অনেকের জীবনে অনেক আশা থাকে। অনেক কিছু হতে চায়। কিন্তু পারে না। বাস্তবতার নির্মম কষাঘাতে তাকে স্বপ্নের আকাশ থেকে নেমে আসতে হয় পৃথিবীর মাটিতে। অনেক কিছু হবার স্বপ্ন দেখে বোনা জাল ছিড়ে যায় শুকনো মাটির ছোড়া ঢিলে। আমিও স্বপ্ন দেখতাম কিছু হবার। ছোটবেলা ঘুরে বেড়াতাম ধানক্ষেতের আল দিয়ে, পাশের রাইছ মিলে খেলতাম রাইছ মিলের শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের সাথে, বিসিকের রাস্তার পাশ থেকে পছন্দসই পাথর কুড়াতাম নির্মীমান কোন ফ্যাক্টরীর স্তুপকৃত পাথরের স্তুপ থেকে। কিন্ডার গার্ডেনে পড়তাম। সারাদিন ঘুরে সন্ধাবেলায় অন্ধকারে বাসায় ফিরে বাবার হাতে মার খেতাম বা মার হাতে ঝাড়ুর বাড়ী খেতাম। কখনো চলে যেতাম বিলের পাশের ঝোপ জংগলে। পকেট থেকে পাথরের টুকরা বের করে ছুড়ে মারতাম অচেনা কোন ফলের দিকে। ফল কুড়াতাম।নাম না জানা জংলী ফুল সংগ্রহ করতাম। সেগুলো বাসায় নিয়ে আসতাম। আমি বড় হয়েছি একটা শিল্প এলাকায়। আমাদের বাসাটাকে বাসা না বলে ফ্যাক্টরী বলাই ভাল। কারন সেটা আসলেই একটা ফ্যাক্টরী ছিল। তার ভিতর দুটি রুমে আমরা থাকতাম। রাতদিন কাজ চলত। বাবা মা দুজনেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন। আমার কাজ ছিল স্কুলে যাওয়া আর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে ঘরে কিছু থাকলে খেয়ে বের হয়ে যাওয়া আর না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। পড়াশুনার ধার দিয়েও যেতাম না। কোনমতে ক্লাসে পড়া দিতাম। ফার্ষ্ট জীবনেও হই নাই। কোনমতে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এইসব হতাম। রেজাল্ট এর দিন আরেক দফা মার খেতাম। প্রায়ই বেঞ্চে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমার এসব কোন গায়ে লাগত না। একবার ইংরেজী ক্লাসে লিলি আপার কাছে মার খেলাম। থ্রী তে পড়ি। প্রচন্ড মার খেলাম। বাসায় এসে জামা পরিবর্তনের সময় আমার খালা কিভাবে যেন দেখে ফেলল। আমাকে নেংটা করে সারা শরীরে বেতের দাগ গুনলো। প্রায় ৫০ টা দাগ। মা বাহিরে ছিল। বাসায় এসে আমার অবস্থা দেখে রাতের বেলা স্কুলের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের বাসায় নিয়ে গেল বিচার দিতে। উনাকে আমরা ডাকতাম এম ডি আপা। শুধু আমি না আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী আমার মত এরকম মার খেত লিলি ম্যাডামের হাতে। সবাই মারের দাগ লুকিয়ে চলত। তা পরদিন এম ডি আপা লিলি ম্যাডামকে বলল এভাবে মারবেন না। বরং কানে ধরে উঠবস করাবেন। তারপর থেকে লিলি আপা কানে ধরে ঊঠবস করাতেন। আমি ক্লাস সিক্সেও কানে ধরে উঠবস করেছি। আমার রেকর্ড ৫০০ বার। এভাবে মার খেতে খেতে আমার আমার ছোটবেলায় জীবনে লক্ষ ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বড় হওয়া। কারন বড় হলে সন্ধাবেলায় বাসায় ফিরলেও কেঊ কিছু বলবে না। ছেলে ধরার ভয় নেই। সেই সময় ছেলেধরার খুব প্রকোপ ছিল। মোটামুটি একটা স্বাধীন জীবনের নিশ্চয়তা দেয় বড় হওয়াটা।
চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩০