জীবনের লক্ষ্য-৪
জীবনের লক্ষ্য-৩
জীবনের লক্ষ্য-২
জীবনের লক্ষ্য-১
ক্লাস ফাইভ পাশ করলাম। কিন্তু কোন রেজাল্ট দিল না। সবাইকে একটা সার্টিফিকেট দিল। জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পেলাম। এবং জীবনে প্রথম অনুভব করলাম আমি বড় হয়ে গেছি। এবার হাই স্কুলের পালা। নতুন জীবন, নতুন উচ্ছাস, নতুন স্বপ্ন। রেজাল্ট দেওয়ার পরও বৃত্তি পরিক্ষা বাকী ছিল। তাই পড়াশুনা করতে হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হবার পর মুক্ত হলাম। কিন্তু তখনই আমার চোখে স্বপ্ন দানা বাধতে শুরু করেছে। আমি ভাবিষ্যতে কলেজে বা ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর কোন স্বপ্ন দেখিনি। অনুভব করিনি যে আমি বড় হয়ে গেছি। আমি অনুভব করেছি হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়। এটা ছিল আমার এক নতুন জীবনের সূচনা। আমার জীবনের এক মহাকাব্য। এই হাই স্কুল জীবনে যা করেছি আমার কলেজ বা এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তা করিনি। ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর আমাদের তেমন কোন লক্ষ্য ছিল না কোন স্কুলে ভর্তি হব বা কোথায় যাব, কি করব। আমরা তখনো জানতাম না যে কিছু কিছু স্কুল আছে যাদের দেশ সেরা বলা হয়। আমাদের কাছে সব স্কুলই সমান ছিল। তখন আমাদের এলাকায় একটাই হাই স্কুল ছিল "কোনাবাড়ী এম, এ, কুদ্দুছ উচ্চ বিদ্যালয়"। সবাই বলত কুদ্দুছ নগর হাই স্কুল। আমাদের প্রাইমারীর সবাই সেই কুদ্দুছ নগরে যেয়ে ভর্তি হতে লাগল। আমিও ভর্তি হলাম। আমার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। আমি এখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমি এখন বীজগণিত করি। আমি এখন হাই স্কুলের ছাত্র। আমার জানার পরিধি এখন অনেক বাড়বে। মহা উৎসাহে সব বইগুলো কিনে আনলাম। নতুন বই দেখে খুবই ভাল লাগল। একদিন মার সাথে যেয়ে এক টেইলরের দোকানে স্কুলড্রেস বানাতে দিয়ে আসলাম। নেভি-ব্লু প্যান্ট। সাদা শার্ট বাবা আগেই গুলিস্তান থেকে কিনে এনেছিল। আমার পুরোদস্তুর হাইস্কুল জীবন শুরু হল। আমাকে আমার মা সেই যে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেলেন কুদ্দুছনগরে, এরপর আমার জীবনের দীর্ঘ সাড়ে পাচ বছর কাটালাম সেখানে। আমি বেশ দেরি করে ভর্তি হয়েছিলাম। তাই আমার স্থান হল গ-শাখায়। রোল নাম্বার হল ২২০। সব ভাল ছাত্ররা আগে আগে ভর্তি হয়ে গেছে। তাই তারা সব ক-শাখায়। ক-শাখার পোলাপানের ভাবের চোটে নাড়ি ভুড়ি উলটে আসার যোগাড়। এরা কারো সাথে কথাও বলে না। আশেপাশের এলাকার যেমন বাইমাইল, জরুন এখানকার পোলাপানো আমাদের সাথে কুদ্দুছনগরে ভর্তি হয়েছে। কে কার থেকে বেশী ভাল তা দেখানোর প্রতিযোগীতায় ব্যাস্ত সবাই। প্রতিযোগীতার পুরোটাই চলে ক-শাখায়। আমরা একদল লেবেনন্ডিস গ-শাখায় বসে বসে ওদের তামাশা দেখি। মজাই লাগে।
চলবে.....................