!সর্বজনমান্য প্রবীণ রাজনীতিক, সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম আলহাজ্ব মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে, দেশব্যাপী দোয়া, মোনাজাত, জানাযায় বিপুল লোক সমাগম থেকে ধারনা জন্মে যে আখিরাতেও তিনি হবেন বিশেষ সম্মানিত। ইন্তেকালের প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মাথায় তার দ্বিতীয় ও শেষ জানাযা আদায় করা হয়। এর আগে সকাল ৯টায় জন্মস্থান ভৈরবে তাঁর প্রথম জানাযা হয়।
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া জিল্লুর রহমান কৈশোরের প্রারম্ভেই বাবা-মাকে হারান।ধর্মীয় বিশ্বাস, ইসলামী অনুশাসনে অভ্যাসরত জীবন, (প্রাকটিসিং মুসলিম লাইফ) উচ্চতর নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা ছিল তার জীবনের ঈর্ষণীয় সাফল্যের উৎস। তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন পীর-মুর্শিদ ও ওলামা-মাশায়েখ ভক্ত। নিয়মিত নামাজি, এ ব্যক্তিটি ইসলামের অনুসারী ও সুনিপুণ পরিপালনকারী হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন উদার, আধুনিক, ও প্রগতিশীল এক জননেতা। গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বঙ্গভবনে যতবার গিয়েছেন সবসময় তিনি ছিলেন একজন পূর্ণ মুসলিম ও খাঁটি বাঙালির সমন্বয়ে পরিদৃষ্ট অনন্য ব্যক্তিত্ব। ঈদে, হজে, ওমরায়, ইফতারে, মিলাদে বা নামাজে বর্ণিল পাজামা, পাঞ্জাবি, কটি, সদরিয়াও টুপিতে তাকে লাগতো অসাধারণ।পাশ্চাত্য সভ্যতা ও হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণে না গিয়ে জিল্লুর রহমান সবসময়ই সচেষ্ট ছিলেন ইসলামের স্বকীয়তায় বিশিষ্ট থাকতে। তিনি পেরেছেনও বটে।
তার ইন্তেকালের পর ঢাকার সংবাদপত্রগুলোয় তার যে ইমেজে প্রকাশ পেয়েছেন তাও ছিল অসাধারণ উজ্জ্বল। এ আল্লাহরই মেহেরবানী। মরহুম প্রেসিডেন্টের শুভ পরিণতি বা ।খাতেমা বিল খাইরের' আলামত।
কিন্তু মৃত্যুর পর একজন মুসলমানের পারলৌকিক মুক্তি ও কল্যাণের জন্য হতে পারে শুধুই দোয়া, দান-খয়রাত, নফল ইবাদত, জানাযা ও জিয়ারত। এখানে অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে মুসলমানের কী চাওয়ার থাকতে পারে???এক মিনিট কেন এক ঘণ্টা নীরবতা পালনের নামে বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে মুসলমানের আত্মার কী উপকার হবে??এসব নিয়ে অবশ্যই ভাবার আছে।
মুসলমানের দেশে ধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধের চেতনা নিয়ে 'জন্ম' নেয়া প্রগতিশীল সংগঠন আওয়ামী লীগের অন্যতম কান্ডারি মরহুম জিল্লুর রহমানের জীবনের অন্তিম বছরগুলোর আলোয় এবং তাঁর শুভ জীবনাবসানের বরকতপূর্ণ আলামতে যে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, তা অনেকাংশেই ম্লান হয়ে যায় একশ্রেণীর নেতা, নেত্রী, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার চাপিয়ে দেয়া আদিখ্যেতায়।তারা যেন ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের মুসলমানের জীবন, মৃত্যু, সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও সামাজিকতাকে হিন্দুয়ানী ভাবধারায় ঢেলে সাজাতে চান! জোর করে তারা আমাদের ভাষা, বর্ণনা, আচরণ ও পরিভাষায় লেপে দিতে চান নাস্তিক্যবাদী কালিমা, লাগিয়ে দিতে চান মুরতাদ মার্কা রং বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এটা কখনোই মেনে নেবেনা ইনশা আল্লাহ।
মহামান্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ ও পরবর্তী ঘটনাবলী 'প্রথম আলো' সহ কতিপয় কাগজ কীভাবে প্রচার করেছে সচেতন নাগরিকরা তা লক্ষ্য করে থাকবেন।৭১ টিভির উপস্থাপনা ছিল আরো বিস্ময়কর। তারা মরহুমের ইন্তেকালের সংবাদের পর "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন" দোয়াটুকুও বর্জন করেছে!যা হাজার বছর ধরে বাংলার মুসলমান মৃত্যু সংবাদের পর পাঠ করে থাকেন। হাজার বছরেও এটি এ দেশের সংস্কৃতি হতে পারল না কেন?কী কারণে হিন্দু খ্রিস্টান ও বৌদ্ধধর্মীয় আচার-আচরণ নির্দ্বিধায় বাংলার সংস্কৃতিহয়ে যায়, হয় না কেবল ইসলাম ও মুসলমানের আচার-আচরণ!? এ প্রশ্নের জবাবও পাওয়ার অধিকার জাতির আছে।
৭১ টিভি মরহুম প্রেসিডেন্টের লাশ নিয়ে জানাযার উদ্দেশ্যে যাওয়ার ইসলামী পরিভাষা বাদ দিয়ে, গোটা সময় জুড়েই প্রচার করেছে ‘প্রয়াত প্রেসিডেন্টের শবযাত্রা’!অথচ ‘মরহুম’ বলার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত বলে ঘোষণা ও প্রার্থনার এক পবিত্র ইশারা। কিন্তু ‘প্রয়াত’ শব্দটির মধ্যে আল্লাহ, ইসলাম, রহমত, ক্ষমা, মাগফিরাত ও মোনাজাতের কোনো দিকই নেই।
কিন্তু কিছু নাস্তিক মার্কা লোকের হীনমন্যতা এত গভীর যে, তারা মরহুম বলতে লজ্জাবোধ করে!প্রয়াত বলতে পারলে তারা যেন ধন্য হয়। ‘সেক্যুলার’ হয়। আধুনিকতার শর্তই যেন ইসলাম ও মুসলমানিত্বের চিহ্নটুকু মুছে ফেলা। কোনো কাজ বা কথা থেকে যেন ইসলাম, কোরআন, সুন্নাহ ও শরীয়তের গন্ধ না আসে।ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও সময় টিভি চ্যানেলেও এসব ক্ষেত্রে প্রচুর অমনোযোগিতার প্রমাণ দিয়ে তৌহিদী জনতার মনে আঘাত দিয়েছে।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে এ সমাজে হিন্দুয়ানী কালচার চালু করার মিশন নিয়ে যদি কেউ নেমে থাকে, তাহলে তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু মুসলমান মালিকদের টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে ইসলাম এবং মুসলমানের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ কতটুকু যৌক্তিক তা যথেষ্ট বিবেচনার বিষয়।এ নিয়ে ভাবনা শুরুর এখনই সময়। এক্ষেত্রে উন্নাসিকতার সুযোগ কতটুকু আছে বা উদাসীনতাও বা কতটুকু সহনীয় তাও পূর্ন বিবেচনার বিষয়,,
বাংলাদেশের শতকরা ৯০ জন মুসলমানের জীবনবোধ, সমাজরীতি,সংস্কৃতি ও যাপিত জীবনের রেখাচিত্র কেন ইসলাম বর্জিত হবে??অবস্হা এমন যেন ইসলামের সংস্কৃতী সমার্থক কিছু বললেই তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়!
সালাম দিতে তাদের মুখ আড়ষ্ট হয়ে যায়, তারা দেন শুভেচ্ছা,তারা মরহুম না বলে বলেন প্রয়াত,ইন্তেকাল না বলে বলেন প্রয়াণ বা প্রস্থ’ন,দাফন-কাফন বাদ দিয়ে বলেন শেষকৃত্য,তারা জানাযা বাদ দিয়ে বলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া,সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার তাদের মুখে উচ্চারিত হয়না তারা বলেন ও মাইগড,তারা দোয়া ও মোনাজাত না বলে বলেন প্রার্থনা,তারা কি ভবিষ্যতে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে পুজা, উপাসনা বা আরাধনা বলবেন?মসজিদ না বলে বলবেন মন্দির বা উপাসনালয়?মুরিদ ও মুসল্লীকে বলতে চাইবেন পূজারি বা ভক্ত?কুলখানিকে বলবেন শ্রাদ্ধ?হাজীকে বলবেন তীর্যযাত্রী?রোজাদারকে বলবেন উপবাস ব্রতচারী? অবস্হাদৃষ্টে তো এটাই মনে হয়, তাই; মুসলিম ভাইয়েরা একটু ভাবুন প্লীজ ভাবুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪