এ তো গেল শুধু কাষ্টমার কেয়ারের কথা, এখানেই আমাদের সমস্যার শেষ না আরও আছে। আনেকে মনে করেন সুন্দর করে সাজানো এসি দোকানে বসে আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা কামাচ্ছি! তাহলে আবারও ভুল করছেন। বর্তমানে একটা সংযোগ বা সিম বিক্রী করে মাত্র ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায় যদি গ্রাহক নিজের আত্মীয় না হন। এখন শহর ভর্তি ৪০/৫০ টা মবাইলের দোকান, দিনে ৩টা মবাইল বিক্রী করাও খুব কষ্টোকর হয়ে পড়ে তাও আবার সিটিসেল। আমাদের শুধু চলে যাচ্ছে গ্রামীনফোন এবং বাংলালিংকের সিম ও সেট বিক্রী করে। যেখানে এক একটি সিম বেচে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়, সেখানে এখন একটা সিটিসেল প্যাকেজ বিক্রী করলে মাত্র ৯০ টাকা দিচ্ছে মামুরা। এদের তো আবার কিছু বলা যাবেনা, বললে সিকিউরিটির সব টাকা গেল। আর সব অপারেটারের মত সিটিসেলের ও একটা কমিটি আছে এরা প্রতি বছর একটা করে নতুন মামু কর্মকর্তা ধরে নিয়ে আসে, যাতে করে নতুন নতুন ফন্দি বের করা যায়। গত ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের এখন পর্যন্ত এই নতুন মামুদের উৎপাতে আমাদের মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। এরা প্রতি মাসে একটা করে নতুন নিয়ম বাহির করে, সিটিসেলের সাথে ব্যবসা করতে হলে বা ব্যবসা করতে চাইলে এই সব নিয়ম মেনে চলতেই হবে। টাইলস বিছান টিপ টপ সাজান এসি দোকান তাদের মধ্যে একটা। আমাদের ইলেট্রিক বিল যতই হক না কেন ব্যবসা হোক বা না হোক দোকানে দশ পনেরটা সাদা লাইট এবং এসি চালাতেই হবে। ২০০৫ সালের মাঝখানে এরা বিক্রেতাদের ধ্বংস করার জন্য দেশের সবচেয়ে বড় নাসকতা মূলক ফর্মুলা বাহির করে কমিশনের টাকা পরে দেওয়ার। বুদ্ধিটা কার মাথা থেকে এসেছে তা বলতে পারব না, কারন ঐ বছরে সিটিসেল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে তিন চার জন নতুন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। নিয়োমটা ছিল ু বিক্রেতা নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৯০ টাকা কমে কম্পানির কাছ থেকে মোবাইল কিনবে, মোবাইল বিক্রীর পর গ্রাহকের ফর্ম ঠিক মত পূরন করে সিটিসেলে জমা দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে সিটিসেল সেই বিক্রেতাকে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত কমিশন দিয়ে দিবে। এই কমিশনের টাকার পরিমানটা নির্ভর করবে বিক্রেতার বিক্রীত মোবাইলের পরিমানের উপর, যত বেশী বিক্রী ততো বেশী লাভ চ্। এই কমিশনের টাকার অংকটা নেহায়েত কম বলেনি মামুরা, এই বাজারে একটা মোবাইল বিক্রী করে এত টাকা লাভ করা কোনভবে সম্ভব হয় না। আমরা বিক্রেতারা লাফাতে লাফাতে অনেক লাভের আশায় গত অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ২০০৫ পর্যন্ত সিটিসেলের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি মবাইল বিক্রী করেছিলাম, কর্মকর্তা মামুদের কথা মত গ্রাহক ফর্ম গুলো প্রতি মাসের শেষে এক সাথে পাঠানো শুরু করলাম যেন কমিশনের টাকা গুলো একসাথে পাই। কপাল খারাপ হলে যা হয়, এরকম কত ৪৫ দিন যে এভাবে পার হয়ে গেল কিন্তু আজ পর্যন্ত সম্পূর্ন কমিশোনের চেহারা দেখলাম না। ঐ তিন মাসে মাট ১০৬৭ টা মোবাইল বিক্রী হয়েছিল শুধু আমার দোকান থেকে আর পাইকারি বিক্রী করেছিলাম ৩৯০টার মত, সব মিলিয়ে মোট ১৪৫৭ টা মোবাইল। সিটিসেল গত অক্টোবর নভেম্বর বিক্রীত মোবাইলের মধ্যে মাত্র ১৬৭ টা মোবাইলের ১৮৫ টাকা করে কমিশোন দেয় এবং বাকি ৩৬৫ টাকা কিছু দিন পরে দিবে বলে জানায়। আগষ্টে সিটিসেল সেই ১৬৭ টা মোবাইলের বকেয়া পাওনা ২০০ টাকা দেয় এবং এটাই শেষ বলে জানায়। বাকি ১২৯০ টা মোবাইলের কমিশোন এভাবেই কখনও ৭০০০ টাকা আবার কখনও ১২০০০ টাকা করে আসতে থাকে যা আমাদের ব্যবসার কোন কাজে আসেনি। এরপর সিটিসেল গত মে মাসে শুরু করে ুহ্যালো ০১২৩চ্ নামের একটা নতুন প্যাকেজ যার দাম ছিল ১৭০০ টাকা এবং ৩০০ টাকার কার্ড ছিল ফ্রি। সিটিসেল মামুদের অনুরোধে কমিশোনের টাকা এবার তাড়াতাড়ি পাওয়ার প্রতিশ্রতি পেয়ে আমরা ৩০০ টাকার কার্ড এবং কমিশোন কিছু টাকা যোগ বিয়োগ করে ১৩০০ টাকায় এই প্যাকেজ বিক্রী করা শুরু করি। দাম প্রচন্ড কম হওয়ায় শহর ও গ্রাম পর্যায়ে সিটিসেলের এই প্যাকেজ প্রচুর পরিমানে বিক্রী হয়। কুলি, মুচি, লেবার, রিক্সাওয়ালা, ড্রাইভার সহ নিম্নো আয়ের লোকেরা সবচেয়ে বেশী এই প্যাকেজ কেনে। এত বিক্রী আমরা কোন কম্পানির অফারে কোনদিনও করিনি, প্রচন্ড ব্যস্ত থাকার কারনে আগের কমিশনের পাওনা টাকার কথা মাথাতে আসেনি। প্যাকেজ শেষে হিসাব করে দেখলাম আমি নিজে সব মিলিয়ে ুহ্যালো ০১২৩চ্ প্যাকেজে মোট ৯৮০২ টা মোবাইল ফোন বিক্রী করে ফেলেছি। আবার নতুন করে দেখা দিলো কমিশন সমস্যা দেখতে দেখতে আবার অক্টোবর ঘুরে এলো ৩৬৫ টাকা পেতে ৩৬৫ দিন অপেক্ষা করেও কোন ফল পেলাম না। তার উপর এই ১৩০০ টাকায় প্যাকেজ বিক্রী করার ফলে আমাদের অনেক টাকা ব্যবসায় ঢুকে গেছে। কর্মকর্তা ব্যাটারা প্রতিবারই বলে এ মাসেই টাকা দিয়ে দিব কিন্তু শুধু কথা পর্যন্ত আজও কোন কাজ হয়নি। দিনের পরদিন এভাবেই পার হয়ে যাচ্ছে, কমিশোন সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু জানতে চাইলেই মামুদের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর এদের মেজাজের কথা তো আগেই বলেছি।
গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক, এবং একটেল জেলায় জেলায় তাদের কাষ্টমার পয়েন্ট স্থাপন করেছে। এদের মধ্যে শুধু গ্রামীনফোন নিজ উদ্দোগে জেলা শহরে আর থানা পর্যয়ে স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে এ সব পয়েন্ট নিয়ন্ত্রন করছে। বাকিরা স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় কাষ্টমার পয়েন্ট স্থাপন করেছে। বর্তমানে একজন গ্রাহক সিটিসেলের চেয়ে একটেল বা বাংলালিংক কিনতেই বেশী পছন্দ করে যদি না গ্রামীন ফোনের সাথে তার কোন সমস্যা থাকে, কারন ঘরের পাশেই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। সিটিসেলের মত বিভাগীয় অফিস গুলোতে কুকুরের মত ধরনা দিয়ে বেড়াতে হয় না, সিটিসেলের কল সেন্টারের নাম্বার হচ্ছে *১২১ সারাদিন সারারাত চেষ্টা করেও সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়না নাম্বারটা সবসময় ব্যাস্ত থাকে। যদিও বা কখনও সংযোগ পাওয়া যায় সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আভিযোগ করলে মজার মজার কান্ড ঘটে। একবার আমার এক গ্রাহককে তারা সিলেটে যেতে বলেছিল যদিও বা তার জোন খুলনা। গ্রাহক রাগ করে জানতে চেয়েছিল উনার মানচিত্র সম্পর্কে কি কোন ধারনা নাই? কল সেন্টারের সেই ভদ্রলোক তাকে মুখ সামলিয়ে কথা বলতে বলেছিল, নহলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দেয়। সেই গ্রাহক আর কখনও কল সেন্টারে ফোন করেনি, প্রায় তিন মাস পর সে আমার সামনে মোবাইলটা বিক্রী করে দেয়। আমি বেঁচে গেছি আমাকে ফোনটা ফেরৎ নিতে না বলায়। এ ধরনের ঘটনা প্রতি নিয়োত ঘটছে সিটিসেলের গ্রাহক ও বিক্রেতাদের সাথে। একটি হারানো সেটের নাম্বার বা নষ্ট হয়ে যাওয়া রিমের নাম্বার সিটিসেল থেকে উঠাতে এক জন গ্রাহকে যে পরিমানের হয়রানির শিকার হতে হয়, গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক, বা একটেল এ রকম কোন সমস্যা হয়না। সিটিসেলের মত সবাই কাগজ পত্র চায়, যদি না থাকে তাহলে সাক্ষর মেলায় তাতে সমস্যা মনে হলে ইউ এন্ড আই বা এফ এন এফ নম্বর যাচাই করে সমস্যার সমাধান করে। কিন্তু সিটিসেলের বেলায় প্রকৃত গ্রাহক এবং তার প্রকৃত কাগজ থাকা সত্বেও থানা থেকে জিডি করে নিয়ে আসতে হয়। সিটিসেল পারলে গ্রাহকের জন্ম, মৃত্যু, আল্লাহ, ভগবান, স্কুল, কলেজ, জাতিয়তা, পাসপোর্ট সহ আর যা যা সনদ পত্রের ফোটকপি নেওয়া যায় সব নেয়। এটা ১৯৯৪ সাল না যে ভি আই পি -রা লক্ষ টাকার দামের সিটিসেল মোবাইল কিনেছে, এদের সাথে কথা বলার জন্য সেরকম ভাবসাবের প্রয়োজন। এখন সিটিসেল সামান্য রিক্সাওয়ালারা চালায় এদের সামনে এত ফুটানি দেখানোর প্রয়োজন নাই। মামুরা সাধারন মানুষের সাথে সাধারন ভাবে মিশতে শেখো, এরাই আমাদের ব্যবসা দেয়। সিটিসেলের কাছে আমরা কমিশন বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা পাব, এগুলো মামুরা যত তাড়াতাড়ী পার শোধ করে ফেলো নাহলে একটেলকে যে রকম করে ঘর-সংসার ছাড়া করেছি তোমাদের ও করব। মামুরা ভাওতাবাজি বন্ধ কর। আগামি ২০শে জানুয়ারি ২০০৭ এর মধ্যে আমাদের পাওনা মিটিয়ে দেও, টেরিটরি প্রথা বন্ধকরো, পূর্বের মত নগদ কমিশনের ব্যবস্থা করো, নাহলে ২২শে জানুয়ারি থেকে সিটিসেলের ছোট বড় দোষ ত্রটি সারা দেশবাসি জানবে এবং আমরা আইনের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো। তোমাদের ঠেকানোর মত প্রচুর প্রমানাদি আমাদের হাতে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:৩১