somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলিমা তুমি কি ভবিতব্য কষ্টের প্রতিশব্দ?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুহিন দাস ও মেঘ অদিতি সম্পাদিত কাব্যগল্প সংখ্যা ”আন্ধার মানিক” এর উদ্বোধনী সংখ্যায় প্রকাশিত . প্রকাশকাল- জুন ২০১১, আষাঢ় ১৪১৮
................................................................................................
নীলিমা তুমি কি ভবিতব্য কষ্টের প্রতিশব্দ
.......................................................
হৃদয়; হ্যাঁ একটি হৃদয় সাদা পায়রার পাখায় লেগে, নিরবে স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় উড়তে-উড়তে, প্রজাপতির পাখায় কিছুক্ষন ঝুলে হঠাৎই ছিটকে পড়ে উচু দেয়ালের উপড় থাকা পেরেক ও কাঁচ ভাঙ্গায়। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া বা ভূমিকম্পে হঠাৎ -ই কোনো পরিবার য্যামোন নিঃস্ব হয়ে, সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় একটু বেঁচে ওঠে, আবার স্বপ্ন দ্যাখে, মানবতার একনিষ্ঠ আদরে, য্যানো সেই সাদৃশ্যতায় স্কিন পোশাকে সজ্জিত এ হৃদয়ের অলিগলি। স্বপ্ন য্যানো মুক্তিবেগের গতিতে প্রতিশোধের নেশায় পৌছে আবার বিছার পায়ে ভর করে ফিরে আসে পূনরায় প্রজাপতী হবে বলে। “দূঃখের নৈস্বর্গিক ঔষধ” সেবনে ছিটকে পড়া কষ্টেরাও য্যানো অ্যামিবার মত ধিরে-ধিরে দলবদ্ধ হচ্ছে, প্রতেবেশি হচ্ছে নতুন জন্ম নেয়া স্বপ্নের চারপাশে, কোনো মাস বা দিনের হিসাব না করে। কলম য্যানো ভালোবাসার কবিতা লিখতে চাচ্ছে মধ্যরাতে, দরজা জানালা ঘুমের উছিলায় বন্ধ করে, মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে, রবিন্দ্র সংগিত শুনতে-শুনতে ইন্দ্রানী সেনের কন্ঠে, খুব কম ভলউমে ইয়ার ইস্পিকার বিহীন, য্যানো শুধু আমার মন শুনবে আর শুনবে আমার কবিতার শব্দেরা, কলমের নিবের বলটি-কালিগুলো-টর্চের আলোরা অর্থাৎ ফোটনেরা।
ভালোবাসার মানুষটির নাম নির্দিষ্ট কোনো কারনেই “ন” ও “ল” এই দুটি অক্ষর সমেত থাকতে চাইছে। য্যানো ভালোবাসাকে নতুন নামে না সাজালে ভালোবাসাই ব্যর্থ হবে- হবে হয়তো পূর্ব অভিজ্ঞতা লব্ধ বেদনার মোড়কে প্যাঁচানো ভালোবাসার মত নির্ভেজাল ত্রুটিমুক্ত টাইম্ড বিষের কার্যকারিতায়, এক পা দুই পা করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।
যা হোক, কিছুদিন ধরেই মন ও শরীরের যত্ন চলছে, চলছে আঁড়চোখে তাকানোর প্রাকটিস, একটু সে ভুলে তাকিয়েছে কিনা- তাকালে, তা ড্রয়ারের ডায়রিতে- ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে রাখা, এবং লাল- কালো বা নীল কালিতে অথবা Hb-2b-3b পেন্সিলে উপপাদ্যের মত কখনোবা সাইকোলোজির তত্ত- তথ্য-সূত্র নিয়ে প্রমান করা যে- সে আমাকে ভালোবেসেই তাকিয়েছিলো বা ভালোবাসে। ওর বাসার নাম জানতে আশেপাশের কমপক্ষে তিন জনকে জিজ্ঞেস করে তার বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করা। এরপর থেকেই নির্দিষ্ট কোনো বিল্ডিং এর তিন তলায় এসে পায়ের জুতো সশব্দে পরিস্কার করতে হয়। যদিও মেঝেতে টাইল্স লাগানো। কখনোবা বিড়ালের পায়ে চলা শব্দকে হার মানিয়ে হাঁটতে হয়, কিছুক্ষন স্থির হতে হয় তিন তলায়- যদি ২০-২০০০ হার্জ কম্পাংকের কোনো শব্দ নির্দিষ্ট কোনো কন্ঠ বেয়ে বেরিয়ে আসে কিনা, যদি আসে তবে তা চোখ বন্ধ করে, হৃদয়ে রেকর্ড করে রাখা। আবার কখনোবা ঐ বিল্ডং এর তিন তলায় আসলেই, আমার জুতোয় ময়লা লেগে যায়, তাই য্যানো সশব্দেই পরিস্কার করতে হয়। আবার মাঝে-মাঝে ঐ তলার কাছাকছি আসলেই আমার কাশি বেড়ে যায়, গলার খুসখুস বেড়ে যায়। এ নতুন রোগগুলো আরও বাড়বে কিনা ঠিক বুঝতে পারছিনা।
আজ ভালোবাসতে যত ভয় তার চেয়ে বেশি ভয় য্যানো না পাবার- হারাবার। রাতের গভীরে নির্ঘূম চোখের পানিগুলো দুহাতের তালুতে লাগিয়ে, খালি গায়ে বুকে লেপ্টে সান্তনা খুঁজি নিজে নিজের কাছে- করুনা করি নিজেকে নিজে, কখনো বিধাতাকে বলি আর কত কষ্ট দিয়ে আমাকে মুক্তি দিবে? - দিবে এমন কাউকে যে আমাকে ভালোবাসবে প্রত্যাশার চেয়ে বহুগুন। অবার কখনো বলি - বিধাতা, আর কয়টি ভালোবাসা কেড়ে নিলে তোমার মনস্বাদ পূর্ন হবে? বলো বিধাতা, আর কয়টি ভালোবাসা কেড়ে নিলে তোমার মন স্বাদ পূর্ন হবে? লালায়িত জিহ্বা আর লালায়িত হবে না।
ওর নাম আর গোপন করবো না। ওর নাম নীলিমা। সপ্তাহের তিনটা দিন ওর আর আমার গন্তব্য বাস্তবতার জন্যই একই সরলরেখার শেষ বিন্দু। কিন্তু অন্যকেউ ভুলে বা অভুলে যখন বলে- “আপনার নীলিমা” আজ আর আসবে না, কথাটি শুনে চোখের ব্যর্থতা কেঁপে ওঠে, কিন্তু তা অশ্রুহীন, কেননা “আপনার নীলিমা” শব্দ দুটো হৃদয় গালে একটু নাড়া দিয়ে যায়। হৃদয় তখন হাসতে থাকে দু গালে টোল সমেত। কিন্তু একদিনও য্যানো ভুল হয় না, ওর পা রেখাংশ বেয়ে শেষ বিন্দুতে আসতে সাথে ও, ওর হৃদয়।
এইবার নীলিমাকে বলছি- নীলিমা তুমি হয়তো জানো না….. এই তো সেদিন ঘন মেঘের নিচ দিয়ে মাঝারি সাইজের ফোঁটা হয়ে বৃষ্টি হচ্ছিলো। আর যখন বৃষ্টির ফোঁটারা খুব ছোট ও হালকা হয়ে আসছিলো তখন বান্ধবীদের তাঁড়ায় তোমারও যাবার সময় হলো, তুমিও দোতালার সিঁড়ি বেয়ে ধীরে-ধীরে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালে, মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য। গোধুলির সূর্য সাদা মেঘের গায়ে যে রংয়ের জামা পরিয়ে দেয় হয়তোবা তা বাসন্তি রংয়ের, ঠিক সে রংয়ের সেলোয়ার কামিজ ও ওড়নায় তোমাকে বেশ লাগছিলো। আমি তখন ব্যালকোনিতে খাঁচায় বন্দি মুনিয়ার মন নিয়ে দাঁড়িয়ে, চোখের পলক কে ছুটি দিয়ে দেখছি তোমাকে। দেখছি তুমি সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম, চিকন বেসলেটের মত ঘড়ি পরা তোমার একটি হাত তোমার বুকের সাথে লম্ব হয়ে সামনে, কখনো হাতের তালু মেলছো আবার কখনোবা বন্ধ করছো, অর্থাৎ তুমিই হ্যাঁ একমাত্র তুমিই বৃষ্টি ফোঁটাদের ধরছিলে, আর মুঠো করে তাদের অনুভব করছিলে, আর হয়তো ভাবছিলে- বৃষ্টি তোমার হাত বেয়ে কতটা হৃদয় ঘেঁষে যায়- স্পর্শ করে যায়- দাঁগ রেখে যায়, হৃদয়ের মসৃন আন্ততলে, য্যানো এ দাঁগ কোনো এক হৃদয়ের, আর এই যে বৃষ্টির ফোঁটারা সেই হৃদয়ের হাত-বুক-ঠোঁট-চোখ ছুঁয়ে এসেছে, যেমনটি প্রায় আধ ঘন্টা আগে আমার অনুভব হয়েছিলো, সবার দৃষ্টির আঁড়ালে। আর ওভাবেই হাত সামনে রেখে নাড়াতে-নাড়াতে তুমি হেঁটে যাচ্ছিলে, যতক্ষন দেখা যায় ততক্ষন দেখছিলাম তোমাকে, অর্থাৎ আমার চোখেরা হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছিলো তুমি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত তারা কোথাও যাবে না, পলকদেরও ছুটি য্যানো ছিলো ঐক্ষন পর্যন্ত।….
কিছুক্ষন পর আমিও কিছু দৃশ্য-কিছুস্মৃতি-কিছু অনুভূতি হৃদয়ের ড্রয়ারে রেখে কি য্যানো ভাবতে-ভাবতে দোতালা থেকে নেমে হেঁটে-হেঁটে যাচ্ছিলাম। বিড়ি- সিগারেট-মদ-গাঁজা-বিয়ার-হুইস্কি-ওয়াইন কিছুরই নেশা নেই, থাকলে হয়তো তোমায় মনে করে-করে হৃদয়ঙ্গম করতাম। তবে হ্যাঁ আমি চা খাই, তো আর কি, রোজগার্ডেনে ঢুকে এক কাপ-দুই কাপ করে চা খাচ্ছিলাম আর তোমাকে হৃদয়ঙ্গম করছিলাম। তৃতীয় কাপ চায়ের অর্ডার দিতেই রোজ গার্ডেনের দরজায় হঠাৎই তোমার উপস্থিতি আমাকে আশ্চর্য করে। আমি একটু ভয়ও পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, টেলিপ্যাথির কল্যানে তুমি বুঝি আমার সকল চিন্তা-অনুভূতি টের পেয়ে গ্যাছো। কিন্তু না,শুধু তুমি না তোমার মা’ও এসেছিলেন। তোমরা ঠিক আমার সামনের টেবিলেই বসেছিলে। আর আমি এক কোনায় অন্ধকারে বসেছিলাম, তাই আমাকে তোমরা দেখতে পাওনি। মনে-মনে নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করছিলাম- তুমি কি সেই তুমি “আমার নীলিমা”? এক চুমু - দুই চুমু করে তৃতীয় কাপ চা খাচ্ছিলাম আর তোমাকে দেখে-দেখে হৃদয়ঙ্গম করছিলাম। য্যানো মনে হচ্ছিলো চায়ের সাথে তুমিও মিশে যাচ্ছো কলিজায়- হৃদয়ে, হৃদয় বেয়ে সমস্ত শরীরে ধীরে-ধীরে খুব ধীরে, সমসত্বে। মায়ের সাথে কথা বলতে-বলতে মাঝে মধ্যেই তুমি একটু-একটু হাসছিলে, আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো তোমার সব হাসিগুলো দু হাতের তালুতে ধরে সারা শহরের, রাস্তার মোড়ে-মোড়ে, প্রতিটি নিসঙ্গ ল্যাম্পপোস্টে, পরিবর্তনশীল অথচ অসহায় লাল-হলুদ-সবুজ আলোর সিগন্যাল বাতিতে, সারাজীবন ধরে ঘষতে-ঘষতে চলতে থাকা প্রতিটি গাড়ির টায়ারে, শহরের ধুলোতে প্রায় মৃত প্রতিটি গাছের পাতাতে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে সবাইকে বলি দ্যাখো তোমরা দ্যাখো আমার কোনো দুঃখ নেই, এই আমার সুখ- এই আমার অস্তিত্ব- এই আমার প্রতিটি হৃদস্পন্দনের টুকরো-টুকরো আবেশবিন্দু। আর হাসির ফাঁকে-ফাঁকে যে নিরবতারা থাকে, সে নিরবতা গুলোতে তোমার চোখগুলো নেশাময় হয়ে উঠছিল, য্যানো তুমি এক পেগ- দুই পেগ করে ওয়াইন খাচ্ছিলে, আর আমার মনে হচ্ছিলো লাটিম ঘুরে-ঘুরে শেষে যেভাবে ঢলে পরে মাটিতে, তুমিও ওয়াইনের নেশায় সেভাবে ঢলে-ঢলে পরছিলে আমার মাটির শরীরে। এইসব দৃশ্যেরা শরীরের প্রতি প্রান্তে-প্রান্তে আলোড়ন তুলছিলো, আর ভয়ও হচ্ছিলো এই ভেবে যে, উর্বর মাটির ছোঁয়া ও যত্নে প্রায় অর্ধমৃত গাছেরা য্যামোন, সতেজ- সবুজ- প্রানবন্ত হয়ে ওঠে, আর তখন টাকাওয়ালারা প্রয়োজনে- ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য তাদের কেটে নিয়ে যায়…………. আর ঠিক এসময় হঠাৎই চমকে উঠি, একটি হাত আমার কাঁধের উপর রেখে কে য্যানো নাড়ছে বুঝে, দেখি আমার বন্ধু অপু্। আমাকে জিজ্ঞেস করছে- কি দ্যাখো অতো মনোযোগ দিয়া? -কোই কিছুনাতো, তুমি কখন এলে? ~প্রায় পনের মিনিট ধরে তোমায় দেখছি, কি য্যানো চিন্তা করছো, না য্যানো দেখছো। এরপর সামনে তাকিয়ে দেখি তোমরা নেই, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান, এর মধ্যেই চলে গ্যালে? তখন খুব হাসিও পাচ্ছিলো, মনে-মনে বলি -শিট্ ওটা কল্পনা ছিলো, কল্পনা? শিট্। হয়তো ঘটনার সত্যতাও বের করা যেত অপু অথবা বেয়ারাকে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু কি ভেবে য্যানো তা করিনি, হয়তো তোমার উপস্থিতি মিথ্যা হয়ে যাবার ভয়ে। থাকনা তা সত্য-মিথ্যার মাঝামাঝি, আমার চোখ তো আর মিথ্যা দ্যাখেনি!?
এরপর অপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, চায়ের বিল দিতে গিয়ে দেখি বিল পঞ্চাশ টাকা। মানে আমি পাঁচ কাপ চা খেয়েছিলাম, তিন কাপ নয়। যাহোক বিল দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে, হাটতে-হাটতে একটি শাড়ির দোকান (পারফেক্ট) দেখে ক্যানো য্যানো দোকানে ঢুকলাম, বেশ কিছু শাড়ি পছন্দ হলো। নীলিমা বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, শাড়ি পছন্দ করতে যেয়ে তোমার মুখ- ঠোঁট- বুক – চিবুক বার-বার মনে পরছিলো। কখনো তা অভিমানের- হাসির- নিরব স্নিগ্ধতার কখনো তা দুষ্ট-দুষ্ট দুষ্টুমির।
….এরপরের সময় গুলো ছিলো শুধু বিষন্ন বিকেল- ভাবনাময় সন্ধা- আর একাকিত্বের রাত…..
সেদিন রাতেই স্বপ্ন দেখি…..প্রায় একই ঘটনা অর্থাৎ তোমার সিড়ি থেকে নামা, বৃষ্টি ধরা, রেস্টুরেন্টে তোমাকে হৃদ্য করতে-করতে চা খাওয়া, আমার শরীরে তোমার ঢলে পরা শাড়ির দোকানে তোমার চোখ-মুখ-ঠোঁট মনে করে শাড়ি দেখা, পছন্দ করা….ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু স্বপ্নে আর একটু বেশিও দেখি০০০০০০০
আমার নাম, ঠিকানা গোপন করে, মানে পাল্টে তোমার বাবা-মার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় আমার সেই বন্ধু অপুর মাধ্যমে, গোপন করার কারন কি বলতে পারো নীলিমা? যদি তুমি না আসো আমার নামটি দেখে…অর্থাৎ কখনো যদি তোমার মনে কোনো তিক্ততার সৃষ্টি হয় আমাকে ঘিরে, আমারই অজান্তে, তখন অন্যকোনো ছেলে ভেবেও যদি তুমি আসো, তবে আমার মন ও হৃদয় অন্তত একবার হলেও তোমাকে দেখতে পাবে, কারন আমি জানি আমার বায়োডাটা তোমাদের পছন্দ হবে, এর উল্টোটও যে ঘটতে পারে তা আমি কখনো চিন্তাও করিনি….
…….যাহোক আমাদের দেখা করার দিন ঠিক হলো, কীর্তনখোলার নতুন ব্রিজে, বিকেল পাঁচটায়…… তুমি আসলে…..আসতে একটুও দেরি করোনি, বরং আমিই প্রায় এক ঘন্টা আগে এসেছিলাম…..অনেক দূর থেকে দেখলাম অপু তোমাদের, মানে তোমাকে আর তোমার মা কে নিয়ে আসছে….কিন্তু আমার দৃষ্টি আটকে যায় তোমাকে দেখে…. দেখি সেদিনের সেই বৃষ্টি ভেজা জামা অর্থাৎ বৃষ্টিতে ভিজেছিলে যে জামাটি পরে, সেটি পরেই তুমি এসেছো…..তুমি আসছো- আসছো খুব ধীরে.… খুব ধীরে তুমি আসছো। তুমি হয়তো তখন পর্যন্তও আমাকে দেখতে পাওনি… কিন্তু আমি দেখছি তোমার সেই হাসি… সেই রুপ… সেই দুষ্টুমি… আমার চোখেরা হয়তো পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছিলো… পায়েরাও বোধহয় ভুলে গিয়েছিলো হাঁটতে হয় কিভাবে… নতুবা তোমাদের দেখে ভদ্রতাবসতো আমার আগানো উচিত ছিল…কিন্তু আমার পায়েরা আগায়নি…একটুও আগায়নি………
হঠাৎই আমায় দেখে তুমি ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে দক্ষিন পাশে এসে আমারই সামনে দাঁড়ালে…আর তোমার মুখ ও চোখের ভাবটি এমন ছিলো য্যানো, পুরোনো কোনো জায়গায় ঘুরতে এসেছো… বললে >ভাইয়া আপনি এখানে? –ক্যামোন আছো তুমি? …তোমার মুখে কোনো উত্তর নেই, শুধু চেয়ে আছো… - সেজেছো না? বেশ লাগছে….. এমন সময় অপু, তোমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে, তোমাকে বললো, ~আমরা কিন্তু ওর কাছেই এসেছি, -আন্টি মাফ করবেন একটু দুষ্টুমি করলাম, তবে ক্যানো করেছি সেটা অবশ্যই জানাবো, আর আন্টি; বায়োডাটায় শুধু নামটা চেন্জ করা, আর সব কিন্তু ঠিক আছে। =আমি কিন্তু সত্ত্যিই কিছু বুঝতে পারি নি। > আমি অনুমান করছিলাম পরিচিতোর মধ্যেই কেউ একজন হতে পারে… ~আন্টি একটু এদিকে আসেন না ওরা একটু কথা বলুক…..
……….এই বলে তোমার আম্মু আর অপু ব্রিজের মাঝ বরাবর উত্তর পাশে চলে গ্যালো…….
আমি বললাম– ভয় করছে? > কিসের ভয়? –এই যে তোমাকে একলা রেখে চলে গ্যালো। তুমি মৃদু হেসে বললে > ওওও… ক্যান আপনি আছেন না? – তোমার জন্য একটা নৌকা ভাড়া করছি, > কোই…. ব্রিজের দক্ষিন পাশ থেকে নিচের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললাম – উ…ই যে, নিচে তাকাও, আমরা নৌকায় চড়ে (দক্ষিন পূর্ব কোনে প্রায় নদীর মাঝে একটি ছোট্ট সবুজ চর দেখিয়ে) ঐ যে ঐখানে যাবো, ঐ জায়গাটা আমার খুব প্রিয় জায়গা, আমি সাধারনত ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে নেমে ঐ জায়গায় যাই, আজ তুমি এসেছো, তাই এই বিশেষ ব্যবস্থা।….. কথাগুলো শুনে তুমি ঠোঁট বন্ধ করে মৃদু-মৃদু হাসছিলে……. > আচ্ছা এতো জায়গা থাকতে একমাত্র ঐ জায়গাটা ক্যান? – কারন ওখান থেকে কীর্তনখোলার সূর্যাস্তটা সবচেয়ে ভালো লাগে। > ওওও আচ্ছা… তাই বলেন……
…….এরপর হাঁটতে-হাঁটতে নৌকার কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো কথা হয়নি……শুধুই নিরবতা, য্যানো নিরবতাই তখন আমাদের একমাত্র সঙ্গি ছিলো,…….
…..এরপর আমি নৌকায় উঠে, ওর দিকে ডান হাত বাড়িয়ে – কি, ধরা লাগবে?
……তুমি কোনো কথা না বলে, তোমার ডান হাত দিয়ে, আমার ডান ধরে নৌকায় উঠলে……
আর বললে > বাব্বাহ্ নৌকায় উঠা এতো কষ্ট!
……এরপর তুমি জুতো খুলে নৌকার সামনের মাথায় যে সমতল জায়গাটুকো থাকে তাতে বসলে, দু হাটু ভাঁজ করে, আবার দু হাত দিয়ে পা ও হাটুকে এক সাথে জড়িয়ে, নৌকার বিপরীত মাথার দিকে মুখ করে। কখনো তোমাকে বিষন্ন লাগছিলো আবার কখনো গভীর চিন্তা মগ্ন আবার কখনোবা স্বস্তির মৃদু হাসি, আমি বুঝতে পারছিলাম না কোনটা শেষ পর্যন্ত বাস্তব হবে….. –কি কিছু বলছোনা যে?....
তুমি মৃদু হেসে বললে > কি বলবো? – এই যে কেমন লাগছে!? > এত ভালো আমার কোনোদিন লাগেনি, তাইতো নিরবে ভালোলাগা অনুভব করছি। - বেশ সুন্দর করে কথা বলতো তুমি, কবিতা টবিতা লেখো নাকি? > নাহ্, আপনার মত লিখতে পারলে তো কাজেই লাগতো। -তুমি আমার লেখা পড়? > মাঝে মাঝে। - কোথায়? > নেটে, গুগলে emon1353 লিখে সার্স দিলেইতো আপনার লেখা পাওয়া যায়। - তুমি আমার ইউজার নেইমটা, কিভাবে জানলে? > আপনি কাকে য্যানো একদিন ফোনে বলতেছিলেন তখন থেকেই মনে আছে, এরপর থেকে প্রায়ই আপনার লেখা পড়ি। - তোমার ভালোলাগে? > সবলেখা তো আর বুঝি না, তবে কিছু কিছু ভালো লাগে।
…..মাঝি কে আগেই বলা ছিলো আমরা কোথায় নামবো……কথা বলতে বলতে সে নৌকাটা ঠিক আমার পছন্দের জায়গায় এসে থামালো…. এবার তুমি, আমার ডান ও বাম হাতে, তোমার বাম ও ডান হাত রেখে নৌকা থেকে নামলে, আমিও তোমাকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলাম না। মাঝি আমাদের নামিয়ে একটু দূরে গিয়ে নৌকা পাড়ে বেঁধে, নৌকাতেই বসে কি য্যানো করতে লাগলো….
সূর্যাস্ত হতে তখনো প্রায় ১০ মিনিট বাকি ছিলো.…আমরা কয়েক পা সামনে এগিয়ে দুজনেই পশ্চিমে মুখ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, আকাশটা তখন ছিলো য্যানো তোমাকে জড়ানো জামাটার মত আর সূর্যটাকে মনে হচ্ছিল য্যানো, এক থালা কৃষ্ণচুড়া। যতই সময় গড়াচ্ছে সূর্য ততই কীর্তনখোলার কাছাকাছি আসছে, আর আকাশ থেকে তা য্যানো খুব দ্রুত ছিটকে পড়ছিলো……
…..এর কিছুক্ষন পর আমার একেবারে পাশ ঘেষে সূর্যের দিকেই মুখ করে তুমি দাঁড়ালে, আমার তখন মনে হচ্ছিলো এইতো আমার হৃদপিন্ডের হৃদয়, যা বেশ কিছুদিন আগে হারিয়েছিলো, আজ তা কিছুক্ষন পরেই, হয়তো তা সূর্যাস্তের পর, হৃদপিন্ডের ফাঁকা থলিতে স্থান করে নিবে, চিরদিনের জন্যে, আর সাথে-সাথে আমার দুঃখেরাও সূর্যর সাথে হারিয়ে যাবে, সূর্য আবার আসলেও দুঃখেরা আর আসবেনা….. এসমই তুমি খুব ধীরে-ধীরে বললে > আমাদের সবারই উচিৎ সবার ভালোবার প্রতি সম্মান করা, তাই না? – হু অবশ্যই > আপনি কি চান না সবাই সবার ভালোবাসার মানুষকে তার জীবন সঙ্গী হিসাবে পাক? – হ্যাঁ চাই > আমি একজনকে ভালোবাসি………
……এই কথা বলেই তুমি ঘুরে রওনা হলে…..আমি বললাম – প্লিজ একটু দাঁড়াও না!?, সূর্যাস্ত হতে, মাত্র কয়েক মুহূর্ত বাকি, আমার পাশে দাঁড়িয়ে একটু সূর্যাস্ত দেখে যাও, দেখে যাও বেঁচে থাকার প্রেরনা, কিভাবে হারিয়ে যায়।
……কিন্তু তুমি আর একটি বারের জন্যও তাকাও নি, কোনো কথাও বলো নি, ধীরে-ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছিলে ব্রিজের সেই প্রান্তে, যেখান থেকে আমি নৌকো ছাড়া প্রায়ই এখানে আসতাম, দেখি তোমার সাথে-সাথে তোমার জামার রংয়ের মত মেঘেরাও মিলিয়ে গ্যাছে কোথাও…… দূরে কোথাও…….. সূর্যটাও য্যানো খুব দ্রুত ডুবে যাচ্ছে রং পাল্টে তোমায় জড়ানো জামার রং হতে-হতে……নীলিমা হারিয়ে কান্নারত মৃদু অন্ধকার আকাশে শুক্রগ্রহ নাম বদলে সন্ধাতাঁরা হয়ে মিটমিট করছে, য্যানো তা সদ্য মৃত কোনো এক আত্মার কার্বন কপি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×