পৃথীবিতে বর্তমান প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ। অতীতে এর চেয়ে কম ছিলো এ বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই। আদিম প্রযুক্তির উদ্ভব ক্ষুধা নিবৃতির প্রয়োজনে।কাল ক্রমে তা ক্ষমতা দখল ও বিলাসিতার দিকে অধিক ঝুকে পড়ে । অধিক সুবিধাবাদীরাই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে শ্রেনী, ক্ষুধা ও দলিত জনসাধারন সৃষ্টি করেছে। বর্তমান পৃথিবীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃথিবী বলা হয়। বিগত ৫০ বছরে বিজ্ঞান অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। বিজ্ঞানের এ আবিষ্কার পৃথিবীকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ ভূপৃষ্ঠকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। সাগর, মহাসাগর ও আকাশ-জগৎকে তারা করায়ত্ত করেছে। মহাশূন্যে তারা স্টেশন নির্মাণ করেছে। এসব আবিষ্কারে বিশ্ব মোড়লরা ব্যয় করেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে অপচয় ও ক্ষতিকর আবিষ্কার হলো মানববিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ। ২০২১ সালে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রের পেছনে ব্যয় বেড়েছে ২০২০ সালের চেয়ে আটগুণ। অথচ পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল করতে গঠিত আছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু এবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস’। কিন্তু শক্তিধর দেশগুলো এ নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে। এ নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে তারা প্রতিবছর আবিষ্কার করে চলেছে দেশবিধ্বংসী মারণাস্ত্র। আর এর পেছনে খরচ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এর পেছনে খরচ করছে ৪৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। চীন খরচ করেছে ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া করেছে ৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ব্রিটেন করেছে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ফ্রান্স করেছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ভারত করেছে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আর পাকিস্তান করেছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আর এককভাবে উত্তর কোরিয়া করেছে ৬৪২ বিলিয়ন ডলার! সব মিলিয়ে ৯টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এক বছরে অস্ত্র নির্মাণের ব্যয় ৭১৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ হলো ৭১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা; যা বর্তমান বাংলাদেশের ১২ বছরের বাজেটের সমান! উন্নত দেশগুলোয় অপচয়ের এই যখন চিত্র, ঠিক তখনই এক মুঠো অন্ন আর দুফোঁটা পানির অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে লাখ লাখ বনি আদম। একটি বড় গোষ্ঠী যখন বিলাসে ব্যস্ত, প্রাচুর্য আর অপচয়ের উৎসবে যখন তারা মত্ত, ঠিক তখন তারই অদূরে শোনা যাচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। ধনাঢ্য পরিবারের একজন শিশুর বিনোদনের জন্য লক্ষ-কোটি টাকাও যেখানে যথেষ্ট মনে হচ্ছে না, সেখানে পূর্ব আফ্রিকার একদল কঙ্কালসার শরীরের শিশু এক ঢোক পানি আর একটা রুটির জন্য তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকে। ভাবতে লজ্জা লাগে, সভ্যতার এ উৎকর্ষের মধ্যেও পৃথিবীর চল্লিশ শতাংশ মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত! বিশাল এ জনগোষ্ঠী ক্ষুধায় কাতর এবং পুষ্টিহীনতায় ক্লিষ্ট।
তথ্য সুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২.

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



