somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুর হাতে জ্বলন্ত সিগারেট

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিমু ভাই !! হিমু ভাই !! ওঠো।
সাজেদ আমাকে ধাক্কায় আর মোটামুটি একরকম চিৎকার করছে বলা চলে। আমি শুয়েছিল কমলাপুর ষ্টেশন এর প্লাটফর্মে। ময়লা পরা এক কাথা মুড়ি দিয়ে। সাজেদ ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আমার । চোখ মেলে ধীরে ধীরে উঠে বসতে বসতে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে সাজেদ কে জিজ্ঞেস করলাম,
-কিরে? এত রাতে তুই এখানে ??
-আমি হিমু হবো। তোমার সাথে থাকবো আজকে থেকে।
-ও। হবি, সমস্যা নাই। রাত ৪ টার সময় এসে ঘুম ভাঙ্গায় বলতে হবে এইটা ? আর এতো রাতে তুই বাইরেই বা কি করে ?
-বাসা থেকে বের হয়েছি রাগ করে। যাবো না আর ফিরে। তোমার সাথে থাকবো এবং হিমু হওয়ার প্রশিক্ষন নিবো, তারপর নিজের মত করে হিমু হয়ে ঘুরে বেড়াবো।
-খুব ভালো। টাকা আছে তোর কাছে ? একটা সিগারেট নিয়ে আয়, শীতের রাতে কাথার নিচে থেকে সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে নাক দিয়ে ধোয়া ছাড়তে কেমন লাগে, এটা জানি না। এখন চেষ্টা করে দেখি।
- আছে।

এই বলে পকেট থেকে গোল্ডলিফ এর প্যাকেট আর ম্যাচ বের করে আমাকে দেয় সাজেদ।
আমি সেখান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে আয়েশ করে টানছি।

এভাবেই সাজেদ হিমু হওয়ার জন্য প্রথমবার আগ্রহ প্রকাশ করে। যদিও সেদিন সাজেদ কে বুঝিয়ে বাসায় পাঠাতে পেরেছিলাম ।

আজ হিমু দিবস,এত দিন ছিলো না।আমি জীবনে কল্পনা করি নাই আমার নামে বা আমার জন্য কোন দিবস হবে। সব দিবস থাকলে ও হিমু দিবস ছিলো না। দিবস টি যারা যখন করেছে তাদের ধন্যবাদ। আমার নামে দিবস শুনে খুব ভালো লাগছে। মন টা খুব খুশী আমার আজ।

২/

তাই আজ রাতে বের হয়েছি হাঁটবো বলে হঠাৎ কি মনে হল আরে সাবরিনা সিরাজী তিতির আপু এত ষ্টেশন নিয়ে লিখে রেললাইন তার খুব প্রিয়। তাই আমি ভাবলাম আজ রেললাইন দিয়ে হাঁটবো অনেক দিন তো রাস্তায় হাঁটলাম আজ না হয় রেললাইন দিয়ে হাঁটি প্রথমে প্লাটফর্মে অনেক মানুষের কোলাহল দেখতে পেলাম,কেউ কেউ খুব ব্যাস্ত হয়ে টিকিট কিনছে তো কেউ বসে বসে ঝিমাচ্ছে। আবার কেউ বা আয়েশ করে সিগারেট খাচ্ছে। আমি আমার মত রেললাইনের দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু ঐ আয়েশি করে বসে থাকা কিছু মানুষের সিগারেট খাওয়া দেখে আমার ও নেশা চেপে গেলো আর সিগারেটের ধোয়াও নাকে গিয়েছে তাই আরো বেশী করে নেশা চেপে ধরেছে।কিন্তু নেশা ধরলে কি হবে আমার গায়ে রুপার দেয়া সেই পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী তাই পকেট যেহেতু নেই তাই টাকা তো থাকার প্রশ্ন আসে না।আর অনেকে ভাবতে পারে বা বলতে পারে প্যান্টের পকেট তো আছে সেখানে টাকা নেই। তাদের বলি আমার প্যান্টের পকেট আছে ঠিকি কিন্তু সেই পকেটে কোনদিনই টাকা ছিলো না আজ ও নেই। তো টাকা না থাকার কারনে সিগারেট খাবার নেশা টা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে আমার মত আমি রেললাইন দিয়ে হাঁটার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। একবার মনে চাইছিলো যারা সিগারেট খাচ্ছে তাদের কে গিয়ে বলি ভাই একটা সিগারেট হবে কিন্তু সে ইচ্ছা মত আর কাজ করলাম না অনেকে নানান রকম চিন্তা করতে পারে তাই আর গেলাম না আবার কেউ কেউ অপমান ও করতে পারে আবার আমার খালি পা দেখে ভেবে বসে বলতে পারে আমি নেশাখোর টাইপ কেউ কিনা তাই মাথা নিচু করে হাঁটা ধরলাম আমার মত। হাঁটতে হাঁটতে রেললাইনের একটু অন্ধকারের দিকে এসে পড়লাম আর তখন দেখলাম একটা ছেলে মাথা নিচু করে বসে আছে আর তার মুখে জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দেখা যাচ্ছে। তখন মনে মনে চিন্তা করলাম এই ছেলেটার কাছ থেকে একটা সিগারেট চেয়ে খেতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ আমি তার কাছে হেঁটে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম তাকে এই যে ভাই একটা সিগারেট হবে।ছেলেটি আমার কথার কোন উত্তর তো দিলো না এমন কী সে মাথা টা উচু করে আমার দিকে তাকালো ও না। আমি আবার একটু গলা খাকরিয়ে তাকে বললাম ভাই আপনার কাছে কী একটা সিগারেট হবে। এইবার ছেলেটি আমার দিকে না তাকিয়ে প্যাকেট এগিয়ে দিলো আমি একটা সিগারেট নিয়ে তাকে বললাম ভাই আগুন টা একটু দেয়া যাবে। ছেলেটি আবার মাথা নিচু করে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে ম্যাচ লাইট বা আগুন কিছুই দিলো না। মেজাজ টা খারাপ হতে যাচ্ছে। এইবার একটু জোরে ছেলেটিকে বললাম ভাই সিগারেট দিয়েছেন আগুন অথবা ম্যাচ টা তো দেবেন। ছেলেটি তার হাতের ম্যাচ আমাকে এগিয়ে দিলো আমি সিগারেট ধরাতে গিয়ে আগুনের যে আলোর বিকিরন ঘটলো সেই আলোতে ছেলেটার পুরো অবয়ব একবার দেখে নিলাম। চিকন পাতলা গড়নের ছেলেটি। এ দেখি সাজেদ! আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর তার চোখের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম সে কাঁদছে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তখন আমার মাথায় ঢুকলো নিশ্চয় ওর কোন সমস্যা আছে। আর আমার সিক্সসেন্স বলে দিলো মোটামোটি ভালো সমস্যাই আছে সে। মাঝে মাঝেই সে রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। কিন্তু কখনও এভাবে কাঁদতে দেখিনি। কিন্তু আজকে নিশ্চয় বড় কোন কারণ আছে। নাহলে সে আমার দিকে একবারও ফিরে তাকাল না কেন বা আমার গলা শুনেও কি চিনে নাই না কি !!

আমি সিগারেট ধরিয়ে তার পাশে বসলাম। পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘের আর চাঁদের লোকচুরি খেলা দেখছি,খুব ভালো লাগছিলো আর মাথায় যে সিগারাটের নেশা চেপে ছিলো সেটা ও চলে গেছে। আমি সিগারেট টানছি হঠাৎ করে সাজেদের গলার আওয়াজ ভাই আপনার সমস্যা কি? আমাকে বিরক্ত কেন করছেন প্লিজ আপনি জানতো আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আর সিগারেট যদি আরো লাগে নিয়ে যান। আমি তখন বুঝতে পারলাম যাক খুব ভালোই কষ্টে আছে সাজেদের। আমি সাজেদ কে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কিছু যদি মনে না করো আমি কী তোমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে পারি। তোমার নাম টা কি জানতে পারি ?? সে তখন তার নাম না বলে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে, হিমু ভাই তোমাকে চিনতে পেরেছি কিন্তু এখন আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, তুমি প্লিজ যাও। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম এইখানে একা একা বসে কাঁদছিস কেন ?? কী হয়েছে আমাকে কী বলা যায় না ?? আমি না তোর আইডল ?? তখন সাজেদ জোর গলায় ধমকের সূরে আমাকে বলল তোমাকে না যেতে বলেছি! কেন শুধু শুধু আমাকে বিরক্ত করছ? আমি তাহার এই জোরে ধমকের সুরে দমে যাবার পাত্র নয়। কারন আমি হিমু আর আমার বাবা আমাকে সব কিছু কিভাবে উপেক্ষা করে চলতে হয় তা তিনি আমাকে খুব সূক্ষ্ম ভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন। আর তাই আমি সাজেদের ধমকের কথা মাথায় না নিয়ে তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কী হয়েছে তোর এইখানে বসে আছিস কেন। আর কাঁদছিস বা কেন আমাকে তুই বলতে পারিস আর না হয় আমার একটু কষ্ট করতে হবে আর তুই তো জানিস আমার সিক্সসেন্স খুব ভালো। আর আমার সিক্সসেন্স বলছে তুই এইখানে এসেছিস সুইসাইড করতে অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা ও করছিস কিন্তু সাহসে কুলাতে পারছিস না। তবে এইবারের ট্রেন আসলে ঠিক তুই ঝাঁপ দিবি বলে ঠিক করেছিস। আর তাই ট্রেন আসার অপেক্ষা করছিস আর সিগারেট খেয়ে সময় পার করছিস। কি ঠিক না। এইবার সে আমার আমার দিকে ফিরে তাকালো। আর বললো তোমাকে নিয়ে ভালোই সমস্যা। হিমু হতে চাইলে হতে দিবে না, মরতে আসছি, সেটাও দিচ্ছ না, কোত্থেকে হাজির হলে তুমি এখানে ?? শুন, আমি হলাম হিমু। আর আমার কাজ ভবঘুরের মত রাতের বেলায় রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো, আর আমার বাবার শেষ ইচ্ছা আমাকে মহাপুরুষ বানাবে সেই ইচ্ছা পুরোন করার জন্য রাতের বেলায় ঘুরে বেড়াই। মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় প্রয়োজনে পৌঁছে যাই, সেভাবেই এখন তোর সামনে আমি। কি হয়েছে তোর? বল তো। সাজেদ এতদিন ধরে আমার সাথে আছে, কখনও ওর বিষয়ে কোন কিছু আমি জিজ্ঞেস করিনি। আজকে প্রয়োজনে করতে হচ্ছে। সে বলল একতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিষ্টার ড্রপ হয়েছে। তার ভেতর প্রেমিকা তাকে ছেড়ে অন্য একজনের সাথে এখন চুটিয়ে প্রেম করছে। আর বাসায় সেমিষ্টার ড্রপের কথা বলেছিলো তখন আব্বু মেরেছে আর আম্মু বকেছে এত সব যন্ত্রণা নিয়ে সাজেদ হতাশ হয়ে পড়েছে আর তার এই সেমিষ্টার ড্রপের কারন তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গেছে বলে। আর সাজেদ বেঁচে থাকাটা মুল্যহীন ভেবে আজ সে সুইসাইড করতে এসেছিলো। সাজেদের কথা গুলো শুনার পর আমার মায়ের কথা মনে পড়ছিলো আমার মা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো আজ আমি হিমু না হয়ে বড় কোন ডাক্তার, বা ইঞ্জিনিয়ার হতাম। আর সাজেদ প্রেমিকার কথা ভেবে আমার খুব রুপার কথা মনে পড়লো রুপা আমাকে কত ভালোবাসে এই একটা মেয়ে যে কিনা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে আমার সব পাগলামি মানে এই হিমু মহাপুরুষগিরি সব কিছু সহ্য করে প্রতি জোছনা রাতে আমার জন্য আমার পছন্দের নীল শাড়ী পড়ে ওদের বাড়ির বারান্দায় অথবা ছাদে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আর আমি কিনা তার এই অতিমাত্রায় ভালোবাসা উপেক্ষা করে হিমুগিরি আবেগহীন মানুষ হয়ে ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ায়। শুধু মাত্র আমার বাবার ইচ্ছা পুরুন করার জন্য। এই সব ভাবতে ভাবতে মনে হল আহারে প্রেম আজকাল প্রেম মানে সময় পাস করা, আজ একে ভালো লাগেছে কাল ভালোলাগেনি বাদ দিয়ে পুরশু আবার আরেক জনের সাথে। সব কিছুই মোহ। একটা মোহ নামের গোলক ধাঁধা,আর এই গোলক ধাঁধার নাম দিয়েছে ভালোবাসা। আসলে ভালোবাসা বলতে আমার কাছে মনে হয় কিছুই নেই। সব কিছু অভিনয়। যদি ভালোবাসা থাকতো তবে কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যেতে পারতো না?? ভালোবাসা বলতে তো আবেগ একজনের প্রতি আরেক জনের অনুভূতি তাই না ? তাহলে কিভাবে এই আবেগ মায়া অনুভূতি ভুলে তাকে ছেড়ে চলে যাই বা অন্য একজন কে ভালোবাসে ?? আমার মতে এইটা কোন ভালোবাসা নয় এই গুলো ভালোবাসা বা প্রেম প্রেম খেলা এক ধরনের ইমোশন ইমোশন গেম। আর এই গেমে প্রথমে দুজনে দুজনের ইমোশন বদলা বদলি করে, আর তারপর শুরু হয় কে কার ইমোশন ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে গেমে জয়ী হতে পারে। যে জয়ী হয় তার সারাজীবন মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে থাকে আর যে হেরে যাই তার সারাজীবন চোখের জলে বালিশ ভেজে আর নিজেকে তিলে তিলে শেষ করতে শুরু করে।আমার বাবা ঠিক করেছেন আমাকে হিমু হবার মহাপুরুষ হবার রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন তা না হলে আমার ও হয়তো হতে পারতো সাজেদের মত পরিস্থিতি আমি হয়তো এইরকম সুইসাইড করতে আসতাম। কিন্তু এত কিছুর পরে ও মনে হয় রুপা আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসে আর তার এই ভালোবাসা একদম খাঁটি এইটা কেন বললাম তার কারন রুপা খুবই সুন্দুরী আবার অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে তাকে পাবার জন্য অনেক ছেলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবার কেউ কেউ হয়তো লাইনের সিরিয়াল নিয়ে মারামারি ও করছে একটু আগে যদি যাওয়া যাই। কিন্তু রুপা কারো সাথে প্রেম করেনি বা কারো কাছে যাই ও নি। তাকে আমি এত অবহেলা করি কিন্তু তারপর ও সে আমাকে ভালোবাসে আমাকে একটু খানি স্পর্শ করতে চাই, আমার সাথে জোছনা বিলাস করতে চাই। আচ্ছা আমি রুপার কথা ভাবছি কেন? আমি হিমু , আমি মহাপুরুষ হতে চাই আমার এই সব প্রেম ভালোবাসা, আবেগ মায়া জড়ানো যাবে না। আর আমার বাবা তার পুত্রের জন্য যে আদেশ লিখেগেছে সে খানে খুব ভালো করে লিখা আছে , প্রেম , ভালোবাসা, আবেগ , মায়া এই সব কিছু হতে দূরে থাকতে। এই সকল কিছুর সাথে জড়িয়ে গেলে তুমি মহাপুরুষ হতে পারবে না , তোমাকে আবেগের বাহুডোরে বন্দি করে ফেলবে। তুমি গৃহ ত্যাগ করতে পারবে না গৃহ তোমাকে টেনে ধরবে।
আমি সাজেদের সব শুনে তাকে কিছু উপদেশ দিতে যাবো কিন্তু তার আগে সাজেদ বলে বসলো হিমু দা আমাকে তোমার মত হিমু হতে হবে। আমি ও তোমার সাথে হাঁটবো। আর রুপা আপুকে একবার দেখবো তুমি কি আমাকে দেখাবে।আমাকে তোমার শিষ্য বানিয়ে নাও না। এর আগে তো বহুবার ফিরিয়ে দিয়েছ, এবার তো দিও না প্লিজ। এই কথা শুনে তো আমি পুরা অবাক !!!!! তাহলে আমি এতক্ষণ যা কিছু ভাবছিলাম তা কি জোরে জোরে বলছিলাম ??? আমি তখন আর একটা সিগারেট ধরলাম আর খুব তৃপ্তি সহকারে আয়েশ করে টানছি। মন টা ভালো লাগছে ফুরফুরা লাগছে হতাশগ্রস্ত একটি ছেলে কে বেঁচে থাকার আনন্দ টা বুঝাতে পেরেছি। সে এখন বাঁচতে চাই তবে হিমু হয়ে সকল প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ , মায়া উপেক্ষা করে বাঁচতে চাই।

৩/

এই ভাবে আমার সাথে সাজেদের হিমু হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। রেইল লাইনে একসাথে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে এর পর সাজেদ ও হেঁটে বেরাতে থাকে আমার সাথে। সে নিজে একটা হলুদ পাঞ্জাবী জোগাড় করেছে, সাজেদ ও আমার মত খালি পায়ে হয়ে যায় হেঁটে হেঁটে আমরা দুজনে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ায় , সে আমার সাথে মেসে থাকা শুরু করলো। একদিন সকাল বেলা হাঁটছি হাঁটতে দুপুর হয়ে গেছে এদিকে পেটে ইদুর বিড়াল মারামারি শুরু করে দিয়েছে। এমন সময় সাজেদের এক বান্ধবির সাথে দেখা হয়, ঐ বান্ধবির সাথে আরেকটা মেয়ে ছিল যাই হোক, সে বান্ধবি সাজেদের এর অবস্থা দেখে, খালি পায়ে হাঁটছে অচেনা একজন এর সাথে, হয়তো মেয়েটা ভেবেছিলো সাজেদ ছ্যাকা খেয়ে নেশা করে পাগল হয়ে গিয়েছে, সে জানতো সাজেদের ব্যাপারটা। পরে সে সাজেদ কে জিজ্ঞেস করলো কিরে তোর এই অবস্থা কেন আর এই পাগল টা কে ??
সাজেদ ওকে ধমক দিয়ে বলল চুপ এইটা হিমু দা। আমার গুরু আর আমি তার শিষ্য, আমরা দুজনে মহাপুরুষ হবার সাধনা করছি। এই কথা শুনে মেয়েটির এবং তার বান্ধবীর দুজনের চোখ ইয়া বড় ইয়া বড় হয়ে গেল মনে হচ্ছিলো কোঠর থেকে বের হয়ে টুপ করে রাস্তায় পড়বে। পরে তারা আমার দিকে একদম চিড়িয়াখানার পশু যেভাবে দেখে অবাক হয়ে আমাকে সে ভাবে দেখছিলো আমি এই সব পাত্তা না দিয়ে আমার মত আমি সিগারেট খাচ্ছি। সাজেদ তার বান্ধবীকে বলল ঐ আমাকে কিছু টাকা দে তো খুব খিদে পেয়েছে কিছু খাবো। মেয়ে টি টাকা দিতে যাবে তার বান্ধবী তাকে বাধা দিয়ে কানে কানে ফিস ফিস করে কি যেন বলেছে, আমি মেয়েটির ঠোঁট নাড়ানোর ভঙ্গিমা দেখে বুঝে গেলাম মেয়েটি বলেছে খবরদার টাকা দিস না এই টাকা দিয়ে ওরা নেশা করবে তুই পেপার পত্রিকায় টিভি তে দেখিস না। একবার টাকা দিবি তারপর বার বার তোর কাছে আসবে তুই ঝামেলায় পড়বি , তার থেকে নিজে গিয়ে খাইয়েদে দেখবি কোন সমস্যা করবে না পরবর্তীতে । তারপর মেয়েটি টাকা না দিয়ে সাজেদ কে বলল চল আমিও খাবো আমার ও ভীষন খিদে পেয়েছে। তিনজন মিলে একসাথে খাই। সাজেদ সাথে সাথে বললো তিনজন মানে কে কে ওর বান্ধবী বললো আমরা দুজন আর তুমি, সাজেদ রেগে গিয়ে বলেদিলো তিন জন না চারজন আমি হিমু দা আর তোরা দুজন বুঝলি এখন খাওয়াবি নাকি বল না হলে টাকা দে আমরা দুজন খাবো ? পরে সাজেদের বান্ধবী বললো আচ্ছা আমরা চারজনই খাবো চল যাই। একটা ভাল রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে আমাদের খাওয়ালো আর কিছু টাকা সাজেদ কে দিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেলো দেখ এই সব আজেবাজে জিনিষ বাদ দিয়ে আবার পড়াশুনা শুরু কর। তুই খুব মেধাবী তোর কথা স্যাররা প্রায় বলে। তুই জীবনে ভালো কিছু করতে পারবি। আর ঐ মেয়ে ছেড়ে গেছে তোকে তুই তখন ওর প্রতি খুব বেশি ঝুকে ছিলি আর তোর আশেপাশের কেউ যে তোকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু বলতে পারেনি বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে বা আরো অন্য কিছু হিংসা হচ্ছে এই সব কিছুর ভয়ে বলেনি মেয়েটি কিন্তু সে তোকে এখন ও ভালোবাসে এখন ও চাই। সাজেদ ওর কথা পাত্তা না দিয়ে বলে আমার ভেতর কোন প্রেম ভালোবাসা নেই আমি এখন এই সব কিছুর বিপরীত দিকে। আমি মেয়েটির কথা গুলো বলার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম মেয়েটি সাজেদ কে খুব ভালোবাসে যেমন টা রুপা আমাকে ভালোবাসে ঠিক তেমন। আর তাই আমি চিন্তা করে তখনি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সাজেদকে আজ বিকেলে বাসায় দিয়ে আসবো। ও ভালো ভাবে ভালো মানুষের মত বাঁচুক আর এই মেয়ে কে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক। আর আমি মেয়েটির চোখে সাজেদের জন্য গভীর মায়া , ভালোবাসা দেখেছি। পরে মেয়েটি চলে যাবার সময় আমার দিকে করুন ভাবে এক নজর তাকিয়ে চলে গেল। আর তার সেই নজর বলে দিচ্ছিলো আমায়। আপনি পারবেন আমার সাজেদ কে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে। প্লিজ ফিরিয়ে দেন।আমি আর সাজেদ হাঁটছি হাঁটতে হাঁটতে সাজেদদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি আর তখন তাকে বলেছি। সাজেদ তুই যদি সত্যি আমাকে গুরু মেনে থাকিস তবে আজ তোকে একটা কথা বলবো। তুই এখন বাসায় ফিরে যাবি এবং তুই বাসায় গিয়ে বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবি। আর আবার পরীক্ষা দিবি আর যে মেয়েটি তোকে আর আমাকে আজ দুপুরে খাওয়াছে তাকে মন থেকে ভালোবাসবি দেখবি তুই এই পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষ হবি। যা ফিরে যা। সাজেদ তো যাবে না আমি তাকে আবার বললাম তাহলে কি তুই আমাকে গুরু মানিস না ??? সাজেদ তখন বলল এক শর্তে যাবো জোছনা রাতে শুধু আমি তোমার সাথে হাঁটবো। আমি তখন ওকে বললাম না জোছনা রাতে তুই ঐ মেয়েটার সাথে জোছনা বিলাস করবি।যা ফিরে যা। ওকে বিদায় দিয়ে আমি হাঁটা ধরলাম গন্তব্যবিহীন পথে। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে হেঁটে যাচ্ছি......... আর মনে মনে এই কামনা করছি ভালো থাকিস সাজেদ......... মহাপুরুষ হবার সাধনা তোর জন্য নয় এইটা এই পৃথিবীতে মনে হয় শুধু আমার জন্য আর তার কারন আমার কোন পিছুটান নেই..................

বিঃদ্রঃ উৎসর্গ হুমায়ুন স্যার কে।
আর পৃথিবীর সকল হিমু এবং হিমুর জন্য অপেক্ষা করা রুপাদের।
আজ স্যারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন।

আজ হিমু দিবস তাই এই কাল্পনিক গল্পটা লিখলাম। জানি না কেমন হয়েছে। তবে সবাই কে অনুরোধ রইলো মন্তব্য করবার জন্য। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। আর আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন হিমু হতে পারি।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×