somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বর্ষন মোহাম্মদ
বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

উপমহাদেশের সব চাইতে উচুঁ ঐতিহ্যবাহী শ্যামসিদ্ধির মঠ

১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পে সম্মৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মাঝে ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর হলো অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরে পুরাকীর্তি ও স্থাপত্য শিল্পের কথা বলতে গেলে শ্যামসিদ্ধির মঠের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের বেষ্টনীতে আবৃত্ত শ্যামসিদ্ধির মঠটি লিভার্টি ষ্ট্রেচুর মত দাঁড়িয়ে আছে আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। আড়িয়ল বিলের মনোমুগ্ধকর অনাবিল পরিবেশ দেখে মনে হয় প্রতিনিয়ত শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটিকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বেড়ায়।
ঐতিহ্যবাহী মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার অর্ন্তগত শ্যামসিদ্ধি গ্রামে মঠটি অবস্থিত। শ্যামসিদ্ধি গ্রামের ধনাঢ়্য পরিবারের সন্তান শম্ভুনাথ মজুমদার তার স্বর্গগত পিতার স্বপ্নাদেশ পেয়ে তার স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য ১৭৫৮ইং বাংলায় ১২৪৩ সালে মঠটি নির্মান করেন। লাল ইটের তৈরী সুউচ্চু মঠটি বাহিরের দিক থেকে দেখতে ঠিক অষ্টাভূজাকার। মঠের সমুন্নত চূড়ার ওপর ছিল একটি কলস ও ত্রিশূল। কলসটি ভেঙ্গে গেছে কিন্তু লোহার ত্রিশূলটি এখনো আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।
শ্যামসিদ্ধি মঠ সমন্ধে বিভিন্ন লেখকদের বই থেকে পাওয়া তর্থ্য অনুযায়ী মঠটির উচ্চতা প্রায় ২৪০-২৪২ ফুট, প্রত্যেক দিকের বর্গাকার ভূমির দৈর্ঘ্য ২১ ফুট, মঠের ভিতরে ক্ষেত্রফল ৩২৪ বর্গফুট এবং প্রবেশদ্বারের উচ্চতা ২৭ ফুট। মঠটির গায়ে সোনারং অঞ্চলের কিছু স্থাপত্য কর্মের নমুনা আছে যা দেখতে ঠিক ফনা বিশিষ্ট সর্পমূর্তি ও লতাপাতার অলংকরনের নকশা দিয়ে সজ্জিত।
অষ্টাভূজাকার দেয়ালের প্রত্যেকটিতেই জানালার মত প্যানেল আছে সেগুলো খোলা যায়না। বিক্রমপুরের হিন্ধু রাজা রায় বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার্থে এ অঞ্চলে বহুমঠ ও মন্দির নির্মান করেন। যেমন তালতলার ফেগুনাসার মঠ, তাজপুরের সরকার
বাড়ীর সরকারদের মঠ, সোনারংয়ের মন্দির, আউটশাহীর মঠ, তেহরিয়ার মঠ, মাইজপাড়ার জোড়া মঠ, ষোলঘরের পাকিয়াপাড়ার সাদা মঠ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটির মধ্যে গৌরিপটে একটি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ছিল। শিব লিঙ্গটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ফুট। সনাতন ধর্মালম্বী মানুষ এই মঠটি শিব মন্দির বলে থাকে। মঠটির উচুঁ শিখরটির চারিপাশে ঘিরে থাকা অনেক ছিদ্র দেখতে পাবেন, যার মধ্যে বাসা বেঁধেছে অজস্র পাখি, সন্ধ্যায় ঝাঁক বেঁধে ফিরে আসে নীড়ে।
প্রতি বছর শিব চর্তুদশীতে বহুদূর দূরান্ত থেকে এসে হিন্ধু সম্প্রাদায়ের কুমারী মেয়েরা সাতপাক ঘুরে সারারাত শিবের মাথায় জল ঢালেন, তাদের বিশ্বাস শিবের পূজা করলে সুদর্শন স্বামী পাওয়ার বর লাভ করা যায়।
মঠের একপাশে একটি বিদ্যালয় বিরাজমান, আরেক পাশে বিশাল এক মাঠ। সে মাঠে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিন থেকে গোলইয়ার মেলা বসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সে মেলা দেখতে অনেক মানুষের সমাগম হয়। এর ফলে শ্যামসিদ্ধি গ্রামটি পরিনত হয় এক মিলন মেলায়। বিক্রমপুরের মানুষ মনে করেন শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটি ভারতের দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়ে উঁচুতো বটেই এটি সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উঁচু মঠ। ধ্রুব তাঁরার মত আলো প্রজ্জলিত করে শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রতাপশালী রাজার মত।
শ্যামসিদ্ধির মঠটি বর্তমানে কৃষ্ণ মন্ডলের স্ত্রী পারুল রানী মন্ডল মঠের পূজার কার্যাদি পরিচালনা করেন। মঠের শিব লিঙ্গটি মহা মূল্যবান কালো কষ্টি পাথরের ছিল ১৯৯৫ সালে ৩০ শে সেপ্টেম্বর শিব লিঙ্গটি চুরি হয়ে যায়। জরাজীর্ণ মঠটির নিচের কিছু অংশ সরকারি অনুদানে সংস্কার করা হয়েছে ইট সিমেন্ট বালু টাইলস পাথর দিয়ে। মঠের ভিতরে প্রবেশ করা ভাংঙ্গা দরজা জানালা গুলোও লাগানো হয়েছে নতুন করে।
পুরাকীর্তির ঐতিহ্য বহন করা মঠটি দেখার জন্য দেশ তথা বিদেশ থেকে ও অনেক পর্যটক ছুটে আসেন শ্যামসিদ্ধি গ্রামে। অনেকেই মঠটির পুরাকীর্তি সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এসে হতভাগ হয়ে যান। যখন দেখে মঠটির প্রবেশদ্বারসহ চারিপাশ টাইলস পাথর লাগানো। ভ্রমন পিপাশু অনেকে মঠটি দেখতে এসে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন মঠটিকে ইট সিমেন্ট বালু টাইলস পাথর দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। যা সঠিক হয়নি। এতে করে মঠটি হারিয়েছে পুরাকীর্তির নির্দেশন।
যদি সঠিক ভাবে এ জরার্জীণ মঠটি সংস্কার করা যায় তবে শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। শ্যামসিদ্ধির মঠটি শুধু বিক্রমপুরের নয় সারা বাংলাদেশের নয় সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে এটি ঐতিহ্যবাহী মঠ। এই মঠ আমাদের গর্বের বস্তু। শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটি যথাযথা রক্ষনাবেক্ষন করা না হলে এটি কালের গর্বে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:০৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×