বছরে একবার সেন্ট্রাল মেক্সিকোর পাহাড়ের পাইন বৃক্ষগুলো অপূর্ব কমলা-কালো পোশাকে সজ্জিত হয়। আসল ব্যাপারটি হলো, শীত পরবর্তীকালে কোটি কেটি (প্রায় ৬৫ কোটি) রানী প্রজাপতি পাইন গাছের কান্ডে আশ্রয় নেয়। এসব প্রজাপতির পাখার কমলা আর কালোর অদ্ভুত মিশেল দেখে অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করত, এরা বীরযোদ্ধার অবতার। অ্যাজটেকরা তখন জাঁকাল পোশাকে যুদ্ধ করত।
এসব প্রজাপতির জীবনচক্র বেশ অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর। কারণ কীট জগতের আর কোনো প্রজাতি মাইগ্রেটরি বা পরিযায়ী আচরণ দেখায় না। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ রানী প্রজাপতি উত্তরের দিকে উড়ে যেতে থাকে। মাইগ্রেট করার সময়ে প্রজাপতিগুলো মিল্ক ওয়েড গাছের ওপর ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। এ সময় শুয়োপোকা বিষযুক্ত মিল্ক উইড খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে এবং মিল্ক উইডের বিষ শিকারি পাখিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। শুয়োপোকাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং পরিপূর্ণ হয়ে উত্তরের দিকে মাইগ্রেট করে। গ্রীষ্মের শেষে তাপমাত্রা কমে যায় এবং দিনের আলো পরিপূর্ণ প্রজাপতির আচরণে পরিবর্তন আনে। তারা আবারো দক্ষিণে ফিরে যেতে শুরু করে। পেটে জমাকৃত চর্বি খরচ করে প্রজাপতিগুলো মেক্সিকোতে ৩০০০ মাইল পাড়ি দেয়।
বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, ঠিক কত সংখ্যক প্রজাপতি মাইগ্রেট করে। কারণ তাদের ছোট জীবনকালে এসব প্রজাপতি একবার মাত্রই এই মাইগ্রেট সম্পন্ন করতে পারে। তাই প্রতিবছর যেসব প্রজাপতি মাইগ্রেট করতে আসে তারা বিগত বছরের প্রজাপতিসমূহের পরবর্তী কিংবা পরবর্তী পরবর্তী প্রজন্ম। যেসব প্রজাপতি মাইগ্রেট করতে সক্ষম হয়, তাদের জন্মস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, গাছের কান্ডে খুব অল্প জায়গার মধ্যে অনেক বেশি প্রজাপতি ঘন হয়ে থাকার ফলে তাদের আহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অবশ্য প্রজাপতিরা এভাবে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে থাকার কারণেই প্রকৃতির সুন্দরতম দৃশ্যটি পৃথিবীর মানুষ উপভোগ করতে পারে। তবে শীতপরবর্তীকালে এসব রানী প্রজাপতি দেখতে পাওয়াটা বেশ কঠিন। প্রতিবছর ১০ হাজার পর্যটক, যাদের অধিকাংশ মেক্সিকান পরিবার ও স্কুলের ছাত্রছাত্রী, আংগাঙ্গুয়োর এল রোজারিও আশ্রমে ভ্রমণ করতে যান প্রজাপতিদের এই আশ্চর্য সমাবেশ দেখার জন্য। - See more at: Click This Link