somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়ার রহস্য : একটি কুমড়ার ওজন ৩ মণ

১২ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাদে সেরা আর আকৃতিতে বিশাল, যে কারণে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি রয়েছে দেশ ও বিদেশজুড়ে। দেশের জাতীয় কৃষি মেলা তথা আন্তর্জাতিক মেলা প্রদর্শনী ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে এ কুমড়া।

গত বছর আড়িয়ল বিলে ১১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। এ বছরও বিলের গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৈখালীসহ ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে স্থানীয় জাতের মিষ্টি কুমড়ার।

এর মধ্যেই জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন করে বাজারজাত করছেন কৃষকরা। এ বছর ফলনও হয়েছে ভালো, বিক্রিতেও রয়েছে চাহিদা। ফলন ও জমি থেকে বিলম্বে উত্তোলন হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার। একেকটি ৩০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের কুমড়া দেখতে যেমন সুন্দর আকৃতিতেও বিশাল। ফসল উত্তোলনে জমিতে সকাল থেকে কাজ শুরু করেন কৃষকরা।



জমির আকৃতি ও ফসলের পরিমাণ অনুযায়ী কমবেশি শ্রমিক কুমড়া উত্তোলনে কাজ করেন। শ্রমিকদের দিনপ্রতি পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা। শ্রমিকরা জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে গাদিঘাটসহ বিলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কুমড়া মজুত করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাইকাররা গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে যান।

গাদিঘাট এলাকায় দেখা যায়, পাইকারদের অপেক্ষায় ট্রলারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কুমড়া। কোনোটি গোলাকার আবার কোনোটি কিছুটা লম্বা আকৃতির।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একগন্ডা (১৪ শতাংশ) জমিতে ১০-১২টি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় ২০ থেকে ৬০টি কুমড়া হয়। রোপণের তিন মাস পরই ফসল তোলা যায়। শীতের শেষ দিকে ফসল বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়। এ বছরও ফলন ভালো হয়েছে।



কেজিপ্রতি ৫ থেকে বাজার ভালো হলে ৩০ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা কেজি দরে। একগন্ডা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে এসব কুমড়া পাইকাররা বিক্রি করেন। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলা ও আশপাশের জেলায়ও এসব কুমড়া বিক্রি হয়।

শ্রীধরপুর এলাকার চাষি বার্শেদ আলী বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে বিলে কুমড়ার চাষ করি। কেজি অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। খেতে খুব স্বাদ তাই বিভিন্ন জায়গার মানুষ আহে। আইলে কি ওইবো। এখনতে দাম পাইতাছি না। একপাখি (৩৫ শতাংশ) জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি কইরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উঠবো। এই কয় টাকায় তিন মাস খাটনিতে কি লাভ থাকে।’

গাদিরঘাট এলাকার অপর কৃষক মো. বাবু বলেন, ‘এ বছর ১৫ থেকে ২০ দিন দেরিতে ফসল উঠেছে। বাজারে বিক্রি হইতাছে। তবে দাম একবারে কম। বাজার অনুযায়ী দাম পাই আমরা। এখন কেজিপ্রতি ৬ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় ‘



আরেক কৃষক মনির হোসেন বলেন, ফসলের অনেক ভালো ফলন হয়েছে। জমির ২০ হাজার টাকার কুমড়া তুলতে ৮জন শ্রমিক লাগে। খরচ হয় ৪ হাজার টাকা। পাইকারদের কাছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি করতে পারলেও আমাদের অনেক লাভ হতো।

এ ব্যাপারে পাইকার লিটন শেখ বলেন, ৬টাকায় কুমড়া কিনে নিয়ে ঢাকার বাজারে ১২টাকায় বিক্রি করছি। এক গাড়ি কুমড়া নিতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৭হাজার টাকা। ৪ টনে গাড়িতে ২শর মত কুমড়া নিতে পারি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী জানান, এ বছর প্রায় ১৯০হেক্টর জমিতে কুমড়া আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতেই কুমড়া উত্তোলন শেষ হলেও এ বছর এখনো কুমড়া উত্তোলন শেষ হয়নি। উত্তোলন বিলম্ব হওয়ায় বাজারে কিছুটা কম দাম পেয়ে থাকতে পারে।




বিশাল আকৃতির কুমড়া ফলনের রহস্য:
কৃষি অফিসের সূত্রে মতে, প্রতিবছর বর্ষার পর বিলের জমিতে কুমড়রা আবাদ হয়। চারা রোপণের ৩ মাসেই ফসল উৎপাদনে সময় লাগে মাস। বিলের কুমড়ার জাত একবারেই স্থানীয় স্বতন্ত্র। অন্য কোনো জমিতে এলাকার কুমড়ার বীজ রোপণ করলেও এমন স্বাদ ও বিশাল আকৃতির হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী বলেন, বিশেষ ভৌগলিক কারণে এ বিলের কুমড়ার আকৃতি এতো বিশাল হয়ে থাকে। আমি অন্য কোন জেলায় এতবড় কুমড়া দেখিনি। মূলত বর্ষা মৌসুমে দীঘদিন বিলের জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসময় পানিতে জলীয় উদ্ভিদ জন্ম নেয়। পানি নেমে গেলে এসব উদ্ভিদ বিলের মাটিতে পঁচে প্রাকৃতিক সার হিসাবে কাজ করে। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে ফসল ভালো ফলন হয়।

৩মণ ওজনের কুমড়া!
এদিকে এ বছর বিলে সবচেয়ে বিশাল আকৃতির ১২১ কেজি (৩মণ ১ কেজি) ওজনের কুমড়া উত্তোলন করা হয়ছে গাদিঘাট এলাকার গনি শেখের জমি থেকে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ফেব্রুয়ারি) গাদিঘাট এলাকায় জমি থেকে উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের দিনই কুমড়াটি বিলে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তির কাছে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে সে। গনি মিয়ার ভাগিনা কৃষক বাবু জানান, এইবার দেখা বিলের সবচেয়ে বড় আকৃতির কুমড়া এটি। জমি থেকে ৪জন মিলে বস্তায় ভরে বাসে জুলিয়ে কুমড়াটি বাজারে নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে এর আগেও এর থেকে বড় কুমড়া দেখেছি। ৪ থেকে ৫বছর আগে একবার ৪ মণ ওজনের কুমড়া বাজারে তোলা হয়েছিলো।



হাইব্রিড জাতের কুমড়া আবাদ বেড়েছে:
এদিকে আড়িয়ল বিলে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ক্রমাগত বেড়েই চলছে হাইব্রিড কুমড়া চাষ। তবে সেসব কুমড়া স্বাদ ভালো হলেও আকৃতিতে অনেকটাই ছোট। ২থেকে ৭কেজি হয়ে থাকে হাইব্রিড জাতের কুমড়া।

হাইব্রিড কুমড়া চাষি শ্রীধরপুর এলাকার খন্দকার আবুল বারী জানান, দেশি কুমড়ার আকৃতি বড় হলেও একটি জমি থেকে এক মৌসুমে ২দফার বেশি উত্তোলন করা যায় না কিন্তু হাইব্রিড তিনবারও করা যায়। বাজারে চাহিদা আছে তাই এই কুমড়া রোপণ করি। একেকটি কুমড়া ৫০-১০০টাকায় বিক্রি হয়। লাভ ভালো হওয়ায় অনেক চাষিই হাইব্রিড চাষ করছে।

আরেক চাষি ইসমাইল মিয়া বলেন, দেশি কুমড়াই সব সময় রোপণ করি , তবে কয়েক বছর যাবত দেশির পাশাপাশি হাইব্রিডও চাষ শুরু করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:১৯
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×