somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনার নায়কঃ রুহুল আমিন সরকার ঘটনার সময়ঃ ১৯৫৮ সাল

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনার নায়কঃ রুহুল আমিন সরকার
ঘটনার সময়ঃ ১৯৫৮ সাল
রুহুল আমিন সরকারের নিজের মুখে
শুনুন………
তখন আমার বয়স প্রায় ১৮। আমি ছোটকাল
হতেই বেশ ফুরতিবাজ ছিলাম, বাড়ির
ছোট
ছেলে হউয়ায় আমার কোন কাজেই
কোনদিন
কেও বাধা দেয়নি। আমার একটি
ঘোড়া
ছিল,
তার নাম মানিক। আমি মানিক কে
নিয়ে
দূরদুরান্ত ঘুরে বেড়াতাম আর গান-
বাজনা
এবং যাত্রার প্রতি ছিল আমার
দুর্নিবার
আকর্ষণ।
একদিন কগবর পেলাম দেওয়ানগঞ্জে
যাত্রা
দল এসেছে, আমি সকাল সকাল বেরিয়ে
পড়লাম। বিকালের পর আমি যেয়ে
পৌঁছাই।
সন্ধার পর জাত্রার আশর বসে, শেষ হয়
অনেক
রাতে। আমি যাত্রা শেষে মানিক কে
নিয়ে
আবার বকশিগঞ্জ পুবের পাড়ার উদ্দেশে
রউনা
দেই। আমি যখন পল্লাকান্দি তখন রাত
আনুমানিক ১০ টা বা তার আশেপাশে।
তখন
নিঝুম রাত, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ নীরব।
শুধু
মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর
রাতের আকাশের নাম না জানা
পাখির
আর্তনাদ। কখনও কানে আসে হুতুম পেঁচার
ডাক।
পরিবেশটা মোটেও সুখকর নয়, তবে আমি
ছিলাম শিক্ষিত এক সাহসী জুবক, গ্রাম্য
কুসংস্কার কখনই মনে দানা বাধতে
দিতাম
না,
তাই নদীর পাড় ধরে এগিয়ে গেলাম
নৌকার
সন্ধানে। ঘাঁটের শেষ মাথায় একটি
নৌকা
পেলাম, নৌকায় মানিককে নিয়ে
উঠলাম।
আমার সাথে নৌকায় আরোহী মাত্র
একজন,
আর নৌকার মাঝি। আমি, মানিক,
সাথের
জাত্রি আর মাঝি ছাড়া মনে হয়
আশেপাশের
এলাকায় আর জীবিত কোন প্রাণী নেই।
হটাত
মাঝি বলে উঠে, ভাইজান আপনাকে
দেখে
তো মনে হয় বড় ঘরের ছেলে, তবে এত
রাতে
এখানে কি করেন, কই যাবেন ? আমি
তাকে
সব
খুলে বলি আর তার জবাব, এত রাতে
যেয়েন
না। বিপদ হবে।
আমি হেসে ফেলি, আর বলি, কোন
ডাকাতের
সাহসে কুলাবেনা আমার নাম শোনার
পর
আর
আমাকে আটকাবে।
তখন আমার সাথের আরোহী বলে উঠলো,
ভাই
ডাকাততো মানুষ, আমরা যে বিপদের
কথা
বলছি তা ঠিক মানুষ না।
আমি হেসে বললাম যে এসব আমি বিশ্বাস
করিনা। তখন তারা বলল, ভাই তাও
যেয়েন
না,
আমাদের বাড়ি কাছেই, রাতটি কাটান
আর
সকালে যেয়েন, পথে জন্তু-জানোয়ার
তো
থাকতে পারে। আমি বললাম, আমার
যেতেই
হবে।
এরপরও তারা সাবধান করে দিলো আর
বলে
দিলো সারমারা বাজার থেকে
বামের
রাস্তায় উঠতে, ডানে না যেতে কারন
ওই
রাস্তা জঙ্গল এলাকার ভিতর। কথাটা
আমারও
মনে ধরলো। আমি নৌকা থেকে নেমে
আবার
রউনা দিলাম।
রাত আনুমানিক ১টা। তখন আমি
সারমারা
বাজারে, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ বিরান
ভুমির
মত দেখাচ্ছে। কোথাও বিন্দু মাত্র
জীবনের
চিহ্ন নেই, পোকামাকড় কিংবা
পাখিরও
শব্দ
নেই, যেন সমস্ত এলাকাটাই মারা
গেছে।
আমার তখন খুব খারাপ অবস্থা, মানিকেরও
পানি দরকার। আমি খেয়াল করলাম ওই
ডান
পাশের রাস্তাতেই বেশ দূরে একটা
বাড়ি
দেখা যাচ্ছে যার আঙ্গিনায় আগুন
জলছে।
আমি আশা নিয়ে ওদিকে গেলাম। কিন্তু
মানিক আমার সাথে এগোতে চায় না।
এমন
তো হউয়ার কথা না, মানিক কখনও এমন
করেনা,
ছোট একটা বাচ্চা অবস্থা থেকে ওকে
বড়
করেছি, কখনও আমার অবাধ্য হয়না, তবু আমি
ওকে রাস্তায় রেখেই হাঁটা দিলাম।
বাড়ির
আঙিনায় এসে দেখি এক অগ্নি কুণ্ড
জলছে,
যেন কেও আগুন তাপানোর জন্য খরে আগুন
দিয়েছে। এক মহিলাকে দেখলাম, সেই
আগুনের আলোয় মাটিতে বসে হাড়ি
পাতিল
মাজছে। নিল শাড়ি পড়া, দেখেই
বোঝা
যায়
নতুন বউ কারন তার মাথায় ঘোমটা
দেয়া।
একটু
অবাক লাগলো কারন এত রাতে কেও
উঠানে
আগুনের আলোয় হাড়ি-পাতিল মাজে না
আর
বাড়িতে অন্য কোন লকেরও আনাগোনা
দেখছিনা।
আমি একটু কাছে যেয়ে বললাম
“খালাগো
আমাকে একটু পানি দিবেন, আমার আর
আমার
ঘোড়ার জন্য”
সে পাতিল মাজা বন্ধ করে দিলো, আর
চুপ
হয়ে থাকলো, আমি আবার কাছে যেয়ে
বললাম, ও খালা শুনেন না?
তখন সে ধীরে ধীরে আমার দিকে
চাইলো……
আমি যা দেখলাম, তা… ।
ঘোমটার ভিতর কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার,
শুধু
দুটো রক্ত লাল চোখ আর মুখের গহব্বর
থেকে
এক হাত লম্বা জিভ ঝুলছে। সেই জিভ
নড়েচড়ে
উঠলো আর বের হয়ে এলো এক আঙ্গুল
সমান
লম্বা দুইটা শ্বদন্ত।
আমার দিন দুনিয়া আধার হয়ে এলো,
কিন্তু
টোলে পড়ার আগে শেষ মুহূর্তে মনে
হোল,
বাঁচতে চাইলে পালাতে হবে। আমি
ঘুরে
দৌর দিলাম রাস্তার দিকে, আর পিছন
থেকে
শুনতে পেলাম এক জান্তব আর্তনাদ
মিস্রিত
চিৎকার।
মানিকের কাছে পৌঁছে ওকে সামনের
দিকে
টান দিলাম, কিছুটা রাস্তা পাড়
হউয়ার পর
দেখি মানিক থেমে গেলো। চারজন
মানুষ
আসতে দেখলাম একটু মৌলানা গোছের।
তারা কাছে এসে আমাকে দেখে বলল
ভাই
আপনি সরকার সাহেবের ছেলে না ?
এই অন্ধকারে কিভাবে চিনলো
আমাকে,
তা
ঠিক বুঝলাম না কিন্তু বললাম, হ্যাঁ।
তাদের সব খুলে বললাম আর তারা আমাকে
সঙ্গে করে নিয়ে গেলো। একটা
দেয়াল
ঘেরা
বাগান টাইপ এলাকার কাছে এনে
আমাকে
বলল আপনি এই গেট দিয়ে ভিতরে যান, ওই
গাছের নিচে বসে বিস্রাম নেন। ভয়
পাবেননা, এখানে আপনি নিরাপদ। আর
আমরা
আপনার থাকার বেবস্থা করে আসছি,
আমরা
ছাড়া অন্য কেও এসে যদি আপনাকে
ডাকে,
তবে বের হবেন না।
এটা বলে তারা চলে গেলো আর আমি ওই
গাছের নিচে যেয়ে বসে পড়লাম। কখন
যে
ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারবোনা। ঘুম
ভাঙলো
ফজরেরআজান শুনে, তখন ভোরের হালকা
আলো ফুটেছে, আমি দেখলাম কাছেই
মসজিদের ছাদে মুয়াজ্জিন আজান
দিচ্ছে
আর
সেখান থেকে হতবাক নয়নে আমাকে
দেখছে।
মানিককে দেখলাম দিব্বি ঘুরে
বেড়াচ্ছে।
আমি আগের রাতের ঘটনা মনে করছি আর
কিছুক্ষণ পর দেখি ওই মুয়াজ্জিন আমার
কাছে
এসে পড়লো।
আমাকে জিগ্যেস করলো আমি কে,
এখানে
কি করছি। সব তাকে বললাম।
শুনে সে গম্ভির হয়ে গেলো আর বলল যে
“প্রথমে যার পাল্লায় পড়েছিলেন সে
প্রচণ্ড
খারাপ এক জিনিস, অন্ধকার জগতের
বাসিন্দা সে। আপনি অল্পের জন্য যানে
বেঁচে গেছেন। ওই উজানতলী জঙ্গল তার
এলাকা, সে উজানতলীর পিশাচ।
সেখানে
কেন গিয়েছিলেন? কিভাবে
গিয়েছিলেন?
ওইখানে তো কোন রাস্তা বা
ঘরবাড়ি
নেই,
সুধুই জঙ্গল। হাঁটা অসম্ভব প্রায়”
আমি বললাম যে কিন্তু আমি যে রাস্তা
দেখে পাড় হয়েছি, আর বাড়িও
দেখেছি।
তখন মুয়াজ্জিন বলল, তা আপনাকে
দেখানো
হয়েছে তাই দেখেছেন।
এরপর সে বলল যে যাদের আপনি পরে
পেয়েছেন, তারা জিন। তবে ভালো,
তারা
এই এলাকার পাহারাদার। আপনাকে
এখানে
এনে রেখেছে, কারন এই জায়গায় শয়তান
ধুক্তে পারেনা। আপনি চারিদিক
তাকিয়ে
দেখেন, এটা কোন বাগান নয়, এটা
একটা
গরস্থান। আর মুসলমানের গোরস্থান খুবি
পবিত্র আর নিরাপদ জায়গা।
আমি চারপাশে দেখলাম যে আসলেই
আমি
একটা গরস্থানের মাঝখানে, এই দিনের
বেলাতেও আমার গায়ে কাঁটা দিলো।
মুয়াজ্জিন লোকটা আমাকে তখনই রউনা
হতে
বলল আর বলে দিলো, অনেকেই পিছন
থেকে
ডাকতে পারে, আমি যেন ফিরে না
দেখি,
এমন কি সে ডাকলেও যেন না তাকাই।
আমি সেখান থেকে বের হয়েই বাসার
উদ্দেশে রউনা দিলাম, কয়েকবার কেও
আমায়
যেন পিছন থেকে ডাকল, কিন্তু ওই
মুয়াজ্জিনের নিষেধ থাকায় আমি পিছন
ফিরে দেখিনি।
বাড়ি এসে আমি নিমপাতা ফুটানো
পানি
দিয়ে গোসল করলাম আর তউবা করলাম,
রাত-
বিরেতে আর বাসা থেকেই বের
হবোনা।।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×