শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, এতিহ্য আর কৃষ্টিতে ভরা মুন্সীগঞ্জ। এ মাটিতে জন্ম নিয়েছেন বিখ্যাত অনেক মনীষী। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাঁরা রেখে গেছেন অমর সব কীর্তি। সেই জ্ঞানের আলো আরো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারই ধারাবাহিকতায় লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে উদ্বোধন করা হয় ‘বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর’ নামের একটি লাইব্রেরি। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করে।
সরেজমিনে গিয়ে গ্রন্থ জাদুঘর দেখা যায়, হাজারো বই থরে থরে সাজানো রয়েছে আলমারির ভেতর। আধাপাকা এ ভবনের আধুনিকতার সঙ্গে রয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া। ওপরের সিলিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের চটি, যা গ্রামবাংলার কথা মনে করিয়ে দেয়। লাইব্রেরিতে দেখা হয় লাইব্রেরিয়ান রতন বর্মণ ও দীপক সূত্রধরের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর মূলত একটি গবেষণাকেন্দ্র। এখানে সাধারণ পাঠকদের তেমন আনাগোনা নেই। এখানে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো বই। রয়েছে তালপাতায় লেখা যুগের বইও। যাঁরা বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করেন, মূলত তাঁরাই এখানে আসেন। গবেষকদের থাকার জন্য এখানে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট একটি ছোট রেস্ট হাউস। পাশেই রয়েছে বিশাল দীঘি, মনোরম পরিবেশ। যাঁরা গবেষণাকাজে বই ব্যবহার করতে চান, তাঁরা গবেষণা করতে পারবেন এখানে থেকেই। কোনো মতেই বই বাইরে নিতে দেওয়া হয় না। ভবনের অন্য পাশে রয়েছে আব্দুল রহমান মাস্টার স্মৃতি পাঠাগার নামের একটি লাইব্রেরি। এটি বিশিষ্ট রাজনীতিক ও অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১৯৯৮ সালে। লাইব্রেরিটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত। একই সঙ্গে এখানে রয়েছে একটি কম্পিউটার কেন্দ্র। শিক্ষার্থীরা সেখানে থেকে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে পারে।
অগ্রসর বিক্রমপুরের সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, গ্রন্থ জাদুঘরটিতে বহু প্রাচীন বই রয়েছে। কেউ যদি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে এখানকার বই পড়তে চায়, তবে তাকে অগ্রসর বিক্রমপুরের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এখান থেকে বাইরে বই নেওয়া যাবে না। এখানে থেকে ফেলোশিপ দেওয়া হবে। এখানে থাকা-খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এখানেই বই নিয়ে ডিগ্রি বা গবেষণার জন্য পাঠ নিতে হবে। ভবিষ্যতে এখান থেকে স্কলারশিপ দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এখানে থেকে ফেলোশিপ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মূলত এটি একটি আর্কাভই বা জাদুঘর গ্রন্থাগার। এখানে অনেক পুরনো বই সংরক্ষিত আছে। এখন বই ক্যাটালগিং চলবে। যিনি রিসার্চ করতে চাইবেন তাকে ওই ক্যাটালগিং দেওয়া হবে।
গ্রন্থ জাদুঘরের ৩৫টি আলমারিতে ২০ হাজার বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে স্থান পেয়েছে তালপাতার বই, তুলট কাগজের বই, খোদাই করা ছাপার বই, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বই ছাড়াও বাংলা সাহিত্যসহ নানা ধরনের বই।