somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সবচেয়ে এক্সট্রিম স্থানগুলো-- (পর্ব৩)

১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১১) সবচেয়ে খারা স্থান -- Mount Thor


আমি যখন চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি যাচ্ছিলাম খেয়াল করলাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে সুরা কেরাত পরা শুরু করেছে। কারন বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে সে মাটির বদলে গভির খাদ দেখতে পাচ্ছিল। উচ্চতা ভিতি থাকলে যা হয় আরকি। কিন্তু কেটা পাহার থেকে নিচে তাকালে সাধারনত আমরা যেটা দেখি ঢালূ একটা ধার নেমে গেছে নিচের দিকে। কিন্তু যে পাহারগুলো একেবারে খারা নেমে যায় সেগুলো কিন্তু মারাত্মক ভয়ানক হয়। আর সেই রকম খারা স্থানের মধ্যে সেরা এবং সর্বোচ্চতম হচ্ছে এই Mount Thor।


মারাত্মক এই পর্বতটির ভুমি থেকে উচ্চতা ১২৫০ মিটারের উপরে বা সোয়া এক কিলোমিটার। এই পুরো উচ্চতাটাই একেবারে খারা হয়ে উঠেগেছে। পর্বতটি এভাবে সৃস্টি হওয়ার কারন হিসাবে বিজ্ঞানিরা বলেছেন কোন এক অদ্ভুদ কারনে এখনে কোন একসময় ভয়ানক একটা ভুমিকম্পের ফলে এই পর্বতটির একটা সাইড হঠাৎ করে ধ্বসে পরে যায়। বিষয়টা আমার মাথায় একেবারেই ঢুকে নাই।


এই কারনে এটি মুলত হাইকার পা পর্বোতারোহিদের জন্য অত্যান্ত পছন্দের একটা স্থান। হাইকরারা এটাতে উঠার সময় সাধারনত প্যারাসুট নিয়ে উঠে। চুরায় উঠার জন্য তারা এই খারা স্থানটাকে ব্যাবহার করে। কোন ভাবে এটা থেকে একটা বার পাপিছলে পরে গেলেই শেষ। প্যারাস্যুটও তখন বাচাতে পারে না।

১২) সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নির্জন স্থান -- Dallol, Ethiopia


এই স্থানটি ইথিউপিয়ার উত্তরদিকে অবস্থিত। সমুদ্রের কাছাকাছি সত্তেও এটি সমুদ্র প্রষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২৬ ফিট নিচু। পুরো অঞ্চলটিই মরুভুমি। প্রশ্ন উঠতে পারে যেহেতু এটি একটি মরুভুমি তাহলে তো এখানে মানুষ বাস না করারই কথা। কিন্তু আসলে এখানে মানুষ বাস না করার অন্যএকটা কারন। মরুভুমি হলেও এখানে প্রচুর পরিমানে পানি আছে। পানি থাকলেও সেই পানি খাওয়া বা ব্যাবহার করার মতন নয়।


এই অঞ্চলটি তাপমাত্রা গড়ে ৪২ ডিগ্রির উপরে থাকে সবসময়। কি দিন কি রাত সবসময়ই অসহ্য গরম। সাথে সাথে মাটি নিচে থেকে উগরে বেস হয় প্রচন্ড গরম পানি। সেই পানিতে থাকে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত এসিড এবং খনিজ পদার্থ। এই সব কারনে এখানে মানুষ্য বষতি একেবারেই নেই। এবং মনুষ্য বষতি না থাকাতে পুরোটাই আস্তে আস্তে মরুভুমিতে পরিনত হয়েছে।


এখানে একটা পাটাশের খনি পাওয়া গেছে সত্তরের দশকে। যার কারনে এখানে একটা রেইল রোড নির্মান করা হয়। বলা হয়ে থাকে রেল পথ নির্মান শ্রমিকদেরকে বেশি বেতন দিয়েও রাখা যেতনা এখানে। আবার খনিতেও কেউ ভালো করে কাজ করতে চায় না বিষাক্ততার কারনে। এখানের বাতাষও মাঝে মধ্যে বিশাক্ত হয়ে উঠে। প্রচন্ড গরম আর বিষাক্ততার জন্য এইটি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নির্জনতম স্থান।

১৩) উত্তরে সর্বশেষ ভুমি -- Kaffeklubben Island


এটি একটি আইল্যান্ড বা দ্বিপ। সাইজে খুবই ছোট কিন্তু এটির বিশেষত্ব হল এন্টার্কিটার বরফের রাজ্যের ঠিক আগে এই ছোট্ট দ্বিপটিই হচ্ছে সর্বশেষ জমি। এর পরে শুধুই বরফ আর বরফ। জমির আর কোন দেখা পাওয়া যাবে না। দ্বিপটি গ্রিনল্যান্ড এর সর্বউত্তরে অবস্থিত। মজার বিষয় হচ্ছে এটি সম্পর্কে হাজার বছর ধরে কোন ধারনাই ছিল না।


১৯০৫ সালে আমেরিকার অভিযাত্রি Robert Peary প্রথম এটির দর্শ পান। তিনি মুলত উত্তরমেরুর উদ্দেশ্যে গ্রিনল্যান্ডের উত্তর উপকুল ধরে একটা নতুন রুটে যাচ্ছিলেন। তখনই তার চোখে এটি পরে। তিনি এটিতে বেশ কিছু গাছ এবং ফুল পান। যদিও এখানে এই প্রচন্ড ঠান্ড পরিবেশে কিছুই জন্মাবার কথা ছিল না।


মজার বিষয় হচ্ছে এই দ্বিপের আসে পাশে কখনোই ভালো ভাবে পানি পাওয়া যায় না। মানে সবসময়ই বরফ থাকে সমুদ্রের পানি। কিন্তু অদ্ভুদ বিষয় হচ্ছে এই দ্বিপটিতে কখনোই সেভাবে বরফে ঢেকে যায় না। তাই প্রায়ই এই অঞ্চলদিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন জাহাজ এই দ্বিপটি দেখে কিছুটা অবাক হয়ে আর চোখ জুরিয়ে নেয় সেই জাহাজের নাবিকেরা। কারন শুভ্র সাদার এই সাগরে একটুকরো মাটি দেখা চোখের জন্য একটু আরামই বৈকি।

১৪) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -- Vostok Station, Antarctica


পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় এন্টার্কটিকায় ভস্টক স্টেশনে। এই স্টেশনটি ১৯৫৭ সালে নির্মান করে রাশিয়া বা তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন মেরুর বরফ গবেষনার জন্য। এটির অবস্থান একেবারে সেন্টার উত্তর মেরু থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিনে। স্টেশনটি থেকে সোভিয়েত বিজ্ঞানিরা প্রধানত ড্রিলকরে বরফের নিচের স্যাম্পল নিয়ে গবেষনা চালাতেন।


এখানে রেকর্ডকৃত তাপমাত্রায় দেখা যায় যে সর্বোচ্চ তাপমাত্র উঠে নেগেটিভ ১২ ডিগ্রিতে এবং সর্বনিম্ন নেমেযায় নেগেটিভ ৯০ ডিগ্রিতে। সাধারনত এই তাপমাত্রায় মানুষ খালি গায়ে খুব বেশি হলে মিনিট তিন চারেক বাচতে পারবে। এই স্টেশনের কিছু মজার বিষয় আছে। এখানে কখানোই ফ্রিজিং বা বরফ তাপমাত্রা চেয়ে বেশি হয় না। এখানে বছরে টানা প্রায় ৬ মাস দিনে ২০ থেকে ২৩ ঘন্টা সুর্যের আলো পাওয়া যায় আর টানা ৬ মাস ২৪ ঘন্টাই অন্ধকার থাকে। স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সারে তিন কিলোমিটার উপরে। এতটা উচুতে থাকার ফলে এখানকার বাতাস সবসময়ই প্রচন্ড শুস্ক থাকে।


এই অঞ্চলটিই বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা অঞ্চল হিসাবে স্বিকৃত। এখানে খুব কম মানুষই থাকতে পারে। যারা থাকে তাদেরকে স্পেশাল হিসাবেই ধরে নেয়া হয়। সাধারনত ঠান্ডার সময় খুব বেশি মানুষ এখানে থাকে না। তারপরও খুবই মারাত্মক এই পরিবেশে যারা থেকেছে তাদেরকে ধরেই নেয়া যায় অসাধারন টাইপের মানুষ তারা।

১৫) গভিরতম বরফ-- Bentley Subglacial Trench


এটিও এন্টার্কটিকাতে অবস্থিত। নামটি দেয়া হয়েছে আমেরিকান অভিযাত্রি Charles R. Bentley এর নাম থেকে। কারন তিনিই প্রথম এই স্থানটি আবিস্কার করেন। এই স্থানটিতে যা আছে তা হচ্ছে বরফ। এখানে একটি আস্ত সাগর থাকার কথা। কিন্তু তা নেই। যদি সাগর থাকতো তাহলে এর গভিরতা হত ২৫৫৫ মিটার বা আড়াই কিলোমিটেরর বেশি। কিন্তু এই পুরো গভির স্থানটিই বরফে আচ্ছাদিত।


সমুদ্র পৃষ্ঠথেকে মাটির গভিরে বরফ এর মাত্রা এটাই সর্বোচ্চ। এখানে ড্রিল করে আমাদের এই পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপুর্ন ইতিহাস পাওয়া গেছে। কারন কোন এক সময় এখানে বরফের বদলে পানি ছিল। তাই এখানে জমে থাকা বরফের মধ্যেই রয়েছে প্রাগতৈহাসিক আমলের অনেক জীবজন্তুর জিবাষ্ম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:২২
১৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×