somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" সরকারি টাকায় নাস্তা করে বিপাকে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী " - ও বর্তমান দুনিয়ার বাস্তবতা।

০৩ রা জুন, ২০২১ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - ittefaq.com.bd

স্বচ্ছ ব্যক্তিত্ব ও কাজের মানুষ হিসেবে বেশ পরিচিত বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডের সানা মেরিন। কিন্তু এবার তার বিরুদ্ধে সরকারি কোষাগার থেকে পরিবারের জন্য সকালের নাস্তার বিল মেটানো নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তদন্ত করছে ফিনল্যান্ড পুলিশ।

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণকে সার্বভৌম করা হয়েছে। অর্থাৎ, দেশের জনসাধারণ সব কর্তৃত্বের মালিক। তাদের পক্ষ থেকে একদল ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে এ সার্বভৌম শক্তির ব্যবহার করার কথা। মানুষের সম্মিলিত চাওয়া-পাওয়া এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জনগণের পক্ষ থেকে " সেবক বা শাসক " নির্বাচিত করা হয়। তাদেরকে বলা হয় " Public Servant বা সরকারী কর্মচারী / জনগণের চাকর "।

রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জনগণের কথায় চলবেন,এটাই মূল কথা। জনগণ যদি পছন্দ না করেন তাহলে তারা যেকোনো সময় তাদের কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করতে পারবেন।কাগজে-কলমে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন " জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী " এই নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।তবে এই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মাঝে কত পার্থক্য তা আমরা আমাদের চারপাশেই প্রতিনিয়ত দেখি এবং বাস্তবে এর চর্চাটা উন্নত দেশে কেমন তা বোঝার জন্য ফিনল্যান্ডের এই খবর পর্যালোচনা করে দেখতে পারি আমরা।


ছবি - ittefaq.com.bd

" সরকারি টাকায় নাস্তা করে বিপাকে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী " - ঘটনার সূত্রপাত -

ফিনল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ট্যাবলয়েডে এই খবরে প্রকাশ," ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে নিজের ও পরিবারের সকলের নাস্তার বিল বাবদ প্রতি মাসে ৩০০ ইউরো খরচ করা হয়েছে"।

ফিনল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ট্যাবলয়েডে এই খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি হয়।ফিনল্যান্ডের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগে বলছে, "সরকারি টাকায় প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ও পরিবারের সকলের নাস্তার বিল কেন মেটাবেন "? সমালোচনা শুরু হতেই ফিনল্যান্ডের পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের করের টাকায় অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রী নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নাস্তার খরচ প্রধানমন্ত্রী মিটিয়েছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী সানা মেরিন দাবি করেন, " আগে যারা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তারাও এই সুবিধা ভোগ করেছেন। এক টুইটে পুলিশি তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বলেছেন, তদন্ত চলাকালীন তিনি ওই সুবিধা নেওয়া বন্ধ রাখবেন। এমনকি এ ধরনের সুবিধা আইনবিরুদ্ধ হলে তা আর নেবেন না"।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে ফিনল্যান্ডের ক্ষমতায় আসার পর সানা মেরিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তার স্বচ্ছতা। তার নেতৃত্বে ফিনল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। মহাদেশটির মধ্যে ফিনল্যান্ডেই করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে কম।

ফিনল্যান্ডের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা খবর দেয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানা মারিনের পরিবার সকালের নাস্তার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে মাসে ৩৬৫ ডলার খরচ করছে। এরপর সে দেশের বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রাতরাশের জন্য এমন অর্থ ব্যয় দেশটির আইন অনুযায়ী বৈধ নয় বলে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশটির পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা দেখতে চান, নাস্তার নামে জনগণের করের টাকা অবৈধভাবে ভর্তুকি নেয়া হচ্ছে কি না। অন্য দিকে এক টুইট বার্তায় মারিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ সুবিধা চাইনি, এমন সুবিধা নেয়ার সিদ্ধান্ত আমি নিইনি।


ছবি - rhythmsystems.com

আইন ভঙ্গ করে যে পরিমাণ অর্থ নাস্তার জন্য খরচ করা হচ্ছে, টাকার অঙ্কে সেটা ৩০ হাজার টাকার কিছু বেশী। আর সেই টাকা খরচ করা হয়েছে শুধু কোনো একজন ব্যক্তির জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রীর পুরো পরিবারের জন্য। এরপরেও এমন খবর দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ট্যাবলয়েডটির ওপর ক্ষেপে যাননি। তিনি বরং পিছু হটেছেন এবং তিনি বলেছেন , এ ব্যাপারে তিনি জানতেন না। উত্তর ইউরোপের এ দেশটি বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৫০ হাজার ডলার। টাকার অঙ্কে ৪০ লাখ। দেশটির মাত্র একজন ব্যক্তিই আয় করেন গড়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে মাসে নাস্তা বাবদ ৩০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ করে ফেলার অপরাধকে খাটো করে দেখা হয়নি।

আইনের শাসন বা জনগণের ইচ্ছার মূল্যটা আমরা এ ঘটনা থেকে বুঝতে পারব। ট্যাবলয়েড পত্রিকাটি যে খবর দিয়েছে সেটা জনস্বার্থে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এ দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশে পত্রিকাটিকে একবারও ভাবতে হয়নি। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী চুপ থেকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন, তার কোনো উপায় নেই। রাষ্ট্রের নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী নিজের কর্তব্য পালনে দ্বিধাগ্রস্ত নয়। অভিযোগ উত্থাপনের সাথে সাথে দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ সেটা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রী থেকে পুলিশ পর্যন্ত কারো মধ্যে কোনো জড়তা নেই।

পুলিশকে এ তদন্ত পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের শক্তি পুরোটাই জনগণের পক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোপুরি জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। তাই নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশের কনস্টেবল পর্যন্ত জনগণের সেবক বা সার্ভেন্ট।

এ খবর " জনগণের নামে পরিচালিত শাসনের " চিত্র আমাদের সামনে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরেছে। আর তাইতো আমরা সারা দুনিয়ায় এক দিকে যেমন দেখি - " শাসকের প্রজা শাসন " আবার অন্য দিকে দেখি " শাসকের জনগণের সেবা "। অনেক দেশেই আজকালকার শাসকরা জনগণের সার্বভৌম শক্তিকে হাইজ্যাক করে প্রকৃতপক্ষে শাসকরা নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং এটিকে তারা কায়দা করে ব্যবহার করছেন জনগণের বিরুদ্ধেই। এমন শাসকের নজির এখন সারা দুনিয়ায় ভূরি ভূরি। এর উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

অন্য দিকে আবার রয়েছেন জনগণের সেবক সার্ভেন্ট বা জনগনের চাকর । তারা সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের সংখ্যা বেশী না হলেও নেহায়েত কম নয়। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডে জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন।তাদের কাছে জনগনের কথাই শেষ কথা।

আর এত সব কিছুর মাঝে আমাদের জন্য রয়েছে " শিক্ষণীয় বিষয় ",যদি আমরা শিখতে চাই।

তথ্যসূত্র - ittefaq.com.bd
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৪২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×