somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধ্যাপক মইনুল'র "আইএস বনাম জামায়াত শিবির" এর জবাব

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গত ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে “আইএস বনাম জামায়াত-শিবির” শিরোনামে একটা প্রবন্ধে জামায়াতে-ইসলামী, বিএনপি ও ছাত্রশিবিরকে ঢালাও ভাবে সমালোচনা করেছেন কিছু যদির উপর ভর করে, অনেকটা ব্যক্তিগত ধারণার আজগুবি চিন্তার মিশ্রনে। “আইএস বনাম জামায়াত-শিবির” বাক্যটি দেখে পাঠকদের প্রথমে মনে হবে তিনি কোন দলিল-প্রমান বা তথ্য-উপাথ্য ভিত্তিক আইএস ও জামায়াতে-ইসলামীর মধ্যে একটি তুলনামুলক আলোচনা করবেন। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে তিনি কোন ধরণের যুক্তি বা দলিল-প্রমান পেশ করতে পারেন নি। সম্পুর্ন মনগড়া ও ধারণা ভিত্তিক কিছু কথা বলেছেন। সামজিক বিজ্ঞানের ছাত্ররা জানেন তুলনামলক আলোচনার বা কোন গবেষণায় একটি নিরপেক্ষ কাঠামো, তথ্য উপাত্তের উৎস, সেমপ্লিন, গবেশনার উদ্দেশ্যসহ কিছু মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের লিখাতে এসবের কিছু-ই অনুসরণ করা হয়নি যা কিছুটা বিস্ময়কর। প্রবন্ধটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত “আমার ধারণা, আমি মনেকরি, আমি চিন্তা করি, আমার আশঙ্কা, আমার পরামর্শ, আমার অনুরোধ” এই সব শব্দ পুনঃপৌণিক উচ্চারণ করেছেন যা পড়ে পাঠকের মনে হবে কোন অবুজ শিশু ঘুমে দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ জেগে উঠলো আর নয়-ছয় বলা শুরু করলো।
জামায়াতের সাথে কথিত আইএস-কে তুলনার মাধ্যমে জনাব মইনুল মূলত আকাশকে হাতে টেনে মাঠিতে নামানর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আইএস এর সব সদস্যরা এসেছেন ইউরোপ অ্যামেরিকা থেকে যার সঠিক পরিচয় এখনো মানুষ জানে না। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামির জন্ম ১৯৪১ সালে এই উপমহাদেশের মাটি থেকে যার নেতা-কর্মিরা সবাই সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের জন্ম সূত্রে নাগরিক এবং সামাজিক ভাবে সু-পরিচিত। জামায়তে ইসলামি সম্পুর্ন গণতান্ত্রিক ভাবে, বৈজ্ঞানিক পন্থায়, বুদ্ধিভিত্তিক প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির সাধনে সচেষ্ট। গত কয়েক দশকে তারা সততা, যোগ্যতা ও আদর্শ দিয়ে মানুষের প্রিয়ভাজনে পরিনত হয়েছে ।
জনাব মইনুলুল চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ অধ্যাপক। তার কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা সঠিক ও তথ্য-উপাথ্য ভিত্তিক যৌক্তক বক্তব্য প্রত্যাশা করেন, কিন্তু নিছক মনগড়া, বানোয়াট এবং ধারনা ভিত্তিক কিছু মন্তব্য নাযিল করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা অনাকাঙ্ক্ষীত। প্রবন্ধটির আগাপিচুমাথা কোথাও কোন একটি গোয়েন্দা তথ্য বা গবেষণা রিপোর্ট কিংবা প্রমানিক তথ্য উল্লেখ করেননি।
অধ্যাপক মইনুল প্রবন্ধটিতে গত ২০১৩-১৪ সালে সরকার বিরুধী আন্দোলনকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। এই ধরনের সত্য-বিমুখ বক্তব্য সাধারনত ইসরাইলের নেতানিয়াহো, এরিয়েল-শেরন বা উহুদ উলমার্ডদের মুখ থেকে শুনা যায়। যখন ইসরাইলের দখলদার বাহিনি প্রতিনিয়ত ফিলিস্থিনীদের বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দিয়ে নতুন নতুন অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলছেন, মায়ের বুক থেকে অবুজ শিশুকে কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সন্তানের সামনে বাবা-ভাইকে হত্যা করা হয় আর এসবের প্রতিবাধ করলে ফিলিস্তিনীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হয়। বিগত সাত বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও অব্যাহতভাবে ইসরাইলী বাহিনীর মতো বিরুধীদলগুলোর অফিসে হামলা করা, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া বা দলীয় অফিসকে বছরের পর বছর তালা দিয়ে বন্ধ রাখার বিষয়টি একবার জনাব মইনুল উল্লেখ করলেন না। অধ্যাপক মইনুলের লিখায় উল্লেখ করা হলোনা কেন বিরুধী দলের শান্তিপূর্ন মিছিলে নির্বিচারে গুলী করা হলো? মানব বন্ধন থেকে নেতা-কর্মীকে ছু মেরে গ্রেফতার করে জেলে ভরে মাসের পর মাস বন্ধী রাখা, অহেতুক রিমান্ডের নামে পুলিশি নির্যাতন করার বিষয়টি যা খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলে কল্যাণে সবাই জ্ঞাত। জনাব মইনুল ২০১৫ সালের প্রথম ৯২ দিন ব্যাপী সরকারি দলের আগুন ষড়যন্ত্রকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের মানুষ পোড়ানোর তাণ্ডব বলে মূলত সরকারি দলের সন্ত্রাসীদেরমত কথা বলছেন।
জনাব মইনুল প্রবন্ধটির শেষের দিকে বলেছেন “জামায়াতের কোন নেতা বা কর্মী গ্রেপ্তার হলে জামায়াত-শিবিরের কর্মিরা তার পরিবারের দেখভাল করেন, ভাল মন্দের খোঁজ-খবর নেন, বাজার পর্যন্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। মামলার খরচ বহন করা হয়। কোনো ক্যাডার নিহত হলে পরিবারকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, আহত হলেও চিকিৎসার খরচ ও ভাতা দেওয়া হয়। মানে এটা পুরোদস্তুর একটা সিভিল বাহিনী”। তবে জনাব মইনুলের এই কথা গুলোর আশি ভাগ-ই সত্য। জামায়াতের নেতা-কর্মিরা নিজেরা একে-অপরকে ভাই-ভাই মনে করেন। তারা দুনিয়াবী স্বার্থের বাহিরে এসে একে অপরকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসেন। তাদের সাংগাঠনিক মজবুতির প্রধান ভিত্তি-ই হলো পারাস্পরিক সৌহার্দ, সহমর্মিতা। তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে একমাত্র আল্লাহর সন্তোষটি ভিন্ন কিছু স্থান পায় না। জামায়াতের অনেক শুভাকাংখী আইনজীবী নিজের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে সরকারের মিত্যা মামলা পরিচালনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র পুলিশের গুলিতে বা ছাত্রলীগের হামলায় আহত হলে শিবিরের ছেলেরা টিফিনের টাকা দিয়ে সহপাঠীকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তবে আহত হলে বা শহীদ হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি অধ্যাপক মইনুলের একটি আদর্শবাদী দলের প্রতি সংকীর্ন ধারণা মাত্র।
জনাব মইনুল ইসলাম বলেছেন “গত ছয় মাস তাদের রহস্যজনক নীরবতা দেখে কেউ যদি ভেবে থাকেন যে জামায়াত-শিবির তাদের কৌশল পাল্টেছে, তবে মারাত্মক ভুল হবে। কারণ, তারা শক্তি সঞ্চয়ের জন্যই এই ছয় মাস তাদের কর্মকাণ্ড কিছুটা কমিয়ে দিয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি জোরদার করেছে“।
প্রশ্ন হল বিএনপি-জামায়াত যখন সরকার বিরুধী আন্দোলন করেন তখন আমাদের মইনুলরা সরকারের সমালোচনা না করে উল্টো বিরুধীদলের সমালোচনা করত করতে জিহ্বার পানি শুকিয়ে ফেলেন। আবার আন্দোলন বন্ধ থাকলেও তাদের শরীর চুলকায়! আসলে মইনুল সাহেবরা যে কি চান নিজেরাও কি জানেন? তবে জনাব মইনুলদের মাথাব্যাথার আসল কারন হলো ২০ দলের রাজপথের মিছিল-মিটিং বন্ধ থাকায় সরকারের পেটুয়া পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে লাঠিপেটা করতে পারছে না, পাখির মতো কথায় কথায় রাবার বুলেট বা পিপার-স্প্রে নিক্ষেপ করতে পারছেন না। পারছেন না কোন অজুহাত দিয়ে গ্রেফতার বানিজ্য করা যায়। এই কারনে জনাব মইনুলরা পত্র-পত্রিকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলে বলে প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ লিখবেন আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আকৃষ্ট করে কিছু রাষ্ট্রীয় লোভনীয় পদে আসীন হবে তার ক্ষেত্র পাচ্ছেন না।
জনাব মইনুল বলেছেন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে, এবং “গৃহযুদ্ধ” আবার পুরোদমে চাঙা হবে আর এই তথ্য নাকি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে তাই ওই সংকেত পেয়েই অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিরাপত্তার আশঙ্কায় স্থগিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল “যে সব তথ্য সরকার পর্যন্ত জানেন না! তা কীভাবে জনাব মইনুল ইসলাম আগ থেকে জানলেন? যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার, দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দাদেরকে কে বা কারা এই সব ভুয়া তথ্যদিয়ে দেশের বিরুদ্বে কাজ করছেন? সুপ্রিম কোর্ট জামায়াত নেতাদের রায় ঘোষণার আগে থেকে-ই কিভাবে ফাসি কার্যকর হবার বিষয়টি অধ্যাপক মইনুল জানলেন? বিচারের রায় কি সুপ্রিম কোর্ট তৈরী করেন নাকি আগে থেকে অন্য কোন ফোরামে তৈরি হয়ে থাকে যার সাথে অধ্যাপক মইনুল যুক্ত আছেন? অধ্যাপক মইনুলদের এইসব বক্তব্য পড়ে কি বুজা যায় না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পিছন থেকে কেউ কেউ কলকাঠি নাড়ছেন?
অধ্যাপক মইনুল বলেছেন “আমার বিশ্বাস, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ না করে একটা ঐতিহাসিক ভুল করছে ক্ষমতাসীন জোট। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে জামায়াত-শিবির আজও স্বীকার করেনা”। অতচ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র-শিবিরের জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার পরে ১৯৭৭ সালের ৬-ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে । প্রশ্ন হল স্বাধীনতার পরে জন্ম নেওয়া শিশু কিভাবে স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে হতে পারেন? সম্ববত বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র যেদেশের ১৬-ই ডিসেম্বর ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা দিবসের র্যালিতে পুলিশ রাবার-বুলেট-কাঁদনে গ্যাস ফাইয়ার করে এবং তরুণদেরকে গ্রেফতার করে (দৈনিক আমারদেশঃ ২৬ মার্চ, ২০১৩)। বিজয় দিবসের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে সেই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে বের করে দেওয়া হয় (দৈনিক সংগ্রাম, ১৪ নভেম্বর ২০১৪)। কোন দলকে গায়ের জোরে সরকার নিষিদ্ধ করল অপরদিকে দেশের মানুষ তাদেরকে আর বেশি করে ভালবাসা শুরু করল তাহলে নিষিদ্ধ করে কোন পায়দা আছে বলে মনে হয় না। জনাব মইনুল খেয়াল করবেন বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীর নামের প্রথম অক্ষরটি-ই “বাংলাদেশের”। জামায়াত-শিবিরের সকল নেতা-কর্মি, শুভাকাংখীদের হৃদয়ের গভীর থেকে ভালবাসায় সিক্ত যে নামটি বারবার উচ্চারিত হয় সেটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উজানে ভারত কর্তিক নির্মিতব্য টিপাই মুখে বাঁধের বিরুধ্যে জামায়াতে-ইসলামী-ই সর্বপ্রথম লংমার্চ করেন (দৈনিক নয়াদিগান্ত, ৩ মার্চ ২০০৫)। আমরা বাঙ্গালি জাতীরা যে ভাষায় কথা বলে মনে ভাব প্রকাশ করে সেই “বাংলাভাষাকে” রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অধ্যাপক গোলাম আযম ২৭ নভেম্বের ১৯৪৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত জনসভায় পাকিস্থানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু) এর পক্ষ থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের বিশাল মিছিল নিয়ে স্বারকলিপি প্রদান করেছিলেন। (সুত্রঃ দি লন্ডনীঃ২০১৪, ঢাকসু সংগ্রহশালা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। সেইসময় গোলাম আযম ১৯৪৭-৪৮ ও ১৯৪৮-৪৯ সেশনে পরপর দুইবার ঢাক্সুর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আর ভিপি ছিলেন জনাব অরবিন্দ বোস( সুত্রঃ দি আজাদ, ২৮ নভেম্বর, ১৯৪৮)।
জনাব মইনুল ইসলাম বলেছেন জামায়াত শিবির, বিএনপি নাকি বাসে বোমা মারে, শিক্ষকদের অপমান করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্যা তৈরি করে, খুন খারাবি করে, মানুষের হাত-পা কেটে দেয়। আর এসব কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে জামায়াত–শিবির ক্যাডারদের পদোন্নতি মেলে, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হয়, সুযোগ-সুবিধা বাড়ে”। জনাব মইনুল এই সব কথা ছাত্র লীগের প্রসঙ্গে বললে মনে হয় সবাই বিশ্বাস করতেন। ছাত্রলীগের শুধু একবছরের অপকর্মের বর্ননা দিতে গেলে-ও পৃষ্টার পর পৃষ্টা শেষ হবে কিন্ত বর্ননা শেষ হবে না। ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশ্বজিত দাসকে শিবিরের কর্মী মনে করে দিবালোকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা দৈনিক প্রথম আলো, (১১ডিসেম্বর, ২০১২) । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ে নিজেরা নিজেদের কর্মী জুবাইরকে হত্য করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখা ( দৈনিক প্রথম আলো, ৯ জানুয়ারি, ২০১২), সিলেট এম সি কলেজের ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দেওয়া (সপ্তাহিক সোনার বাংলা, ১৩ জুলাই, ২০১২), নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে জনতার হাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মি ধরা পড়ে গ্রফতার হয়া (প্রথম আলো-০৫ জানুয়ারী ২০১২, বিশ্ব বিদ্যালয় ক্যান্টিনে ফাও খেতে না পেরে কর্মচারিদেরকে মারধর করা প্রথম আলো-১৫- জানুয়ারি-২০১২), ছাত্রলীগের হামলায় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিবির কর্মী নিহত, রাজশাহী বিশবিদ্যালয় নোমানী, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আবুবকর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় সহ নিজেরা নিজেদের কর্মিদেরকে হত্যা করা (প্রথম আলো, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১২, ৪ জানুয়ারী, ২০১২), শিক্ষকদের গায়ে ছাত্রলীগ বাব বার হাততুলা, লাঞ্ছিত করা বা অপমান করা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে (প্রথম আলো- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১২)। এছাড়া পরিক্ষার প্রশ্ন ফাস করা, ভর্তি বাণিজ্য করা, পার্কে গিয়ে চাঁদাবাজি করা, হলের গেস্ট রমে ছাত্রছাত্রীদের রেক দেওয়া ছাত্রলীগের আজকালের রুটিন কাজে পরি নত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রায় বলেন থেকেন “ ছাত্রলীগ ও ছারপোকা এই দুই প্রাণীর অত্যচারে তারা আজ অতিষ্ঠ। রাতে ছারপোকা কামরায় আর দিনে ছাত্রলীগ জ্বালায়”।

জনাব মইনুল ইসলাম তার প্রবন্ধে নাইজেরিয়া, সিরিয়া, ইরাক এই সব দেশের কিছু বিদ্রোহী সংঘটনের নামকে কোন বিশ্লেষণ ছাড়া জামায়াতের সাথে সম্পর্ক আছে বলে বাচ্ছালাপ করেছেন। কিন্তু জনাব কোন উদাহারন ছাড়া, তথ্য-উপাথ্য বিহীন কিংবা দলিল-প্রমান ছাড়া কোন শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে যত-ই বুজাতে চেষ্টা করেন না কেন ছাত্ররা কিন্তু বিশ্বাস করতে পারে না। মনেকরোন কেউ চট্রগ্রাম থেকে দৌড়ে এসে বলল “আটলান্টিক সাগর শুকিয়ে এখন সাহারা মরুভূমি হয়েগেছে”! এই কথা শুনে আপনাদের কেউ কি বিশ্বাস করবেন? তবে হ্যাঁ তারা-ই বিশ্বাস করবেন যারা আধৌ মহাসাগর ও মরুভুমি সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং তুলনামুলক-বিদ্যা কিংবা যুক্তিবিদ্যার-ও একটা কায়দা আছে তা না মানলে বা না জেনে বিতর্কে নামলে নিজে-ই বিতর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অধ্যাপক মইনুল বলেছেন “জামায়াত-শিবির আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী মৌলবাদী সংগঠনের বাংলাদেশি চ্যাপ্টার”। কিন্তু তিনি চ্যাপটারটি কোন বই থেকে নেওয়া হলো, বইটির লেখক কে? তার সম্পাদক, প্রকাশনী কিছু-ই উল্লেখ করেন নি! জামায়াতে-ইসলামী কোন বইয়ের চ্যাপটার বা পাতা নই। জামায়াত বাংলাদেশের মাটি থেকে জন্ম নেয়া সম্পুর্ণ আলাদা স্বাধীন একটা বই যার উদ্দেশ্য মানব কল্যান। পত্রিকা পড়লে সহজে জানা যাবে জামায়াতে-ইসলামী জনাব মইনুলের বুকো হারাম, আল সাবাব, আল কায়েদা সহ সকল উগ্র সঙ্ঘঠন গুলোর বিরুধ্যে শক্ত অবস্থান। দেশের সু-পরিচিত গুণী লেখকরা জামায়াতের কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা ভিত্তিক অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে যা অধ্যায়ন করে জানতে পারবেন জামায়াতে-ইসলামী গণতান্ত্রিক পন্থায়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্য রক্ষা করে দেশের সকল মানুষের জন্য উন্নয়ন, সুখ ও সমৃদ্ধি, শান্তি ও কল্যাণ নিচ্ছিত করণের আন্দোলন করে চলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর তালুকদার মনিরুজ্জামানের স্যার এর “পলিটিক্স এন্ড সিকিউরিটি অব বাংলাদেশ(১৯৯৪)” কিংবা ডঃ রেহমান সোবহানের “বাংলাদেশঃ প্রবলেম’স অব গভরন্যান্স-(নয়াদিল্লিঃ১৯৯৩)” বই গুলো অধ্যায়ন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের গনতন্ত্রের জন্য ইসলামী রাজনীতি কোন সমসসা নয়। সমসসা শুধু ফ্যাসিবাদ, পরশ্রীকাতরটা, সংকির্ন মনতা, অর্ধ-শিক্ষিতের দ্বারা রাজনীতিকে ব্যবসায়িক রুপ দান, লেলিনিজম বা মাওইজম কিংবা প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের তাবেদারি।

জনাব মইনুলরা দেশের ভিতরে জঙ্গি বলে বলে মুখে ফেনা তোলে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশকে আজ বিদেশের ছোখে আফগানিস্থান করে তলেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় “ওয়াশিংটন টাইমস” পত্রিকায় “ আন-মাস্কিন টেরর ইন বাংলাদেশ (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫)” নামে প্রবন্ধ লিখে বাংলাদেশের জামায়াতকে নির্মুলের জন্য যুক্তরাষ্ট্ররকে অনুরোধ করছেন আর প্রধানমন্ত্রী “দি গার্ডিয়ান” পত্রিকায় ( ১৬ সে প্টেম্বর ২০১৫) সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন কে নালিস দিচ্ছেন যেটি পরে “ব্রিটিশ জিহাদিস্ট ইন বাংলাদেশঃ ফানিন ফ্লেমস অব এক্সট্রিমিজম” নামে প্রকাশিত হয়েছে যেটি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ছোট করার শামিল। পৃথিবীর কোন দেশের কোন দেশপ্রেমিক ছেলে বা সরকার প্রধান বিদেশীদের কাছে নিজ দেশের বিরুধ্যে এমন নালিস করতে দেখা যায় না। অবশ্য আফগানিস্থানের হামিদ কার্জায়, কিংবা ইরাকের নুরি আল-মালিকিদেরকে মাঝে মাঝে এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে দেখা যায়।

প্রকিতপক্ষে জামায়াতে-ইসলামী নেতা-কর্মিরা মনে করে এইদেশে তাদের কোন প্রতিপক্ষ নেই। জামায়াত কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। ২০০৯ সালের সরকারকে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু আগামিলীগ সরকার কিছু কুচক্রী লোকদ্বারা প্রভাবিত হয়ে শান্তিপূর্ন সহঅবস্থান কে সহ্য করতে পারল না। নাস্তিক্যবাদীরা দেশের ভিতরে সংঘাত সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ চাষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারা দেশের বাহিরে বাংলাদেশের বন্ধুদেশ গুলোর কাছে জামায়াত বিরুধি লবিং করছে (দি ডেইলি স্টার, ২৯ মার্চ, ২০১৩)। একটি প্রতেবেশি দেশের কিছু দালাল বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ইসলামী ও জাতীয়তাবাদীদেরকে নির্মুলের করে দেশবিরুধি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল ইসলামী-ও জাতীয়তাবাদীদেরকে সাথে সরকারের দন্ধ বাঁধাতে যারা নিত্য ব্যস্ত তাদের উদ্দেশ্য কি?

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×