somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধ,যুদ্ধাপরাধী,নব্য রাজাকার এবং কিছু অপ্রিয় সত্য

২৯ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান আর ১৫ই আগস্ট ভারত নামের দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। তখন ও গান্ধীজি ভারত মাতার বিভাজন নিয়ে দাবি তুলেছিলেন, সময়ের স্বার্থে সে দাবি ধোপে টেকেনি, গণমানুষের মুক্তির মিছিলে হারিয়ে গিয়েছিল তার আশা-স্বপ্ন। কিন্ত অবিভক্ত ভারত টিকে থাকলে গান্ধীজি নিঃসন্দেহে সেই স্বপ্নরাস্ট্রের অধিপতি হতেন, তাই বলে তিনি দেশদ্রোহী হয়ে যাননি।পরম শ্রদ্ধায় আজো মানুষ তাকে স্মরণ করে।সময়ের আবর্তে ধর্মতাত্ত্বিক জাতীয়তা থেকে রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাই মানুষের মুল পরিচায়কের রূপ পরিগ্রহ করেছে। একজন মানুষ নিজেকে মুসলিম বা হিন্দু পরিচয় দিতে যতটুকু সাবলীল তার চেয়ে অনেক বেশী মুখর নিজেকে একজন বাংলাদেশী বা একজন ইন্ডিয়ান হিসাবে পরিচয় দিতে। ব্রিটিশ শাসনের ক্রান্তিকালে মানুষের ধর্মীয় পরিচয়ই মুখ্য ছিল,আর সে পরিচয় এবং পৃথক জাতি স্বত্ত্বার কল্যাণে অভ্যুদয় ঘটেছে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের । কালক্রমে সে জাতিস্বত্ত্বা অনেক বেশী নিবিড় পরিচর্যায় লালিত হয়েছে, দুটি স্বাধীন কিন্তু সদ্য প্রসূত রাষ্ট্রে ।
আবার যখন সেখানে একটি রাষ্ট্রের ভাংগন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, স্বাভাবিকভাবে এবং খুবই সংগত কারণে ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতিগোষ্ঠী এর বিরোধিতা করেছিল।
এটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, বরং যুগ যুগ ধরে ঘটে যাওয়া অনুসৃত প্রবাহমান ঘটনামাত্র । মসজিদের মুয়াজ্জিন,ইমাম ও ধর্মীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ত্ব এতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করেছিল তাদের স্বপ্নের পাকিস্তানকে রক্ষার তাগিদে- কারণ এই পাকিস্তানকেই তারা একদিন স্বাধীন করেছিল মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি গড়ার তাগিদে।
বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল ছিল এই পাকিস্তান-১৯০৫ সালে যে বঙ্গভঙ্গের জন্ম ১৯১১ সালে তা রদ, কংগ্রেসের মুসলিম স্বার্থরক্ষার ব্যর্থতায় ১৯০৬ সালে মুসলিমলীগের জন্ম,১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ব্রিটিশ শাসনকে ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল।
অতঃপর যারা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির মিছিলে শামিল হয়েছিলেন, তারা সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু প্রকারান্তরে যারা শামিল হননি এবং পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করেছিলেন তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস- তারা ঘৃণিত, ধিকৃত ও নিন্দিত । কিন্তু সেখানে এমনও কিছু মানুষ ছিল যারা এসব বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, শুধুই তাদের ধর্মীয় অনুভূতির শ্রদ্ধাবোধ থেকে-পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার চেতনাবোধ থেকে, গৃহযুদ্ধকালীন ধন সম্পদ লুটপাট কিংবা বেওয়ারিশ সম্পদ কুক্ষিগত করার অন্তিম অভিলাষ থেকে নয়।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পূর্বে দুটি সমান্তরাল শক্তির মাঝে যেটি আপামর গণমানুষের মুক্তির কথা বলে, সে শক্তিই বিজয় অর্জন করে এবং ক্রমান্বয়ে পরিপক্কতা লাভ করে, জ্যেষ্ঠতা অর্জন করে অপরাপর শক্তি হতে।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে- সেই জ্যেষ্ঠ শক্তি যখন অপরাপর ক্ষুদ্র কিন্তু সোচ্চার শক্তির কন্ঠরোধ করে কিংবা টুটি চেপে ধরে তাহলে সেটি কোন অংশেও পূর্বেকার দখলদার শক্তি হতে কম স্বৈরাচারী নয়।

“রাজাকার, আলবদর কিংবা আলশামস ” এর যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ও রায় অকাট্য দলিল এবং যুক্তি সাপেক্ষে বিচার্য। এই ঐতিহাসিক রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্মকান্ডে সীমাবদ্ধ, কোন গোষ্ঠী বা গোত্রের প্রতি সহিংস ও মারমুখী মনোভাব নিয়ে এ বিচারের রায়- বিচার ব্যবস্থাকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করবে, তেমনি এতে গণমানুষের অনুভুতির প্রতিফলন ঘটবে না।বহুল প্রতীক্ষিত এ রায়- অসুস্থ ও বেপরোয়া রাজনীতিকদের দ্বারা প্রভাবিত হলে অনেকাংশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আর লোলুপ জিঘাংসার শিকার হতে বাধ্য।আর এতে করে ১/১১ বা ১৫ ই আগষ্ট বা এরুপ ঘটনার দুঃসহ বেদনাবিধুর স্মৃতি জাতির জীবনে নেমে আসবে বারবার।আর এমন ঘটনার ধারাবাহিকতায় জাতি অন্ধকারে হোঁচট খাবে প্রতিপদে।
"বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদ" । জামাতের নেতাকর্মীদের সরকারের গণগ্রেফতার এবং একের পর এক মামলায় হস্তান্তর-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সূত্রঃ(Click This Link)

কঠিন কথার মাঝে ছোট্ট একটি গল্পের উদ্ধৃতি উপস্থাপন করতেই হয়ঃ
কথাশিল্পী জহির রায়হানের “সময়ের প্রয়োজনে” গল্পে ডায়রীর লেখক সে মুক্তিযোদ্ধা যখন সারিবদ্ধভাবে দাঁডিয়ে ছিলেন, ক্যাম্প পরিদর্শনরত সেক্টর কমান্ডারের সামনে, তার অন্যান্য মুক্তি্যোদ্ধা সহযোগে। কমান্ডার প্রশ্ন করলেন সবাইকেঃ বলতো আমরা কেন যুদ্ধ করছি...? কেউ বললেনঃ তারা আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে,আমরা তার জবাব দেয়ার জন্যই যুদ্ধ করছি। কেউ বললেনঃ তারা আমাদের ঘরবাডি জ্বালিয়ে দিয়েছে তাই যুদ্ধ করছি তাদের বিরুদ্ধে। কেউ বললেনঃ তারা আমাদের মা-বোনদের উপর অত্যাচার করেছে, আমরা তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই যুদ্ধ করছি। কমান্ডার কিছুই বললেন না,চুপ করে রইলেন এবং তারপর চলে গেলেন ।
রাতে ঘুমানোর সময় ডায়রীর লেখক সে মুক্তিযোদ্ধা ভাবলেন- তাহলে কেন আমরা যুদ্ধ করছি ?
দেশের জন্য...? না ,কারণ দেশ তো হলো একটা ভূগোলের ব্যাপার, হাজার বছরে হাজারবার সীমারেখা যার পাল্টায়...।
তাহলে কেন...?- হয়তো একটু সুখের জন্য,শান্তির জন্য কিংবা নিজের কামনা বাসনা গুলিকে পরিপূর্ণতা দেবার জন্য ।
না ,এসব কিছুই নয়, আসলে আমরা সময়ের প্রয়োজনেই যুদ্ধ করছি...
----
সত্যিই আমরা সময়ের প্রয়োজনেই যুদ্ধ করেছিলাম, দেশপ্রেম, প্রতিশোধ এসব ছিল আপেক্ষিক প্রয়োজনের সম্মিলিত সমন্বয়।
আমরা যুগ হতে যুগান্তরে পদার্পণ করছি, আর আমাদের জাতীয়তার স্বরুপ ও পরিবর্তিত হচ্ছে ক্রমশঃ ধর্মতাত্ত্বিক(মুসলিম)- রাষ্ট্রীয়(বাংলাদেশী) – বৈশ্বিক( দুই বা তিন দেশের নাগরিকত্ত্ব, ক্রস কালচারাল বা ক্রস রিলিজিওন ম্যারেজ, মুক্তবাজার অর্থনীতি, উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যেমন-কুটনীতিকদের বিদেশী বিয়ে করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকলেও “ডিপ্লোমেটিক অর্ডিন্যান্স,১৯৭৬” সংশোধন করিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বর্তমান স্থায়ী প্রতিনিধি, সাবেক সফল কুটনীতিক ইসমত জাহান বিয়ে করেন ডাচ প্রফেসর “জোহানস-ডেন-হেইজার” কে ( http://en.wikipedia.org/wiki/Ismat_Jahan )। সময়ের প্রয়োজনে বৈশ্বিক চেতনায় নিজ সীমানাও আপনি গন্ডি ছাড়িয়ে যায়। আদিবাসীদের আন্দোলনের মুখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন হলেও দেশের সীমানা পাল্টে যেত আরেকবার। তাছাড়া মোঘল,পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলে ও দেশের সীমানা পাল্টেছে বারংবার । তাহলে সত্যিইতো “দেশ তো হলো একটা ভূগোলের ব্যাপার, হাজার বছরে হাজারবার সীমারেখা যার পাল্টায়...। ” ।

বৈশ্বিক যুগে বিশ্বের নব নব প্রযুক্তি আর মৌলিক জ্ঞানের বিশুদ্ধ চর্চ্চা পরিত্যাগ করে দেশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও নগণ্য বিষয়াদি নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ উত্তপ্ত, প্রতিহিংসা, পরচর্চা আর পরনিন্দা নিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ছিদ্রান্বেষী ও পক্ষপাতদুষ্ট কলমওয়ালা (সাংবাদিক) আর কাগজব্যবসায়ীদের(নিউজপেপার সম্পাদক) সুচতুর কৌশলে।
স্রোতের গড্ডালিকা প্রবাহে সব কলম সৈনিক, মিডিয়াকর্মী একই মন্ত্রে দীক্ষিত “যুদ্ধাপরাধী ইস্যু” নিয়ে, নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে কেঊ ব্যাপৃত নয়। স্রোতের বিপরীতে হাঁটার দুঃসাহস কেঊ দেখায় না। এতো এমন যেন-অপরাধী দেখল না কি তার অভিযোগনামা, জানল না কি তার অপরাধ, আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই তার ফাঁসি হয়ে গেল।

সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ...!!!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×