ধরেন আপনি আমেরিকায় থাকেন। ক্রিয়েটিভ কাজ করেন (গান, সিনেমা, ফটোগ্রাফি, সফটওয়্যার ইত্যাদি কাপঝাপ)।. আপনার আমেরিকার আইনে (খিয়াল কইরা) কপিরাইট মাল বিদেশী এক ওয়েবসাইট (নাম দিলাম batul.com) ফ্রী তে বিলাচ্ছে বা তাদের নামে চালাচ্ছে। এখন আপনি আঙ্কেল স্যামের কাছে গিয়ে নিয়মিত নালিশ করেন এইটা নিয়ে। কিন্তু আঙ্কেল তো কিছু করতে পারে না। কারণ ওই সাইটের সার্ভার তো অন্য দেশে!
অবশেষে আঙ্কেল এক মহান আইনের আইডিয়া পেলেন। নাম দিলেন SOPA অর্থাৎ Stop Online Piracy Act। ভালো কথা। খুবই মহান উদ্যোগ। কিন্তু আইনটা একটু চোখ খুলে পড়ে দেখলেই বোঝা যায় আঙ্কেল এইখানে এক ঢিলে পাখিটাখি না পুরো পঙ্গপাল নামানোর ধান্দায় আছেন। আসুন একটু দেখি কীভাবে –
একটা সাইট চলে মোটামুটি চারটা সেবার উপর নির্ভর করে –
১. ডিএনএস সার্ভার; যারা আপনি অ্যাড্রেস বার এ কোন ঠিকানা (যেমন facebook.com) লিখলে তার মানে উদ্ধার করে আপনাকে জায়গামত নিয়ে যায়।
২. সার্চ ইঞ্জিন; যারা কিনা সাইটটাকে খুঁজে বের করে দেবে আপনার কাছে।
৩. অ্যাড এজেন্সি; যারা সাইটে বিজ্ঞাপন দেবে।
৪. পেমেন্ট সাইট; যারা সাইটের টাকা লেনদেন করবে।
এখন আঙ্কেল ভেবে দেখল যে batul.com আমেরিকার বাইরে হলেও এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে সরিয়ে দিতে পারলে ওই batul.com আর কোনোভাবেই টিকতে পারবে না। এবং সুখের সংবাদ হচ্ছে এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশই আমেরিকার ভিতরে।
SOPA আইনের বলে আপনি এখন batul.com কে সেবাদানকারী উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারবেন। এবং একজন বুড়ো জজ কে পটাতে পারলেই কেল্লা ফতে। তারা batul.com এর সাথে সম্পর্ক শেষ করতে বাধ্য যার ফলে batul.com এর মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে।
এই পর্যন্ত পড়ে অনেকের মনে হতে পারে সমস্যা কই। এটা তো বেশ নিরীহ ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো আইন। দুই নাম্বারি ব্যাবসা করা batul.com বন্ধ হলেই তো ভালো।
কিন্তু আইনের মজা তো ফাঁক ফোঁকরে। কোন সাইটগুলো চুরির দায়ে অভিযুক্ত হবে? আইনে লেখা আছে যে, যারা কপিরাইট করা জিনিস বিনা অনুমতিতে প্রকাশ ও প্রচার করবে, যারা এ কাজে তাদের কোনোভাবে সহায়তা করবে এবং যারা তাদেরকে খুঁজে বের করতে কোনপ্রকার বাধা দেবে তারা সবাই।
এক মিনিট! ‘সহায়তা’ কোথাটার মানে কি? batul.com যদি এখন ফেসবুক কিংবা টুইটারে একটা পেজ খুলে তার সাইটের প্রচার করে তাহলে কি এটা সহায়তা করা হয় না? তার মানে এই আইন পাশ হলে আঙ্কেল ফেসবুক টুইটার সহ যেকোনো সামাজিক ওয়েবসাইট এর মৃত্যু ঘণ্টা বাজাতে পারে ঠিক batul.com এর মতো! কারণ সামাজিক ওয়েবসাইট গুলোর উপাদান সৃষ্টি হয় ব্যাবহারকারির দ্বারা। তাদের পক্ষে কখনোই পাইরেটেড জিনিসের প্রচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না। এতদিন আঙ্কেল কে কোন কিছু মুছতে ফেসবুক টুইটারের কাছে অনুরোধ করে চিঠি লিখতে হত। তাও কাজ হত না মাঝে মাঝে। এখন আর কোন সমস্যা নাই, সোজা গলায় ছুরি চালাতে পারবে!
‘বাধা দেওয়া’র ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ। আমরা ৩০ বন্ধু মিলে মেইল গ্রুপ চালাই, এখন আমাদের পাসওয়ার্ড এর জন্য কেউ দেখতে পারছে না আমরা কি করছি সেখানে। মনে করেন আঙ্কেল কে জুত করে গালি দিচ্ছি। এখন আঙ্কেল জিমেইল কিংবা ইয়াহুকে আদেশ করতে পারবে তাকে গ্রুপ এ কি হয় দেখাতে কারণ তার কাছে নাকি অভিযোগ আছে আমরা একজন সিনেমা বা গান কিনে ৩০ জন ব্যাবহার করি। জিমেইল কিংবা ইয়াহু অপারগ হলে তাদেরও মৃত্যু ঘণ্টা বাজতে পারে!
একটু কল্পনাশক্তি খরচ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় এই আইন বলবত হলে কত সহজে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যাবে। এও টের পাওয়া যায় এই আইনের উদ্দেশ্য শুধু চোরের দল কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কপিরাইটের ব্যাবসা রক্ষা করা না।
এ আইন হয়ত পাশ হবে না। কারণ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এই আইন প্রণয়নের চেষ্টা প্রমান করে যে সামাজিক ওয়েবসাইটগুলো আসলেই শাসকদের আঘাত করা শুরু করেছে। তাই এইবার হায়েনার দল জায়গামত হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। Divide and Rule থিওরি শোষণের সবথেকে কার্যকর অস্ত্রগুলোর একটা। মানুষ এক হবে, এক জায়গায় জড় হবে, মতামত কিংবা আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করবে – এই সবের কোনটাই শাসক শ্রেণীর জন্য ভালো খবর না। সামনে নতুন খোলসে আরও বহু আইন এর প্রস্তাব আসবে। তার জন্য তৈরি থাকতে হবে। পৃথিবীতে নিজের ঘর বাদে অন্তর্জাল নামক এই একটাই মুক্ত জায়গা টিকে আছে। একে রক্ষা করতে হবে, বিস্তৃত করতে হবে। কারণ দিনশেষে সবার সাথে সবার যোগাযোগ হলেই ১% উৎখাত হবে।
যুদ্ধ আসন্ন। আমি বাতাস পাচ্ছি।
(গুগলে গিয়ে SOPA লিখে সার্চ মারুন)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




