somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশ শতকের বৃক্ষ -নিমগাছ

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রকৃতির অমূল্যদান দান বৃক্ষ ।এই বৃক্ষ জীবন
রক্ষা করে আবার সাজায় । সেকারনে
বলা যায় বৃক্ষ মানবজাতির সাথে
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।আর বৃক্ষ রক্ষা
মানে নিজেদের জীবনকে রক্ষা।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়, মাটিকে
শীতল রাখতে গাছপালার জুড়ি নেই।
বৃক্ষরাজি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে
বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে
বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাতাসের
বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ
করে। দিনের বেলায় অক্সিজেনের
বৃদ্ধি ঘটায়। তাছাড়া ছায়া প্রদান
ছাড়াও জ্বালানি, আসবাবপত্র, গৃহ
নির্মাণসামগ্রী ও পরিবেশের
সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় উদ্যান
হিসাবে চিহ্নিত করতে বৃক্ষরা
তুলনাহীন। বৈশ্বিক উষ্ণতায় আমাদের
পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
প্রাকৃতিক নিয়মকে উপক্ষো করে আমরা
প্রতিদিন উল্লাসের সাথে বৃক্ষনিধন
করে চলেছি। এই বৃক্ষরাজি আমাদের কত
উপকারে আসে তা আমরা কখনই ভেবে
দেখিনা। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য
বিশুদ্ধ অক্সিজেন দরকার। আর এই
অক্সিজেনের একমাত্র আধার হলো বৃক্ষ।
বৃক্ষরাজির মধ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের
জন্য নিম বৃক্ষের মত এত উপকারী বৃক্ষ
অদ্যাবধি আবিস্কৃত হয়নি। নিমের
নানাবিধ গুণাগুণের কথা বিবেচনা
করেই বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা নিমকে "একুশ
শতকের বৃক্ষ" বলে ঘোষণা করেছে।
মানবজাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক
উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো সুস্থ
জনগোষ্ঠী। আর এই সুস্থ জনগোষ্ঠীর
জন্যে প্রধান প্রয়োজন নির্ভেজাল
খাদ্য এবং নিরোগ স্বাস্থ্য। নিমকে
বলা হয় "প্রকৃতির দাওয়াখানা"। যার
দ্বারা ফসলের কীটপতঙ্গ এবং
প্রাণীকুলের রোগ দমন করা সম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা
নিম গাছকে বলেছেন— "A tree for saving
Global Problems"। ভারতে অসংখ্য শিল্প
কারখানা গড়ে উঠেছে— নিমভিত্তিক।
যা হতে তারা নিজেদের প্রয়োজন
মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে আয়
করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অনেক
মানুষের। সৌদি আরবের মত দেশও
রোপণ করেছে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার)
নিম গাছ। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও
নিম সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের
দেশের আবহাওয়া নিম চাষের জন্য বেশ
অনুকূল। বহুবিধ গুণ এবং পরিবেশবান্ধব
হওয়ায় নিম গাছ আমাদের দেশের জন্য
কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে
না। নিমের ব্যাপক বিস্তার এবং
নিমভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে
উঠলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের
সৃষ্টি হবে অন্যদিকে নিম জাতীয় দ্রব্য
দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশে
রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জন করা সম্ভব, যা আমাদের অর্থনীতির
জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে।
বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিগত কয়েক
বছরে সারাদেশে প্রায় কয়েক কোটি
নিমের চারা লাগানো হয়েছিল।
ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতায় নগরীর যে
সৌন্দর্যবর্ধন কর্মসূচি শুরু হয়েছিল তার
একটি বড় অংশই ছিল সড়কদ্বীপ ও খোলা
জায়গাগুলোতে বৃক্ষ রোপণ। যদিও এর
বেশিরভাগ নিম বৃক্ষই বেঁচে নেই।
যেসব প্রতিষ্ঠান সৌন্দর্যবর্ধনের
দায়িত্ব নিয়েছিল তারা সেগুলোর
পরিচর্যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন
করেনি। এছাড়া মানুষজনও সহায়তা
করেনি। রাস্তা পারাপারের জন্য
"পথচারী পারাপার" ব্যবহার না করে
সড়কদ্বীপের নিরীহ গাছগুলোকে
নিষ্ঠুর পায়ে মাড়িয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে
রাস্তা পার হয়েছে। যাইহোক,
ইদানিং সড়কদ্বীপগুলোতে কাঁটা
তারের বেড়া আর নানাবিধ গাছের
সমারোহ সত্যিই মন কাড়ে।
সড়কদ্বীপগুলোর গাছের ছায়া আর
অক্সিজেনযুক্ত নির্মল বায়ু ইট-পাথরের
গড়া শহরের মানুষের অন্তরে অনেক
প্রশান্তি এনে দেয়। এখন থেকে
আমাদের শপথ নিতে হবে নিম গাছ
লাগাবো, গাছের পরিচর্যা করবো।
এতে শহরের সৌন্দর্য আর পরিবেশের
স্নিগ্ধতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। কল্পনায়
একটু ভাবুন, সড়কদ্বীপগুলোতে
সারিবদ্ধভাবে সমান দূরত্বে একের পর
এক নিম গাছ লাগান আছে, কেমন
লাগবে? নিশ্চয়ই সৃষ্টি হবে প্রকৃতির অপরূপ
সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় কানন। নিম
গাছ খুলে দিতে পারে বাংলাদেশের
মত নিম্নআয়ের উন্নয়নশীল দেশের
অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দ্বার।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকায়
যোগ হতে পারে নতুন আরো একটি
দেশীয় পণ্য যা প্রচুর পরিমাণে
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে।
আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিম
দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের ওষুধ,
কসমেটিকস ও টয়লেট্রিস।দিন দিন এইসব
নিমসামগ্রীর মৌলিক উপাদান
বিশেষ করে বীজের চাহিদা বাড়ছে,
ফলে বীজ সংগ্রহ ও প্রসেসিং-এর
ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান-এর
সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া নিমই
একমাত্র গাছ যা থেকে
বাণিজ্যিকভাবে বায়ো-কীটনাশক
প্রস্তুত হচ্ছে যা পরিবেশবান্ধব।
নিম গাছ সৃষ্টিকর্তার এক উত্তম দান।
যেখানে নিম গাছ আছে সেখানে
অনেক প্রকার বায়ুবাহিত রোগ-ব্যাধি
মুক্ত থাকে। নিম গাছকে বিজ্ঞানীরা
আগামী শতকের মহামূল্যবান বৃক্ষ
হিসাবে চিহ্নিত করেছেন আর বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা নিম গাছকে গ্রাম্য
ডাক্তার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ।
আয়ুর্বেদিক ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ নিমগাছ
আমাদের অনেক উপকার করে থাকে।
নানা রোগের উপশমের জন্য নিমগাছের
নানা অংশ কাজে লাগে।আমাদের
দেশের অনেক মানুষ নানাবিধ রোগে
নিমের ছাল ও পাতা ব্যবহার করে ।
কৃর্মি, যকৃত ব্যথায়, জন্ডিস রোগ, চমরোগ,
অর্জিণরোগ ও ডায়াবেটিস রোগ সহ
বিভিন্ন রোগে নিম গাছ ব্যবহার হয়ে
থাকে ।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন
নিম গাছের ছায়া অত্যন্ত সুশীতল এবং
পরিবেশ রক্ষায় এর জুড়ি নেই। বিশুদ্ধ
বাতাসের জন্য আমরা প্রচুর পরিমানে
নিমগাছ লাগাতে পারি। বিশেষ করে
স্কুল কলেজের আঙ্গিনার ফাকা জায়গায়,
রোড এন্ড হাইওয়ের দুপাশে সারি
সারি নিমগাছ লাগানো যেতে
পারে। শহরের শ্রীবর্ধনেও নিম গাছের
বিকল্পনেই। ঝড় বন্যা খরাসহ অন্যান্য
প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের পাশে
নিমগাছ থাকলে এর প্রকোপ অনেকটাই
কমে আসবে। নিমগাছের কাঠও খুব শক্ত
এবং সুন্দর আসবাবপত্র তৈরী করা যায় ও
তা টেকসই হয়। বিজ্ঞানের নানা
আবিস্কারে আমরা জানতে পারছি
রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরী ওষুধে
আমাদের রোগ হয়তো সাময়িক সেরে
যায় কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেই
যায়। কিন্তু ভেষজ চিকিrসায় ব্যবহৃত
গাছপালার নির্যাস মানব দেহের জন্য
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং খুবই
উপকারী। তাই নিম গাছ লাগানোর
ক্ষেত্রে সরকারসহ সকল স্তরের
লোকজনকে আরো স্বতস্ফূর্তভাবে
এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সৌন্দর্যের
লীলাভূমি হিসেবে এ দেশ হবে বিশ্ব
দরবারে নন্দিত। তাই আজই আপনি
সিদ্ধান্ত নিন অন্তত একটি নিমের
চারা আপনার হাত দিয়ে লাগানো
হবে, তার পরিচর্যা হবে। দেখবেন
একদিন আপনার লাগানো গাছটি ধীরে
ধীরে বড় হবে।থাকবে আপনার র্কীতি ।
দেবে সুশীতল ছায়া। সুন্দর হবে
আমাদের বসুন্ধরা ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×