বিগব্যাং থিওরীর প্রাথমিক কথা এখন শিিক্ষত প্রায় সবাই জানেন!থিওরীর মূল কথাটি হলো একটি আদিম পরমাণুর প্রচন্ড বিষ্ফোরনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে মহাবিশ্ব।কিন্তু এই আদিম পরমাণু কিভাবে শূন্য থেকে সৃষ্টি হলো?নিজে নিজেই সৃষ্টি হলো?নাকি কেউ সৃষ্টি করেছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও বিজ্ঞানীদের জানা নেই।আর কখনোই জোতির্বিজ্ঞান,গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবেনা!পৃথিবীর সব প্রশ্নোত্তর যদি বিজ্ঞান দিতে পারতো তবে ইতিহাস,ভূগোল,সাহিত্য,রাষ্ট্রবিজ্ঞান,দর্শন ইত্যাদি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার কি প্রয়োজন ছিলো?আসলে সেই আদিম পরমাণু পর্যন্তই বিজ্ঞানের শেষ সীমা!আর ঐ শেষ সীমা থেকেই দর্শন বা ফিলোসফির যাত্রা শুরু।কাজেই বলা যায়,বিজ্ঞানের যেখানে শেষ,দর্শনের সেখানে শুরু!তাই সেই আদিম পরমানু কোথায় থেকে আসলো এর উত্তর খুঁজতে হবে দর্শন শাস্ত্রে,বিজ্ঞানে নয়!
ইসলামের দর্শন পৃথিবীর সকল দর্শন থেকে স্বতন্ত্র।আল্লাহ সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন এই মহাবিশ্বের সবকিছু তার হুকুমেই সৃষ্টি হয়েছে।কুরআনে তিনি বলেছেন সৃষ্টির শুরুতে সবকিছুই কুন্ডলী পাকানো ধোঁয়ার মত ছিলো।তিনিই সৃষ্টি করেছেন এই সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব।সেই ১৪০০ বছর আগে কিভাবে এসব বলা সম্ভব হলো কুরআনে?
তবে আল্লাহর অস্তিত্বের কথা বললেই স্থূলবুদ্ধির বস্তুবাদীরা প্রশ্ন করে বসবে তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করলো কে?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বুঝি,এই প্রশ্নটি শুধুমাত্র দৃশ্যমান সৃষ্টিজগতের জন্যই প্রযোজ্য,সৃষ্টিকর্তার জন্য নয়।আরো পরিস্কার বুঝতে হলে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বুঝতে হবে। আল্লাহ কুরআনে বহুবার বলেছেন যে তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
সার্বভৌম ক্ষমতা বলতে কি বোঝায়?
আমাদের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম!এর অর্থ কি?জাতীয় সংসদ যতবার খুশি সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে।নতুন আইন তৈরি করতে পারে,পুরাতন আইন বাতিল করতে পারে।তবে সংসদ সদস্যগণ যেহেতু নিজেরাও দেশের নাগরিক এবং দায়িত্বের মেয়াদ শেষে আমাদের মতই সাধারণ নাগরিকে পরিণত হন কাজেই তাদের তৈরি আইন তারা নিজেরাও মানতে বাধ্য!
কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা এত সীমিত নয়!প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী!তিনি মহাবিশ্ব শুধু সৃষ্টিই করেননি এর নিয়ন্ত্রণ,পরিচালনা,শৃঙ্খলার ব্যাবস্থাও করেছেন বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে! যেমনঃমহাকর্ষ,অভিকর্ষ,আলোর গতি,গতিসূত্র,শক্তি,তাপ,আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি ইত্যাদির মাধ্যমে!বিজ্ঞানের যত সূত্র আবিস্কার হয়েছে কোনোটাই বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি করেননি। এসব সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিলো কিন্তুু মানুষ জানতোনা!আল্লাহ এমন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী যে তিনি ইচ্ছে করলেই এসব নিয়মের পরিবর্তে অন্য কোনো নিয়মেও চালাতে পারতেন!তিনি তার কাজের জন্য কারো কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নন!যেমনঃযদি আমরা জন্মের পর দেখতাম যে মানুষ জলের উপর দিয়ে হাঁটতে পারে তখন সেটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতো আর তার পিছনেও কোনো সূত্র থাকতো!তখন আমরাই সে সূত্রের সাহায্যে প্রমাণ করতাম, কেনো মানুষ জলের উপর দিয়ে হাঁটতে সক্ষম!
আল্লাহ একক এবং অদ্বিতীয়।তিনি সার্বভৌম। তিনি সৃষ্টি করেন এবং সৃষ্টিজগত পরিচালনার জন্য যে কোনো নিয়মও সৃষ্টি করেন এবং তা পরিবর্তনের ক্ষমতাও রাখেন।তিনি তার কাজের জন্য কারো নিকট দায়বদ্ধ নন।কাজেই সৃষ্টিজগতের জন্য তিনি যে সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন তা তার নিজের জন্য প্রযোজ্য নয়।সৃষ্টিজগত তার মুখাপেক্ষি কিন্তুু তিনি সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষি নন!সংসদকে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের একমত হতে হয়!আবার সংসদ সদস্য হতে হলেও জনগনের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় এবং সর্বপরি সংসদকে জনগণের নিকট দায়ী থাকতে হয়!কিন্তুু আল্লাহ সর্বশক্তিমান।তিনি এসব দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
কাজেই স্রষ্টার স্রস্টা কে?যুক্তিবিদ্যার এ সাধারণ যুক্তি শুধুমাত্র সৃষ্টিজগতের জন্যই প্রযোজ্য!সকলকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ এপর্যন্ত পৌঁছেই যুক্তিবিদ্যার এ যুক্তির কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেছেন তিনি মানুষকে অত্যন্ত দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন! তিনি আরো বলেন,আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে যে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তার বাইরে মানুষের জানার কোনো ক্ষমতা নেই!
অবশেষে মানুষের ভাবা উচিত মাত্র দেড় কেজি ওজনের একটি পঁচনশীল মস্তিস্ক নিয়ে আমরা কিভাবে গর্ব করতে পারি যে আমাদের জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই থাকতে পারেনা?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩