কর্তাকে নিয়ে বাজারে যাওয়া হত। আসা যাওয়ার পথে বেচারা তার স্ত্রীর নামে নানা বদনাম করত।
একদিন বাপ, বেটি ও কাজের মেয়েটা ওদের গ্রামের বাড়িতে গেল। সেদিন সকালে বাজার নিয়ে যখন বাসায় যাই দেখলাম ভদ্র মহিলা সিগারেট খাচ্ছে। আজকাল কিছু কিছু ,মেয়ে খায় তাই কিছু মনে করলাম না। মহিলা সন্ধায় আমাকে আসতে বলল। যথারীতি দিন শেষে আসলাম। ও আমাকে বলল আজ থেকে আমাকে ভাবী ডাকবে। নো খালাম্মা বুজলি। আসলে আমার বয়স ছত্রিশ। আমি উনাকে খালা কিংবা ভাবী যা ইচ্ছা ডাকতে পারি কিন্তু সুমি তো আমাকে ছোটকাল থেকেই আসলাম ভাই বলে ডাকে। আজ এতদিন পরে উনাকে ভাবী ডাকতে ইচ্ছে হলনা তবুও ডাকলাম। মহিলা একা তাই সে রাতে আমাকে বাসায় থাকতে বলল। নিরুপায় হয়ে রাজি হলাম। রাতে মহিলা নিজের ঘরে না থেকে আমার সাথে সোফার ঘরেই থাকল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাকে গালাগাল করতে লাগল। শেষে এও সাবধান করে দিল আজই তুই গ্রামে চলে যাবি ঢাকা শহরে যাতে তোকে আর না দেখি। আমি একই মহিলার দিন ও রাত্রির ভিন্ন রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে। প্রাণ ভয়ে ঢাকা ছাড়লাম।




০২

বেশ কিছুদিন গ্রামে থাকার পর ক্ষুদার তাড়নায় আবার ঢাকায় আসি এখন থাকি হল মান্ডায়। হঠাৎ ইডেনের সামনে একদিন মেয়েটির সাথে দেখা হল।

আসলাম ভাই বাসায় চল আম্মু তোমাকে অনেক খুজেছে। কাউকে কিছু না বলে চলে গেলে কেন? তুমি কি দেশে গিয়ে বিয়ে করেছ আম্মু বলে মনে হয় বিয়ে করার জন্য তুমি বাড়ি গেছ হয়ত! তবে আমাদের দাওয়াত দাওনি যে। ওর একসাথে এত গুলো প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারিনি শুধু বললাম বিয়ে করিনি। হঠাৎ মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে বাড়ি গেছি এটাই।
-আসলাম ভাই আমাকে তোমার কেমন লাগে?
-বললাম ভাল, কিন্তু এ প্রশ্ন কেন?
-তুমি বুজবেনা, ভাল লাগে কিনা সেটা বল।
-আমি আবার বললাম অবশ্যই ভাল লাগে।
-সেটাই আমাকে কার না ভাল লাগে! আচ্ছা চল বাসায় চল।

আমি কিন্তু আজ ওদের বাসায় যেতে পারিনি আমার মন বাধা দেয়। পরে ও আব্দার করল তাহলে চল ক্রিসেন্ট গার্ড়েনে।
সেদিন ই আমি প্রথম ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলাম। এর পর থেকে কতদিন কত গার্ডেনে যাই। কত কিছু ওর আব্দার রাখি। আজ এটা কাল সেটা। একটা ব্যাপার আমি কিছুতেই বুজতে পারিনা যে ওর মত মেয়ে আমাকে তুমি বলে ডাকবে কেন? আর ওকে আমার ভাল লাগে কিনা এ কথাটা বারবার করে জানতে চায় কেন? আমি আমার মতই চলি এবং বিশ্বাস করি ও আমাকে চিরকাল ভাললাগে কিনা এটাই জিজ্ঞাসা করে যাবে। ভালবাসি কিনা সেটা নয়। আর ওর মত একটা মেয়েকে আমার পক্ষে ভালবাসাই সম্ভব অন্য কিছু নয়। আমি মাঝে মাঝে অবাক হই মা ও মেয়েতে কত তফাত।

আসল কথাটা জানলাম সেদিন, সে আমাকে নিয়ে গেল বলদা গার্ডেনে একটি ছেলেকে দেখিয়ে বলল এই ছেলেটিকে আমি অনেক ভালবাসতাম। জীবনে একটি ছেলেকেই আমি ভালবেসেছি সে আমার সাথে প্রতারণা করল। আজ শেষ বারের মত ওর সামনে আমরা ভালবাসার অভিনয় করব। এবং কাল থেকে তোমাকে আঙ্কেল বলে ডাকব।

এতক্ষনে আমি বুজলাম আমি আর খোকন যেদিন ওদের কে ক্যাফে ঝিলে দেখেছিলাম, সেদিন ও ওরা অভিনয় করেছিল পাশে বসা ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে। ইদানিং মেয়েটা নাকি মোবাইল ফোন ব্যাবহার করেনা ওর আঙ্কেল বলে দিয়েছে সে আর অভিনয় করতে পারবেনা।

আজিজুল হক
১১০/১, দক্ষিণ কমলাপুর
মতিঝিল, ঢাকা
ই-মেইল: [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×