ছবি - probashkhabar.com
পবিত্র কোরআনের ২৬টি আয়াত বাতিল চেয়ে ভারতের উচ্চ আদালতে গত ১৩ মার্চ একটি রিট দায়ের করেছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ওয়াসিম রিজভী
জানা গেছে, রিট আবেদনে বলা হয়, এই ২৬টি আয়াত উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের তিন খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) এবং হযরত ওসমান (রাঃ) কোরআনের মধ্যে ঢুকিয়েছেন। ক্ষমতা সুসংহত করতেই তারা এ কাজ করেছেন বলে রিটে উল্লেখ করা হয় । রিটে বলা হয়েছে,এই আয়াতগুলোতে মানুষকে সহিংস জিহাদে উৎসাহিত করা হয়েছে।রিট আবেদনে আরো বলা হয়েছে,পবিত্র কুরআন শরীফের কিছু আয়াতের কারণে ইসলাম ধর্ম ধীরে ধীরে তার মূল শিক্ষাগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যা আজকাল সহিংস আচরণ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে চিহ্নিত হচ্ছে। তাই আয়াতগুলো অপসারণের আবেদন জানাচ্ছি। রিটে আবেদনে আয়াত নাম্বারগুলোর কথাও উল্লেখ করা হয়।এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
পবিত্র কুরআনুল কারীম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সর্বশেষ জীবন বিধান, যা পূর্ণাঙ্গ এবং সকল প্রকার দোষত্রুটি মুক্ত। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই সে ঘোষণা দিয়েছেন। দেড় হাজার বছর ধরে পবিত্র কুরআন তার প্রতিটি হরফ এবং হরকতসহ সম্পূর্ণ সংরক্ষিত অবস্থায় আছে।কুরআন সম্পর্কে রিটকারীর বক্তব্য ছিল চরম ধৃষ্টতামূলক। সে শুধু আল্লাহর কুরআনকেই আঘাত করেনি বরং রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর যে মহান চারজন খলীফা মুসলিম মিল্লাতের অভিভাবক ও শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সাহাবাগণের মধ্যে অগ্রবর্তী ছিলেন। তারা জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছিলেন। তারা সকলের সম্মান, মর্যাদা ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। রিটকারী চার চার জন খলীফার মধ্যে তিন জনেরই চরিত্র হনন করেছেন। এ তার ইসালাম কে এবং ইসলামের চার খলিফাকে ছোট করার অপপ্রয়াস ।সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল।
আর রিট দাখিলের পর পরই অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড ও আরও অনেক মুসলিম সংগঠন রিজভির এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে এবং আদালতের কাছে রিটটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে বলেছে, কোরআনের আয়াতগুলির সত্যতা নিয়ে মুসলমানরা কোনো বিতর্ক করবে না।এছাড়া, মজলিস-এ-উলামায়ে হিন্দ এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কালবে জাওয়াদ এবং লখনউয়ের আইশবাগ ঈদগাহের ইমাম মাওলানা খালিদ রশিদ ফারঙ্গী মহালিও রিজভীর এ কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন।সকল মুসলমানের প্রত্যাশা ছিল ,রিট আবেদনকারী তার ভুল বুঝতে সমর্থ হবেন এবং রিট প্রত্যাহার করে নেবেন। সেই সাথে ভারত সরকার ও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ প্রত্যাশা ছিল।
ছবি - Ittefaq.com
তারই ধারাবাহিকতায় -ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) বিচারপতি আর এফ নরিমনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রিট আবেদন বাতিল করে দিয়ে আদেশ দেন।
সোমবার ( ১২ এপ্রিল) বিচারপতি রোহিনটন নারিমানের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এই রিট পিটিশনকে "পুরোপুরি অর্থহীন’" বলে মন্তব্য করে রিটটি খারিজ করে দেন। এসময় আদালত রিজভীকে ৫০ হাজার রুপি জরিমানাও করেছেন। এই অর্থ জরিমানা লিগ্যাল এইড সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি নারিমান আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি সত্যিই এই পিটিশন নিয়ে তর্ক করতে চান? ওই আইনজীবী দুই মিনিট সময় চান। তিনি আদালতকে বলেন, মাদরাসায় আটকে রেখে শিশুদের মধ্যে "ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উন্মেষ" ঘটাতে এসব আয়াত ব্যবহার করা হচ্ছে।
পরে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নারিমান বলেন, আমরা আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুনেছি এবং এটা পুরোপুরি অর্থহীন তাই আমরা এই পিটিশন খারিজ করে দিয়েছি। রিজভী তার পিটিশনে বলেছিলেন যে, "অবিশ্বাসী এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৈধতা দিতে এসব আয়াত কুরআনে ঢুকানো হয়েছে"।
তথ্যসূত্র - ইত্তেফাক
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৪৩