somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নিন্দিত নন্দিনী”

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বহু বছর আগে, অর্থাৎ স্বাধিনতার আগে স্কুলজীবনে দেশ সম্বন্ধে যখন সামান্যই বুঝতে চেষ্টা করছি, তখন থেকেই শাহ্ববাগের মোড় আমার মনে গভীর ভাবে দাগ কেটে গিয়েছিলো।তখন ছিলো ভাষা আন্দোলনের গন জাগরণ। শাহবাগের মোড়(তৎকালীন পি,জ’র মোড়) থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত প্রতিদিন থাকতো উত্তাল। সহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষেনের পর স্থানটি ইতিহাসে জায়গা করে নিল। স্বাধিনতার পর মোড়টি আবার নতুন করে মাত্রা পেল। ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধিনতা যুদ্ধ, এই দুইমিলে তা পেয়েগেলো পর্বতসম দৃঢ়তা। যতদিন এই দেশ থাকবে, পৃথিবী থাকবে ততদিন শাহবাগ মোড় কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে সবার মাঝে, এবং তাই জানান দিবে আমাদের অনাগত সন্তানদের।
কিন্তু, বর্তমান গনজাগরন মঞ্চ; এই শাহবাগ মোড়কে বাঙ্গালীর হৃদয়ে আবারো নতুন করে স্থান করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মহান নেতা ডাঃ ইমরান এইচ সরকার স্থানটিকে চিরদিনের জন্যে বাঙ্গালীদের হৃদয়ে এক “বিপ্লবমঞ্চ” বানিয়ে ভক্তিমার্গ করে দিয়েছেন। বিশ্বের তাবৎ বাঙ্গালী এখন এখানে এসে তাঁদের ইতিহাস ঐতিয্যকে স্বরণ করবেন অনন্তকাল। জাতীয় ক্রান্তিকালে এখানে এসে নতুন করে শপথ নিবেন বারবার। স্থানটিকে নিয়ে আমার ছিল ভীষণ দুর্বলতা। আর সেকথা মনে রেখেই কয়েকবছর আগে, আমার লেখা ‘নিন্দিত নান্দনী’ উপন্যাসটিতে শাহ্বাবাগের মোড়ের একটা সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছিলাম। যা এখন এসে সময়ের সাথে আবার নতুন করে হাত মেলাচ্ছে।
বইটার প্রথম প্রকাশিত সংখ্যার ৪৫ পৃষ্ঠায় এবং দ্বিতীয় প্রকাশ (২০১৪ একুশে বইমেলা) সংখ্যার ৮৪ পৃষ্ঠায় তারই কিছুটা উদ্ধৃতি এখানে উল্লেখ করলামঃ-
“সি এন জি ওটোরিক্সা থেকে শাহ্ববাগের মোড়ে নামলো তারা। এদিকটায় এলেই এই ঐতিহাসিক মোড়ে কিছুক্ষণের জন্যে দাঁড়ায় হানিফ। তাঁর জীবনের এক করুন স্মৃতি এখানে লুকিয়ে আছে। হানিফের শহিদুল চাচা খুব ভালো ছাত্র ছিরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনারা এখানেই তাঁকে গুলিকরে হত্যা করে। এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখার মতো বংশে একমাত্র হানিফ ছারা আর কেউ হয়তো জীবিত নেই। এখানে যখনই আসার সুযোগ হয়, প্রথমেই তিনি ঘৃণাভরে পাকিদের উদ্দেশ্যে একটা নতুন গালী বয়ান করেন। আজ বয়ান করলেনঃ“ বিষ্টাখেকো নরকের কিট, তোদের বিচারের ভার আমি আল্লাহ্ পাকের হাতেই ছেরেদিলাম”। যতদিন এ পৃথিবীতে হানিফ বেঁচে থাকবেন ততদিন এ নাপাকিদের প্রতি ঘৃণা বর্ষণ করে যাবেন তিনি। আর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে টোকাইদের কাছ থেকে কেনা একগুচ্ছ ফুল পথের পাশে রেখে দেন। সবসময় যেমনি করেন; মোড়ের দিকে মুখকরে তার চাচা ও শহীদদের আত্মার শান্তির জন্যে আজো দোয়া করলেন; আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, শানুকে নিয়ে রমনা পার্কের দিকে হাঁটা ধরলেন তঁরা।
হানিফ তাঁর স্মৃতি হাতড়িয়ে শানুকে বলতে লাগলেনঃ ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ছাত্রাবাস একযোগে আক্রমন শুরু করে। সে সময় হানিফের ছোট চাচা অনার্স পড়তেন। থাকতেন মোহসিন হলে। গভীর রাতে হঠাৎ প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হলে, তাঁর চাচা সহ কয়েকজন ছাত্র এদিক দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন কোথাও। কিন্তু এখানে ওৎ পেতেথাকা পাকিস্তানি সেনাদের ব্রাশফায়ারে বেশ কয়েকজন ছাত্রের সাথে শহিদুল চাচাও শহীদ হন। আহত হয়েও বেঁচে যাওয়া তাঁদের গ্রামের এক ছাত্র বাড়িতে এসে এই মর্মান্তিক খবরটি জানিয়ে যায়। হানিফ তখন ক্লাশ সিক্সএর ছাত্র।……..” ।
আনেক আগে লেখা উপন্যাসের এই হানিফ এখন বেঁচে আছেন কিনা জানিনা। বেঁচে থাকলেও এখন তিনি হয়তো পৌঢ়। তিনি’কি এখন শাহ্ববাগে যান ? তাও জানিনা! কিন্তু শাহ্ববাগ মোড়ে গনজাগরণ মঞ্চে অংশ নেয়া প্রতিটি ব্যক্তির চেহারায় পাথর সদৃশ দৃঢ়তা দেখে আমার গল্পের সেই হানিফের কথাই শুধু মনেহয়। যিনি তাঁর চাচার হত্যাকারীদের বিচারের ভার একদিন শুধু আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারন তিনি তখন শঙ্কিত ছিলেন এই ভেবে যে ; এদেশে কোনো দিনই যুদ্ধাপরাধী বিচার হয়তো আর হবেনা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×