আজকে প্রথম আলো খুলেই একটা ধাক্কা খেলাম। প্রথম পাতায় 'ভারত, দরজা খুলে দাও' নামের শিরোনামটা দেখার সাথে সাথেই আমার একটু গা জ্বালা করে উঠল। অবশেষে মিডিয়া এবং কিছু পা চাটা বুদ্ধিজীবীদের ব্যাবহার করে এই চামচা রাষ্ট্র এখন প্রকাশ্যেই সাম্রাজ্যবাদী ভারতের বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেছে।
কিছুদূর আরও ঘাঁটাঘাঁটি (পড়ার মতো মেজাজ ছিলনা) করার পর আমার রাগ কিছুটা শঙ্কায় পরিণত হল। এইখানে টোপ এবং ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে অন্যায়ভাবে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ হওয়া বাঙালি জাতিসত্তাকে। এটা তো ঠিক ই যে আমরা বাঙালিরা ভারত ও পাকিস্তান নামক দুই জঘন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের সাম্প্রদায়িক কামড়াকামড়ির বলি হয়েছি। আমি এটা হাড়ে হাড়ে টের পাই, আমার নিজের পরিবার ৪৭ আর ৭১ এ দুইবার ভেঙ্গে ভারতে দেশান্তরী হয়েছে শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক চাপে। দেশে প্রচুর ৪৭ এ ভারত থেকে চলে আশা মুসলিম পরিবারও আছে যারা আজও তাদের ভারতের আত্মীয়দের ঠিকানা-খোঁজখবর রাখেন। আমাদের ভাষা এক, প্রাচীন ইতিহাস এক, সাহিত্য এক। সব মিলিয়ে জাতিগতভাবে একটা কষ্টের জায়গা আমাদের আছেই।
কিন্তু এই অনুভূতিকে ব্যাবহার করেই এতদিন সুকৌশলে আর এখন সরাসরি পর্দা উঠিয়ে ভারতের চামচামি করা হচ্ছে। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় সীমান্তে কান্নারত দুই আত্মীয়ের মন নাড়ানো ছবি। কিন্তু ভিতরে গেলেই হাসিনার ছবির পাশে ‘ইন্ডিয়া গেট’ আর মনমোহন এর ছবি। এই দেখামাত্র বোঝা যায় বাঙালি জাতিসত্তার ঐক্যবদ্ধতার মুখোশ পড়ে এগিয়ে আসছে ভারত রাষ্ট্র, যার সাথে আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টির কোন সম্পর্ক নেই।
এইখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কেউ লক্ষ্য করেছেন? যাদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার সব থেকে বেশি দরকার সেই পশ্চিমবঙ্গের কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এতে নেই। ডিভাইড অ্যান্ড রুল সুত্র খাটিয়ে ঠিকই মমতাকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে আমাদের দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো এই ধরণের জঘন্য ভারত-চামচামির প্রতিবাদ হওয়া উচিত। তবে আমাদের এদিকটাও ভেবে দেখতে হবে আমরা বাঙালিরা কি ক্রমাগত সাম্প্রদায়িকতা আর রাজনীতির শিকার হতে থাকব? আমরা কি এতো দূরে চলে গেছি যে আর কখনো একসাথে হওয়ার কথা কল্পনা করতে পারব না? নাকি আমাদের এই স্বপ্ন ত্যাগ করাই ভালো কারণ এই অনুভূতিকে ভারত সবসময়ই নিজের সুবিধায় ব্যাবহারের তালে থাকে। প্রশ্নটা এত সহজ না। আর আমার মতো লোকেদের জন্য তো নয়ই।
তবে আমি সবসময় যা বলি তা আবারো বলছি। আমাদের শত্রু ভারত রাষ্ট্র, তার জনগন না। পশ্চিমবঙ্গের এক কৃষকের সাথে এদেশের কৃষকের কোন পার্থক্য নেই। আমাদের মুখোমুখি দাড়া করায় শয়তান রাষ্ট্রযন্ত্র আর ধর্মব্যাবসায়িরা। মানুষ দিয়ে মানুষ ঠেকানো শাসকদের বহু পুরনো রীতি। এই নিয়মেই তারা সীমান্ত টানে, মানুষকে আলাদা করে, অত্যাচার করে, হত্যা করে। আবার প্রতিবাদকে সুকৌশলে ঘুরিয়ে দেয় জনগনের দিকে। আমরা ধীরে ধীরে অন্য দেশের মানুষকে ঘৃণা করতে শিখে যাই। শাসকদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধেও নেমে যাই। লাখ লাখ মানুষ খুন করি। তারপর দেশে ফিরে আবেগভরে পতাকায় সেলাম ঠুকি। আর কতদিন মানুষ এরকম খেলার পুতুল হয়ে থাকবে শাসদের প্রোপাগান্ডার? এরও উত্তর আমার জানা নেই। তবে এটুকু বুঝি এই শকুনদের উৎখাতের দরকার।
শেষ কথা, কতগুলো ভাদাকে বেশ ভালভাবে চিনে রাখলাম আজকে, আপনারা চিনে রাখতে ভুলবেন না, বিশেষ করে আমাদের বাংলার গান্ধিকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




