বিদ্যাসাগরের শেষ কুড়ি বছর ছিল নিতান্তই দুঃখময়। যাঁদের জন্য জীবনের প্রায় সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন , আকন্ঠ ডুবে গিয়েছিলেন ঋণে , তাঁদের অধিকাংশই একে একে ওঁর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকেননি। নিজের ভাই হিন্দু প্রেসের স্বত্ব পাওয়ার জন্য শুরু করেছিলেন মামলা। ফলত ঋণ শোধের জন্য বাধ্য হয়েছিলেন সেই প্রেস বিক্রি করে দিতে। প্রথম বিধবা বিবাহকারী শ্রীশ চন্দ্রের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন সাগর পারে মাইকেল মধুসূদনকে বাঁচানোর জন্য। সময়মতো সেই টাকা শোধ না করার জন্য শ্রীশ হুমকি দিয়েছিলেন মামলা করার। নিজের ছেলের দুষ্কর্মের জন্য বাধ্য হয়েছিলেন তাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে। স্ত্রীর সঙ্গেও তৈরি হয়েছিল ব্যবধান। ফলত একটু শান্তিতে থাকার জন্য নিঃসঙ্গ বিদ্যাসাগর শেষ পর্যন্ত কলকাতার তথাকথিত ভদ্র সমাজ ত্যাগ করে বেছে নিয়েছিলেন কার্মাটাড়ে সাঁওতালদের সান্নিধ্য। একবার কলকাতার একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন , পন্ডিত , তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে সাঁওতালদের কাছে ? অশিক্ষিত সাঁওতালরা তোমার এত প্রিয় ?
বিদ্যাসাগর ঋজুভাবে উত্তর দিয়েছিলেন , তোমাদের মতো বিত্তবান আর্য সন্তানদের থেকে আমার অশিক্ষিত সাঁওতালরা অনেক ভালো। তারা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনা।
বই- নিঃসঙ্গ ঈশ্বর (উপন্যাস)
লেখক- সমীরণ দাস
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০০