বিকেলে বন্ধুদের সাথে নীলক্ষেতে দারুন আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে গেল।গরম গরম চা আর সিগারেটের ধোয়ায় হাড় কাপানো শীতের বুড়ি হতাশ হয়ে কখন যে পালিয়েছে তা টেরই পাইনি।রাত বাড়ার সাথে সাথে বুড়ি যেন যৌবনফিরে পেয়ে জাপটে ধরতে চাচ্ছে আমাকে।বাধ্য হয়ে ঝিমিয়ে পড়া আড্ডায় ক্ষান্ত দিয়ে বাসার পথ ধরলাম।
আমাদের বাসাটা গলির একটু ভিতরে হওয়ায় কিছুটা পথ পায়ে হেটে যেতে হয়।গলির মুখে পা দিতেই বুঝলাম শীতের দাপটে অনেক আগেই এখানে কারফিউ জারি হয়েছে।প্রচন্ড কুয়াশাইয় লাইটপোষ্টের আলোগুলো ম্লান হয়ে আছে।
গরম কম্বলের আহবান মনের মাঝে প্রচন্ড তাড়া দিয়ে যাচ্ছে।দ্রুত হাটতে লাগলাম।
হঠাত রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বস্তার মাঝে কিছু একটা নড়ে উঠলো।প্রথমে সামান্য ভয় পেলেও পরে দেখলাম ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা হাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে।নিত্য সামনে পড়া এমন অনেক ভিক্ষুক সামনে পড়ে বলে স্বাভাবিক নিয়মে না তাকিয়েই হাটতে লাগলেম।এদিকে আবার প্রচন্ড শীতে দাতে কাপন ধরে গেছে।হাটতে হাটতে কানে এল "বাবা আমারে আফনাগো সিড়ির তলে একটু থাকবার দিবেন...।"আরো অনেক কিছু হয়তো বলছিলো কিন্তু কানে এলোনা।
বাসায় ফিরে নাখেয়েই ঢুকে পড়লাম কম্বলের নীচে।ঘুম ভাংলো সকাল সকাল।অভ্যাস মত জগিং এর জন্য বেড়িয়ে পড়লাম।
এত সকালে হাড় কাপানো শীতের মাঝে বাসার নীচে বেশ কিছু মানুষের জটলা দেখে অবাক হলাম।এগিয়ে যেতে জানলাম এক বৃদ্ধার লাশ পড়ে আছে রাস্তার পাশে।কে যেন আমার মাথার মাঝে প্রচন্ড ভাবে আঘাত করল।বুঝতে বাকী রইলনা এ রাতের সেই বৃদ্ধা।জীবনের শেষ মুহূর্তে যে হাত বাডিয়ে দিয়ছিল আমার দিকে।আমার একটু সাহায্য যাকে এ পৃথিবীতে আরও একটি সকাল দেখার সুযোগ হয়তো করে দিতে পারতো।নিজের নীচতায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম।বাসায় ফিরে এলাম।বিছানাইয় শুয়ে পড়লাম।কিন্তু গরম কম্বল আমার কাছে প্রচন্ড গরম মনে হতে লাগলো।আগুন যেন ঘিরে ধরতে চাচ্ছে আমার সারা দেহ।ছুড়ে ফেলে দিলাম কম্বল।প্রচন্ড শীতের মাঝেও ঘেমে উঠলাম।
তবে জাহান্নামের শাস্তি আমার শুরু হয়ে গেল!!!!!!
ব্লগের সকলের প্রতি আবেদন করছি যদি আপনার একটু সাহায্য কোন মানুষকে দিতে পারেন তা হয়তো তার জীবন বাচানোর কারন হয়ে যাবে।প্লিজ এ শীতের মাঝে নিজের আভিজাত্য বশে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অসহায়দের অবজ্ঞা করবেন না।হয়তো এর কারনে আমার মত আপনার জীবন ও হয়ে উঠতে পারে যন্ত্রনা ময়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




