somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের লক্ষ্য-২

২৭ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের লক্ষ্য-১
বড়দের দেখতাম আর ভাবতাম কবে বড় হব। প্রায়ই বাবা যখন কারো সাথে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে আমি বসে থাকতাম আর তাদের কথা শুনতাম। বড়দের কথা শুনতে আমার ভালো লাগতো। অনেক কিছু জানতে পারতাম তাদের কথা থেকে। বাবা মা হয়তো এসব কথা আমার সাথে আলোচনা করার মত বা বলার মত আমাকে যোগ্য মনে করতেন না তবে আমি নিজেকে তার যোগ্য মনে করতাম। একটা শিশু হয়ত এভাবেই বড়দের কথা শুনে তার জীবনের জ্ঞানের একটা অংশ অর্জন করে। তবে মাঝে মাঝে বাবা বলতেন "বাবু অন্য ঘরে যা বাবা বা ঘুমাইতে যা"। তখন আমি বুঝতাম যে তিনি এখন কিছু কথা বলবেন যা শোনার মত যোগ্য আমাকে মনে করেন না বা পুত্র হিসেবে আমার সামনে তা বলার মত অবস্থা না। আমি কিন্তু ঠিকই বুঝে যেতাম যে তিনি এখন কি ধরনের কথা বলবেন। আমরা বাচ্চাদের যেমন ছোট মনে করি তারা তত ছোট নয়। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথা শুনতাম। বেশির ভাগ আলোচনাই ছিল হয়তো আমার কোন চাচাতো বোন/ভাই বা খালাত বোন/ভাই আরেকজনের সাথে ভেগে গেছে এর সাম্ভাব্য প্রতিকার নিয়ে আমার চাচার বা খালা খালুর সাথে আলোচনা। ভেগে যাওয়া জিনিসটা কি আমি তা পুরোপুরিই বুঝতাম এমন কি পরামর্শ দেওয়ার মত সামর্থও আমার ছিল। কিন্তু তাদের আলোচনায় আমি অপাংক্তেও। তবে যৌনতা বিষয়ে আমার জ্ঞান ছিল না। নারী পুরুষের প্রেম বলতে আমি এমন একটা সম্পর্কের কথা বুঝতাম যেখানে তারা মিলেমিশে থাকে, একজন আরেকজনের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করে, এক ঘরে বাস করে, এক সাথে রান্না করা খাবার খায়, এবং অবশ্যই একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি। বাসায় বহু আগে একটা ১৪ ইঞ্চি সাদাকালো ফিলিপস টিভি ছিল। আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি তখনই আমি টিভিটার বারোটা বাজাই। আমার আবার বিজ্ঞান মনস্ক ভাব ছিল। হাতের কাছে যা পেতাম তা খুলে তো দেখতামই এমনকি সেটাকে আরো উন্নত রুপ দেয়া যায় কিনা তার চেষ্টা করতাম। এ জীবনে কত জিনিস যে নষ্ট করেছি তার ইয়াত্তা নেই। এমনকি আমার প্রথম কম্পিউটারটা কেনার তিন দিন পর শূন্য স্তরের জ্ঞান নিয়ে আমি ওটার কেসিং খুলে র‌্যাম, মাদারবোর্ড সব খুলে খুলে দেখেছি। প্রসেসরটা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই খুলতে পারিনি। আমাদের যখন সাদাকালো ফিলিপস টিভিটা ছিল তখন আমার খালাদের বাসায় ছিল ২০ ইঞ্চি রঙ্গিন সনি টিভি। খালারা সবাই ঢাকায় থাকতেন। মাঝে মাঝে তাদের বাসায় বেড়াতে যেতাম। তখন তাদের ঐ রঙ্গিন টিভি দেখে আমার বিজ্ঞান মনস্ক মন নাড়া দিয়ে উঠল। আমি এটাকে কিভাবে উন্নত রুপ দেয়া যায় চিন্তা করতে লাগলাম। প্রথম পরীক্ষা হিসেবে আমি এটাকে রঙ্গীন করার জন্য এক সুবর্ণ সময়ে এর পিছনে জগ থেকে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। এরপর চালু করলাম। চালু করা মাত্র স্ক্রীনে একটা আলো দেখিয়ে টিভিটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি সুইচ বন্ধ করে সব ঠিকঠাক মত রেখে জগের পানি আবার আগের অবস্থায় রেখে, মেঝের পানি ঘর মুছার তেনা দিয়ে মুছে ভালো মানুষের মত ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। রাতে নাটক দেখার জন্য টিভি চালু করতেই টিভি চলে না। কারখানার সবাই এসেছে নাটক দেখতে। ধারাবাহিক কোন নাটক বিটিভির। আমিও বসে আছি। টিভি চলে না। কেঊ কেঊ দু চারটা থাপ্পরও দিলেন টিভিতে তবুও টিভি চলে না। কোন খুতো নেই টিভির গায়ে যে কেঊ নষ্ট করে গেছে। আমি বেচে গেলাম। পরে মেকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল টিভিটা ঠিকা করার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেটা মেকারের দোকানে বিক্রি করে দিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর আর আমাদের বাড়িতে টিভি কেনা হয় নি। আমার শৈশব কেটেছে টিভি বিহীন অবস্থায়। মাঝে মাঝে আমার বন্ধু খসরুদের ( ওর ডাক নাম ছিল খৌস, সবাই এমনকি ওর মা বাবাও ওকে এই নামে ডাকত, একটা অপভ্রংশ আর কি) বাড়ীতে যেতাম আলিফ লায়লা বা শুক্রবারের বাংলা ছিনেমা দেখতে। ওরাও একটা ফ্যাক্টরীতে থাকত। ওরা অনেকগুলো ভাই বোন ছিল। কতজন ছিল ঠিক মনে নেই তবে কমসে কম ৮ জন হবে। টিভির আগে আমাদের বাসায় একটা রেডিও ছিল। ওটাকে আমি বেশ কয়েকবার গবেষনার কাজে লাগিয়েছি। তাই অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। একদিন ওটাকে আমার মামা ঠিক করিয়ে আনলো। আমার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল রেডিওতে হাত দেওয়ার। কিন্তু জগতের কোন নিষেধাজ্ঞাই চিরকাল কঠিন থাকে না। আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যায়। আমিও আস্তে আস্তে রেডিওটার গায়ে হাত বূলাই। কেঊ কিছু বলে না। এর মধ্যে একদিন আমাদের এলাকায় একটা ক্যাসেটের দোকান গজিয়ে উঠলো। তাতে লাউড স্পীকারে গান বাজায়। আমি দেখলাম আমাদের রেডিওটার সর্বোচ্চ ভলিঊমেও এর আওয়াজের কাছে কিছু না। আবার গবেষনা। কারখানাতে সব সময় স্ক্রু, প্লাস, ইলেক্ট্রিকের তার, এসিড এইসব থাকে তা সবাই জানেন। সত্যি কথা বলতে এরা আমার জীবনের অংশ। আমি প্রথমেই একদিন সুযোগ বুঝে রেডিওটা খুললাম। তারপর এর খুটিনাটি দেখলাম। কি একটা কালো লোহার মতন জিনিস তার গায়ে একটা প্লাষ্টিকের খোলস, খোলসের গায়ে তার পেচানো, একটা প্লাষ্টিকের বোর্ড, তার উপর দালান কোঠার মত কতগুলো জিনিস আর আছে একটা জিনিস যেটা লাগানো রয়েছে যেখান থেকে শব্দ আসে সেখানে আর যেটা কিনা আমার স্ক্রু ড্রাইভারকে বা নাট বল্টুকে টেনে ধরে কিন্তু ইলেক্ট্রিকের তার বা প্লাষ্টিকের কোন জিনিসকে টেনে ধরে না। রেডিও খোলার সময় যে স্ক্রু গুলো ছিল সেগুলোকেও টেনে ধরে এই জিনিসটা। আবার স্ক্রু ড্রাইভারকে এটার গায়ে লাগিয়ে দিলে রেডিওর স্ক্রু গুলো স্ক্রু ড্রাইভারটার গায়ে লেগে থাকে। কিছুক্ষন জিনিসটার ধর্ম বিচার করলাম এবং খুব আকর্ষনীয় লাগল। রেডিওর অন্য কোন কিছু বুঝলাম না। যাই হোক এবার পাওয়ার সাপ্লাই দিলাম রেডিওতে আর দেখতে লাগলাম। বুঝলাম পরীক্ষা শুরু করলে এই টানাটানি জিনিসটা থেকেই শুরু করতে হবে। প্রথম পরীক্ষা হিসেবে আলমারি খুলে শ্যাম্পু এনে ঢেলে দিলাম জিনিসটার সাথে থাকা কালো কাপড়ের উপর যেটা কিনা শুব্দ হবার সময় কাপতে ছিল। আমার হাতে আরেকটি যন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটল। আমি পুনরায় সব লাগিয়ে ঠিকঠাক করে রাখলাম। সেদিন আরেকটু হলে পিঠের ছাল চলে যেত। আমার গবেষনা ততদিনে সবার বিরক্তির জিনিস। ভাবতাম আমি তো জিনিসটাকে আরো ভাল করতে চাচ্ছি। আমি তো কারো ক্ষতি করিনি বরং ভালো করতে চাচ্ছি। এতে ক্ষেপার কি আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হব। কারন ততদিনে আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি যে ইঞ্জিনিয়াররা নাকি আমার মত কাজ করে। একবার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে আমাকে আর পায় কে। যত ইচ্ছা টিভি, রেডিও, টেবিল ফ্যান খুলে দেখা যাবে। নতুন নতুন জিনিসও বানানো যাবে। যেমন এমন একটা হাড়ি যাতে রান্না করতে কোন আগুন লাগে না। এমন একটা ব্যটারী যেটা কখনোই শেষ হবে না, ইচ্ছেমত তা দিয়ে রেডিও চালানো যাবে।

চলবে.....................
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×