somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লৌহকার

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লালু ছোট ভাই হয়ে এত কিছু পারে!
আর তোমার নুন আনতে পান্তা ফুরায়! আহা
রে মরদ আমার?
—চুপ কর। মুখে খালি আজেবাজে কথা।
—আজেবাজে কথা হবে না তো কী
রসগোল্লার রস চুয়ে চুয়ে পড়ব?
—পড়লে তো ভালোই হতো!
—উঁহু, পড়লে তো ভালোই হতো। মরদ
ব্যাটা, মরদের মতো কথা কবা। তেল
ছাড়া বাত্তি জ্বলে, যে পাত্তি ছাড়া
মিষ্টি কথা শুনবা? কী দিছো আমারে
মিষ্টি কথা শুনবার চাও?
রাগে গরগর করতে করতে রান্নাঘরে
চলে যায় কালু কামারের বউ। সন্ধ্যা
থেকেই তিরিক্ষি মেজাজ। জোরদার
কারণও আছে। কালু, লালু দুই ভাই। দুজনই
কামার। সংসারে খাওয়ার লোকও
সমান সমান। পার্থক্য হলো কালুর ছেলে,
লালুর মেয়ে। অথচ আয়-রোজগারের মধ্যে
আকাশ-পাতাল ফারাক। অবশ্য কালু তাতে
কিছুই মনে করে না। কালুর রয়েছে পৈতৃক
ভিটে আর কয়েক বিঘা মাঠান জমি।
চারচালা টিনের দুটো ঘর। কারও
কাছে হাত পাতা লাগে না। খেয়ে-
পরে মোটামুটি চলে যায়। তবুও মন ভরে
না বউয়ের। মন ভরলেও চোখ যে ভরেনা
তা খেদোক্তি শুনলেই বোঝা যায়।
একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, লালু যদি এত এত
পারে তাহলে সে কেন পারবে না?
লালুর চেয়ে কমতি কোথায়? যদি কমতি
না থাকে তাহলে আমাদের এত কম কেন?
বাস্তবিকই লালুর অনেক কিছু রয়েছে।
কামারের কাজ করে সে বাড়িতে আধা
পাকা টিনের ঘর দিয়েছে। ঘর
সাজানোর জিনিসপত্র কিনেছে।
মাঠে বেশ কয়েক বিঘা জমিও করেছে।
শুধু কি তাই? সাত ক্লাসে পড়া মেয়ে
বিউটির বিয়ে-শাদির জন্য
গয়নাগাটিও করেছে। কদিন আগে
মেয়ের নামে ব্যাংকে একটা ডিপিএস
পর্যন্ত খুলেছে। বোঝাই যায়, আমোদ-
ফুর্তি আর সুখের সাগরে ভাসছে ওরা।
একদিন সত্যি সত্যিই কালুর বউ খুব করে
ধরে। লালু কামারগিরি করে এত কিছু
করল কীভাবে, আজ তোমাকে বলতেই
হবে।
—তুই কী কিছুই বোঝস না, নাকি বুঝেও
আমার কাছে নতুন করে শুনতে চাস। কালুর
এই প্রশ্নে তিড়িং করে রেগে যায় বউ।
চিনচিনা রকমের রাগ, যা হলে দোয়া
পড়া ছাড়া কালুর কোন গত্যন্তর থাকে
না।
—ঢংয়ের কথা কইবা না। কইতে চাইলে
কও, না হলে আমি কাজে যাই।
ভয়ে ভয়ে বউয়ের হাতটা ধরে কালু। তুই
সত্যিই জানস না? মাথাটা ডানে-
বামে ঘুরিয়ে না বলে।
—দেখিস না, ও রাতে কাম করে। কালু
বলে।
—হ করে। দিনে কাজ করতে ভালো
লাগে না, তাই রাতে করে। তোমার
দিনে ভালো লাগে, তুমি দিনে
করো।
কালু এবার চুপ হয়ে যায়। ভাবে, সরলমতী
বউটারে কী করে বোঝাবে সব যোগ-
বিয়োগ এত সহজে হয় না। দিন-রাতের
মধ্যে ভালো লাগার সম্পর্ক নেই। বড়
রকমের কিন্তু আছে। যা মুখ ফুটে বলতে
লজ্জাও লাগে, ভয়ও করে। লজ্জা আপন
ভাইয়ের জন্য, যে বাপ-দাদার পেশার
সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
ভাইয়ের এই নষ্টামিতে তার হয়তো
কিছুই করার নেই। লালু যাদের কাজ
করে, তাদের সম্পর্কে কোনো কথা বলা
তো দূরে থাক, ইঙ্গিতে কিছু বলার
সাহসও এই তল্লাটে কারও নেই। তবুও সে
চেষ্টা করেছিল, পেরে ওঠেনি।
অনেক কষ্ট করে শুধু নিজেকে
বাঁচিয়েছে। দেখতে ছোটখাটো,
দুর্বল প্রকৃতির মনে হলেও ভেতরে ভেতরে
কালুর রয়েছে বেজায় সাহস। জীবন
বাজি রাখার মতো জেদ। কালুর নিজস্ব
একটা অহংকার রয়েছে, তা হলো শত
হুমকি আর প্রলোভনেও তার স্বভাব নষ্ট
হয়নি। নিজের পেশার সততা বিসর্জন
দেয়নি। হয়তো কখনো কখনো তাকে
কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে, মিথ্যে
বলতে হয়েছে। কখনো বা নিশ্চিত মৃত্যুর
মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। জীবন
বাঁচানোর প্রয়োজনে ডাঁহা সত্যকে
আড়াল করতে হয়েছে। আজ হাতুড়ির
ডামাট নষ্ট, হাপর নষ্ট। কাল হাইতিন
খারাপ, কয়লা নেই। পরশু পানির ডিব্বা
ফুটো, চিমটা খুঁজে পাচ্ছে না।
কিংবা শরীর খারাপ, কাজের চাপ
ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যখন কূলকিনারা
পাননি, তখন সরাসরি বলেছেন, আপনারা
আমাকে মারলে মারেন, আমি এই অন্যায়
কাজ করতে পারব না। দু’দিন আগে আর
পরে মরতে তো হবেই। আপনারা আমায়
মাইরা ফালান, তবু এ কাজ করতে পারব
না। চেয়ারম্যান সাবকে কইছি,
আপনাদেরও কচ্ছি।
দলের নেতা কাটা রাইফেলটা কালুর
কপালে ধরে তারপর হুংকার দিয়ে ওঠে,
কুত্তার বাচ্চা, দিব এফোঁড়-ওফোঁড়
কইরা। বক্তৃতা মারস। বক্তৃতা তোর
জায়গামতো হাঁদাইয়া দিব। এই কাজ
করলে তুই কত টাকার মালিক হবি, জানস।
টাকা নিবি, কাজ করবি, এর আবার
বাছবিচার কেন রে হারামির পো?
এরা যে এসব পারে, কালুর তা অজানা
নয়। তবু কালু অন্যায়ের কাছে মাথা নত
করেননি।। যার মধ্য দিয়ে সাধারণ
একজন কামারের সততার জয় হয়েছে,
নাকি কতিপয় মন্দলোকের ভীরুতা,
কাপুরুষতা পরাজিত হয়েছে, তার গূঢ়ার্থ
কালুর জানা নেই। তার দুঃখ একটাই, যে
কাজ সে জীবন বাজি রেখে ছুঁড়ে
ফেলেছে, সেই কাজ করছে তার মায়ের
পেটের ভাই। আচ্ছা এক গাছে কি দুই রকম
ফল ধরে? অর্থ কি সবই পারে? ভয়
দেখালেই কি কেল্লা ফতে হয়ে যায়?
তাহলে কি একদিন বন্দুকের নলের মুখে
আমগাছে আম নয়, আতা কিংবা মাকাল ফল
ধরা শুরু হবে?
সন্ধ্যা পেরিয়ে ঘণ্টাখানেক রাত
হয়েছে। খেতে বসেছে কালু, কালাম ও
তার বউ। এ সময় বিউটি এসে হাজির। বড়
মা, বড় মা বলেই চাচীকে জড়িয়ে
ধরে। এই মেয়েটি সবার চোখের মণি।
বিউটির কারণেই কালু আর লালুর
পরিবারের মধ্যে কোন বিরোধ দানা
বাঁধতে পারেনি। বিউটিকে দেখলে
সব রাগ-অভিমান বানের জলের মতো
দূরে কোথাও চলে যায়। পারেও
মেয়েটা। সবার ভালোবাসা উজাড়
করে নিজের দিকে টেনে নিতে। দুই
ভাইবোনে আবার গলায়-গলায় ভাব।
সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকে। ঠিক যেন
ছায়ার মতো। আদুরে ভঙ্গিতে বলে—বড়
মা, কালাম ভাই আজ আমাদের সঙ্গে
খাবে। মা বলেছে। বলতে বলতেই
একপ্রকার জোর করেই কালামকে ধরে
নিয়ে যায়। ওরা খাওয়া শুরু করে।
—জানো, গতকালও নাকি লালুর
দোকানে পুলিশ এসেছিল।
—সে তো মাঝে মাঝে আসেই।
—আচ্ছা, পুলিশ কেন আসে? লালুর কি
পুলিশের সঙ্গেও ভাব? কিছু দিতে আসে
তাই না?
কালু বুঝে পায় না তার বউয়ের মাথায়
ঘিলু বলে আদৌ কিছু আছে কি না।
আড়ালে-আবডালে থেকেও কি সে কিছু
শুনতে পায় না? পুলিশ যে দিতে নয়,
নিতে আসে তাও কি সে বোঝে না?
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে কালু বলে—
—ভাবছি কালামকে একটা সাইকেল
কিনে দেব। স্কুলে যেতে সুবিধা হবে।
ওর একটা সাইকেল সত্যি সত্যি দরকার।
বিউটিও যেতে পারবে, দুই ভাইবোন
একসঙ্গে যাবে-আসবে, নাকি বলো?
—মুখে মুখেই দিবা, না একটা ব্যবস্থা
করছ?
—করতে পারিনি। তয় এবার ফসল ভালো
হইছে। কাজকাম ভালোই হবে বলে মনে
হইছে।
লালুর ঘরে কালাম আর বিউটি খেতে
বসেছে। ছোট চাচী খাবার তুলে
দিচ্ছে। লালু তখনো কামারশালায়। আজ
অবশ্য বেশিক্ষণ থাকবে না। কারণ আজ
ওরা বেরোবে। আগে থেকেই এলাকার
সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অলিখিত একটা নিয়ম কায়েম হয়ে আছে
এই এলাকায়, ওরা বেরোলেই
স্বাভাবিক কাজ বন্ধ। এমনকি ভবনন্দিয়া
গ্রামের কোনো বাড়িতে বাতি
কিংবা হারিকেনও জ্বলে না।
খেতে খেতে বিউটি বলে, আজ কিন্তু
আমরা সারা রাত জেগে থাকব।
ভাইয়ার ছবি আঁকা দেখব। যা সুন্দর ছবি
আঁকে না ভাইয়া!
—ক্যান, রাত জাগা ক্যান, কাল স্কুল
যাবি না।
—কাল স্কুল ছুটি। শুক্রবার না?
ওদের দুজনের পাশাপাশি বসে ভাত
খাওয়া দেখে অদ্ভুত একটা ভাবনা
মাথায় আসে লালুর বউয়ের। আচ্ছা,
কালামের সঙ্গে বিউটির বিয়ে দিলে
কেমন হয়! ঘরের ছেলেমেয়ে ঘরেই
থেকে যায়। ছেলে হিসেবে কালাম
তো মন্দ না। কলেজ পাস দিয়ে চাকরি
পেলেই ওদের বিয়েটা দেওয়া যায়।
আচ্ছা, কালামের বাপ-মায়ের কি এই
বিয়েতে আপত্তি থাকবে? থাকবেই বা
ক্যান, আমাদের ধন-সম্পদ কি কম? সবই তো
বিউটির জন্য। ওর বাপও তাই বলে। এই
বাড়িঘর, জায়গা-জিরাত, ব্যাংকের
টাকা-পয়সা সব নাকি বিউটির।
মেয়ের প্রতি টান দেখে আমিও
মাঝেমাঝে অবাক হই। একদিন ওর বাপ
তো মুখ ফসকে বলে ফেলে, হ, আমি
রাতের অন্ধকারে অস্ত্র বানাই।
নিষিদ্ধ দলগুলোর ব্যবহারের জন্য অস্ত্র
বানাই। তাতে হইছে কী? আমি তো
চুরি করছি না। কারও কিছু জোর করে
দখলও করছি না।
খারাপ মানুষের যুক্তিগুলোও যে
খারাপ, লালুর কথায় তার গন্ধ পাওয়া
যায়। তবুও সে বলে, আমি যা কিছু করছি
আমার মেয়ের জন্য করছি। আমার
মেয়েকে আমি সুখী দেখতে চাই। ওর শখ-
আবদার পূরণ করতে চাই। যা করতে টাকা
লাগে। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। আমি
সেই টাকা দু-হাতে কামাইছি।
কীভাবে করছি সেটা দেখার সময় নেই
আমার। নেই কোন মাথাব্যথা ।
উদ্ভ্রান্তের মতো লালু কথাগুলো বলতে
থাকে। বউ সাবধান করে, চুপ করো
দেয়ালেরও কান আছে।
রাতের অন্ধকার বেশ জেঁকে বসেছে।
পুরো গ্রাম জুড়ে অন্ধকার। সবাই ঘুমিয়ে
পড়েছে। কিংবা ঘুম না আসলেও জোর
করে শুয়ে আছে। কারণ এই গ্রামে আজ
স্বাভাবিক কাজ বন্ধ।
তবুও জেগে আছে কালাম ও বিউটি। ওদের
ঘরের হারিকেনও জ্বলছে। দুজন ছবি
আঁকায় মগ্ন। এর মাঝেই ওদের হাঁটার শব্দ
শোনা যায়। ওরা এগিয়ে আসছে।
নিশানা আজ কোথায় কে জানে? কার
কাছে চিঠি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে
রেখেছে তাও জানা নেই। সে কি
দূরের কেউ? এই গাঁয়ের নাকি পাশের
গাঁয়ের? আস্তে আস্তে শব্দটা কাছে এসে
আবার দূরে চলে যায়। কালাম ঘুমাতে
যাওয়ার আবদার করে বিউটির কাছে।
কিন্তু তাতে কান দেয় না সে। বলে,
ঘুমাতে যেতে দিতে পারি, একটা নতুন
বউয়ের ছবি আঁকো। লাল শাড়ি পরা বউ;
চোখে কাজল দিয়ো। আচ্ছা ভাইয়া,
নতুন বউ কি কপালে টিপ দিতে পারে?
যদি পারে তাহলে বড় একটা টিপ
দিয়ো। আঁকো না ভাইয়া, একটা নতুন
বউয়ের ছবি। এই আমি চোখ বন্ধ করলাম।
ওরা হেঁটে ভবনন্দিয়ার একেবারে শেষ
প্রান্তের মোড়ে গিয়ে উপস্থিত হয়।
ওখানে বস আগে থেকেই অপেক্ষা
করছিল। এই বস কখন, কোথা থেকে,
কীভাবে যে উপস্থিত হয়, তা দলের
লোকজনও বলতে পারে না। হাওয়ার
মধ্যে যেন মিশে থাকে। এই আছে, এই
নেই। একজন হঠাৎ বসের কাছে নালিশ
করে বসে।
—বস, গ্রামের কোনো বাড়িতে আলো
না জ্বললেও একটা বাড়িতে কিন্তু ঠিকই
জ্বলে। আগেও দেখছি, আজও দেখলাম।
—কার বাড়ি?
—লালু কামারের বাড়ি।
বস সজোরে হেসে ওঠে। এ রকম হাসির
সঙ্গে দলের সবাই পরিচিত নয়। যেমন
দলের অনেকেই জানে না, তাদের
বেশির ভাগ অস্ত্রের জোগানদাতা
হলো লালু কামার। বস জানায়, তাদের
হাতে যেসব মাল রয়েছে, সেগুলো
লালুর বানানো। ওর মাল বিদেশি
মালের মতোই, কোনো ডিস্টার্ব দেয়
না। কিন্তু পাত্তি লাগে কম। লালু
আমাদের লোক। ওকে নিয়ে মাথা
ঘামানোর দরকার নেই, জায়গামতো
মাথা ঘামাও। আজ অপারেশন ক্যানসেল
করা হয়েছে। যে যার দল নিয়ে ফিরে
যাও। ওরা তাই করে। কিন্তু লালু
কামারের বাড়ির কাছে এসে কৌতূহল
বেড়ে যায়। কারণটা কী, এই বাড়ির
একটা ঘরে সব সময় কেন হারিকেন জ্বলে?
বস এই নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ
করলেও ওরা নিশ্চিত হতে পারে না।
চুপিসারে ব্যাপারটা দেখার
সিদ্ধান্ত নেয়।
বিউটি চোখ খুলে আকাশ থেকে পড়ে।
—ওমা, এ কী করছ। এ তো দেখছি আমার
ছবি। আমি কি বউ নাকি? তুমি আমার
ছবি কেন আঁকছো!
দুজন কিশোর-কিশোরী হয়তো জানেও
না স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের রসায়ন।
কিংবা ভালোবাসার রং কেমন।
ভালোবাসলে কতটা কাঁদতে হয়। কতটা
পুড়তে হয়। কিছুাই হয়তো ওদের জানা
নেই। তবুও ওদেরই অজান্তে হয়তো একটা
স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে। কালাম হঠাৎ
বলে,
—বিউটি, তুই আমার বউ হবি?
বিউটি একবার বলতে যায়, হব। লাল
টুকটুকে শাড়ি পরা, কপালে টিপ পরা,
চোখে কাজল দেওয়া বউ। কিন্তু কিছুই
বলে না। কেননা বিউটি ভেতরে
ভেতরে নারী হয়ে উঠেছে, তার দেহ-
মনেও নারীর ষোলকলার বীজ উপ্ত
হয়েছে। চরমপন্থী দলের সদস্যরা কখন
এসে চাপানো দরজার ফাঁকে চোখ
রেখেছে তার কিছুই বোঝেনি কালাম
ও বিউটি। চুপিসারে এসেই চুপিসারেই
বিদায় নিতে চায়। কিন্তু তা আর সম্ভব
হয় না। কালাম ‘কে ওখানে’ বলে এক
প্রকার চিৎকার করে ওঠে! আর সঙ্গে
সঙ্গে ওরা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে। কিন্তু
তাতে কালাম যেন একটুও ভয় পায় না।
ওরা ‘চুপ, একদম চুপ’ বলে ইশারা করে
বেরিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায়
বিউটি একেবারে নির্বিকার হয়ে
পড়ে। শুধু চেয়ে থাকে। কালাম বলে,
বুঝছিস বিউটি, পুলিশে খবর দিয়ে এই
শালাদের উড়িয়ে দেওয়া দরকার। অবশ্য
পুলিশকে না বলে র্যাবকে বলাই
ভালো। শালাদের শায়েস্তা করা
দরকার। শালারা সব বেজন্মার বাচ্চা।
অনেকটা ছোট মুখে বড় কথা বলার মতো
কালাম এসব বলে। এটা যৌবনের
অভিষেক বিপ্লব, নাকি কালুর রক্তের
তেজস্বীতা, তার সুরাহা হওয়ার আগেই
কথাগুলো শুনে দৌড়ে ঘরে চলে আসে
চরমপন্থী দলের একজন। গুলি করতে যায়
কালামকে। পাশে থাকা একটি লাঠি
দিয়ে আঘাত করে কালাম। কিন্তু তার
আগেই ট্রিগারে চাপ লেগে বেরিয়ে
যায় গুলি। এবং বিউটির বাম পায়ের
ঊরুতে গিয়ে লাগে। দৌড় দেয় সবাই।
পড়ে থাকে অস্ত্রটা। গুলির শব্দে ঘুম
ভাঙে সবার। ততক্ষণে ভোরের আলো
ফুটতে শুরু করেছে। জমায়েত হয় এলাকার
লোকজন। কারও বুঝতে বাকি থাকে না
কী থেকে কী হয়ে গেল। সবাই মিলে
বিউটির নিথর দেহটা উঠানে এনে
রাখে। একটা সাদা চাদরে ঢেকে
দেওয়া বিউটিকে মনে হচ্ছে, ও যেন আজ
ইচ্ছে করে সাদা শাড়ি পরেছে।
বোকা মেয়ে কি জানে না এত
তাড়াতাড়ি সাদা শাড়ি পরতে নেই?
লালু বিউটির ঘরে গিয়ে ওদের ফেলে
যাওয়া অস্ত্রটা হাতে করে বিউটির
পাশে বসে থাকা বড় ভাই কালুর কাছে
আসে। তারপর কালুকে জড়িয়ে ধরে
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। কালুর তখন
মনে পড়ে ছোটবেলায় ভয় পেয়ে
এভাবেই কেঁদে উঠত লালু। তবে সে
কান্না একটু পরই থেমে যেত। আজ থামছে
না। কাঁদতে কাঁদতে বলে: ভাই, এই
অস্ত্রটা আমার বিউটিরে শেষ করছে। এই
অস্ত্রটা। ভালো করে দেখ ভাই। এই
অস্ত্রটা। কিন্তু তোমরা কি জানো? এই
অস্ত্রটা আমি বানাইছি।
চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেল এসে
ওদের বাড়ির সামনে থামে। লালুর
আর্তনাদ সেও শুনতে পায়। সাহস হয় না
ভেতরে যাওয়ার। মোটরসাইকেল স্টার্ট
দিয়ে ফিরে যায়। লালু কাঁদতেই
থাকে। তার কান্না আর আক্ষেপ যেন শেষ
হয় না। আকাশে-বাতাসে সে কান্না
ছড়িয়ে পড়ে। এ যেন কান্না নয়, একটা
মানুষের এক জীবনের আর্তনাদ। আমি সেই
পিতা, যার বানানো অস্ত্রে তার
কন্যা খুন হইছে। আমিই খুনি। হা-হা-হা,
আমি আমার মাইয়ারে খুন করছি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×