অনেকের কাছেই বিষয়টা বিশ্বাস করতে একটু কস্ট হলেও সত্যিটা হচ্ছে আমাদের এই অত্যাধুনিক সময়েও বিজ্ঞানিরা অনেক প্রাকৃতিক ঘটনারই বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এই প্রাকৃতিক ঘটনা গুলো বিজ্ঞানি এবং মানুষের চোখের সামনে নিয়মিত ঘটছে এবং ঘটে আসছে কিন্তু বিজ্ঞানিরা অনেক খুজেও এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কেন পারেননি সেটা না খুজে বরং চলুন দেখেনেই কোন কোন প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো বিজ্ঞানিরা এখনও ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।
১) Sun´s corona


আমরা জানি সুর্য হচ্ছে অত্যান্ত উচ্চ তাপমাত্রার একটা গ্যাসের বল। করনা হচ্ছে এই গ্যাসের বলের চারপাশে থাকা এক ধরনের রিংএর মতন ছিটকে যাওয়া পদার্থ। বিজ্ঞানিরা এর নাম দিয়েছেন করনা। এটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেছে কিন্তু যেই জিনিষটা এখনো তারা জানতে পারছেন না যে কেন এটা তাপমাত্রা সুর্য পৃষ্ঠ থেকে অনেক অনেক বেশি। মুলত সুর্যের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা হচ্ছে ৫৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু সেই পৃষ্ঠতল থেকে অনেক অনেক দুরে অবস্থিত ছিটকে পরা কিছু গ্যাসের তাপমাত্রা কিভাবে ত্রিশ লক্ষ থেকে কোটি লক্ষ ডিগ্রিসেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়ে যায়। আমরা সাধারনত যা বুঝি সেই সিস্টেমে তো তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কথা কারন বস্তু তার হোস্ট থেকে দুরে সরে গেলে তাপমাত্র করে যাবে। কিন্তু এখানে কেন পুরোপুরি উল্টোটা হচ্ছে সেটাই এখনো খুজে পাচ্ছেন বিজ্ঞানিরা। অনেকেই অনেক ধরনের থিউরি দিয়েছেন কিন্তু কেউই এখন পর্যন্ত শিউর করে প্রমান করতে পারেননি এই ঘটনাটা কেন ঘটে।
২) Animal migration

প্রানি জগতের একটা অসাধারন আর আশ্বর্যজনক জিনিষ হচ্ছে এই মাইগ্রেশন। দেখা যায় আমাদের দেশে শীতকালে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে কিছু পাখি আসে। আমরা তাদেরকে অতিথি পাখি বলি কিন্তু কোনদিনকি একবারও জানতে চেয়েছি কেন তারা এরকম মাইগ্রেশন করে থাকে। আসলে বিজ্ঞানিরা এখনও খুজছেন কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাধারনত পানিতে থাকা তিমি থেকে শুরু করে আফ্রিকার যেব্রা হয়ে, হাতি , পাখি পর্যন্ত বছরের একটা নির্দিস্ট সময়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে একটা নির্দিস্ট স্থানের মধ্যে যাতায়াত করে। মজার বিষয় হচ্ছে এটা তারা দল বেধে করে থাকে এবং তাদের সময়ের কোন হেরফের হয় না এতে। অথচ এর জন্য তাদের কোন লিডার থাকে না কোন পথপ্রদর্শক বা গাইডও থাকেন না এমনকি কেউ জানেও না কোথায় যাচ্ছে। আশ্বর্যজনক এই ঘটনাটার রহস্য মুলৎপাটনের জন্য এখন বিজ্ঞানিরা প্রচুর গবেষনা করছেন। বিজ্ঞানিরা প্রানিদের মস্তিস্কে একধরনের ডিভাইস বসাচ্ছেন যাতে তারা বুঝতে পারেন কিভাবে এই অবুঝ প্রানিগুলো পথ না হারিয়েই সঠিক দিকে দিনে পর দিন চলতে পারে এবং নির্দিস্ট এলাকায় গিয়ে পৌছে যায়।
৩) Taos hum

এটি একটি রহস্য জনক ঘটনা যা ঘটে থাকে পৃথিবীর অনেক স্থানেই। সাধারনত কোন একটা এলাকাতে এমন অদ্ভুৎ শব্দ হয় যে রাতে বা অন্ধকারে ভয় পাইয়ে দেয়। মানে হয় কেউ কাদছে বা একই সুরে বাশি বাজাচ্ছে। এটাকেই hum বলা হয় সাধারনত। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে রহস্যজনক হচ্ছে মেক্সিকোর Taos নামক এলাকার বাসিন্দাদের কানে শোনা অদ্ভুৎ এই শব্দটি। অনেক বিজ্ঞানি যারা ওখানে গবেষনার জন্য গিয়েছেন তারাও এই শব্দটি শুনেছেন। তারা শব্দের উৎস বের করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা, সাউন্ডরেকর্ডার সহ অনেক ধরনের গবেষনা চালিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই খুজেই পাননি কোথা থেকে এই শব্দ উৎপন্ন হয়। অদ্ভুৎ এই শব্দটি রাতের বেলা যে কারো মনের মধ্যে ভায়ের চাদর বিছিয়ে দেয়ার জন্য যথেস্ট। তবে মজার বিষয় হচ্ছে সবাই এই শব্দটি শুনতে পান না।
৪) Jellyfish disappearance from the Jellyfish Lake



এটি একটি লেক যেখানে জেলিফিস বাস করে। অস্ট্রেলিয়ার পাশেই দ্বিপ রাস্ট্র পালাও এর দ্বিপ Eil Malk এর মধ্যে এই লেকটি অবস্থিত। মজার বিষয় হচ্ছে এই লেকের পানিতে শুধু জেলিফিসই পাওয়া যায়। তাও স্বর্নালি রংয়ের জেলিফিস। সরাবছর এখানে গেলেই দেখা যাবে জেলিফিসরা দল বেধে ঘুরে বেরাচ্ছে স্বচ্ছ পানির ভিতরে। মুলত এই লেকটির সাথে সমুদ্রের কানেকশন আছে পানির নিচদিয়ে কিছু সরু টানেল এবং গুহার দ্বারা। এগুলো মুলত হাজার বছর ধরে সৃস্টি হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে জেলিফিসগুলো মুলত প্রায় প্রতিদিনই লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে অদ্ভুদ ভাবে ভ্রমন করতে থাকে। এটাও পর্যটকদের জন্য একটা আর্ষনিয় বিষয়। কিন্তু হঠাৎ করে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই দুবছরে কোনদিনও একটা বারের জন্য একটা সিঙ্গেল জেলিফিস এই লেকে আসেনি। বিষয়টা সবার নজরে আসার কারন হচ্ছে প্রচুর পর্যটক এই দ্বিপে নিয়মিত যেতেন জেলিফিস দেখার জন্য। কিন্তু এই সময়টাতে কোন জেলিফিস আর আসেনি। কর্তৃপক্ষ এবং সরকার যখন এদের আশা একেবারে ছেরেই দিয়েছেন তখন হঠাৎ করে এরা আবার আসতে শুরু করে লেকটিতে। কিন্তু এই ঘটনাটা কেন ঘটেছে এবং এর কোন ব্যাক্ষা কোন জীববিজ্ঞানি আজ পর্যন্ত দিতে পারেন নি। তারাতো এমনকি কেন জেলিফিসগুলো প্রতিদিন এই লেকে আসে সেটারই কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
৫) Ice circles


এগুলো একই সাথে আইস ডিস্ক বা আইস প্যান নামেও পরিচিত। সাধারন খুব স্লো বা মন্থর গতির পানিতে এই ধরনের গোলাকার বরফের চাকতি দেখা যায়। এগুলা এতটাই গোল হয় যে অবাক হয়ে যেতে হয়। অনেকেই এগুলো নিয়ে বিভিন্নধরনের মতামত দিয়ে থাকেন। যেমন কেউ কেউ বলেন এগুলো সৃস্টি হয়েছে মন্থরগতির পানি ঘুর্ননের ফলে। কিন্তু বিজ্ঞানিরা বিষয়টা মানতে নারাজ কারন পানি ঘুর্ননের ফেলে এটা তৈরি হবার সময়ই এগুলো ফেটে চৌচির হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এখনে এগুলো একোবরে চমৎকার এক শেইপে গোলাকার ডিস্ক আকারে পানিতে ভাসছে।
৬) Hurricane on Saturn

শনি গ্রহ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি যে এটির চার পাশে একটি রিং এর মতন আছে। নাসা অনেক আগে শনিগ্রহতে গবেষনা চালানোর জন্য একটা উপগ্রহ পাঠিয়েছিল। ২০১৩ সালে হঠাৎ করে সেই উপগ্রহে ধরা পরে এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। বিজ্ঞানিরা দেখতে পান একটা সুবিশাল হ্যারিকেন ঝর শনিগ্রহের বুকে আঘাত হেনেছে। আমরা যেটাকে সাধারনত সাইক্লোন বলি সেই রকম ঝরটার চোখ বা রেডিয়াস এর ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। অসম্ভব শক্তিশালি এই ঝরে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। যেটা বিজ্ঞানিদের হতবাক করেছে যে এই ধরনের ঝর এর সৃস্টিহয় সাধারনত সমুদ্রপৃষ্ঠের অতিরিক্ত উত্তপ্ত তাপমাত্রার ফলে। যেটা পৃথিবীতে ঘটা সম্ভবন। কিন্তু শনি গ্রহে কোন সমুদ্র নেই এমনকি সেখানে এই ধরনের কোনকিছুই নেই যা এই ধরনের একটা ভয়ানক এবং প্রচন্ড শক্তিশালি হারিকেনের সৃস্টি করতে পারে। বিজ্ঞানিরা এখনো খুজছেন এই অদ্ভুৎ ঘটনার কারন। অনেকেই বলছেন এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারলে শনিগ্রহের অনেক অজানা রহস্য সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।
৭) Monarch butterfly migration

একটু আগে ২৪ নাম্বার পয়েন্টে প্রানিজগতের স্থানান্তর বা মাইগ্রেশন নিয়ে কথা বলেছি। এই প্রজাপতিটিা কিন্তু একই শ্রেনির। কিন্তু এইটা বিশেষত্ব হচ্ছে এই প্রজাপতিটা জন্মের পরে মাত্র ৬ মাস বাচে। ঠিক ৬ মাস পরেই প্রজাপতিটা মারা যায়। তো একটা ফুল সাইকেলরে মাইগ্রেশনের জন্য একটা প্রানির সময় লাগে এক বছর। মানে বছরের শুরুতেই তারা যাত্রা শুরু করে কিন্তু ফেরত আসে তাদের পরবর্তি প্রজন্ম। প্রশ্নটা হচ্ছে কিভাবে এরা সঠিক পথখুজে ঠিকঠাক মতন একই স্থানে চলে আসে যেখানে তার পিতামাতার জন্মহয়েছিল। বিষয়টা এতটা আজব যে অনেকেই অনেক ধরনের থিউরি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে বিজ্ঞানিরা এই প্রজাপতির মাথার সাথে একধরনের এন্টেনা পেয়েছেন যেটা পথপ্রদর্শকে মতন কাজ করে। কিন্তু এখনও শিউর না কিভাবে তারা এই পথটা নিজে থেকেই চিনে নেয়।
৮) Animal rain

বৃস্টির সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রানি পরাটা এখন আর আজগুবি গল্প নয়। এটা আসলেই সত্যি যেমন ২০০০ সালে ইথিওপিয়াতে টনকে টন মাছের বৃস্টি হয় যার মথ্যে বেশিরভাগ মাছই জিবিত ছিল এবং তাদের সবগুলোই একই প্রজাতির ছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৮৬১ সালে সিঙ্গাপুরে মাছ বৃস্টি হয়েছিল, ২০০৯ সালে জাপানে ব্যাঙ এর বৃস্টি হয়েছিল, ২০১৪ সালে শ্রিলংকাতেই মাছের বৃস্টি হয়েছিল। সবচেযে মারাত্মক হয়েছিল ১৬৮০ সালে ইংল্যান্ডের কোন এক এলাকাতে সাপের বৃস্টি হয়েছিল। সম্ভব্য কারন হিসাবে ধরা হয় টর্নেডোর মধ্যে মারাত্মক ঘুর্নিঝরের ফলে প্রানিগুলোকে উপরে তুলে নিয়ে যায় ফলে সেগুলো বৃস্টির সাথে পরে। কিন্তু বিজ্ঞানিরা যেই বিষয়টার ব্যাখ্যা করতে পারেননি তা হচ্ছে সবসময় কেন একই প্রজাতির প্রানি বৃস্টি হয়। যেমন মাছের বৃস্টি হলে একই ধরনের মাছ পরবে, ব্যাঙ পরলে একই প্রজাতির ব্যাঙ পরবে
৯)Mapimi silence zone

এই এলাকাটি মেক্সিকোতে অবস্থিত। এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি অত্যাধিক রকমের নির্জন এলাকা। এতটাই নির্জন যে এখনে গেলে অনেক মানষিক ভাবে বিষন্ন হয়ে পরেন কারন কোন শব্দ না পাওয়ার ফলে এধরনের অবস্থা হয়। যেটা বিজ্ঞানিদের আরো বেশি অবাক করেছে সেটা হচ্ছে এখানে আমেরিকা থেকে উৎক্ষেপিত একটা মিসাইল ধ্বসে পরে ১৯৭০ সালে, আবার এপলো মহাকাশ যানের বিচ্ছিন্ন ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং ইঞ্জিনও এখানেই পতিত হয়েছে। আবার এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় carbonaceous-chondrite টাইপের উল্কাপাত হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও এলাকাটাতি এতটা নির্জন বা শব্দহীন কেন সেটাই এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।
১০) Earthquake lights


এই বিষয়টা প্রথমদিকে বিজ্ঞানিরা ভুয়া বলে তুরি মেরে উরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন ১৯৬০ সালে একটা বৈজ্ঞানির এক্সপিডিশন গ্রুপ এই জিনিষটার ছবি তুলে তখন বিষয়টা নিয়ে সবাই ভাবতে শুরু করেন। আসলে যখন ভুমিকম্প হয় তখন এপিসেন্টার বা ভুমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের দিকে একধরনের অদ্ভুৎ আলোর বিচ্ছুরন দেখা যায়। এগুলো বলরে মতন আকাশের দিকে লাফ দিয়ে উঠে বিলিন হয়ে যায়। বিষয়টা নিয়ে বিজ্ঞানিরা অনেক ধরনের থিউরি দিয়েছেনে কিন্তু কোনটাই স্বিকৃতি পায় নি আজ পর্যন্ত।
১১) Volcanic lights

একই ধরনের আলো দেখা যায় যখন কোন পর্বত থেকে অগ্ন্যুত্পাত ঘটে। পর্বত থেকে অগ্ন্যুত্পাতের ঠিক আগ মুহুর্তে মারাত্মক ধরনের কিছু আলোর ঝলক ছিটকে আকাশে দিকে উঠে আসে এবং নিমিষে হারিয়ে যায়। বিষয়টা এতটা রহস্যময় যে অনেক বিজ্ঞানি নিজের ক্যামেরা সেটাকে ধারন করার পরেও বিষয়টা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা দিতে পারেন নি। অনেকেই বলেছেন অগ্ন্যুত্পাত এর ঠিক আগ মুহুর্তে কোন একটা উপাদান পাথরের ইলেক্ট্রিক চার্জ কে ইলেক্ট্রিফাই করে ফেলে। ফলে এই ধরনরে আলোর বল এর সৃস্টি হয়। কিন্ত্র সেই উপাদানটা কি সেটাই ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি তারা। আবার অগ্ন্যুত্পাত এর পরে যে ধোয়ার সৃস্টি হয় সেখানেও রহস্যজনক lightning bolt বা বজ্রপাতে দেখা যায়। অথচ সেখানে অগ্ন্যুত্পাত এর ছাই ছারা কিছুই নেই। বিজ্ঞানিরা অবশ্য বলেছে এই ছাইয়ের মেঘই মুলত এই রহস্যজনক বজ্রপাতের কারন।
ভালো লাগলে আমার ফেসবুক থেকে ঘুরে আসতে পারেন
আমার ফেসবুকে যাওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




