হুমায়ুন আহমেদের মোটামুটি সব বইই আমার পড়া। আমার পড়া উনার প্রথম উপন্যাস "নন্দিত নরকে"। মনে পড়ে তখন আমি ক্লাশ নাইনে। অ্যাডভেন্চার আর রহস্য গল্পের ভীড়ে উনার এ উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। উনার উপন্যাসের বিশেষত্ব হল উপন্যাসের নির্দিষ্ট কোন উপসংহার থাকে না। উপসংহার ছেড়ে দেওয়া হয় পাঠকের কল্পনার উপর। উনার উপন্যাস জনপ্রিয় হয় একারণে যে সাধারণ ভাষার মোড়কে থাকে, তাতে থাকে সাধারণ জীবনের মজার কিছু ঘটনার ছোট্ট বর্ণণা, যার কারণে উপন্যাস হয়ে উঠে মজার, অনেকটা জমজমাট আড্ডার মত। সাধারণ ভাষার মোড়কে এজন্যই বললাম যে, কেউ যদি ভালভাবে পড়েন তাহলে বুজবেন এর আড়ালে লুকিয়ে আছে মানবিক আবেগ ( মধ্যবিত্ত শিক্ষিত দেহপসারিণীর আবেগ যেমন প্রকাশ পেয়েছে মর্মস্পর্শী ভাবে কিছু লেখায়), স্যটায়ার ( হলুদ হিমু কলো র্যাব)। লেখক হিসাবে মনে হয়েছে উনি মুক্তপন্থী ( উনার চিন্তাকে আবদ্ধ করতে চান না), অনেকগুলা স্বত্তাকে ধারণ করতে চান-জটিল মনস্বত্ত, পরাবাস্তব, অলৌকিকতা উনার আগ্রহের বিষয়। যখন তিনি তৈরী করছেন তুই রাজাকার কথাটা- নিশ্চয়ই উনার আগ্রহ হয়েছে রাজাকার এর মনস্বত্ত জানার। অনেকগুলা স্বত্তাকে ধারণ করার চেষ্টা হিসাবে তিনি তৈরী করছেন হিমু চরিত্রকে বিশ্বাসী হিসাবে, অন্যদিকে সংশয়বাদী হিসাবে তৈরী করেছেন মিসির আলী চরিত্রকে। এরকম পারষ্পরিক সাংঘর্ষিক স্বত্তাকে ধারণ করে লেখা খুব কম লেখকের পক্ষেই সম্ভব। জাতি হিসাবে আমরা নম্র, প্রাচীনকাল থেকে ভাববাদ/সুফি/আধ্যত্বিকবাদ এ সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এ জাতির একজন হিসাবে তাই তার উপন্যাসে উগ্র দৈহিক প্রেম থেকে প্রশস্তিরমানসিক প্রেম উঠে এসেছে বেশী। এটাও উনার জনপ্রিয়তার আরেক কারণ হয়ত। আর উনার সায়েন্স ফিকশনের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে এককথায় বলতে হয় আন্তর্জাতিকমানের ও উচ্চমার্গীয়, সবার পক্ষে এরকম লেখা তো দূরে থাক, বোঝাও অসম্ভব।
এরকম বহুস্বত্তাকে ধারণকারী একজন হুমায়ুন আহমেদকে খুব প্রয়োজন, আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য। স্যার সু্স্থ হয়ে ফিরে আসুন আমাদের মাঝে। স্যারের জন্য শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




