ছবি - anandabazar.com
" ইসলাম ধর্মে হিজাব বাধ্যতামূলক বা অপরিহার্য বিষয় নয় তাই এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার রক্ষাকবচ প্রযোজ্য নয়" - হিজাব মামলার রায়ে এ কথাই বলেছে কর্নাটক হাইকোর্ট । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে তৈরি হওয়া যাবতীয় বিতর্ক ঘিরে আজ এ রায় দিল কর্ণাটক হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আদালতে যে সমস্ত আবেদন জমা পড়েছিল, আজ মঙ্গলবার (১৫ ই মার্চ) সেসব খারিজ করে দেন আদালত। আদালত জানান, হিজাব ইসলামের বাধ্যতামূলক কোন ধর্মীয় অনুশীলন নয়।
কর্ণাটক সরকার গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশিকা জারি করে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তার পর থেকেই ওই রাজ্যে হিজাব ইস্যুতে মুসলিমদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষ করে উদুপ্পি জেলায় বিক্ষোভের জেরে স্কুল-কলেজগুলো রীতিমতো রণক্ষেত্রের রূপ ধারণ করেছিল। লাগাতার প্রতিবাদের জেরে বেশ কয়েক দিন স্কুল-কলেজ বন্ধও রাখতে হয় কর্ণাটক সরকারকে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন কয়েকজন মুসলিম ছাত্রী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা যাবে না, এই মর্মেই সেসব মামলা করা হয়েছিল এবং এ নিয়ে সরব হয় বিরোধী দলগুলোও। ওই মামলাতেই আজ কর্ণাটক হাই কোর্ট রায় দিয়েছে যে," হিজাব ইসলামে বাধ্যতামূলক নয় এবং প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ড্রেস কোড থাকতেই পারে"।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক ভারতের বাইরেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই, বিখ্যাত ফুটবলার পল পোগবা পর্যন্ত এই ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন। তাছাড়াও এ প্রসঙ্গে শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন কর্নাটকের বিরোধী নেতা সিদ্দারামাইয়া, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এক টুইটে রাহুল গান্ধী বলেন," শিক্ষার পথে হিজাবকে বাধা হিসাবে তুলে ধরে আমরা মেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নিচ্ছি। মা সরস্বতী কিন্তু সকলকেই বিদ্যা দান করেন, তিনি বিভেদ করেন না" । এমনকী হিজাব বিতর্কে ভারতের সমালোচনা করে আমেরিকাও। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এই বিষয়ে কারো কোন উসকানিমূলক মন্তব্য মেনে নেয়া হবে না।
ছবি - swadeshpratidin.com
ক্লাসে হিজাব পরার নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীদের জন্য আদালতের এই রায় একটি বিশাল ধাক্কা এবং সাথে সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যও। নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে পাঁচটি পিটিশন দায়ের হয়েছিল। এই রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে কর্ণাটক রাজ্য সরকার রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এক সপ্তাহের জন্য বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। ম্যাঙ্গালোরেও ১৫ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। উদুপিতে আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, গত মাসে কর্ণাটক হাইকোর্ট অস্থায়ীভাবে হিজাব এবং গেরুয়া ওড়নাসহ সব ধরনের ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করেছিল।এদিকে আদালতের এই সিদ্ধান্তকে তাৎক্ষণিক ভাবে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনিজমন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তিনি বলেন,"দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই আমি। আদালতের আদেশ মেনে সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মূল কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা, তাই সবকিছু পাশ চাপিয়ে তাদের পড়ালেখা করতে হবে"।
এখন এ রায়ের ফলে রাজ্যের শিক্ষা সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, সরকারি কলেজগুলি নিজস্ব পোশাকবিধি চালু করতে পারে। কর্নাটক শিক্ষা আইন ১৯৮৩-এর পোষাক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, " কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পোশাক পরেই পড়ুয়াদের কলেজে আসতে হবে। তবে যে-সব কলেজে কোনও পোশাকবিধি নেই, সেখানে এমন পোশাক পরা যাবে না যাতে শিক্ষাঙ্গনের ভারসাম্য, ঐক্য এবং শৃঙ্খলা নষ্ট হয়"। রাজ্যে চলতি হিজাব-বিতর্কে ইতি টানতেই সরকারি কলেজে পোশাক নির্দেশিকা জারি করল কর্নাটক সরকার।
এখানে উল্লেখ্য যে, ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে। রাজ্যের উদুপি জেলায় একটি সরকারি কলেজে ছয় ছাত্রীকে হিজাব পরে ক্লাস করতে বাধা দেওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেই ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হন ছাত্রীরা। পরে বিতর্কের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে আরও কয়েকটি কলেজে। ওই জেলার সৈকত-শহর কুন্দাপুরের একটি কলেজে হিজাব পরে আসা কয়েক জন ছাত্রীকে ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয়। ছয় ঘণ্টা ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা এবং পরের দিনও একই ভাবে তাঁদের ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই ঘটনার প্রতিবাদে কুন্দাপুরের ভান্ডারকর আর্টস এবং সায়েন্স ডিগ্রি কলেজের গেটে ৪০ জন ছাত্রী হিজাব পরে প্রতিবাদ জানান। হিজাব না খোলায় তাঁদের ক্লাসে ঢুকতে দেননি কলেজ প্রশাসন । অন্য দিকে হিজাবের পাল্টা হিসাবে অন্তত শ’খানেক ছাত্র গেরুয়া শাল পরে বিক্ষোভ দেখান। এই প্রসঙ্গে ভান্ডারকর কলেজের অধ্যক্ষা নারায়ণ শেঠি বলেছেন," আমি সরকারি কর্মচারী। সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলতেই হবে। কলেজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। শুনেছি কিছু পড়ুয়া গেরুয়া শাল গায়ে দিয়ে ক্লাসে ঢুকতে চেয়েছিল। এ ভাবে ধর্মের নামে সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট হলে আমাকেই দায়ী করা হবে"। আর তাই তা কখনো করতে দেয়া হবেনা।
ভারত একটি স্বাধীন-সাবভৌম ও ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ । সেই হিসাবে এ রায় তার ধর্ম নিরপেক্ষতাকেই প্রমাণ করে। তবে একটা কথা ঠিক যে, হিজাব নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টের যে নির্দেশনা-দৃষ্টিভংগী বা রায় দিয়েছে তার সাথে ইসলামের নির্দেশনা ও দৃষ্টিভংগীর -" পর্দা " - শুধু নারীর জন্য নয় বরং নর-নারী উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। লিংক - Click This Link ব্যাপক প্রার্থক্য রয়েছে। আবার এটাও ঠিক, ধর্মে যাই বলা থাকুক না কেন সকল দেশের সকল নাগরিককে দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে চলতে হয় এবং তা মেনে চলা বাধ্যতামূলকও বটে।
সর্বশেষ , কর্নাটক হাইকোর্টের হিজাব মামলার রায়ে সন্তুষ্ট নন মামলাকারীরা। আর তাই তারা বলেছেন, এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন তারা। এদিকে আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। আবার এ রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের একাধিক রাজনীতিবিদ।
তথ্যসূত্র - আনন্দবাজার ও এনডিটিভি।
=======================================================
ভারত প্রাসংগিক আরকটি পোস্ট -
আল কোরআন এর ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে আদালতে দায়ের করা রিট বাতিল করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৫৫