গ্রিলের টেম্পারেচারটা আরেক বার দেখা দরকার। মাংস পিন্ড গুলো ভালো করে টোস্ট হচ্ছে না।দুটো লোহার পাত চেপে ধরেও লাল রক্ত কালো করতে পারছেনা।কি ভিসন গন্ডোগল বলতো।বাইরে প্রায় বিশ জন কাস্টমারের লাইন।
স্টেটিস্কোপের মত যন্ত্রটা কোয়ার্টার গ্রিলে চেপে ধরে বুঝতে চায় এই তাপমাত্রায় কেন মুখরোচক বার্গার হবেনা? নাহ আবার, আবার চেষ্টা করে আরেকটি মাংসপিন্ড, দুটো লোহার পাতের মাঝখানে রেখে নীল বোতাম চেপে ধরে স্কটিশ। এক সেকেন্ড, দু সেকেন্ড প্রতিক্ষার প্রহর দু মিনিট। তারপর চাপ মুক্ত। মাংস পিন্ড তখনো লাল রক্ত ধারন করছে।
এই হল সমস্যা মৃত মানুষের রক্ত আর গৃহপালিত গরুর রক্ত এক না। দুই চিপায় পরে গরুর রক্ত নিমিশেই কালো হয় আর মানুষের রক্ত লকলক করে জ্বলতে থাকে। ২৭৭ ডিগ্রিতেও লাল রক্ত কালো হয় না। কিন্তু বার্গারের টেস্ট অসাধারন.. মানুষ আর গরুর রক্ত মিলেমিশে একাকার। মৃদু হাসি। চেখে দেখছে স্কটিশ।নাহ নট বেড। পাপাচিনচি মেখে রক্তের স্বাদ আরো উদ্ভাসিত হয়। চোখে এভারেষ্ট জয়ের পরিপূর্নতা।
সেদিন বাবা বলছিল, তোর হবে, আমি বলছি তোর হবে।কষ্টতো অনেক করেছিস।গ্রহ নক্ষত্র বলতে তো একটা কথা আছে।ক্যারিয়ার হতে কত সময় লাগে? একটা ক্লিক একটা ক্লিকই পাল্টে যাবে জীবন। এখন যা তোর কাছে মৃত্যু সমান কালকে তোর ডায়রির পাতা।চিন্তা করিসনা রুদ্র।
আমি নি:শব্দে মুঠো ফোনের লাল বোতাম চেপে ধরলাম।
শান্তিনগর মোরের ঘাম শুকানো রাতটা তেমন বিষাদনা মনে হয়।
কাকারাইল ওভার ব্রিজে সাহা,স্কটিশ মিলে দুটান দিয়ে এসছি। পাতা পোরানো গন্ধ আমার মত রুদ্রেরও নেশা ধরে যায়।
সুমনের চা বানানোর হাতটা খুবই ইশ্বর সমান। চুক চুক করে মাথায় এল বুদ্ধিটা।
স্কটিশকে বলি, কেরানি বাবার টাকায় এই তিরিশ বছরের যৌবনে চারবার বিসিএস ফেল। কি করবি? টিউশনি করে বালছাল সিগারেটের পয়শা উঠেনা।আমি শাক পাতা খাইনা। অথচ তুই খাস আমার ধারের টাকায়। আমি শুধু গন্ধ শুকি। যেমন শুকে ছিলাম সিমুদির জংঘায়।
আমি বলি,একটা কাজ করলে কেমন হয় স্কটিশ? এই ধুনফুন সমাজ ব্যবস্থায় স্ট্রাগল করা মানে হচ্ছে কলিকালের ভন্ডপিরের মাজার। ব্যাবসা শুরু করব শেয়ারে। খাবারের ব্যাবসা। কি বলিস স্কটিশ?
-কিন্তু টাকা কোথায়..আমার অবস্থা তো জানিস।
-হুম জানি,.. তোর আর আমার সিচুয়েশান একিই।
-টাকা জোগাড় করতে হবে
-কিন্তু কি করে? স্কটিশের পাতা মার্কা প্রশ্ন?-
-চল লুটে নিই.. এই শান্তি নগরে চোখ কান খোলা রাখ দেখবি রাস্তা খুলে গেছে.।
-সুমন ছুরিটা দে তো.. একটু পরে দিয়া দিতাছি..তোর দুধের ডিব্বা একঘন্টা চলবোতো?
-সাহা শালা পোতায়া গেছে। এই সাহা চিয়ার আপ ম্যান। কাম অন। কামে যাব। রুদ্র কি জানি ছালের প্লান করছে কাল থেকে বিজনেস শুরু। টাকাও নাকি জোগার হইয়া যাইব। ওঠ। স্কটিশের উচ্ছাস মাখা ধ্বনি।
আমরা লুকিয়ে থাকলাম সিদ্ধেশ্বরির গলিতে। নাদুশ নুদুশ চেহারার লোকটার অক্সিজেনে তখনো পিয়াসির মদের গন্ধ। কি মনে করে সটান ছুরি চালিয়ে দিল সাহা তার নাড়ি ভুরির ভেতরে।দরকার ছিলনা তবুও।
ব্রিফকেসে নগদ তিন লাখ টাকা.. আর পায় কে...
পরবর্তী অংশ.. যখন গরুর বিরিয়ানী রান্না করবেন নিজের হাতটা কেটে কিছু রক্ত মিশিয়ে দিন.. দেখবেন আপনারও নেশা লেগে যাবে বিফ বিরিয়ানীতে.. আমাদের ব্যাবসার সাফল্য এটাই.. মানুষ লাইন ধরে চেটে পুটে খায় শান্তি নগরের বিরিয়ানী। আর প্রতি তিনদিন অন্তর খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় নিখোঁজ সংবাদ.................................
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬